মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামস্ বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে নারকীয় এবং বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। আর হত্যাযজ্ঞ চালানোর জন্য বেছে নিয়েছিল নির্দিষ্ট কিছু স্থানকে। হাজারও শহীদের রক্তে রঞ্জিত এ স্থানগুলোই পরে বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা নেত্রকোনাতেও ছড়িয়ে আছে এমন কিছু বধ্যভূমি। কিন্তু বলাবাহুল্য, ন’মাসব্যাপী মুক্তিসংগ্রাম আর অগণিত শহীদের আত্মোৎসর্গের নীরব সাক্ষী হিসেবে যুগ যুগ ধরে টিকে থাকা এসব বধ্যভূমির বেশিরভাগ আজও অরক্ষিত এবং নতুন প্রজন্মের কাছে অপরিচিত।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গবেষক আলী আহাম্মদ খান আইয়ুব জানান, নেত্রকোনা জেলায় মোট বধ্যভূমির সংখ্যা ১৬টি (যেখানে একাধিকবার হত্যাকা- চালানো হয়)। সেগুলো হচ্ছেÑ সদর উপজেলার ত্রিমোহিনী ব্রিজ, মোক্তারপাড়া ব্রিজ, সাতপাইয়ের মগড়া নদীর পাড়, পাটপট্টির মগড়া নদীর পাড়, চল্লিশা রেলব্রিজ, ঠাকুরকোনা রেলব্রিজ, পূর্বধলা উপজেলার পুকুরিয়াকান্দা, পূর্বধলা বাজারের রেলব্রিজ, জারিয়ার কংস নদীর পাড়, দুর্গাপুরের বিরিশিরির সোমেশ^রী নদীর পাড়, কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর বাজারের দই মহাল, কলমাকান্দা থানাঘাট, আটপাড়া উপজেলার মগড়া নদীর পাড়, কেন্দুয়া উপজেলার রাজি নদীর পাড়, মদন উপজেলার থানাঘাট ও মোহনগঞ্জের সাপমারা খাল। এসব বধ্যভূমির বাইরেও গণহত্যাকা- হয়েছে ৩শ’ ২১টি এবং গণকবর দেওয়া হয়েছে ৬টি।
গবেষক আলী আহাম্মদ খান আইয়ুব ছাড়াও স্থানীয় কয়েক বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং একাধিক শহীদ পরিবারের সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ’৭১-এ নেত্রকোনায় পাকবাহিনী আসার পর প্রথম বধ্যভূমি হিসেবে বেছে নিয়েছিল নেত্রকোনা-পূর্বধলা সড়কের মাঝামাঝিতে অবস্থিত ত্রিমোহিনী ব্রিজটিকে। ২৯ এপ্রিল সেখানে ঠাকুরাকোনা হাসপাতালের চিকিৎসক মিহির সেন ও তার শ্যালক রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সিদ্ধার্ত সেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর এ দু’জনকে হত্যার মধ্য দিয়েই নেত্রকোনায় পাকবাহিনীর গণহত্যা শুরু হয়।