ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

ভিন্নখবর

ভিন্নখবর বিভাগের সব খবর

রাখাইন জাদুঘর

রাখাইন জাদুঘর

কলাপাড়ার মিশ্রিপাড়া রাখাইন পল্লীতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ‘রাখাইন জাদুঘর’। যেখানে- রাখাইন ভাষায় তালপাতায় লেখা পুঁথি। বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষুর জন্য খাবার সরবরাহের কাঠের তৈরি এক ধরনের পাত্র। শুকরসহ বন্যপ্রাণি শিকার করার লেজাসহ বিভিন্ন অস্ত্র। পিতলের ভারি ঘণ্টা। হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণির শিংসহ মাথার হাড়। হরিণের চামড়া। পুরানো তাঁত। ধান থেকে চাল, চিড়া তৈরির সেকেলের কাঠের কল। সঙ্গীতাঙ্গনে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ। প্রায় আড়াই শ’ বছরের পুরনো রাখাইনদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয়েছে এই জাদুঘরে। দেয়ালে অঙ্কন করা হয়েছে রাখাইন প্রথম রাজা চন্দ্রসূর্য ও শেষ রাজা মহাথামান্দার ছবি। রাখাইন রাজ্য থেকে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ১৭৮৪ সালে প্রথম পর্যায়ে ৫০টি পরিবার কীভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল রাঙ্গাবালী ও কুয়াকাটায় পৌঁছেছেন রাখাইন জাতি। পরবর্তীতে আরও ১২০ পরিবারের আগমনদৃশ্য। জঙ্গল কেটে টংঘর তৈরির দৃশ্য। বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষার দৃশ্য। ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাকেরগঞ্জে উপস্থিত হয়ে সভায় মিলিত হওয়া। ধর্মীয় বিভিন্ন রীতি পালনের দৃশ্য। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রতিচ্ছবিসহ ষাটের দশকে বন্যায় রাখাইনদের মৃত্যুর দৃশ্য দেয়ালে অংকনের মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। আপাতত রাখাইনদের ব্যবহৃত ২০ ধরনের উপকরণ এবং রাখাইন কৃষ্টি-কালচারের ২০ ধরনের স্থিরচিত্র প্রদর্শনের জন্য উপস্থাপন করে কলাপাড়ার রাখাইন পল্লী মিশ্রিপাড়ায় ‘রাখাইন জাদুঘরের’ যাত্রা শুরু হয়েছে। রাখাইন মংলাচিং ব্যক্তি উদ্যোগে এই জাদুঘর নির্মাণ করেছেন। এক বছর আগে এটি পর্যটক দর্শনার্থীর জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে দর্শনীর বিনিময় জাদুঘর প্রদর্শনের সুযোগ থাকছে। প্রথম পর্যায়ে দর্শনি ফি রাখা হয়েছে জনপ্রতি মাত্র কুড়ি টাকা। গড়ে এই তিন দিনে এক-দেড় শ’ পর্যটক-দর্শনার্থী এই জাদুঘর পরিদর্শন করেন। জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা রাখাইন মংলাচিং জানান, অন্তত ২০ লাখ টাকা ব্যয় করে নিজস্ব জমিতে স্থাপনা করে তিনি রাখাইনদের ব্যবহৃত আড়াই শ’ বছরের পুরনো হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রদর্শনের সুযোগ করে দিলেন। পাশাপাশি আদিবাসী রাখাইনদের ঐতিহ্য-ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলেন। প্রবীণ রাখাইনরা এসব উপকরণ বাড়িতে সংরক্ষণ করে আসছিলেন, যা জাদুঘরে সংগৃহীত করা হয়েছে। ফলে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরা রাখাইন পল্লীতে বৌদ্ধবিহার প্রদর্শনের পাশাপাশি রাখাইন জাদুঘর দর্শনের সুযোগ পাবেন। ক্রমশ বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে জাদুঘরের সংগ্রহশালা আরও সমৃদ্ধ করার কথা জানালেন প্রতিষ্ঠাতা মংলাচিং। সাগর পারের জনপদ কলাপাড়ার রাখাইনদের ব্যবহারের এসব জিনিসপত্র মানুষ এখনো খুঁজে বেড়ায়। রাখাইনদের নিত্যকাজের ব্যবহারে এসব এখন তেমন একটা লাগছে না। রাখাইনদের অনেকের বাড়িতে অরক্ষিত অবস্থায় এসব পুরনো জিনিসপত্র অরক্ষিত ছিল। প্রবীণরা রেখেছেন স্বীয় কীর্তির চিহ্নি হিসেবে। যা দেখে কলাপাড়ায় আগতরা জানতে পারতেন এই জনপদের অনেক অজানা কাহিনী। আগতরা শুনতে চায় রাখাইনদের সেকালের জীবনযাত্রা। হিংস্র শ্বাপদ-শঙ্কুল জনপদ কীভাবে হয়েছে বাসযোগ্য। পর্যটকরা এসব দেখতে, জানতে ঘুরে বেড়ায় রাখাইন পল্লীতে। এখন জাদুঘর পরিদর্শন করে রাখাইনদের ভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যময় জীবন-যাপনের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন।

বর্ষায় নজরকাড়া কুয়াকাটা

বর্ষায় নজরকাড়া কুয়াকাটা

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের এখন বিশ্বজোড়া পরিচিতি। রয়েছে স্বকীয়তার আলাদা সুখ্যাতি। দীর্ঘ সৈকতের যে কোনো স্পটে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যায় দেখা সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। আর সকালে একই সৈকতের গঙ্গামতি লেকপাড়ের বেলাভূমে দাঁড়িয়ে দেখা যায় অপূর্ব মনোলোভা সূর্যোদয়ের বিরল দৃশ্য। এই দুর্লভ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ্য কুয়াকাটায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটকের পদচারণা। পর্যটক দর্শনার্থীর হৈ হুল্লোর আর উৎসবে মুখরিত থাকে দীর্ঘ সৈকত। আর মনোরম এ সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর বাড়ছে পর্যটকের আগমন। শীতে তো থাকছে উপচে পড়া ভিড়। এখন বর্ষা মৌসুমেও বিপুল সংখ্যক পর্যটক দর্শনার্থীর আগমন ঘটছে কুয়াকাটায়।  পর্যটকের কাছে কুয়কাটায় শীতের শান্ত সাগরের চেয়ে বর্ষার উত্তাল সাগর অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। খুঁজে পায় যেন সাগরের আসল চেহারা। কখনো ভয়াল ঢেউয়ের তাণ্ডব, আবার কখনো শান্ত। মুহূর্তেই পাল্টে যায় চেহারা। এই গর্জন, আবার থমকে যাওয়া। আর তাইতো বর্ষায় এখানে বাড়ছে পর্যটক দর্শনার্থীর ভিড়। উত্তাল ঢেউরাশির সঙ্গে মেতে ওঠা। সাগরের পানিতে নেমে বিক্ষুব্ধ ঢেউয়ের সঙ্গে নাচানাচি, মিতালি করা। প্রতিদিন শত শত পর্যটক এখন বেছে নিচ্ছে বর্ষা মৌসুমকে। কারণ পাহাড়সম উঁচু ঢেউ অনবরত কিনারে এসে আঘাত হানছে বেলাভূমে। আর কিনারে আসার আগেই সেই উত্তাল ঢেউয়ের তালে তালে কখনো ডুব দিয়ে বাধা দেওয়া। আবার কখনো ঢেউয়ের আঘাত থেকে এড়ানোর জন্য ডুব দিয়ে ক্ষণিকের জন্য নিজেকে আড়াল করা। বার বার, বহুবার; কত শতবার এমন খেলায় মেতে ওঠা। পর্যটকের বিরামহীন এমনসব দৃশ্য এখন কুয়াকাটা সৈকত সংলগ্ন উত্তাল সাগরে দেখা মেলে। এমন উপভোগ্য সুযোগ শীতে মেলে না; পর্যটক দর্শনার্থীর এমনই অভিমত। বিশেষ করে পারিবারিকভাবে একটু নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে বর্ষার মৌসুমকে। আর সাগরের পানি লোনা থাকে না, তাই গোসল করতে আর কারও কোনো সংশয় থাকে না। যে সমস্যার কথা ভাবতে হয় শীত মৌসুমে। কারণ মাত্রাতিরিক্ত লোনা পানি শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। পারিবারিকভাবে এসে শিশুদের নিয়ে এই আশঙ্কা বর্ষায় থাকছে না।  বর্ষার সাগর যেন অচেনা লাগে। ভয়াল উত্তাল। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। আকাশে ওড়া চিলের মতো শো শো করে ছুটে চলা কালো মেঘের আনাগোনা। অনবরত হাল্কা মৌসুমি বায়ূর হানা। যেন আলাদা এক অনুভূতি এনে দেয় মনেপ্রাণে। আর আগতরা সেই সুযোগটিকে  হাতছাড়া করতে চাইছেন না। পর্যটকরা ছুটে আসছেন বর্ষাস্নাত কুয়াকাটায়। সৈকতে দেখা মেলে ইলিশ শিকারিদের যুদ্ধ। সাগরের ভয়াল ঢেউ রাশির সঙ্গে এই যুদ্ধ চলছে জীবিকার। ছোট্ট ডিঙি নৌকায় চড়ে চলে যায় জেলেরা অগভীর সমুদ্রে (৩-৪ কিমি দূরে) পাতা জালের কাছে। মাঝে মাঝে দূর থেকে মনে হয়- এই বুঝি হারিয়ে গেল জেলের নৌকাটি, মনে হবে ডুবে গেল। কিন্তু না, আবার উঁকি দিয়ে উঠছে। এক ঢেউ পেরিয়ে আরেক ঢেউ, এভাবেই এগিয়ে যায় গন্তব্যে। এদের বলা হয় খুটা জেলে।  প্রচণ্ড ভয়াল, অথচ সীমাহীন সুন্দর দৃশ্য শুধুমাত্র বর্ষায় অবলোকনের সুযোগ রয়েছে। আর কখনো নয়। বীচের বেলাভূমিও থাকছে অতি স্বচ্ছ। এক কথায় নিট অ্যান্ড ক্লীন। যেন চোখে দেখা যায় কালো চিক চিক করা বালুকনাটি পর্যন্ত। খালি পায়ে হাঁটার সেই আসল সুখের অনুভূতি, সেটি কিন্তু বর্ষায় উপলব্ধি করা যায়। কুয়াকাটা সৈকতের শূন্য পয়েন্ট থেকে পুবে কিংবা পশ্চিমে যতদুর বীচের পরিধি সবটাই যেন এক হয়ে যায়। কোথাও কোন অমলিন দৃশ্য চোখে পড়বে না। যারা হঠাৎ করে প্রথমবার বর্ষায় কুয়াকাটায় বেড়াতে আসবেন তাদের কাছে মনে হবে এ যেন অচেনা কুয়াকাটা দেখছেন।  এতো গেল শুধু সৈকতের বেলাভূমের আর সাগরের বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ার দৃশ্য। বীচ ঘেষা তাল-নারকেল গাছগুলোকে দেখলে মনে হবে চিরঞ্জীব হয়ে গাড় সবুজের রং মিশে দাঁড়িয়ে আছে। শীতে যেসব গাছকে মনে হয় বার্ধক্যের কারণে কাহিল, বিবর্ণ। সেই গাছেরা আভা ছড়াচ্ছে চিরসবুজের সতেজতায়। হাঁটতে হাঁটতে একইভাবে ঝাউ বাগান। কড়ই বাগান। ম্যানগ্রোভ-ননম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, সবশেষ গঙ্গামতির নয়নাভিরাম লেক। যেটি শীতের দিনে মনে হয় সোঁতা খাল। আর বর্ষায় ফিরে আসে যৌবনের গান নিয়ে। তবে ভয়াল সাগর গাছগুলোর অনেক গিলে খেয়েছে তার ভয়াল থাবায়। খালি পায়ে হাঁটলে মনপ্রাণ যায় শান্ত হয়ে যায়। ভয় থাকে না, তপ্ত বালুতে পায়ে বিরক্তিকর অবস্থার। কারণ বালুর আস্তরণ অনেক শীতল থাকে। গা ঝিম ঝিম করে, মাথা পর্যন্ত যেন উপলব্ধি করা যায়। সেই অনুভূতি শুধু বর্ষায় বোঝা যায়। শুধু একটু শঙ্কা রয়েছে যদি আকাশ মেঘলা থাকে হয়তো যাবে না, সন্ধ্যার সূর্যাস্ত কিংবা সমুদ্রস্নাত সুর্যোদয়কে। কিন্তু লটারির মতো ‘যদি লাইগ্যা যায়’ তো ফাটাফাটি। একেবারে স্বচ্ছ, টলমলে পানির মধ্য থেকে ডিমের কুসুমের মতো সমুদ্রের বুক চিরে বের হচ্ছে সূর্যের লাল আভা। অসম্ভব সুন্দরের সে দৃশ্য। তবে শীতকালের মতো কুয়াশায় আচ্ছন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে না এমন দৃশ্য অবলোকনে। তাইতো শীতের চেয়ে পর্যটকের কাছে এখন বর্ষার কুয়াকাটা অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ক্রমশ বাড়ছে পর্যটক দর্শনার্থীর সংখ্যা। ১০ বছর আগেও বর্ষায় কুয়াকাটা সৈকত খাঁ খাঁ করত। কোথাও কোনো পর্যটকের পদচারণা থাকত না। চোখে পড়ত না জেলে ছাড়া কাউকে। জেলে সোহরাব হোসেনের এমন মন্তব্য। সেই সঙ্গে আবাসিক হোটেল ব্যবসা ছিল ভয়াবহ মন্দা। অনেকের থাকত বন্ধ।