ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১

ভিন্নখবর

বৈশিষ্ট্য হারানো  মাঘে বাঘের  স্মৃতি 

বৈশিষ্ট্য হারানো  মাঘে বাঘের  স্মৃতি 

এক সময় খুব শোনা যেত কথাটা। জনপ্রিয় প্রবাদ হয়ে উঠেছিল: মাঘের শীতে বাঘ পালায়! শীত কাকে বলে, উহা কত প্রকার ও কী কী তা অন্তত এই মাসে টের পাওয়া যেত। পৌষের শীত নিয়ে অনেক আদিখ্যোতা দেখালেও, মাঘের বেলায় সতর্ক থাকতেন সবাই। বছরের সবচেয়ে বেশি শীত পড়ত এ সময়। সর্বনিম্ন তাপমাত্রার নতুন নতুন রেকর্ডের তথ্য দিত আবহাওয়া অধিদপ্তর। ‘হাড় কাঁপানো শীত’ বলে যে কথাটি চালু আছে তা মূলত মাঘ মাসকেন্দ্রিক। মাঘে শীত উপভোগের রোমান্টিক পরিকল্পনা বাদ দিয়ে প্রতিরোধের চিন্তা করতে হতো। মাঘের শীত আসলে কত ভয়াবহ হয় সেটি বোঝাতে লোকমুখে শোনা যেত, মাঘের শীতে বাঘ পালায়। বাস্তবে শীতের সঙ্গে বাঘের আলাদা করে লড়াই সংগ্রাম হয় বলে মনে হয় না। তবে বাঙালি ‘বিপুল শক্তিধর’ বা ‘ক্ষমতাবান’ অর্থেও ‘বাঘ’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। অনুমান করা যায়, অভিন্ন ভাবনা থেকে মাঘের সঙ্গে বাঘের গল্প জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। বলার চেষ্টা করা হয়েছিল, বাঘের মতো অতি সাহসী পশুটিও মাঘের শীতের কাছে কুপোকাত হয়ে যায়। সেই থেকে মাঘ এলে বাঘের স্মৃতিটাও মনে পড়ে। তবে শুধুই স্মৃতি। মাঘের মৌলিক বৈশিষ্ট্য আর খুঁজে পাওয়া যায় না।   যত দিন যাচ্ছে বদলাচ্ছে প্রকৃতির পরিবেশ। উলটপালট হয়ে যাচ্ছে অনেক কিছু। একই নিয়মে বদলেছে মাঘের আচরণ। এখন মাঘ মাসের শীতে বাঘ তো দূরের কথা, বিড়ালও জায়গা বদল করে না! এবারও প্রথম সপ্তাহজুড়ে মামুলি শীত ছিল। তবে গত কয়েকদিনে পরিস্থিতি সামান্য বদলেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতে কাঁপছে মানুষ। সূর্যকে গিলে খাচ্ছে কুয়াশা। ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের তাপ আর নিচ পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না। ফলে গ্রামীণ জনপদে দিন রাতের পার্থক্য অনেকটাই কমে গেছে। কুয়াশার কারণে কাছের দৃশ্যও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। অনবরত শিশির ঝরছে। এ অবস্থায় হঠাৎ দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রামের মানুষ। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে মাঘের শীত দাপট দেখাচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রাথ  রায়ের দেওয়া তথ্য মতে, গত বুধবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বশেষ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড়ে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি  সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। দিনাজপুরের হিলিতেও শীতের প্রকোপ। নেত্রকোনার মানুষ গত তিন দিন ধরে সূর্যালোক বঞ্চিত বলে জানা গেছে। এসব এলাকায় কুয়াশার কারণে দিনেরবেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এভাবে বিভিন্ন অঞ্চলের তথ্য বলছে, শীতে ফেরার চেষ্টা করছে মাঘ।  রাজধানীর কথাই বা বাদ যাবে কেন! ‘শীত চলে গেছে’ বা ‘গরম লাগছে’ বলা বাসিন্দারা এখন ভালো করে নাম মুখ ঢেকে পথ চলছেন। পকেট থেকে হাত সহজে বের করছেন না। কারণ শহর ঢাকায়ও শীতের প্রকোপ। শুক্রবার সূর্যের দেখা মেলেনি বললেই চলে। কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হয়েছে দিনভর। অনেকে হয়ত ঘর থেকে বের হননি। বিকেলে মেট্রো ট্রেনে চড়তে গিয়ে দেখা গেল অন্যান্য শুক্রবারের তুলনায়  ভিড় কম। এসির বাতাস থেকে যাত্রীরা দূরে থাকার চেষ্টা করছিলেন। বাসা-বাড়ির দরজা জানালাও বন্ধ হয়ে গেছে। ঠান্ডার ভয়ে স্নান গোসল পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়ার গল্পও কানে আসছে অহরহ!  আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যও মাঘকে প্রতিষ্ঠা করে চলেছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শীত আরও কয়েকদিন থাকবে। বাড়তেও পারে সামনের দিনগুলোতে। সব দেখে মনে হচ্ছে নিজের বৈশিষ্ট্য পুনরুদ্ধারে চেষ্টা করছে মাঘ। এ কারণে অবশ্য দুর্ভোগও বাড়ছে। সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শিশু এবং বৃদ্ধদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। এর বাইরে ফুটপাতে, বিভিন্ন ভবনের সিঁড়িতে, ফুটওভার ব্রিজে রাত কাটানো মানুষগুলো থর থর করে কাঁপছে। ভাগ্যবঞ্চিত এই মানুষগুলোর দিকে তাকালে মনে হয়, কী দরকার মাঘের বাঘ হয়ে ফেরার! যা আছে তা-ই থাক। কিন্তু প্রকৃতিকে বাধ্য করার আছে সাধ্য কার!  

ভিন্নখবর বিভাগের সব খবর

ফারজানা ইয়াসমিন সফল উদ্যোক্তা

ফারজানা ইয়াসমিন সফল উদ্যোক্তা

ফারজানা ইয়াসমিন। যশোরে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। ২০১৬ তিনি শখের বশে যশোরে মাশরুম চাষ শুরু করেন। সফলতা পাওয়ায় এরপর বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ শুরু করেন ২০১৯ সাল থেকে। তিনি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে জেলা ও বিভাগীয় শহরে মাশরুম বিক্রি করা শুরু করেন। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি মাশরুম সেন্টারে প্রথমে ১৫ জনকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে তার মাশরুম সেন্টারে কাজ করেন ৬০ জন। তার মাশরুম প্রজেক্টের নাম ‘বৃষ্টি মাশরুম  সেন্টার’। ২০১৯ সালের শেষের দিকে থেকে মাশরুমের ওপর ফ্রি প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন তিনি। ৭ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণে ৩০ জনের ব্যাচ। এরপর ২০২০ সাল থেকে দেশীয় খাবার হোম মেইড আচার, ঘি, মধুময় বাদাম, পাটালি/গুড় এগুলো নিয়ে কাজ করা শুরু করেন ফারজানা ইয়াসমিন। আর এ গুলো অনলাইন ও অফলাইনে সেল করতে থাকেন। এছাড়া যশোরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মশালায় বৃদ্ধি ফুড বাজার নামে এক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাসার তৈরি রান্না খাবার সরবরাহ করা শুরু করেন। এখানেই ৪০ জন মহিলা কর্মী কাজ করেন। ফারজানা ইয়াসমিনের ইচ্ছা সমাজসেবা করা। সেই লক্ষ্যে ২০২১ সালে ‘জাগ্রত যশোর যুব মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে যুব ও মহিলাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন তিনি। এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৬০০-৭০০ জন যুব ও মহিলাদের স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করেছেন। এসব কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বাল্য বিবাহরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ, মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ বিষয়ে আলোচনা করে সচেতনার কাজ করছেন তিনি। এছাড়া কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য বিনামূল্যে গাছের চারা বিতরণ, বীজ ও জৈব সার বিতরণ করা হয়। যুব সমাজ অহেতু  চাকরির পেছনে না ছুটে তাদের মেধা খাটিয়ে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করুক এটাই তিনি প্রত্যাশা করেন। ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, নিজে কাজ করব আরও ১০ জনকে কাজের সুযোগ করে দেব। এভাবে তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগায়ে সামাজ বদলের তিনি স্বপ্ন দেখেন। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের নিকট সহযোগিতা কামনা করেছেন। এছাড়া ২০২০ সালে যশোর থেকে জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন ফারজানা ইয়াসমিন।

মেরিনার খামারে আদর্শ পোষাপ্রাণী পেকিন হাঁস

মেরিনার খামারে আদর্শ পোষাপ্রাণী পেকিন হাঁস

ইচ্ছে শক্তি ও মনোবল দৃঢ় হলে যে কোনো ভালো কাজে সহজেই ঝাঁপিয়ে পড়া যায়। পাশাপাশি অভাবি সংসারকে আলোয় আলোকিত করা কোনো কঠিন কিছুই না। তেমনি এক গৃহিণী মেরিনা বেগম। উত্তরাঞ্চলের ভারত সীমান্তবর্তী নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি বন্দরের প্রত্যন্ত এলাকা ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের  ছয় ফুটিয়া গ্রাম। এ গ্রামের কৃষকবধূ মেরিনা বেগম হাঁস চাষে বা পালনে নিঃশব্দ বিপ্লব নিয়ে এসেছে। বিদেশী জাতের পেকিন হাঁস পালনে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দারিদ্র্যতাকে জয় করে নিজেকে সফল খামারি হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি। তার সফলতা দেখে অনেকে নারীরাই পেকিন হাঁস পালনে এগিয়ে আসছেন। কেউ আগে কল্পনাও করেনি হাঁস, মুরগির চেয়ে বেশি ডিম দেয় বা দিতে পারে। হাঁস থেকে রীতিমতো ব্যবসা করা যায়। গ্রামের মানুষেরা এখন সুযোগ পেয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে  হাঁস পালনে খামার গড়ে তোলার। ফলে ক্ষুদ্র এই ব্যবসায়, আমাদের গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক উন্নতি ঘটছে। ঘরে ঘরে এখন অভাবও নেই। সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে এবং কারিগরি সহযোগিতায় এই হাঁস পালনের কারণেই মেরিনার দুঃখের সংসারে এখন সুখের সুবাতাস বইছে। নারী উদ্যোক্তা গ্রামীণ বধূ এই খামারি মেরিনা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সংসারে খুব অভাব ছিল। দুই ছেলে রাকিব ও রহিম। স্বামী ইব্রাহিম আলী। দিন মজুরি ও অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। মেরিনা জানালেন, ২০২১ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে মাত্র ৫টি পেকিন হাঁস পালন শুরু করি। ঋণ নেই দশ হাজার টাকা। স্বামী ও সন্তানরা আমাকে এই হাঁস লালন-পালনে সব সময় সহায়তা করেন। জানা গেল দুই বছর আগের সেই ৫টি হাঁস থেকে বর্তমানে মেরিনার খামারে ১০০টি সাদা ধবধবে পিকিন হাঁস রয়েছে। বাজারে যেতে হয় না। চাহিদা বেশি থাকায় ক্রেতারা বাড়িতে এসেই হাঁসের ডিম ৬০ টাকা হালি ধরে কিনে  নিয়ে যায়। এ ছাড়া এক একটি হাঁস বিক্রি হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। বর্তমানে এই হাঁসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিটি হাঁস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। প্রতিটি হাঁস বছরে ডিম দেয় ২০০ থেকে ২৫০টি। এই হাঁসের মাংস খেতে বেশ সুস্বাদু, পুষ্টিগুণাগুণ সমৃদ্ধ ও নরম হওয়ায় সব বয়সের লোকজন পেকিন হাঁসের মাংস খেতে পারেন। মেরিনা বেগম আরও বলেন, অন্য দেশীয় হাঁসের তুলনায় রোগ-বালাই অনেক কম, আবার ২ মাসেই ওজন আসে ৩ কেজি। ফলে পেকিন হাঁস পালন বেশ লাভজনক। তাই আমি ছাড়াও অনেক নারীরা এই হাঁস পালনে আগ্রহী হচ্ছেন। জানা যায়Ñ মেরিনা বেগমের এই হাঁস পালনে বেসরকারি সংস্থা শার্পের চিলাহাটি শাখা হতে  প্রশিক্ষণ নেন। মেরিনার ইচ্ছে ৫টি হাঁস থেকে এখন ১০০টি হাঁস হয়েছে। তেমনি আগামী দিনে তার খামারে ১০০০ পেকিন জাতের হাঁস এর খামার করবেন। হাঁসের বাচ্চার সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য হ্যাচারি গড়ে তুলবেন। দুই বছরে হাঁস পালন, ডিম ও হাঁস বিক্রি করে মেরিনা খরচ বাদে প্রায় ৫ লাখ টাকা পুঁজি করেছেন। মেরিনার স্বামী ইব্রাহিম আলী জানালেন কষ্টে সংসারে তার স্ত্রী এই হাঁস পালন করে সুখের সংসার গড়ে তুলে আলোয় আলোকিত করে তুলেছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন- শার্পের সমন্বিত কৃষি ইউনিট প্রাণিসম্পদ খাতের মাধ্যমে পেকিন জাতের হাঁস সম্প্রসারণ হচ্ছে। পানিতে না ছেড়েও এ হাঁস পালন করা যায়। এ হাঁস দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় বেশি আয় করা যায়। পেকিন হাঁস বেশ বুদ্ধিমান ও সতর্ক পাখি। এদের কাছাকাছি যে কোনো শিকারি সম্পর্কে অন্যকে সতর্ক করার জন্য তারা উচ্চৈঃস্বরে কাঁপবে। অন্যান্য মাংসের হাঁসের জাতের তুলনায় এরা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। পেকিন হাঁস বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ। এরা পোষাপ্রাণী হিসেবে খুব ভালো। সাধারণত এরা বেশ দীর্ঘ আয়ু পায়। এদের গড় আয়ু প্রায় ৯-১২ বছর। কিছু হাঁস আর বেশি দিন বাঁচে। মেরিনা দম্পতির স্বপ্ন, তারা ১০০০ পেকিন জাতের হাঁস এর খামার করবেন। বাচ্চার সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য হ্যাচারি গড়ে তুলবেন। আমরা তাদের এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরও জানান, পুরুষের পাশাপাশি এখন নারীরাও উদ্যোক্তা হচ্ছেন। নানা উদ্যোগ নিয়ে গ্রামীণ নারীরাও এখন দরিদ্রতাকে দূর করে এগিয়ে যাচ্ছেন।

রন্ধনশিল্পীর কৃতিত্ব

রন্ধনশিল্পীর কৃতিত্ব

জেমস ফাকহিলের ভাষায়, ‘রান্না যদি ভালো হয় তার প্রশংসা  দশ বছর পরেও হয়ে থাকে।’  কিন্তু এমন একজন ব্যক্তির কথা বলব এখন, যাকে তার নিজের হাতের রান্না করা খাবারের প্রশংসা শোনার জন্য খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। তিনি  হলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা অফিসের সেকশন অফিসার সাইফা আলম সঞ্চি।  ছোট বেলায় থেকে তার রান্নার প্রতি অন্য রকম ভালো লাগা ও আগ্রহ কাজ করত। তাই স্কুল, কলেজে বিভিন্ন আঞ্চলিক রান্নার প্রতিযোগিতা, পিঠা উৎসব, টিভিতে প্রচারিত রান্নার অনুষ্ঠানের কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন। ১৪১২ প্রথমবারের মতো যখন সেরা রাঁধুনি প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়েছিল, তখন কলেজপড়ুয়া সঞ্চি শখের বশেই  প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করার পর, যখন হোস্টেলের খাবার খেতে কষ্ট হতো, তখন নিজে কিছু রান্নার চেষ্টা করেন, সেই থেকে  রান্নার হাতেখড়ি। তিনি মনে করেন, ‘রান্নার মতো এমন সুনিপুণ শিল্পের গুণাবলীটি তার জীনগত।’  কেননা, তার পরিবারের মা, বিশেষ করে ফুফাদের সুনাম ছিল এলাকা জুড়ে। এমনকি তার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দাদাও নাকি নিজের প্রিয় খাবারগুলো নিজে হাতে রান্না করতে পছন্দ করতেন এবং সেগুলো অনেক সুস্বাদু হতো। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স শেষ করে কর্মজীবন ও বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করলেও, তিনি নিজের পছন্দের এবং ভালোবাসার জায়গাগুলোকে ভুলে যাননি। শ্বশুরবাড়িতে খুব অল্প দিনেই তার রান্নার সুনাম অর্জিত হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কুকিং রিয়েলিটি শো ‘সেরা রাঁধুনি’ ১৪২২ প্রতিযোগিতা শুরু হলে, তার ভোজনরসিক স্বামীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় তিনি সেখানে  অংশগ্রহণ করেন। প্রতিভা ছাই চাপা আগুনের মতো, যেকোনো সময় প্রস্ফুটিত হতে পারে। সেরা রাঁধুনি ১৪১২ তে তিনি শখের বশে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন,  ১৪২২ সে এসে দেশের হাজারো প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে, বিভিন্ন কঠিন কঠিন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে ১ম রানার্স খেতাপ জয় করে, বরিশালের মুখ উজ্জ্বল করেন। এরপর থেকে অদ্যাবধি তিনি দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে রন্ধন শিল্পী হিসেবে রান্নার অনুষ্ঠান করে চলেছেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের টিভি চ্যানেলেও কাজ করেছেন। কথায় আছে যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। প্রবাদটি সঞ্চির ক্ষেত্রে একেবারেই শতভাগ প্রযোজ্য। ছোট বেলা থেকে  যেমন তার রান্নার প্রতি আলাদা টান, ভালোবাসা, ঠিক তেমনি ব্যবসায়ী দাদার নাতনি হিসেবে ব্যবসার প্রতি ছিল দুর্বলতা। তাইতো বোনদের নিয়ে তার নিজের এলাকায় ১ম বারের মতো শুরু করে ছিলেন অনলাইন বিজনেস। যেখানে মেয়েদের থ্রিপিছসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছু পাওয়া যায়। মূলত, নিজেদের কারখানার ব্লকবাটিক ও বুটিকের পোশাক ছিল তাদের প্রধান আকর্ষণ। এগুলোর পাশাপাশি তার একটি রান্নার ইউটিউব চ্যানেল আছে, যেখানে তিনি বিভিন্ন  ঐতিহ্যবাহী দেশীয় এবং তার নিজেস্ব রেসিপিগুলো রান্না করার নিয়মসহ যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ভিডিও আপলোড করেন। উল্লেখ করার মতো বিষয়, এবারের ১৪২৯ এর সেরা রাঁধুনি প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো মেন্টরিং ধারণার চালু হয়  এবং সেখানে তিনি মেন্টার হিসেবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পান। এভাবে তিনি ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছেন নিজের আবেগ এবং ভালোবাসার জায়গাগুলোতে।  ভবিষ্যতে তিনি চান স্বেচ্ছায় তাদেরকে রান্না শেখাতে, যারা প্রকৃতভাবে রান্নাকে ভালোবাসে, যারা নাকি রান্না করে নিজেদের আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করতে চায়।

নারী স্বাস্থ্য ॥ চাই পুষ্টিকর খাবার

নারী স্বাস্থ্য ॥ চাই পুষ্টিকর খাবার

সমসংখ্যক নারীর নানামাত্রিক বিপন্ন সমাজ-সংস্কারে প্রচলিত এক অব্যবস্থাপনা। সেখানে কন্যা শিশু থেকে কিশোরী ও প্রাপ্তবয়স্ক নারীরাও রুদ্ধতার আবর্তে স্বাস্থ্যহানির বিপাকে। যেখানে সমসংখ্যক নারীর পুষ্টিগত খাবার এক আবশ্যকীয় বিস্ময়। কারণ বৈষম্যপীড়িত যে কোনো সমাজে শারীরিকভাবে কোমল ও অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া অংশ বিভিন্ন কারণে-অকারণে তারতম্যের শিকারে পড়া যেন চিরকালের এক দুর্ভেদ্য জাল বিস্তার। সেই সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই। যখন অবধি বিত্ত-নির্বিত্তের ফারাক দৃশ্যমান হয়নি সেই আদিকাল থেকেই নারী-পুরুষের বৈষম্য যেন সৃষ্টি দ্যোতনার অন্যতম কঠিন বিভাজন। এখন আমরা অতিক্রম করছি একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের মধ্য গগনে। তেমন দীর্ঘকালীন অপঘাত থেকে আজও সমসংখ্যকের মুক্তি না মেলাও সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের প্রাচীরসম দুর্বিপাক। যাকে আধুনিক শিল্প প্রযুক্তির নবদ্যুতির আবহেও ঠেকানো গেল না। প্রশ্ন উঠেছে বারে বারে। কিন্তু কোনো সদুত্তর না মেলা ও অপসংস্কারের কবল থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভবের পর্যায়। যা শুধু বিবেচনার বাইরে নয় বরং চলমান গতি প্রবাহেরও উল্টো রথ। যেখানে সামাজিক বৈষম্যই মাথাচাড়া দেয় তার সূতিকাগার যে ক্ষুদ্র পারিবারিক আঙিনা বলার অপেক্ষায় থাকেই না। পরিবার বিশ^ সৃষ্টির অতি আদিম কালের প্রথম সামাজিক ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান। সেই পরিবারের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোই ছিল মাতৃতান্ত্রিক। কারণ অবাধ স্বেচ্ছাচার আর দলগত বিবাহে পিতৃত্বের পরিচয় ছিল অজানা বিস্ময়। মায়ের গর্ভ থেকে সন্তান আসত বলে মাকেই চেনা যেত। সেই মাতৃতান্ত্রিক পরিবার কিভাবে একক পরিবারে রূপ নিল তাও ঐতিহাসিক পরিবর্তন, পরিবর্ধনের এগিয়ে চলার ভিন্ন মাত্রার ধাপ ক্রমান্বয়ে একক পরিবারে ভিত্তি নাকি নারী জাতির ঐতিহাসিক পরাজয়। বস্তুবাদী সমাজ বিজ্ঞানী এঙ্গেলস এর যথার্থ উক্তি। কারণ একক পরিবারে পিতার পরিচয় যখন নিশ্চিত আর স্বীকৃত হলো তখন থেকেই সমসংখ্যক নারীর অনেকটাই পর্দার আড়ালে চলে যাওয়ার চরম দুঃসময় শুরু হলো। পরিবারের মূল শক্তিই যখন পিতৃতান্ত্রিক তাই জন্মদাতা চিহ্নিত পিতা ও মায়ের ঊর্ধ্বে স্থান পাওয়া যেন সমাজ সংস্কারের নিয়ম বিধিতে পরিণত হলো। তবে ক্ষুদ্র আদিম নৃগোষ্ঠী এখনো বাংলাদেশেও অনেক জায়গায় মাতৃতান্ত্রিক পরিবারকে টিকিয়ে রেখেছে। যেমন ময়মনসিংহের গারো উপজাতি আজও মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। আবার চা শিল্পনগরী সিলেটের খাসিয়া পুঞ্জি ও মাতৃপ্রধান পরিবারে আধুনিক সভ্যতার আলোকে নিজেদের গোষ্ঠীগত ভাব ধারণাকে অক্ষুণ্ন্ন রেখেছে। কিন্তু আধুনিকতার পরম নির্মাল্যে বিশ^ব্যাপী যখন পিতৃতান্ত্রিকতার আদলে পারিবারিক গঠন প্রণালী সেখানে মায়ের অবদান কতখানি স্বীকৃত কিংবা অবহেলিত তাও প্রশ্ন উঠছে বারে বারে বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রতিবেদনে দৃশ্যমান হচ্ছে শুধু কন্যাশিশু বিয়ে নয় বরং পুষ্টিহীনতায় অপরিণত বিবাহ আরও ঝুঁকিপূর্ণ। দশ মাস দশ দিন জঠরে ধারণ করা মা যখন পুষ্টিসম্মত আহার স্বামী আর পুত্র-সন্তানের জন্য আলাদাভাবে তুলে রাখেন সেটাও সমাজের প্রচলিত সংস্কার। নিজে যেমন পর্যাপ্ত পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে একই তার কন্যা শিশুটিও পুষ্টিহীনতায় বেড়ে উঠছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘ব্র্যাকে’র এক গবেষণা প্রতিবেদনে দৃশ্যমান হয় একজন শিশুকন্যা প্রথম তা গর্ভধারিণী মায়ের হাতেই প্রয়োজনীয় অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়। যে মা সহজেই ভুলতে বসেন তিনিও তার সহোদর ভাইটির সঙ্গে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। গৃহিণী মাও কিন্তু পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার নিজের জন্য রাখেন না। সামনে এসে দাঁড়ায় স্বামী আর পুত্র। এটা একক পরিবারের দুঃসহ চিত্র। কিন্তু যেথ কিংবা একান্নবর্তী পরিবারে মা আর কন্যা শিশুর অবস্থা আরও দুর্বিষহ। শাশুড়ি মা কিন্তু নিজের জন্য সামান্য পুষ্টি রাখলেও পুত্রবধূর জন্য ছিঁটেফোটাও রাখেন না। শিশু- কিশোরী এমনকি অন্তঃসত্ত্বা নারীও স্বাস্থ্যসম্মত আহার থেকে ক্রমাগত বঞ্চিত হওয়ার ইতিবৃত্ত সেই পুরাকালই শুধু নয় আধুনিক শিল্পোন্নত বলয়েও তেমন বিধি এখনো চলছে। যার কারণে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে আসছে উচ্চতায় খাটো হওয়া থেকে শুরু করে রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত হওয়া শিশু-কিশোরী আর গর্ভবতী নারীর জন্য চলমান এক দুঃসহ আবর্ত। তবে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা আর গোলটেবিল বৈঠকে সোচ্চার হওয়া যেমন জরুরি সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও সময়ের ন্যায্যতা। নারীদের পুষ্টিজনিত খাবার তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক জরুরি। প্রতি মাসে ঋতুস্রাবে যে রক্তক্ষরণ তা যদিও প্রাকৃতিক এবং প্রজনন নির্ভর শক্তি তার পরেও তেমন ঘাটতি সম্পূরণও কিশোরী ও সব বয়সের নারীর জন্য নিতান্ত দায়বদ্ধতা। এখানে সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা বিশ^ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়-দায়িত্ব প্রাতিষ্ঠানিক। উপদেশ, পরামর্শ, চিকিৎসা এসব শুরু করতে হবে একেবারে পারিবারিক নির্মল আবহে। যা কি না গৃহিণী মায়ের হাত ধরেই। কন্যা-পুত্র যে সন্তানই হোক না কেন তার যথার্থ সুরক্ষা জন্মদাত্রী মায়েরই সবার আগে। আর এখন একক পরিবারের আদলে যে স্বাচ্ছন্দ্য পরিবেশ সেখানে মাকেও তার পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টি গ্রহণ করতে হবে নির্দ্বিধায়, অবলীলায়। পরিবারের গৃহিণী যদি পুষ্টিহীনতা রুগ্ন স্বাস্থ্যে বিড়ম্বিত হন তা হলে আগামীর প্রজন্ম থেকে পুরো পরিবার বিপন্নতায় দুঃসহকাল অতিক্রম করতে বাধ্য হবে। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। এমন অমৃত বাণী যুগ-যুগান্তরের। যা কিশোরী ও নারীর স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও নিতান্ত জরুরি।