ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

ভিন্নখবর

ভিন্নখবর বিভাগের সব খবর

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে হারিকেন

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে হারিকেন

‘হারিকেন’ নামটা শোনামাত্র অনেকেরই অতীতের কথা মনে পড়ে যায়। এটি গ্রামীণ ঐতিহ্য তথা এক সময়ের প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের প্রতীকগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিদ্যুৎবিহীন বৃহৎ এ এলাকায় গ্রামের পর গ্রামের অন্ধকার দূর করার একমাত্র অবলম্বন ছিল হারিকেনের আলো। হারিকেন হচ্ছে জ্বালানি তেলের মাধ্যমে বদ্ধ কাচের পাত্রে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা। এ অর্ধবৃত্তাকার বদ্ধ কাচকে  চিমনি বলা হয়। এর ভেতর তেল থেকে আলো জ্বালানোর জন্য কাপড়ের ফিতা ব্যবহার করা হয়। বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রতিটি উপজেলা বিশেষ করে চরাঞ্চল বেষ্টিত উপজেলার গ্রামগুলোতে শলাকায় অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে আলো পাওয়া যেত। আলো বাড়ানো-কমানোর জন্য বাইরের অংশে একটি চাকতি থাকে, যা বাড়ালে কমালে কাপড়ের ফিতা বা শলাকা ওঠানামার সঙ্গে আলো বাড়ে-কমে। এটি বহন করার জন্য বহিরাংশের ওপরে স্টেইনলেস স্টিলের একটি ধরনি রয়েছে। বর্তমানে আধুনিকতার অপার ছোঁয়ায় আর কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে হারিকেন বাতি। এক সময় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আলোর জন্য এটি ব্যবহৃত হতো। হারিকেন জ্বালিয়ে রাতে হাটবাজারে যেত গ্রামের লোকজন, রাতের আঁধারে একস্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে একমাত্র ভরসা ছিল হারিকেন। দোকানদাররা বেচাকেনাও করতেন হারিকেনের আলোতে। বর্ষ পরিক্রমায় অমাবস্যার রাতে ঘোর অন্ধকারে হারিকেনের আলো জ্বালিয়ে রাস্তা চলার স্মৃতি এখনো অনেকেরই স্মৃতি হয়ে আছে। এক সময় হারিকেন জ্বালিয়ে বাড়ির সামনের কাছারিঘর, উঠান কিংবা ঘরের বারান্দায় ছোট্ট শিশুরা একসঙ্গে পড়াশোনা করত। সময়-অসময়ে ডাকপিয়নরা চিঠির বোঝা পিঠে করে হাতে হারিকেন নিয়ে ছুটে চলত। এখনো গ্রামের কিছু বাড়িতে হারিকেন পাওয়া যেতে পারে, সেগুলো হয়তো ময়লা ও মরিচা পড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এখন তো ঘরে ঘরে, হাটবাজারে, রাস্তাঘাটে সর্বত্রই বৈদ্যুতিক আলোর ঝলকানি। প্রযুক্তির উৎকর্ষে হারিকেনের পরিবর্তে স্থান দখল করে নিয়েছে সোলারপ্লান্ট ও বিদ্যুৎ। জ্বালানি খাতে ব্যাপক উন্নয়নে হারিকেন এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম হয়তো কখনো জানবেও না হারিকেন কী! হারিকেনের ব্যাপক বর্ণনা পাওয়া যায় বৃহত্তর নোয়াখালীর উপজেলাসমূহ তথা চরাঞ্চল বেষ্টিত উপজেলাসমূহের প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদ থেকে। নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের অদিবাসীরা জানান, সূর্যাস্তের পর থেকেই হারিকেনের কাচের চিমনি খুলে, ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে কেরোসিন তেল ঢেলে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালাতাম। অনেক সময় আলো কমানোর জন্য যে চাকতি থাকত, সেটি বেশি ঘুরে গেলে শলাকাটি তেলের ভেতর পড়ে যেত।

সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদা আর নেই

সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদা আর নেই

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদা আর নেই। শনিবার সকালে গুলশানের বাসভবনে মারা যান তিনি (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)।  তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী, এক কন্যা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। শামসুল হুদার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ভগ্নিপতি আশফাক কাদেরী। তিনি জানান, সকাল ৯টায় বাসায় মারা যান সাবেক সিইসি। পরে তাকে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ ইউনাইটেড হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তার মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পর জানাজা ও দাফন কাজ সম্পন্ন হবে। সাবেক এই সিইসিকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।  সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।  ইসির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আশাদুল হক এ শোক বার্তা দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গভীর শোক ও দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদা আজ ইন্তেকাল করেছেন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে। আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। এক মাস আগে ঘরের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেটার চিকিৎসা চলছিল বলেও জানান আশফাক কাদেরী। এটিএম শামসুল হুদা শ্যালক আশফাক কাদেরী জানান, উনি ঢাকায় বাসায় মারা গেছেন। পরে নেওয়া হয় ইউনাইটেড হাসপাতালে। মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসলে জানাজার সিদ্ধান্ত। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন।  ২০০৭ সালে ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এটিএম শামসুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব নেন। তিনি কাজ করেন ২০১২ সাল পর্যন্ত। ভোটের আগে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন হয় এই কমিশনের সময়। সংলাপ করে নির্বাচনী আইন সংস্কার করা হয়। চালু হয় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নিয়ম ও ইভিএম। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন করে শামসুল হুদা কমিশন। ৮৭ শতাংশের বেশি ভোটারের উপস্থিতিতে সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০, বিএনপি ৩০ ও জাতীয় পার্টি ২৭ আসন লাভ করে। শামসুল হুদা ১৯৪২ সালে ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন।  স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (সিএসপি) থেকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) যোগদান করেন। তার কর্মজীবনে তিনি বাগেরহাট মহকুমার প্রশাসক, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।