পূজার সময় এখন। শারদীয় দুর্গোৎসবের নানা আনুষ্ঠানিকতা চলছে। এই সময়টাতে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। নানা জাতের ফুল দিয়ে দেবীর অর্চনা করেন ভক্তরা। তবে যে ফুলটি না হলেই নয়, যে ফুল সবাই খুঁজে বেড়ান সেটি পদ্ম। রাজধানীর শাহবাগের দোকানগুলোতে প্রায় সব মৌসুমি ফুল রাখা আছে। কাড়াকাড়ি অবস্থা পদ্ম নিয়ে। সৌন্দর্য বা ঘ্রাণ তো আছেই, তার চেয়ে বড় কথা এটি পুরাণের ফুল। পূজার অর্ঘ্য।
পৌরাণিক কাহিনীতে ঘুরে ফিরেই এসেছে পদ্মের কথা। সে অনুযায়ী, ফুলটিকে বিশুদ্ধতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। হিন্দুধর্মের অন্যতম প্রধান দেবতা বিষ্ণুর প্রতিকৃতিতে প্রায় নিশ্চিতভাবে দেখা যায়, তিনি হাতে পদ্ম ফুল ধারণ করে আছেন। পদ্মের ওপর আসন পেতে বসা অবস্থায়ও কল্পনা করা হয় তাকে। এ ধরনের পটচিত্র অনেক আঁকা হয়েছে। সমুদ্রমন্থনের কাহিনীটিও বহুল চর্চিত। সেখানেও উল্লেখ আছে পদ্ম ফুলের। শ্রুতি অনুযায়ী, দেবী লক্ষ্মী বিষ্ণুকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করার সময় তার গলায় পদ্ম ফুলের মালা ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। হয়তো এসব কারণেই পদ্মকে পূজার ফুল হিসেবে বিশেষ বিবেচনা করা হয়।
পুরাণে যেমন আছে তেমনি প্রিয় কবিতায় খুঁজে পাওয়া যায় পদ্মকে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত সেই কবিতার কথা মনে করিয়ে না দিলেই নয়। শৈশবের স্মৃতি হাতড়ে কবি লিখেছেন, ‘মামা বাড়ীর মাঝি নাদের আলী বলেছিল- বড় হও দাদা ঠাকুর,/তোমাকে আমি তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাব।/যেখানে পদ্ম ফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে।’ একই কবিতার আরেক অংশে ব্যর্থ প্রেমের আখ্যান। প্রতারক নারীর কথা উল্লেখ করে কবি লিখছেন: ‘বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি একশ’ আটটা নীল পদ্ম।/তবু, তবু কথা রাখেনি বরুনা।’
বলার অপেক্ষা রাখে না, জাতীয় ফুল শাপলারই মতো দেখতে পদ্ম। সব দিক থেকে দুই ফুলের মধ্যে ভালো মিল। জলজ উদ্ভিদ যেহেতু, নদ নদী হাওড় বাঁওড়ে বিলে ঝিলে জলাশয়ে প্রচুর পরিমাণে হয়। বহু বর্ষজীবী উদ্ভিদ পদ্ম কন্দের মাধ্যমে বংশ বিস্তার ঘটায়। জলের নিচে নরম মাটির সঙ্গে আটকে থাকায় কন্দ দেখা যায় না। চিনতে হয় পাতা ও ফুল দেখে। সবুজ বড় গোলাকার পাতা পানির ওপরিভাগে ভাসমান অবস্থায় থাকে। আর ফুল তো এর প্রধান আকর্ষণ। পদ্ম ফুল অনেকগুলো নরম পাপড়ির মাধ্যমে নিজের সৌন্দর্য তুলে ধরে। ফুলের রং একাধিক হয়।