
ছবি: সংগৃহীত
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি দারুণ জয় পেয়েছেন। তবে তার এই জয় যেমন উদযাপন করছে বহু প্রবাসী দক্ষিণ এশীয়, তেমনি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ভারতের হিন্দুত্ববাদী মহল ও ডায়াস্পোরার একাংশের কাছ থেকে।
উগান্ডায় জন্মগ্রহণকারী, ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং মুসলিম মামদানি, তার এই পরিচয়ই যেন একপাশে প্রগতিশীলতার প্রতীক, আবার অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদীদের চোখে 'প্রতিপক্ষ'। তার বিরুদ্ধে “জিহাদি”, “ইসলামপন্থী” ইত্যাদি অপবাদ ছুড়ে দেওয়া হয়েছে, এবং কেউ কেউ তাকে “ভারতবিরোধী” বলেও দাবি করেছেন।
ভারতের বিজেপি এমপি ও অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত মামদানিকে "ভারতীয় নয়, পাকিস্তানি-সদৃশ" বলে কটাক্ষ করেছেন। তার মায়ের (বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ার) হিন্দু পরিচয় উল্লেখ করে কঙ্গনা বলেছেন, “সে এখন হিন্দুধর্ম নিশ্চিহ্ন করতে চায়।”
ভারতের প্রো-বিজেপি সংবাদমাধ্যম আজ তক একটি রিপোর্টে দাবি করেছে মামদানি এমন সংগঠন থেকে তহবিল পেয়েছেন যারা "ভারতবিরোধী" এজেন্ডা চালায়।
‘ইন্ডিয়ান আমেরিকানস ফর কুমো’ নামক একটি সংগঠন নিউইয়র্ক সিটির আকাশে একটি বিমান থেকে ব্যানার উড়িয়েছে যাতে লেখা ছিল: “Save NYC from Global Intifada. Reject Mamdani.”
মামদানি মোদির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বারবার সরব হয়েছেন। ২০২০ সালে টাইমস স্কয়ারে বাবরি মসজিদ ইস্যুতে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেন, ২০২৩ সালে মোদির সফরের আগে কারাবন্দী ভারতীয় কর্মী উমর খালিদের লেখা পড়ে শোনান।
এক টাউন হলে তিনি বলেন, “নরেন্দ্র মোদি একজন যুদ্ধাপরাধী।” তিনি ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে এক হাজারেরও বেশি মুসলমান নিহত হন।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অরবিন্দ রাজগোপাল বলেন, মামদানি এমন এক নেতা যিনি তার মুসলিম পরিচয়কে গর্বের সঙ্গে সামনে এনেছেন। তিনি হিন্দি, উর্দু, স্প্যানিশ এবং সামান্য বাংলা বলতে পারেন, এমন প্রার্থীর দেখা আজকাল দুর্লভ।
হিন্দুদের উৎসব দীপাবলিকে স্টেট হলিডে করার পক্ষে মামদানি নিউইয়র্ক রাজ্যের অ্যাসেম্বলিতে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। তিনি হিন্দু মন্দিরে গিয়েছেন, সংস্কৃতির অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছেন। তার মা মীরা নায়ারের হিন্দু শিকড়ের কথাও তিনি তুলে ধরেন।
সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোহিত চোপড়া জানান, উচ্চবিত্ত হিন্দু আমেরিকানরা প্রায়শই ব্লু-কলার ভারতীয়দের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করেন না। মামদানি সেই ব্যবধান ভাঙার চেষ্টা করছেন।
জুন মাসের প্রাইমারির ফলাফল বলছে, মামদানি জ্যাকসন হাইটস, লিটল বাংলাদেশ এবং পার্কচেস্টারের মতো এলাকায় বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি অ্যান্ড্রু কুমোকে ৫৬% বনাম ৪৪% ভোটে হারান।
লেখক সুচিত্রা বিজয়ন বলেন, মামদানির বিরুদ্ধে আক্রমণ হচ্ছে ঠিক যেমনটি আগে রাশিদা তালিব বা ইলহান ওমরের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। তবে মামদানির দক্ষিণ এশীয় শিকড় এই আক্রমণকে আরও তীব্র করেছে।
মুমু ২