
কলাপাড়া : প্রায় আড়াইশ’ বছরের পুরানো রাখাইনদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র
কলাপাড়ার মিশ্রিপাড়া রাখাইন পল্লীতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ‘রাখাইন জাদুঘর’। যেখানে- রাখাইন ভাষায় তালপাতায় লেখা পুঁথি। বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষুর জন্য খাবার সরবরাহের কাঠের তৈরি এক ধরনের পাত্র। শুকরসহ বন্যপ্রাণি শিকার করার লেজাসহ বিভিন্ন অস্ত্র। পিতলের ভারি ঘণ্টা। হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণির শিংসহ মাথার হাড়। হরিণের চামড়া। পুরানো তাঁত। ধান থেকে চাল, চিড়া তৈরির সেকেলের কাঠের কল। সঙ্গীতাঙ্গনে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ। প্রায় আড়াই শ’ বছরের পুরনো রাখাইনদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয়েছে এই জাদুঘরে। দেয়ালে অঙ্কন করা হয়েছে রাখাইন প্রথম রাজা চন্দ্রসূর্য ও শেষ রাজা মহাথামান্দার ছবি। রাখাইন রাজ্য থেকে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ১৭৮৪ সালে প্রথম পর্যায়ে ৫০টি পরিবার কীভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল রাঙ্গাবালী ও কুয়াকাটায় পৌঁছেছেন রাখাইন জাতি। পরবর্তীতে আরও ১২০ পরিবারের আগমনদৃশ্য। জঙ্গল কেটে টংঘর তৈরির দৃশ্য। বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষার দৃশ্য। ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাকেরগঞ্জে উপস্থিত হয়ে সভায় মিলিত হওয়া। ধর্মীয় বিভিন্ন রীতি পালনের দৃশ্য। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রতিচ্ছবিসহ ষাটের দশকে বন্যায় রাখাইনদের মৃত্যুর দৃশ্য দেয়ালে অংকনের মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। আপাতত রাখাইনদের ব্যবহৃত ২০ ধরনের উপকরণ এবং রাখাইন কৃষ্টি-কালচারের ২০ ধরনের স্থিরচিত্র প্রদর্শনের জন্য উপস্থাপন করে কলাপাড়ার রাখাইন পল্লী মিশ্রিপাড়ায় ‘রাখাইন জাদুঘরের’ যাত্রা শুরু হয়েছে। রাখাইন মংলাচিং ব্যক্তি উদ্যোগে এই জাদুঘর নির্মাণ করেছেন। এক বছর আগে এটি পর্যটক দর্শনার্থীর জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে দর্শনীর বিনিময় জাদুঘর প্রদর্শনের সুযোগ থাকছে। প্রথম পর্যায়ে দর্শনি ফি রাখা হয়েছে জনপ্রতি মাত্র কুড়ি টাকা। গড়ে এই তিন দিনে এক-দেড় শ’ পর্যটক-দর্শনার্থী এই জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা রাখাইন মংলাচিং জানান, অন্তত ২০ লাখ টাকা ব্যয় করে নিজস্ব জমিতে স্থাপনা করে তিনি রাখাইনদের ব্যবহৃত আড়াই শ’ বছরের পুরনো হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রদর্শনের সুযোগ করে দিলেন। পাশাপাশি আদিবাসী রাখাইনদের ঐতিহ্য-ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলেন। প্রবীণ রাখাইনরা এসব উপকরণ বাড়িতে সংরক্ষণ করে আসছিলেন, যা জাদুঘরে সংগৃহীত করা হয়েছে। ফলে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরা রাখাইন পল্লীতে বৌদ্ধবিহার প্রদর্শনের পাশাপাশি রাখাইন জাদুঘর দর্শনের সুযোগ পাবেন। ক্রমশ বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে জাদুঘরের সংগ্রহশালা আরও সমৃদ্ধ করার কথা জানালেন প্রতিষ্ঠাতা মংলাচিং।
সাগর পারের জনপদ কলাপাড়ার রাখাইনদের ব্যবহারের এসব জিনিসপত্র মানুষ এখনো খুঁজে বেড়ায়। রাখাইনদের নিত্যকাজের ব্যবহারে এসব এখন তেমন একটা লাগছে না। রাখাইনদের অনেকের বাড়িতে অরক্ষিত অবস্থায় এসব পুরনো জিনিসপত্র অরক্ষিত ছিল। প্রবীণরা রেখেছেন স্বীয় কীর্তির চিহ্নি হিসেবে। যা দেখে কলাপাড়ায় আগতরা জানতে পারতেন এই জনপদের অনেক অজানা কাহিনী। আগতরা শুনতে চায় রাখাইনদের সেকালের জীবনযাত্রা। হিংস্র শ্বাপদ-শঙ্কুল জনপদ কীভাবে হয়েছে বাসযোগ্য। পর্যটকরা এসব দেখতে, জানতে ঘুরে বেড়ায় রাখাইন পল্লীতে। এখন জাদুঘর পরিদর্শন করে রাখাইনদের ভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যময় জীবন-যাপনের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন।
জেলেদের তরতাজা ইলিশ
কুয়াকাটায় আগত পর্যটকের সুবর্ণ সুযোগ মেলে সৈকতের শূন্য পয়েন্টের দুইদিকে খুটা জেলেদের ইলিশ আহরণের দৃশ্য। সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করা জাল থেকে ছাড়ানো তরতাজা ইলিশসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের দেখা মেলে। এসব মাছ দরদাম করে কেনার সুযোগ রয়েছে। সাগরের অগভীর এলাকায় জাল পেতে ধরা এসব মাছ দেখার সুযোগ অপর কোনো সমুদ্র সৈকতে দেখা মেলবে না বলে পর্যটকদের অভিমত। এছাড়াও কুয়াকাটার ইকোপার্ক, রাখাইন মহিলা মার্কেট, মাঝিবাড়ি সৈকত স্পট, লেম্বুর চর, কাউয়ার সৈকত, মম্বীপাড়ায় অত্যাধুনিক সেবাশ্রম, মৎস্য মোকাম আলীপুর, মহীপুর রয়েছে উপভোগ্য স্পট।
কুয়াকাটায় যেভাবে যাবেন
ঢাকার যে কোনো স্পট থেকে অত্যাধুনিক কিংবা আধুনিক সকল পরিবহন বাস এখন সরাসরি কুয়াকাটায় আসছে। সর্বোচ্চ ছয় ঘণ্টায় আপনি পৌঁছবেন কুয়াকাটায়। উপভোগ করবেন বর্ষার কুয়াকাটা। এছাড়া সদরঘাট থেকে সরাসরি বরিশাল কিংবা পটুয়াখালীগামী দোতলা লঞ্চে এসে বাসযোগে কুয়াকাটায়। এর পরও কোনো সমস্যায় পড়ার আশঙ্কায় পড়লে যোগাযোগ করতে পারেন কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। মোবাইল-০১৭৩০১৮৯১৫২।
প্যানেল/মো.