ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১

ভিন্নখবর

ভিন্নখবর বিভাগের সব খবর

শান্ত মারিয়াম ফাউন্ডেশন ডে উদ্যাপন

শান্ত মারিয়াম ফাউন্ডেশন ডে উদ্যাপন

প্রতি বছরের মতো এবারও গত মঙ্গলবার নানা আয়োজনে শান্ত মারিয়াম ফাউন্ডেশন ডে-২৫ উদ্যাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে শান্ত মারিয়াম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রয়াত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইমামুল কবীর শান্তর ৭১তম জন্মদিন উদ্যাপন করা হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় ক্রিয়েটিভ দ্য আর্ট গ্যালারিতে প্রিয় প্রতিষ্ঠাতার প্রায় ১০০ রকমারি পোর্ট্রেট নিয়ে চিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। পরদিন ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে ‘ইমামুল কবীর শান্ত স্মৃতি মিউজিয়াম’ পরিদর্শন ও বিকেলে শ্যামলবাগ, উত্তরখানে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইমামুল কবীর শান্ত বৃদ্ধাবাসন’ উদ্বোধন করা হয়। তৃতীয় দিন ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে বনানী কবরস্থানে সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষে কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পায়রা অবমুক্ত, শান্ত মারিয়াম একাডেমির শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, জন্মদিনের কেক কাটা ও প্রিয় প্রতিষ্ঠাতার স্মরণে স্মৃতিচারণামূলক আলোচনা ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্যাপন করা হয়। ফিতা কেটে বিভিন্ন পর্বের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ও আলোচনায় অংশ নেন শান্ত মারিয়াম ফাউন্ডেশন ও সুন্দরবন কুরিয়ারের চেয়ারম্যান আহসানুল কবির, শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান চিত্রশিল্পী অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক, উপাচার্য অধ্যাপক মো. শাহ-ই-আলম, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক সেন্টার ও রিসার্চ সেন্টারের অধ্যাপক এমএ রশিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য, ট্রেজারার, ডিন, রেজিস্ট্রার, শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। দিবসটি উপলক্ষে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং মসজিদ ও মাদ্রাসায় পবিত্র কুরআন খতম করে দোয়া পরিচালনা ও বিভিন্ন দৈনিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রকাশ করা হয়। Ñবিজ্ঞপ্তি

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে নানা আয়োজনে ‘বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী-২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখানোর উৎসবে অংশগ্রহণ করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সেক্টর-১৩ ক্যাম্পাসের (ইংরেজি ভার্সন) কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা। প্রতিযোগিতায় এ বছরের প্রতিপাদ্য করা হয় ‘শক্তির বাতিঘর : তারুণ্য ও বিজয়ের উৎসব।’ উত্তরার দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস মাঠে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি মাধ্যম সিনিয়র সেকশনের উপাধ্যক্ষ (সেক্টর-৭ ক্যাম্পাস) মেজর এম এইচ এম মঈনুদ্দিন (অব.)। ‘বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী ২০২৫’-এর সার্বিক তত্ত্বাবধান এবং পরিচালনায় ছিলেন ইংরেজি ভার্সন সেক্টর-১৩ ক্যাম্পাসের পরিচালক ও শাখা প্রধান খুরশীদ জাহান চৌধুরী। জাতীয় সংগীত ও পতাকা উত্তোলনের পর শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী ক্রীড়া উৎসবের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মেজর এম এইচ এম মঈনুদ্দিন (অব.)। প্রতিযোগিতা পর্বে ছাত্রছাত্রীদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ, পিটি ডিসপ্লে, যেমন খুশি তেমন সাজো এবং ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ মুগ্ধ করে উপস্থিত সকলকে। অনুষ্ঠানের শেষাংশে বিভিন্ন ইভেন্টে বিজয়ী ছাত্রছাত্রীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি। ইংরেজি ভার্সন সেক্টর-১৩ ক্যাম্পাসের সকল ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ এবং সম্মানিত অভিভাবকদের উপস্থিতি প্রাণবন্ত করে রাখে ক্রীড়া উৎসবের বিশেষ দিনটিকে।- বিজ্ঞপ্তি

১৩ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শেখ পরিবারের নাম বাদ

১৩ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শেখ পরিবারের নাম বাদ

গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা দেশের ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গেজেট প্রকাশ হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে অধ্যাদেশটি জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করা হয়। এর আগে বুধবার অধ্যাদেশ জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এতে সই করেন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যেহেতু একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণের জন্য একই ধরনের নাম ব্যবহারের কারণে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি ও অবস্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত আইন সংশোধন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয় এবং যেহেতু সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় রহিয়াছে এবং রাষ্ট্রপতির কাছে এটি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইয়াছে যে, আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে; সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করিলেন। এদিকে, পরিবর্তন হওয়া ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ১০টি, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নামে একটি এবং শেখ হাসিনার নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আরেকটি মুজিবনগর নামে ছিল। এখন থেকে সেগুলোর বেশিরভাগ জেলার নাম দিয়ে নামকরণ করা হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে শেখ পরিবারের নামে থাকা ১৩ বিশ্ববিদালয়ের নামে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। তবে তা আইনি প্রক্রিয়ায় গেজেট আকারে জারি করতে প্রায় এক মাস সময় লেগেছে অন্তর্বর্তী সরকারের। গেজেট অনুযায়ী নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নাম হবে ‘নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়’, কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নাম ‘কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘নওগাঁর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় ‘নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়’, মেহেরপুর মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ করা হয়েছে। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শরিয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘শরিয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’, জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ‘জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’, পিরোজপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ‘পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নাম ‘নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ‘গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ‘মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় ‘এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।

মুদ্রাস্ফীতির জন্য পোলট্রি শিল্পকে অযথা দোষী করা হয়েছে

মুদ্রাস্ফীতির জন্য পোলট্রি শিল্পকে অযথা দোষী করা হয়েছে

গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ভোক্তারা চরম মূল্যস্ফীতির শিকার হয়েছে। বিগত সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বারবার কথিত ‘সিন্ডিকেটকে’ দোষারোপ করেছেন মুরগি, ডিম এবং অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ  প্রতিযোগিতা কমিশন  বেশ কয়েকটি বড় পোলট্রি কোম্পানিকে জরিমানা করার নির্দেশ দেয়। যদিও হাইকোর্ট সেই আদেশ স্থগিত করেছেন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ডিম ও মুরগির সর্বোচ্চ মূল্যসীমা নির্ধারণ করে। কিন্তু যে কোনো শিল্পে দাম বেঁধে দেওয়া হলে নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয় এবং বিপরীত ফল বয়ে আনতে পারে। কারণ, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধির অভাবে সরবরাহ কমে যায়, ফলে দাম উচ্চ পর্যায়েই থেকে যায়। এই সার্বিক পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ  হয়নি। অথচ মূল্যস্ফীতি একটি সুপরিচিত অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া, যার নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। সেগুলো বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যস্ফীতির প্রথম কারণ হতে পারে ঘাটতি। যখন কোনো পণ্যের সরবরাহ কমে যায়, তখন ভোক্তারা সেটি পাওয়ার জন্য বেশি মূল্য দিতে বাধ্য হয়। ফলে বাজারমূল্য বৃদ্ধি পায়। অর্থনীতিবিদরা একে ‘সরবরাহজনিত ধাক্কা’ (ংঁঢ়ঢ়ষু ংযড়পশ) বলে থাকেন। ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য ও জ্বালানির রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। যার ফলে বিশ্ববাজারে এই পণ্যগুলোর সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে ভুট্টা ও সয়াবিনের দাম বেড়ে যায়, যা পোলট্রি, মাছ ও গবাদিপশুর খাদ্যের ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ২০২২ সালে পোলট্রির খাদ্য ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ সিন্ডিকেট নয়, বরং ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সরবরাহ সংকট। দ্বিতীয় কারণটি অর্থনৈতিক অপব্যবস্থাপনা। যখন সরকার মাত্রাতিরিক্ত মুদ্রা ছাপায় তখন সকল পণ্যের দাম বেড়ে যায়। অতিরিক্ত টাকা ছাপানো হলে টাকার মূল্য কমে যায় এবং পণ্যের মূল্য স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি বাজারে থাকা টাকার পরিমাণ হঠাৎ ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় তাহলে একটি ৮ টাকার ডিমের দাম ১২ টাকায় উঠে যেতে পারে। এটিকে বলা হয় সড়হবঃধৎু রহভষধঃরড়হ বা মুদ্রাস্ফীতি; যা কোনো সিন্ডিকেটের কারণে হয় না, বরং এটি অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার ফল। সাধারণত, সরকার রাজস্ব আয়ের তুলনায় বেশি ব্যয় করলে এবং সেই ঘাটতি (যাকে বাজেট ঘাটতি বলা হয়) পুষিয়ে নিতে মাত্রাতিরিক্ত টাকা ছাপালে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ প্রকাশিত গড়হঃযষু ঊপড়হড়সরপ ঞৎবহফং (অক্টোবর ২০২৪) থেকে জানা যায় যে, ২০২০ সালের জুন মাসে দেশে প্রচলিত মুদ্রার (ঈঁৎৎবহপু রহ ঈরৎপঁষধঃরড়হ) পরিমাণ ছিল ২০৮,০৯৪ কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রচলিত মুদ্রার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩১১,৯৪৮ কোটি টাকায়। মাত্র তিন বছরে বাজারে প্রচলিত মুদ্রার পরিমাণ ৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ৮ টাকার ডিমের দাম ১২ টাকায় ওঠা স্বাভাবিক। একইভাবে চাল, সবজি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও এই সময়ে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ, সার্বিক মূল্যস্ফীতির মূল কারণ ছিল অতিরিক্ত টাকা ছাপানো, যা সাধারণ জনগণকে গরিব করেছে। প্রশ্ন হলো- বিগত সরকার কেন অতিরিক্ত টাকা ছাপিয়ে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দিল? এর উত্তর খুবই স্পষ্ট: বিগত সরকারের সময় ব্যাংক খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে রক্ষার জন্য সরকার নির্বিচারে টাকা ছাপিয়েছে। যদি এটি না করা হতো তাহলে এসব ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যেত। যার ফলে লাখ লাখ পরিবার তাদের সঞ্চয় হারাত এবং দেশের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে মন্দার কবলে পড়ত। যেসব রাজনীতিবিদ ব্যাংক খাতের এই দুরবস্থার জন্য দায়ী তারা কখনোই স্বীকার করবেন না যে, তারা অর্থনীতির এমন ক্ষতি করেছেন। বরং তারা মূল্যস্ফীতির জন্য অন্য কাউকে দোষারোপ করার সহজ উপায় খুঁজেছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তাঁরা পোলট্রি শিল্পকে সেই বলির পাঁঠা বানিয়েছেন। ডিম ও ব্রয়লার মুরগি সাধারণ মানুষের প্রধান প্রাণিজ প্রোটিন। তাই এই খাতকে দোষারোপ করা সহজ হয়েছে। প্রতিযোগিতা কমিশনের কর্মকর্তারাও মন্ত্রীদের পথ অনুসরণ করেছেন। এর ফলে পোলট্রি খাতে এক প্রকার ‘ব্যবসাবিরোধী’ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই সংকট কীভাবে সমাধান করা হবে? অর্থনৈতিক তত্ত্ব অনুসারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি করতে হয়, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে করেছে। তবে, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করার জন্য টাকা ছাপানোও বন্ধ করতে হবে। পোলট্রি খাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রতিযোগিতা কমিশনের অন্যায্য মামলা প্রত্যাহার করা উচিত। একই সঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যসীমা বাড়ানো বা পুরোপুরি তুলে দেওয়া দরকার, যাতে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ বাড়লে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনীতির সরবরাহ ও চাহিদার স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী দাম কমে আসবে। এটি যে কোনো সরকারি হস্তক্ষেপের চেয়ে বেশি কার্যকর এবং টেকসই সমাধান হবে। লেখক : কাজী জীশান হাসান, পরিচালক, কাজী ফার্মস লিমিটেড।

বিমান বাহিনীর এমওডিসি রিক্রুট দলের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ

বিমান বাহিনীর এমওডিসি রিক্রুট দলের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ

লালমনিরহাটে বিমান বাহিনীর ৫২তম এমওডিসি রিক্রুট দলের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিটের লালমনিরহাটে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের এয়ার অধিনায়ক এয়ার কমোডর মো. শফিকুল ইসলাম। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ সময় প্রধান অতিথি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং আকর্ষণীয় মার্চ পাস্টের সালাম গ্রহণ করেন। এ কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে ৩৫ জন এমওডিসি (বিমান) রিক্রুট বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হলো। রিক্রুট (এমওডিসি) জি এম এহসানুর রহমান শ্রেষ্ঠ রিক্রুট বিবেচিত হয়ে ‘চৌকস রিক্রুট ট্রফি’ লাভ করেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিমানসেনা, এমওডিসি ও রিক্রুটদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।

নারীর রাজনৈতিক সচেতনতা

নারীর রাজনৈতিক সচেতনতা

সমাজের সমসংখ্যক নারী গুরুত্বপূর্ণ কর্মপ্রক্রিয়া থেকে বিচ্যুতই শুধু নয় ক্রমাগত পেছনে পড়ে থাকছে। যা সমাজ-সংস্কারের হরেক পরিবর্তনে নতুন কিছু দৃশ্যমান না হওয়াও সংশ্লিষ্টদের জন বিপরীত স্রোত। পুরানো সরকারের বিদায়ে নতুন সময় দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আলোচনায় উঠে আসছে নারীর রাজনৈতিক চেতনা কি সময়ের অগ্রগতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে? বিভিন্ন সময় ধরে উঠে আসা এক বাস্তবসম্মত জিজ্ঞাসা। আবার নতুন পটপরিবর্তনে সামনে অপেক্ষা করছে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও যৌক্তিক জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রশ্ন থাকছে দীর্ঘ ১৯৯১ থেকে ২০২৪ সাল অবধি নারী শাসনের একাধিপত্যে তাদের রাজনৈতিক চিন্তা কিংবা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যৌক্তিকতা কতখানি প্রভাব বিস্তার করবে আগত সময়ের জন্য? তবে জনগণের রাজনৈতিক সক্ষমতা, দক্ষতা দেশ ও জাতির জন্য এক স্পর্শকাতর প্রেক্ষাপট। নারী শিক্ষা যেমন অবারিত হয়েছে গত শতকের মাঝামাঝি থেকে সেভাবে অনেক স্বজাত্যবোধ কিংবা দেশের প্রতি সচেতন দায়বদ্ধতায় বিকাশের ধারা অনেকটাই স্তিমিত। দেশ শাসন করা সহজ মোটেও নয়। তার চেয়ে কঠিন আদর্শগত চেতনা লালন-ধারণ করে দেশমাতৃকার জন্য নিবেদন, সমর্পণ হওয়া। সমসংখ্যক নারীর জন্য তা আরও কঠিন হয়ে যায়। একজন রাজনৈতিক নারী ব্যক্তিত্ব একাধারে স্ত্রী, মা, গৃহিণী, কর্মজীবী একই অঙ্গে কত না রূপ। সেখানে রাজনীতির মতো আদর্শগত, সাংগঠনিক কঠিন এক বাতাবরণ নারীকে কতখানি স্বস্তি আর সুস্থিরভাবে ঠিক থাকতে সহায়তা করে সেটা ও বিবেচ্য বিষয়। শিক্ষার্থী জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে ছাত্রীরা। যদিও সংখ্যায় তারা নিতান্ত কম। রাজনীতি শুধু মত প্রকাশের স্বাধীনতা কিংবা অঙ্গীকার নয় বরং ধ্যানে, জ্ঞানে দেশকে অন্তরের নিভৃতে জিইয়ে রাখাও রাজনীতির মূল শক্তি। তার আগে প্রশ্ন এসে যায় আমাদের বাংলাদেশের সিংহভাগই এখনো পল্লী জননী। বৃহদাংশই বাস করে গ্রামে। ফলে সেখানে শিক্ষার হার বাড়লেও রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়ার সুযোগ নিতান্ত কম। তার ওপর উন্নয়নশীল বাংলাদেশ এখনো মান্ধাতা আমলের হরেক বিধি ব্যবস্থায় চরমভাবে আটকানো। সেখানে সবার আগে সামনে এসে দাঁড়ায় কন্যা শিশু বিয়ে। যা আধুনিক ও প্রযুক্তির বাংলাদেশের জন্য অবধারিত এক দুর্ভোগ। যে সমাজে কন্যাশিশুকে বাল্যবিয়ের আবর্তে জড়িয়ে রাখা হয় সেখানে শিক্ষা আর অন্যবিধ সামাজিক সুযোগ কতখানি অবারিত বলাইবাহুল্য। সেই ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রাণপুরুষ ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর উদাত্ত কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছিলেন অবোধ শিশু-কন্যাদের বিয়ের পিঁড়ি নয় বিদ্যালয়ে পাঠানো জরুরি। জ্ঞানে, শিক্ষায় নিজেদের ভালো-মন্দ বোঝার সক্ষমতা তাদেরই অর্জন করতে হবে। আর পরিবার বটবৃক্ষের মতো ছায়া দেবে। শিক্ষায় এগিয়ে গেলে ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিরোধ এমন সব স্পর্শকাতর অভিব্যক্তি তাদের নাড়া দেয়। কিন্তু বাস্তবে সে অবস্থান শূন্যের কোঠায়। অর্থাৎ জোর জবরদস্তি করে বিয়ের পিঁড়িতে নিয়ে যাওয়াই নয় পরবর্তীতে আরও ভয়ংকর দুরবস্থার শিকার হতে হয়। অকাল মাতৃত্বের মতো আর এক অপরিণত দুর্ভোগ। কষ্টকরভাবে উপলব্ধি করতে হয় এক শিশুর ভ্রƒণের মধ্যে আর এক শিশু বেড়ে উঠছে। বাল্যবিয়ে শুধু অকাল মাতৃত্বের বিষফোঁড়া নয় বরং এক কন্যা শিশুর আগামীর সম্ভাবনাময় জগতে পানি ঢেলে দেওয়ার মতোই। যা থেকে আজও আমাদের মুক্তি মেলেনি। শুরুটা করি নারীর রাজনৈতিক সচেতনতা, দক্ষতা ও ক্ষমতায়ন। শুধু শাসনকার্য পরিচালনা নয় সমসংখ্যকের মধ্যে আদর্শগত বোধ, দেশের প্রতি অকৃতিম দায়বদ্ধতা ছাড়াও সাংগঠনিক দক্ষতা, পারদর্শিতাও নিতান্ত জরুরি। আগেই উল্লেখ করা হয় নারী শুধু শাসনকার্য কিংবা রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ থাকেন না। তাকে সন্তান ধারণ লালন করতে হয়। সংসার ধর্ম পালন করতে গিয়ে অনেক সামাজিক অনুশাসনের অনুবর্তিও হতে হয়। সন্তানের জন্য মাকে সারা জীবন অনেক  কিছু ছেড়ে দিতে হয়। বাধ্য হয়ে নয় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে  নিজের দায়-দায়িত্ব পালন করার অদম্য স্পৃহা থেকে। আর আমাদের গ্রামাঞ্চলে শুধু শিক্ষা থেকে ঝরে পড়াই নয় বাল্যবিয়ের কোপানলে পড়তেও খুব বেশি সময় লাগে না। এমন সব পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতা সামাল দিয়ে রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনায় নিজের মেধা মননকে সক্রিয় করবে তেমন সময় মেলাতেও দিনক্ষণ পার হয়ে যায়।’ তাই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা যেখানে শুধু দেশপ্রেম নয় আদর্শ আর শুদ্ধ চেতনার অবিমিশ্র ধারা সংযোজন সেটাও এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে বলতে দ্বিধা হয় না রাজনীতির ঝুঁকিপূর্ণ আঙিনা আজ আর নারীদের কঠিন কোনো বলয় নয়। যুগের চাহিদা, সময়ের গতি, বিশ্বায়নের প্রভাব সব মানুষের সচেতন মনোসংযোগে আদর্শগত ধারায় বিকশিত হওয়া দেশ-জাতির পরম আকাক্সক্ষা, পাওয়া। শুধু রাজনীতির প্রতি দায়বদ্ধতাই নয় বরং সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে মিলন দ্যোতনায় হয়ে ওঠে আর এক প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের চমৎকার দৃশ্য। সবার আগে প্রশ্ন উঠছে নির্দিষ্ট যে কোনো রাজনৈতিক দলকেই এগিয়ে আসতে হবে নারীর মধ্যে জিইয়ে থাকা দেশাত্মবোধের সত্তাকে জনগণের সামনে নিয়ে আসা। সামনে অপেক্ষা করছে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যা নারীদের আরো সংঘবদ্ধভাবে রাজনৈতিক সচেতন করবে।

পাহাড়ি নারীর সংগ্রাম

পাহাড়ি নারীর সংগ্রাম

সমাজের সমসংখ্যক নারীর সংগ্রামী ইতিবৃত্ত সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই। শারীরিকভাবে কোমল ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল নারীরা শাসন-শোষণ আর বঞ্চনার কঠিন নিগড় থেকে কখনো মুক্তি না পাওয়াও সমাজ কাঠামোর লাগাতার দুর্ভোগ। সৃষ্টির সেরা মানুষ তাদের লিঙ্গ বৈষম্যের ফারাকে নিপতিত হয় সেই প্রথম থেকেই নারী আর পুরুষে। যা অতি আদিম কৌম ব্যবস্থা থেকে। বর্তমানে সভ্যতা শিখরে পরম উৎকর্ষের বাতাবরণেও তার কোনো ব্যত্যয় আজ অবধি দৃশ্যমান নয়। উন্নয়ন কর্ম যুগের পরম শুভলগ্নেও বলা হয় নারী-পুরুষের ফারাক তাও নাকি অবধারিত অগ্রযাত্রার কালো চিহ্ন। সময়, দেশ আর নবযুগের হাওয়ায় ব্যতিক্রমী অনেক কিছু দৃশ্যমান হলেও নারী-পুরুষের বিদ্যমান তারতম্যের কোনো ব্যত্যয় লক্ষণীয় নয়। তাই একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে মধ্য গগনেও আওয়াজ তুলতে হচ্ছে সমঅধিকার, শ্রমমজুরিতে প্রাপ্য বেতন আজও বিসদৃশ্যভাবে কাঁটার মতো বিঁধে আছে নারী-পুরুষের বিভাজন-বিভক্তিতে। বিশ্বর সর্ববৃহৎ ব-দ্বীপ বাংলাদেশ ধনে ধান্যে পুষ্পে ভরা সুজলা, সুফলা উর্বর পলিমাটির অঞ্চল। কবি গুরু বলেন, বীজ মাত্রই এখানে সোনা ফলে। আর নদী ও নারীর মিলিত কলতানে আবহমান বাংলার যে রূপ মাধুর্য তা সত্যিই জননী বঙ্গভূমির এক শাশ^ত বৈভব। প্রযুক্তির চলমান উন্নয়ন ধারায় বিজ্ঞান সর্বত্রগামী হলেও কিছু অঞ্চলগত বৈশিষ্ট্য চিরায়ত বাংলা পাহাড়-পর্বতেরও এক নির্মল পাদদেশের অনন্য লীলাক্ষেত্র। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের যে আদি নিবাস সেটাও যেন বাংলার হরেক বৈচিত্র্যের শাশ^ত বরমাল্য। শুরুটা করি নারীদের জীবনাচরণ, সংগ্রামী অভিযাত্রা সঙ্গে পুরানো ও নব্য সংস্কৃতির মিলন দ্যোতনায় পাহাড়ি নারীদের জীবনগাঁথা সত্যিই লড়াকু এক যাত্রা। বাংলাদেশের সিলেট, ময়মনসিংহ আর চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি আদিবাসীদের নিত্যজীবন সমতলভূমির মানুষের মতো তত নিরাপদ কিংবা নির্বিঘ্ন হয় না সমতল কিংবা পাহাড়ি যে কোনো সমাজের নারীরা হরেক সামাজিক অপসংস্কারে তাদের যাপিত জীবনকে স্বস্তিদায়ক মাত্রায় নিতেই পারে না। সেখানে পিছিয়ে পড়া অনুন্নত, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা কতখানি তাদের নিত্যজীবন নিষ্কণ্টক থাকে তাও হরেক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসছে। কঠিন, দুর্গম, পার্বত্য এলাকাসমূহ অনেকটাই আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া থেকেও দূরে থাকে। আর মাতৃতান্ত্রিক পাহাড়ি পরিবারগুলো নারী প্রধান নেতৃত্বের সম্পর্কের নিগড়ে বাধা। ঐতিহ্যিক এমন সব পাহাড়ি নারী তাদের জাতিগত ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক বরমাল্যে যুগ থেকে যুগান্তর পাড়ি দেওয়া সেটাও যেন নৃতাত্ত্বিক ধারাবাহিকতার আর এক পর্যায় তো বটেই। আমাদের ক্ষুদ্র বাংলাদেশ আয়তনে তত বেশি নয়। কিন্তু নানামাত্রিক দুঃসাহসিক অভিযাত্রার সংগ্রামী ইতিবৃত্ত একেবারে নজরকাড়া। আমরা পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ বাদ দিলেও সমসংখ্যক নারী বরাবরই তাদের অধিকার আর স্বাধীনতা অর্জনে কত সংগ্রামী ইতিবৃত্তের সরাসরি অংশীদার তাও পর্বতের নারীদের অনন্য, অদম্য যাত্রাপথ। কঠিন লড়াই আর যাপিতজীবনের নানামাত্রিক দুর্ভোগ যাতনার শিকার হতেও হয়েছে নারীদেরই। কিছু সংগ্রাম, যাতনা, কষ্ট মর্মবেদনা যেন নারী সমাজের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বংশপরম্পরায় এক নির্মম বলয়ের ক্ষত চিহ্ন। স্বাধিকার অর্জনের জন্য তাদের যে লড়াইয়ের ইতিবৃত্ত সেটাও দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা এক কঠিন পর্বতের মতোই শক্ত প্রাচীর। তার মধ্যে আছে সার্বজনীন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাঙালি-পাহাড়ি নিয়ত বিবদমান গোষ্ঠীর হরেক দুর্যোগ, দুর্বিনীত অসহযোগ কার্যক্রম থেকে সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হওয়াও যেন পর্বতবাসীদের আর এক পিচ্ছিল যাত্রাপথ। তবে পাহাড়ি কিছু পরিবার মাতৃতান্ত্রিক। যেমন ময়মনসিংহের গারো পাহাড়, সিলেটের খাসিয়া পুঞ্জি এসব পর্বতের জীবন আর সামাজিক বলয়ে নারীর প্রাধান্য যুগা-যুগান্তরের নির্মাল্য। শুধু কি তাই? সমতল ভূমি থেকে আলাদা পাহাড়ি নারীদের পরিশ্রম করার শক্তি যেন যুগ যুগের পরম এক আশীর্বাদ। কাপড়ের মধ্যে কোলের দুধের শিশু জড়িয়ে তাকে পিঠে বেঁধে যে মাত্রা চাষাবাদ থেকে পারিবারিক সামাজিক সব দায়-দায়িত্ব সম্পন্ন করেন জন্মদাত্রী মা তাও লড়াই-বিপ্লবের দ্বৈরথ তো বটেই। সেখানে কত না পাবার তিক্ততা, বঞ্চনার অপঘাত সেটাও আর এক দগদগে ক্ষত চিহ্ন। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়ি নারীরা স্বাধীনতার জন্য যে লড়াই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটাও তাদের নিত্য জীবন্ত বৃত্তান্তের অবিচ্ছেদ্য পালাক্রমের চলমান সংঘর্ষ বলাই যেতে পারে। আয়তনে পার্বত্য এলাকা বৃহদাকার না হওয়ায় যাতায়াতের সীমা সকলের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। যা নারীদের জন্য বাড়তি সুবিধা হিসেবেও পরিগণিত হয়। একদিকে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অন্যদিকে আর্থ-সামাজিক আর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ভিন্নমাত্রার বৈপ্লবিক অভিগমন। পাহাড়, পর্বতের নারীরা স্বাধীনচেতা, দুঃসাহসিক, আত্মপ্রত্যয়ী এবং বিপরীত স্রোতকে মোকাবিলা করার অদম্য এক জাতিসত্তা তো বটেই। যা সমতল ভূমির নারীদের সঙ্গে  খুব একটা যায়ও না। সহযোদ্ধা পুরুষ সহকর্মীকেও নিজেদের মতো ভাবতে পছন্দ করে। বরং সমানে সমানে একই জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ সংগ্রামী পাহাড়ি কন্যারা সত্যিই এক দুর্দমনীয় শক্তিময়তায় সন্তান ধারণ থেকে পালনই শুধু নয় নিত্যজীবনের গতি প্রবাহে লড়াকু অভিগমনের নির্ভীক পাহাড়ি কন্যার জীবনের ইতিবৃত্ত। সত্যিই সংগ্রামী, বিপ্লবী মন্তস্তত্ত্বে উদ্দীপ্ত, নারীর সুললিত কোমল আধারের অনন্য রূপ শৌর্যে বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকার লড়াকু নারী সমাজ সারাদেশের বঙ্গললনাদের আর এক চমৎকার অভিব্যক্তির পরম নিদর্শন।

মুদি দোকানি মনোয়ারা

মুদি দোকানি মনোয়ারা

জীবন যুদ্ধে হার না মানা মনোয়ারা বেগম। তার মতে, দেশের সব নারীকে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে আসা উচিত। লোকে কী বলল তার দিকে না তাকিয়ে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তার কর্মজীবনেও প্রথম কাজ করতে তিনি অস্বস্তি বোধ করতেন। ভাবতেন লোকজন কে কী বলবে। এখন তার কাছে মানুষের কথা কিছু যায় আসে না। জীবন যুদ্ধে হার না মানা এ নারীর মতে, দেশের সব নারীকে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে আসা উচিত। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের নতুন গোবর ধানের কুঠি গ্রামের গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনার সময় তার বিয়ে দেন বাবা-মা। জীবন জগৎ সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। শ্বশুরবাড়িতে যেয়ে গ্রামের শিশুদের সঙ্গে খেলতে যেত। গ্রামবাসীরা এ নিয়ে নানা কথা বললেও শিশু মনোয়ারা নীরবে সহ্য করেছিল সব কিছু। সংসার কি জিনিস কিছুই বুঝতেই পারেনি। স্বামীর অভাবের সংসারে নানা কষ্টে তার দিন কাটছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই এক বছরের মধ্যেই এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। কন্যা সন্তানের কারণে প্রতিনিয়ত শ্বশুরবাড়ির মানুষের কাছে অবহেলার শিকার হতেন মনোয়ারা। নীরবে সব অপমান সহ্য করত। এ রকম পরিস্থিতিতে তাকে এবং তার স্বামীকে শ^শুর-শাশুড়ি আলাদা করে দেন। চরম কষ্টে দিনযাপন করে তাদের সন্তানকে নিয়ে।  এরপর স্বামী-সন্তান নিয়ে শুরু হয় মনোয়ারা বেগমের সংগ্রামী জীবন। মনোয়ারা বেগম জানান, বিয়ের পর স্বামীর আয় রোজগার ছিল না। এমন অবস্থায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন সংসার আলাদা করে দিলে চরম কষ্টে পড়েছিলাম। এমনকি সন্তানের দুধ খাওয়ানোর টাকাও ছিল না। স্বামী প্রতিদিন দিনমজুরির কাজও পেত না। মাঝেমধ্যে কাজ পেলেও ও প্রতিবেশীদের কাছে ধারদেনা করে চলতে হতো। এরপর স্বামীর দিনমজুরির সামান্য টাকা আর আমার কাঁথা সেলাই করে যে আয় হতো তা দিয়েই কোনোরকমে চলত সংসার। একসময় কাঁথা সেলাইয়ের কিছু টাকা সঞ্চয় করে হস্তশিল্পের সেলাই মেশিন কিনে কাজ শুরু করি। এক বছর পর সেলাই মেশিনের কাজের টাকা থেকে সংসার খরচ বাঁচিয়ে ১২ হাজার টাকা সঞ্চয় করি। সে বছরেই বাসার থাকার ঘরের একাংশে মুদি দোকান খুলে বসি। এ সময় এলাকাবাসী সবাই আমার দোকান থেকে কেনাকাটা করে আমাকে সহযোগিতা করত। এখন আমার মুদি দোকানে দৈনিক প্রায় ১ হাজার টাকা বিক্রি হয়। একজন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে এলাকার লোকজন আমাকে সম্মান করে। আর আমার স্বামী এখন ঢাকায় একটি বিস্কিট কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে। মেয়েটাকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি। দুইজনের টাকায় সংসার বেশ ভালোই চলছে। মনোয়ারা বেগম আরও বলেন, গ্রামে মুদি দোকান খুলে বসায় কেউ কেউ আমাকে ভিন্ন চোখে দেখত। বলত নানা কথা। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট পেলেও হাল ছাড়িনি। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন এবং সংসারের অভাব আমাকে আজ সফলতার কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। তার মতে কোন পেশায় খারাপ নয়, কাজের প্রতি শ্রদ্ধা ও নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকলে সফলতা আসবে। প্রতিবেশী আনিসুল হক জানান মনোয়ারা বেগম আমাদের গ্রামের একজন সফল উদ্যোক্তা। আশপাশের অনেক পুরুষ মহিলা আসে। তার জীবনের নানা গল্প শোনে। এবং তারাও তাদের এলাকায় এমন উদ্যোক্তা হয়ে কাজ করতে চায। সংসার থেকে অভাব দূর করতে চায়। মনোয়ারা ওইসব মহিলাকে নানাভাবে সহযোগিতা করে। 

বইমেলায় নারী লেখক ও বিক্রেতা

বইমেলায় নারী লেখক ও বিক্রেতা

অমর একুশে গ্রন্থমেলা তার ঐতিহাসিক ও নান্দনিক কর্মযোগে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ক্রেতা, বিক্রেতা ও দর্শকের ভিড়ে আকর্ষণীয় এই বইমেলায় নারীদের সরব উপস্থিতি পরিস্থিতির অনিবার্যতা। নারী লেখকের সরব পদচারণা যেমন আছে পাশাপাশি বিক্রেতা হিসেবে আর এক চমৎকার দৃশ্যও দৃষ্টিনন্দন। তবে এবার নারী লেখকরা আলাদা কোনো স্টলে বই বিক্রি করছেন না। যা গত বছরের বইমেলাকে ভিন্নমাত্রা দেয়। তবে সৃষ্টিশীল দ্যোতনায় নারী রচয়িতার সৃজন সম্ভার মেলার অন্যতম আকর্ষণও বটে। খালেদা সালাউদ্দিন লিখেছেন ‘আধুনিক সমাজ ও বাংলাদেশের নারী।’ চমৎকারভাবে উৎসর্গ করেছেন দেশের অগণিত নিপীড়িত নারীকে যারা নিয়ত জীবন সংগ্রামে লাঞ্ছিত আর পদদলিত। যেখানে নারীর অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের রূপরেখা দিতে গিয়ে ভালো-মন্দ দুটোই সমানভাবে উঠে এসেছে। নারী শিক্ষা প্রসারিত হচ্ছে সন্দেহাতীতভাবে। হরেক ব্যতিক্রমী পেশায় তাদের সময়োপযোগী অভিগমন দুরন্ত এবং অবারিতও বটে। কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় নানামাত্রিক দুর্যোগ, অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি না পাওয়াও যেন নতুন কালের ক্ষতচিহ্ন। ক্ষত-বিক্ষত নির্যাতনে কাতর নারীদের জীবন লড়াই আজও সমাজের আনাচে-কানাচে দৃশ্যমানভাবে ছড়ানো, ছিটানো। অদৃশ্য কোনো বিষবাষ্প নয় বরং নিয়তই উদ্ধত, উন্মত্ত প্রতিকূল পরিবেশের নৃশংস ছোবল। বরাবরের মতো এবারও নারী গ্রন্থ রচয়িতাদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে পাঠক সমাজ। যা সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকে চিরস্থায়ী মর্মবেদনার নিত্যনতুন আঁচড়। যা নিম্ন থেকে মধ্য এমন কি উচ্চবিত্ত সামাজিক পরিমণ্ডলের আধুনিকতার নতুন পরিবেশের ওপর বিষদৃশ্য এক বিষফোঁড়া। যা দগদগে ঘায়ের মতো জীবনভর যন্ত্রণাকাতর মর্মস্পর্শী বাতাবরণ, যা থেকে আজও সমসংখ্যকের মুক্তি মেলেনি। সামনেও যা সুদূর পরাহত। একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের মধ্য গগনেও নারী নিগৃহ সেই মান্ধাতা আমলের ধারাবাহিক নির্যাতনের আর এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। প্রাচ্যের ঐতিহাসিক ঢাকা নগরীর কত সুসংবদ্ধ ঐতিহ্যিক সম্ভার আর পথপরিক্রমা রয়েছে। পাশাপাশি অন্যায়, অবিচার, অপঘাতের করুণ চিত্রও নানামাত্রিক দুর্ভোগের নগ্নতা। যা সমাজ আর পরিবেশের নিতান্ত দগ্ধতার নৃশংস বাতাবরণ। সালমা খান লিখেছেন ‘একুশ শতকে বাংলাদেশের নারী’। সেখানে উৎপাদন ব্যবস্থায় নারী সক্রিয় অংশ নেওয়াই শুধু নয় উঠে এসেছে ঐতিহাসিক অবদানও। যা সৃষ্টিশীলও নতুন বাংলাদেশ গঠনে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে বিরাম- বিরতিহীনভাবে। সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে নারীর যথার্থ ক্ষমতায়ন কাগজে কলমে নয় বরং প্রাত্যহিক জীবনের খুঁটিনাটি প্রতিটি কর্মযোগও। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে শস্য উৎপাদনে নারীর যে সুদীর্ঘ যাত্রাপথ তা দেশের উর্বরা শক্তির আর এক ফলন দক্ষতা তো বটেই। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে দৃশ্যমান হয় কয়েক শতাব্দী ধরেই এ অঞ্চলের নারীরা এক গতিশীল জীবনাচরণে অভ্যস্ত ছিল যেখানে উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গেও ছিল তার সুনিবিড় কর্মদ্যোতনা। ইতিহাস স্বীকার করে কৃষি সভ্যতার বীজ বপনে নারীর অবদান। ঐতিহাসিক, যুগান্তকারী। কারণ সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই পুরুষরা বাইরে গিয়ে বন বনান্তরে প্রবেশ করে ফলমূল এসব কুড়িয়ে আনত। সেটাই ছিল উৎপাদন পূর্ববর্তী আদিম মানুষের খাদ্য সংস্থান। কিন্তু কৃষি সভ্যতার বীজ বপনে নারীর দুর্দন্ত অভিগমন ইতিহাসের বরমাল্য। কারণ ফলমূলের বীজ রোপণ করত গৃহবাসী নারীরাই। যারা ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বীজ ফেলে দিত এখানে সেখানে। অবাককাণ্ড  সেখান থেকে চারা জোগানো পরে বৃহৎ গাছে পরিণত হওয়া সৃষ্টির আর এক রহস্য তো বটেই। যা বিধাতা দিয়েছেন নাকি নারীকে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- সৃষ্টির আদি যন্ত্রণা নারীর দেহ আর মনে। তেমন বেদনা সহ্য করার শক্তিও নারীর শরীরে। লেখিকা সালমা খান নারীর সৃষ্টি রহস্য বিধৃত করতে গিয়ে জীবনাচরণে বহুমাত্রিক কর্মকাণ্ডে নারীর দৃশ্যমান ভূমিকাকে ইতিহাসের বরমাল্যে নিয়ে গেছেন। শুধু কি জীবনাচরণ? সংস্কৃতি আর সময়ের পালাক্রমে মানুষের নিত্য কর্মপ্রবাহে নারী সমাজ যে কি অবর্ণনীয় ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তা আর আড়ালে, আবডালে থাকেও না।  দৃশ্যমান এক সমাজ-সভ্যতা, সংস্কৃতির প্রতিদিনের দুরন্ত পালাক্রম। সাহিত্য, সংস্কৃতিতে নারীর চিরন্তন প্রবহমান গতি সামাজিক বলয়ের অতীত বর্তমান আর আগামীর ধারাবাহিক  তথ্যচিত্র। মহিলা সাহিত্যিকদের ধারাবাহিক রচনাশৈলে নারী পাঠক তৈরি হওয়া সাংস্কৃতিক অভিযোজনে নতুন সময়ের অনন্য আহ্বান তো বটেই। যা শুরু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনা লগ্ন থেকে আজ অবধি। প্রথমে ধীর পায়ে সচেতন সাবধানতার অনুপ্রবেশ, পরবর্তীতে সেখানে গতিশীল আবহ তৈরি হওয়া সমাজ-সংস্কৃতিরই নতুন ধারা। আজ একুশ শতকে দাঁড়িয়ে উদাত্ত কণ্ঠে বলা যায় সমসংখ্যক নারী সমান তালে পুরুষের সঙ্গে এগিয়ে চলাই শুধু নয় প্রতিষ্ঠা পেতেও পেছন ফিরে তাকাচ্ছেন না। শুরুটা অত সহজ কখনোই ছিল না। পদে পদে বাধা, হোঁচট খেতে হয়েছে। সেখান থেকে সুদীপ্ত মনোবলে নিজেকে তৈরি করতে কত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাও বিগত সময়ের রুদ্ধতার জাল। যা ভেদ করে নারীদের গতিশীল পদচারণা সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণকে নির্দিষ্ট পথে চালিতও করছে। বইমেলায় নারী লেখকদের রচনায় শুধু যে নারীর সাবলীল অভিগমন কিংবা অত্যাচার-নিপীড়ন চিত্রিত হয়েছে তা কিন্তু নয়। উত্তরণের যাত্রাপথও সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গত বছরের বইমেলায় নারী লেখকদের জন্য আলাদা স্টল থাকলেও এবার তা দেখা যায়নি। তবে বই বিক্রিতে নারী বিক্রেতার সংখ্যা হাতেগোনার অবস্থায় নেই। তা ছাড়া নারী লেখকের বিচরণ মেলাকে সমৃদ্ধ করেছে তা বলার অপেক্ষাই রাখে না। সৃজনশীল নারী লেখকের অভাবনীয় সৃষ্টি দ্যোতনায় দেশের সমতাভিত্তিক রচয়িতা নির্মাণে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সেই গত শতাব্দীর শুরু থেকেই, যা আজ সময়ের গতিতে বাড় বাড়ান্ত অবস্থায়। নারীরা আসলেই সমান তালে এগিয়ে চলতে পিছু হটলে সমতার আদলে সমাজকে ঢেলে সাজানো কঠিন হবে। যা এখনো সংগ্রামী পরিক্রমার অধীন। নারীরা বহু রুদ্ধতার জাল থেকে মুক্তি পেলেও পাহাড়সম প্রাচীর আজও সামালতে হচ্ছে সিংহভাগকে।