ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

ভিন্নখবর

ভিন্নখবর বিভাগের সব খবর

পুতুলের জন্য

পুতুলের জন্য

তিথিরা আজকে নতুন বাসায় উঠেছে। বাসাটা ভীষণ সুন্দর। এখান থেকে তিথির স্কুল কিছুটা দূরে তারপরও মা এ বাসাটাই পছন্দ করেন কারণ এ বাসার ভাড়াটা একটু কম। ভাড়ার তুলনায় বাসাটা বেশ সুন্দর। তাছাড়া বাড়িওয়ালাও এখানে থাকেন না। পুরো বাড়িই ভাড়াটিয়াদের দখলে।  বাসায় থাকবে দুজন। তিথি আর ওর মা। তিথি এবার ক্লাস থ্রিতে পড়ে। পুরাতন বাসায় ওর আলাদা রুম না থাকলেও এ বাসায় ওর আলাদা রুম আছে। খুব গোছানো রুম। তিথির মা নিজ হাতে সুন্দর করে ওর রুমটা গুছিয়ে দিয়েছে। ছোট একটা খাট, একটি ড্রেসিং টেবিল, একটা পড়ার টেবিল, চেয়ার। যদিও রাতে তিথি এ খাটে ঘুমায় না। রাতে তিথি মায়ের সাথে ঘুমায়। তিথির তো বাবা নেই। ওর বাবা মারা গেছেন গত বছর। তখন তিথি ক্লাস টুতে পড়তো। বাবার কথা তিথি একদমই ভোলেনি। বাবা থাকতে ও বাবা-মায়ের মাঝখানে ঘুমাত। এখন সে মায়ের বুকে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে থাকে।  তিথির মা স্কুল শিক্ষক। তিথিও তার মায়ের স্কুলে পড়ে। এজন্য একটা বিশেষ সুবিধা হয়েছে। তাহলো তিথি তার মায়ের সাথে স্কুলে যায় আবার মায়ের সাথেই ফিরে আসে। মাকে ছেড়ে তার একা থাকতে হয় না।  তিথির রুমে একটা খেলনা রাখার বিরাট বাক্স আছে। সেখানে একদম ছোটবেলা থেকে যেসব খেলনা দিয়ে সে খেলেছে তার সবই জমা করে রেখেছে। তিথি খুব লক্ষ্মী মেয়ে। সে কোনো খেলনাই নষ্ট করে না। সুন্দর করে খেলে আবার রেখে দেয়। তিথি সাজতে খুব ভালোবাসে, রোজ বিকেলে ওর রুমের ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে। ওর মা তার ঘরে বিছানায় শুয়ে আছে। তিথি ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায়। দেখে আয়নার ভেতরে ওর বয়সী একটা মেয়ে। বসে বসে কাঁদছে। তিথি ভীষণ ভয় পেয়ে দৌড়ে মাকে ডেকে তোলে। মা, মা তাড়াতাড়ি ওঠো। তিথির মায়ের ঘুম ভেঙে যায়। কী হয়েছে তিথি মা? মা, আমার ঘরে এসো দেখবে। তিথি মায়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে। মাকে দাঁড় করায় আয়নার সামনে। কী হয়েছে তিথি মনি বলবে তো? মা, আয়নার ভিতরে একটা মেয়ে আছে।  আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।  তিথি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে। আরে, কী বলো এসব? আয়নার ভিতরে মানুষ কী করে যাবে? তুমি নিশ্চয়ই ভুল দেখেছ। মা তিথিকে বোঝানোর চেষ্টা করে। না, মা সত্যি। আমি সত্যিই একটা মেয়েকে দেখেছি। তিথি মনি, তুমি তৈরি হয়ে নাও, আমরা ঘুরতে যাব। মেয়ের মনকে শান্ত করার জন্য তিথির মা তিথিকে নিয়ে বাইরে বের হন। এই শহরে তার অনেক আত্মীয়-স্বজনের বাসা। কিন্তু আজ তার কোথায় যেতে মন চাইছে না। আজ সে তার মেয়েকে নিয়ে রিক্সায় করে ঘুরবে। শহর থেকে অনেক দূরে যাবে। আজ তার মেয়েটার মন ভীষণ অশান্ত। এ সময়ে মেয়েটার প্রকৃতির কাছে যাওয়া খুব প্রয়োজন।

কোন পাথারের ওপার থেকে আনল ডেকে হেমন্তকে...

কোন পাথারের ওপার থেকে আনল ডেকে হেমন্তকে...

হাওয়া আবারও বদলে গেল। শুরু হলো নতুন ঋতু। আজ কার্তিকের প্রথম দিন। আর কার্তিক মানেই হেমন্তের সূচনা। কবির ভাষায় : ‘সবুজ পাতার খামের ভেতর/হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে/কোন্ পাথারের ওপার থেকে/আনল ডেকে হেমন্তকে।’ নতুন রং রূপে জেগে ওঠার স্বার্থেই প্রকৃতি ডেকে এনেছে প্রিয় ঋতুকে। এখন ধীরে ধীরে বদলাতে থাকবে চারপাশ। ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করবে।   বাংলাদেশে ঋতু ছয়টি হলেও, বড় দাগে দুটি। একভাগে গরম। আরেক ভাগে শীত। আর মাঝখানে হেমন্ত। কার্তিক এবং অগ্রহায়ণ মিলে হেমন্তকাল। এ সময় গরম কমতে থাকে। আসি আসি করে শীত। এই যেমন, গত দুই মাস ভ্যাপসা গরমে ভালোই ভুগতে হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে অবস্থা এমন থাকবে না। রোদটা মিষ্টি হয়ে ধরা দেবে।

ভেতরে মিষ্টি রসে টইটম্বুর বাইরে মচমচে

ভেতরে মিষ্টি রসে টইটম্বুর বাইরে মচমচে

বাঙালি থেকে অবাঙালি- সবাই এই মজাদার মিষ্টির ভক্ত। আজও বহু মানুষের খাদ্যের তালিকাতেই থাকে গরম জিলাপি। আবার, মেলার মাঠে জিলাপি খুঁজে বেড়ান এমন মানুষও প্রচুর। ভেতরে মিষ্টি রসে টইটম্বুর, বাইরে মচমচে। এমন জিলাপির আড়াই ইঞ্চির ঐতিহাসিক প্যাঁচ, আকার ও স্বাদের ওপর ভিত্তি করে এর নামেও ভিন্নতা এসেছে। পবিত্র মাহে রমজানের ইফতারে যেমন জিলাপি ছাড়া চলে না তেমনি শারদীয় উৎসবসহ যে কোনো উৎসবে জিলাপির প্রচুর চাহিদা বাড়ে। বলতে গেলে যে কোনো উৎসব মানেই আড্ডা, ঘুরতে যাওয়ার পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  মিষ্টির সঙ্গে বাঙালির প্রেম যুগ যুগের ... । তাই হাট-বাজার, উৎসব ঘিরে বসে মিষ্টির পসরা। সেখানেই গরম গরম জিলাপি আর দর্শনার্থীরা তা মচমচ করে কামড়িয়ে খাচ্ছেন।  জিলাপির নামের যেন শেষ নেই। আমাদের দেশে চিনি-গুড়ের জিলাপির কদর বেশি। এর মাঝেও তৈরির কারুকাজে মিষ্টিশিল্পীরা নাম দিয়ে বসেন- রেশমি জিলাপি,  শাহি জিলাপি, বোম্বাইয়া জিলাপি, জাফরানি জিলাপি, চিকন জিলাপি ও আমৃতি। এসব জিলাপির দোকান বা রেস্টুরেন্ট অনুযায়ী দামে কিছুটা তারতম্য রয়েছে। তা তৈরিতে উপকরণের কিছুটা ভিন্নতা দেখা গেছে। আবার এদিকে রসে পরিপূর্ণ, স্বাদে-গন্ধে মনমাতানো এই মিষ্টান্নের ইতিহাসটাও একটু প্যাঁচানোই বটে! এ বলে এ কথা তো ও বলে সে কথা। কোনো দিকেই পক্ষপাতিত্ব না রেখে বরং চলুন জেনে নেওয়া যাক জিলাপির এই ঐতিহাসিক প্যাঁচের সব গল্প। জাহাঙ্গীরা-জলভল্লিকা-জলেবি-জালাবিয়া-জেলেবিয়া-কু-লিকা এবং জিলাপি বা জিলেপি। নামের ভিন্নতায়ও যেন প্যাঁচ লেগে আছে।  জিলিপির খ্যাতি  যেমন বাংলাদেশে তেমনি ভারতসহ বিভিন্ন দেশেও এর খ্যাতি রয়েছে। এক এক জায়গায় হয়ত এক এক রকম নাম। কিন্তু বস্তুটি একই। আজ আমরা এত একাকার হয়ে গেছি এই পদটির সঙ্গে, যে বেশিরভাগ সময় ভুলেই যাই এর আসল উৎসের কথা।  জিলাপির উৎপত্তিটা আসলে কোথায়। তার নিশ্চিত কোনো তথ্য এখনো অব্দি পাওয়া যায়নি। তবে প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী, জিলাপির সবচেয়ে পুরোনো লিখিত বর্ণনা পাওয়া যায়, মুহম্মদ বিন হাসান আল-বোগদাদির লিখিত ত্রয়োদশ শতাব্দীর রান্নার বইয়ে। আবার ইতিহাসে আছে, এর আগেই জিলাপির আবিষ্কার করে মিসরের ইহুদি সম্প্রদায়। ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসব হানুক্কাহ পালনে তৈরি করা হতো এক ধরনের প্যাঁচানো মিষ্টান্ন। তারা এই মিষ্টান্নের নাম দিয়েছিল জালাবিয়া। ধরা যেতে পারে, মূলত এই জালাবিয়া ছিল জিলাপির প্রাচীনতম নাম ও রূপ। কালক্রমে জিলাপি ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত হয়েছে। জানা যায়, মোগল আমলে সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রিয় মিষ্টান্নগুলোর একটি ছিল জিলাপি। জিলাপির স্বাদে মুগ্ধ হয়ে তিনি এই মিষ্টির নাম রেখেছিলেন নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে জাহাঙ্গীরা । অর্থাৎ জিলাপির ইতিহাস খানিকটা রাজকীয়ও বটে। ইরানে এই মিষ্টান্নের নাম  জেলেবিয়া। সে দেশ রমজান মাসে এই মিষ্টান্ন তৈরি করে দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। তুরস্ক, লেবানন এমনকি গ্রিসেও এই প্যাঁচদার মিষ্টান্নটি ভিন্ন ভিন্ন রূপে বিদ্যমান এবং বেশ জনপ্রিয়। এদিকে আবার বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে জিলাপির প্রবেশ মূলত মুসলিম বণিকদের মাধ্যমেই ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়। খুব সম্ভবত পারসি ও তুর্কিদের প্রভাবেই খাদ্যটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ভারতবর্ষে। আবার এদিকে আরেক সূত্রে জানা যায়, পঞ্চদশ শতাব্দীতে ভারতে জিলাপির মতো এক মিষ্টান্নকে বলা হতো কু-লিকা। সংস্কৃত ভাষায় রচিত গ্রন্থ গুন্যগুনবোধিনীতে জিলাপি তৈরির জন্য যে উপাদানের তালিকা পাওয়া, তার সঙ্গে আধুনিক জিলাপি তৈরির প্রক্রিয়ার মিল রয়েছে। আর এই গ্রন্থের সময়কাল ছিল ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ! জিলাপির প্যাঁচ খোলার প্রচেষ্টা শেষে বোঝাই যাচ্ছে, ভারতবর্ষে কিংবা গোটা পৃথিবীতেই জিলাপি নতুন কোনো মিষ্টান্ন নয়। নামে ভিন্ন হলেও উপকরণ, আকার-আকৃতি ও স্বাদে জিলাপি স্বরূপে বিরাজ করছে ইতিহাসের পাতা, মানচিত্রের অলিগলিতে। আর এই ভবঘুরে স্বভাবের কারণেই বাংলায় পাড়ি জমিয়ে জনপ্রিয় হয়েছে জিলাপি বা জিলিপি। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর সেই পার্বণের ভিড়ে তৈরি হয় এক একটি মেলা। রবিবার শেষ হলো শারদীয় উৎসব। পূজাম-পগুলো ঘিরে বসে ছোটো ছোটো তাঁবু খাটিয়ে  বিক্রেতারা। উনুন থেকে ধোঁয়া ওঠে; আর একটু একটু করে বাড়তে থাকে ভিড়। আমাদের সবার কাছেই এ অতি পরিচিত দৃশ্য। আর গরম গরম তেলে তৈরি হচ্ছে আড়াই প্যাঁচের জাদু। রস থেকে পাতে উঠে এলেই ষোলোকলা পূর্ণ। জিলাপির সঙ্গে আমাদের যে একেবারে আত্মার স¤পর্ক। যতদিন গেছে, জিলাপি প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে।  জিলাপিতে কেন প্যাঁচ থাকে? এর পেছনে লুকিয়ে আছে রহস্য। আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশে জিলাপি একটি জনপ্রিয় খাবার। নানা স্বাদ-বৈচিত্র্যে পরিবেশন করা হয় জিলাপি।  ঠিক আড়াই প্যাঁচেই আঙুলের কায়দায় এই মিষ্টি বানিয়ে ফেলেন কারিগররা।  বাঙালি থেকে অবাঙালিÑসবাই এই মজাদার মিষ্টির ভক্ত। প্রশ্ন, জিলাপির এমন আকৃতির কী কারণ। সে স¤পর্কে ¯পষ্টভাবে কিছুই জানা না গেলেও বিভিন্ন সূত্র অনুসারে, বিশেষভাবে পরিচিত করে তোলার জন্যই জিলাপি এমন প্যাঁচ দিয়ে বানানো শুরু হয়েছিল।  আবার খাদ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আকারে লম্বা করলে জায়গা বেশি লাগবে বা ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা এড়াতেই জিলাপি এমন গোল প্যাঁচ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।

পটে আঁকা হতো দেব দেবীর মুখ

পটে আঁকা হতো দেব দেবীর মুখ

বাংলার লোকচিত্রকলার গৌরবময় ঐতিহ্য পটচিত্র। পটচিত্রের দেশজ রং, সরল অঙ্গন রীতি এখনো মুগ্ধ করে। কত কী যে আঁকা হয়েছে পটে! তবে শুরুটা হয়েছিল ধর্মীয়পট দিয়ে। ধর্মীয়পট কী? আসছি সে প্রশ্নে। তার আগে ‘পটচিত্র’ শব্দটি ভেঙে দেখা আবশ্যক হবে। ‘পটচিত্র’ মানে, পটে আঁকা চিত্র বা ছবি। ‘পট’ শব্দের অর্থ কাপড়। কাপড়ের ওপর দেশী রং দিয়ে এ ধরনের ছবি আঁকা হতো। আদি চর্চা এখনো অল্প বিস্তর চালু আছে। ভারতের পশ্চিম বঙ্গে অনেকেই আঁকেন। বাংলাদেশে সে তুলনায় কম। সারাদেশে খোঁজ করলে হয়তো কয়েকজন পাওয়া যাবে। তার পরও আশার কথা যে, ঐতিহ্যটি একেবারে হারিয়ে যায়নি।   বাংলায় প্রচলিত পটটিত্র দু-ধরনের। একটি চৌকাপট নামে পরিচিত। অন্যটি বহুপট বা দীর্ঘপট। যখন কোনো রীতিসিদ্ধ শিল্পকলার অস্তিত্ব ছিল না তখন এ পটচিত্র প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যকে সযতেœ ধারণ করেছিল। বারো থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত জোরালো ছিল এই চর্চা। যারা পট আঁকেন তারা পটুয়া নামে পরিচিত। অতীতে স্বশিক্ষিত শিল্পীরা বংশানুক্রমিকভাবে পটচিত্র আঁকার কাজ করতেন। চিত্র দেখিয়ে গানও করতেন তারা। গানে গানে কেচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করতেন। এখন গান করতে তেমন দেখা না গেলেও, কমবেশি পট আঁকা হয়। পটের বিষয়বস্তু বিচিত্র। গবেষকরা বিষয় বেঁধে পটকে ছয় ভাগে ভাগ করেছেন। এই যেমন, ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক, পরিবেশগত ও বিষয়নিরপেক্ষ পট।  জানা যায়, গোড়ার দিকে বেশি জনপ্রিয় ছিল ধর্মীয় পট। এই অঞ্চলের মানুষ ধর্মভীরু। তাই ধর্মীয় বিশ্বাসকে টেকসই করে এমন গল্প ও পৌরাণিক কল্প-কাহিনী আলাদা গুরুত্ব পেত তখন। গাজীরপটের কথা তো সবার জানা। খুবই বিখ্যাত। মুসলমানদের গাজীরপটে গাজীকালু-চম্পাবতীর কাহিনী, গাজীপীরের বীরত্বগাঁথা অলৌকিক কর্মকা- তুলে ধরা হতো।   অন্যদিকে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পটে স্থান পেত রামকাহিনী, কৃষ্ণকাহিনী। মহাভারত ও রামায়ণ উপাখ্যান থেকে চরিত্র খুঁজে নিয়ে উজ্জ্বল রঙে আঁকতেন পটুয়ারা। পটে আঁকা হতো দুর্গাপট ও লক্ষ্মীপট। মাটির প্রতিমা গড়ে পূজা করার সাধ্য ছিল না অনেকের। তারা তখন পটে আঁকা দেব-দেবীর ছবি সামনে রেখে পূজা করতেন। রঙিন দুর্গোৎসব সম্ভব না হলেও, শতভাগ ভক্তি নিয়েই পূজা হতো দুর্গাপটের। একইভাবে পট এঁকে দেবী লক্ষ্মীর অর্চনা করা হতো।  তবে বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী শিল্পের অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। হাতেগোনা কয়েক পটুয়া সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চর্চাটি ধরে রেখেছেন। তাদেরই একজন মুন্সীগঞ্জের পটুয়া শম্ভু আচার্য। স্বনামধন্য শিল্পী তার পটে মহাভারত ও রামায়ণের বিভিন্ন চরিত্র চিত্রন করেন। তার সংগ্রহে থাকা একটি পটচিত্র হাতে নিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রে রাবণবধের মুহূর্তটি আঁকা হয়েছে। এর চারপাশে আলাদা আলাদা ফ্রেমে আরও বেশ কিছু ছবি। খ-চিত্রে ঘটনাবলী ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরার শিল্পীত প্রয়াস। তার আঁকা আরেকটি পটচিত্রে মহাভারতের উপাখ্যান। এখানে কুরুক্ষেত্রের অর্জুনকে খুঁজে পাওয়া যায়। পঞ্চপা-বের অন্যতম অর্জুন তার রথে চড়ে ছুটে চলেছেন। সঙ্গী হয়েছেন কৃষ্ণ।  শম্ভুর পটের মূল রংটি লাল। এর পর চোখে পড়ে সবুজ আর নীল রঙের ব্যবহার। প্রাকৃতিক রং আর ফর্মের ভিন্নতার কারণে ছবি দুটি আলাদা আবেদন সৃষ্টি করে। পটুয়া বলছিলেন, এক সময় রামায়ণপট, মহাভারতপট খুব জনপ্রিয় ছিল। দুর্গাপূজার সময় রামায়ণ গান করা হতো। ম-পে পট ঝুলিয়ে তা দেখিয়ে বর্ণনা করা হতো রাবণবধের কাহিনী। পটে আঁকা হত দেবী মনসাকেও।  জানা যায়, প্রধানত বাংলা অঞ্চল এবং উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে মনসা পূজা প্রচলিত ছিল। সর্পদংশনের হাত থেকে রক্ষা পেতে, সর্পদংশনের প্রতিকার পেতে, প্রজনন ও ঐশ্বর্যলাভের উদ্দেশে পূজা করা হত মনসার। একইভাবে দেবী মনসার পট দেখিয়ে বেহুলা লক্ষিন্দরের লোকপ্রিয় কাহিনী তুলে ধরা হত। পটে খুঁজে পাওয়া যেত  শীতলা দেবীকেও। রোগ মহামারি থেকে বাঁচতে পটে আঁকা শীতলা দেবির কাছে কৃপা চাইত মানুষ। পটুয়ারা শীতলা দেবীর ছবি এঁকে তা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখাতেন। এ সম্পর্কে আরও জানতে কথা হয় নড়াইলের জনপ্রিয় পটুয়া নিখিল দাশের সঙ্গে।