ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভিন্নখবর

ভিন্নখবর বিভাগের সব খবর

দেশি পশুতে কোরবানি

দেশি পশুতে কোরবানি

আসছে মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। এ ঈদের প্রধান ও অন্যতম অনুষঙ্গ পশু কোরবানি। এ কারণে কোরবানির ঈদ বলা হয়। চাঁদের হিসাবমতে আর দুই সপ্তাহ পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। সে হিসাবে বলা যেতে পারে দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে ঈদের বার্তা। এ ঈদে কোরবানির পশুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের পছন্দের শীর্ষে থাকে গরু। গরু নিয়েই যত হৈ হুল্লোড় শুরু হয়। গরু নিয়ে ঘটে যায় নানা কাহিনী। গরুর পরই কোরবানির তালিকায় থাকে ছাগল। গরু ও ছাগলের পাশাপাশি ভেড়া, মহিষ কোরবানির তালিকায় থাকে। তবে গরুর চাহিদা হলো সবার শীর্ষে। ঈদের আগের অন্তত এক মাস ধরেই গরুময় হয়ে উঠে সবক্ষেত্র। হাট-ঘাট, সড়কপথ কিংবা চায়ের স্টল সবখানেই গরু নিয়ে জমে উঠে অলোচনা, তর্ক-বিতর্ক। কোন হাটে কত টাকার গরু বিক্রি হলো, কে কত বড় কোরবানির গরু কিনল এসব নিয়ে চলে যত বিতর্ক। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তাই এখনই জমে উঠতে শুরু করেছে রাজশাহী অঞ্চলের পশুহাটগুলো। দেশের সবচেয়ে কোরবানির পশু রয়েছে রাজশাহী বিভাগেই। এ বিভাগের উদ্বৃত্ত গরু-ছাগল চাহিদা মেটায় রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের কোরবানি দাতাদের। এবারও তার ব্যতিক্রম নই। রাজশাহী বিভাগের উদ্বৃত্ত কোরবানির পশু এবারও চাহিদা মেটাবে সারাদেশের। রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাব মতে এবার এ অঞ্চলের আট জেলায় ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করেছেন কৃষক ও খামারিরা। যা এ অঞ্চলের কোরবানিদাতাদের চাহিদা মিটিয়ে জোগান দেবে দেশের বিভিন্ন জেলায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতবারের তুলনায় এবার শুধু রাজশাহী জেলায় কোরবানিযোগ্য পশু বেড়েছে ৩০ হাজার ৬৯৭টি। বিভাগের অন্য জেলাতেও বেড়েছে কোরবানিরযোগ্য পশু। ভারতীয় গরুর আগ্রাসন বন্ধ হওয়ায় দেশীয় গরু-ছাগলের প্রতিপলন ও সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায়। এবার রাজশাহী বিভাগের ৩০২টি হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা হবে বলে জানিয়েছে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর। ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের হাটে হাটে পশু আমদানি ও কেনাবেচা শুরু হয়েছে। এবার ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কোরবানির পশু কেনাবেচা করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার হাটে হাটে আগাম কোরবানির পশু উঠতে শুরু করেছে। এখনো জোরতাল কেনাবেচা শুরু না হলেও চলতি সপ্তাহের তা জমে উঠবে। হাটে হাটে শুরু হবে ক্রেতা-বিক্রেতা আর বেপারিদের হাক-ডাক। এ অঞ্চলের পশুহাটগুলো সারাবছর জোরতাল থাকলেও কোরবানির ঈদের এক মাস আগে থেকে শতগুণ বেড়ে যায় ক্রেতা-বিক্রেতারের বিচরণ। ইতোমধ্যে রাজশাহীর হাটগুলোতে শুরু হয়ে গেছে ক্রেতা-বিক্রেতা আর বেপারিদের বিচরণ। সর্বশেষ বুধবার ছিল রাজশাহীর সবচেয়ে বৃহৎ পশুর হাট সিটিহাটের নির্ধারিত দিন। সপ্তাহে দুটি হাটবার হলেও কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এ হাটটি প্রতিদিনই বসবে। রাজশাহী নগরীর বাইপাশ সড়কের পাশে বিশাল এ হাটের অবস্থান। বলা হয় এটিই রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে বড় কোরবানির হাট। উত্তরবঙ্গে সব জেলার ক্রেতা-বিক্রেতা আর সারাদেশের পাইকাররা এ হাটে আসেন। বুধবার এ হাটে কোরবানির পশুর আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে। শুধু সিটিহাট নয়, রাজশাহীর সব পশুহাটই এরই মধ্যে জমতে শুরু করেছে। হাটে হাটে আসতে শুরু করেছে বিপুল পরিমাণ কোরবানির পশু। এবারও রাজশাহী অঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণ কোরবানির পশু থাকায় হাটে হাটে ছোট, মাঝারি আকারের গরুগুলো আসছে ব্যাপক হারে। বড় আকারের গরুগুলো আরও কয়েকদিন পরে আসবে হাটে।

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

সবকিছুরই শেষ আছে। তবে কিছুতেই যেন শেষ হচ্ছে না দাবি আদায়ের আন্দোলন। মিটছে না নানা মত ও পথের বিভাজন। সেই সূত্রে অধিকার আদায়ের দাবিতে  উত্তাল ছিল বিগত সপ্তাহের শহর ঢাকার দিনরাত্রি। নানা দাবি নিয়ে রাজনৈতিক দল থেকে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছে। দাবি আদায়ের সূত্র ধরে সড়ক অবরোধ করে চলেছে আন্দোলন।  ফলশ্রুতিতে থেমে গেছে গাড়ির চাকা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই রাস্তায় আটকে থেকেছে বাস, পিকআপ, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন বাহন। শহরের প্রধান সড়কসহ পথে পথে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। তাই স্বল্প দূরত্বও পাড়ি দিতে লেগেছে দীর্ঘ সময়। এমন বাস্তবতায় নাগরিকদের পোহাতে হয়েছে ভোগান্তি।

আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলা

আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলা

মাগুরায় আলোচিত শিশু আছিয়া হত্যার রায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সম্পন্ন করেছেন মহামান্য আদালত। আছিয়ার বোনের শ্বশুরের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সঙ্গে এক লাখ টাকার অর্থদণ্ডও দাবি করেন আদালত। তবে তিনজন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়াতে মা অসন্তুষ্ট হয়েছেন বিচারিক প্রক্রিয়ায়। ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে’ বহুল আলোচিত এবং নির্মমতার অসহনীয় দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে রায়টি ঘোষণা করেন এম জাহিদ হাসান। অভিযোগ দাখিল আর বিচার শুরুর মাত্র ১৪ কার্যদিবসের মধ্যেই রায়টি ঘোষণা দেওয়া অপরাধীদের জন্য এক যথার্থ কার্যক্রম সম্পন্ন করা। তবে সন্তানহারা মায়ের আহাজারি খুব বেশি প্রশমিত হয়ইনি। সম্মিলিত এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় বাকি তিনজনের খালাস নিয়ে মায়ের দুঃসহ কষ্টের লাঘব হয়নি। লোমহর্ষক এমন মধ্যযুগীয় বর্বরতায় সভ্যতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার উপক্রম প্রায়। শিশু ধর্ষণ ও হত্যায় বিভিন্ন তথ্যউপাত্তে উঠে আসে শিশুরা নাকি চারপাশের নিকটজনের কাছ থেকেই এমন অমানবিক, পৈশাচিক ঘটনার বলি হয়। নতুন কিছু নয় যুগ যুগান্তরের এক অসহনীয় দাবানল। রায় ঘোষণার সময় অসহায় জননী আদালত চত্বরেই অবস্থান করছিলেন। সন্তান হারানো দুঃসহ বেদনায় ভারাক্রান্ত মার অপেক্ষার পালা শেষ হলেও তাকে শেষ অবধি অসন্তুষ্ট চিত্তে রায়ের বর্ণনা শুনতে হয়। রায়ে যারা খালাস পেয়েছেন তারা সবাই আছিয়ার আপনজন। রক্তের বাঁধন হয়তোবা নেই। কিন্তু সম্পর্কের নিগূঢ় বন্ধন অস্বীকার করার উপায়ই থাকে না। আছিয়ার বোনের স্বামী ভাসুর ও শাশুড়ি। এটাই দেশের দ্রুততম বিচারের দ্বিতীয় নজির। চলতি বছরের মার্চ মাসে আছিয়া বেড়াতে যায় তার বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে। আনন্দ, আয়োজনে বোনের সঙ্গে সময় কাটানোর ইচ্ছে আর আগ্রহে। কিন্তু বিপরীত প্রদাহ যেভাবে অপেক্ষা করেছিল তাও এক কন্যা শিশুর ওপর নিদারুণ পেষণের কঠিন বাতাবরণ। তবে বিচারিক রায় সংশ্লিষ্ট পরিবার মোটেও খুশি না হওয়া পরিস্থিতির ন্যায্যতা। কিন্তু ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটির নিষ্পত্তি হওয়া এক অবশ্যাম্ভাবী কর্মযোগ যথার্থ সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করা মহামান্য আদালতের জঘন্যতম অপরাধীদের প্রতি শাস্তিমূলক বিচার জনগণের সামনে নিয়ে আসা। শাস্তি হয়েছে তবে তা দৃষ্টান্তমূলক মোটেও হয়নি। গুরু পাপে লঘুদণ্ড মানাই যায় না। যারা নিয়মিত এমন দুঃসহ ঘটনার সঙ্গে শুরু থেকেই পর্যবেক্ষণ এবং অভিব্যক্তিমূলক বর্ণনার সহযোগী ছিলেন তারাও কি এই রায়কে সমর্থন করছেন? নির্দ্বিধায় বলা যা একেবারেই না। মা এখনো করুণ আর্তনাদে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। তার মতে আছিয়ার বড় বোনও শ্বশুরবাড়িতে শান্তি আর স্বস্তিতে নেই। নিয়মিত তার ওপর অন্যায়, অবিচার আর কথার আঘাতে জর্জরিত করা হচ্ছে। যারা এখন আছিয়ার বড় বোনের ওপর কঠিন আঘাত হানছে তারাও তো দোষী। তবে কেন তারা পার পেয়ে গেল? বিচারটা একেবারেই একপেশে হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মেয়েও। বিচার চলাকালীন উকিলের পক্ষপাতিত্বকেও সামনে নিয়ে আসা হয়। বাদী পক্ষের সাক্ষীও রাখা হয়নি বলে অভিযোগ এসেছে সংশ্লিষ্ট অসহায় পরিবার থেকে। আছিয়ার বোনও অভিযোগ করেন ঘটনার পর তার শ্বশুরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া তার দাবিও নিজের ভিটেয় থাকতে পারেননি। পরবাসির মতো অন্যের বাড়িতে গিয়ে থাকছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, আপাতত মূল আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ে ভাবার সুযোগ এখনো আছে। তিনজনের খালাসের ব্যাপারে জানা যাবে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কাগজ হাতে আসলে। সেটা আসার পর তা পর্যালোচনা আর আমলে নিয়ে পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে আপিলের বিষয়টি আমরা অতি অবশ্যই ভাবব। আছিয়ার ওপর এই পাশবিক নির্মমতায় পরিবারসহ গোটা দেশ শোকে দুঃখে পাথর হয়ে যাওয়ার দুর্দশা।