ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

মানচিত্রে দৃশ্যমান অদৃশ্য ৮ম মহাদেশ ’জিল্যান্ডিয়া’

প্রকাশিত: ১৪:৪২, ১৭ জুলাই ২০২৫

মানচিত্রে দৃশ্যমান অদৃশ্য ৮ম মহাদেশ ’জিল্যান্ডিয়া’

ছবি: সংগৃহীত

কয়েক দশকের গবেষণা আর প্রযুক্তির সহায়তায় অবশেষে পৃথিবীর অষ্টম মহাদেশ হিসেবে পরিচিত ‘জিল্যান্ডিয়া’র পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এই মানচিত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ভূতত্ত্ববিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নাল ‘টেকটনিক্স’-এ।

বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ভূতত্ত্ববিদ নিক মর্টিমার, যিনি তার দল নিয়ে ২০ বছর ধরে এই মানচিত্র তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন। বিজ্ঞানীদের আশা, এই মানচিত্রের মাধ্যমে পৃথিবীর ভূ-ঐতিহাসিক গঠনের এক নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হবে।

 

বিজ্ঞানীরা জানান, আজ থেকে প্রায় ৮ কোটি ৩০ লাখ বছর আগে, এক অতিপ্রাচীন সুপার মহাদেশ ভেঙে গিয়ে গড়ে ওঠে পৃথক পৃথক মহাদেশ। সেই ভাঙনের ফলেই জন্ম নেয় জিল্যান্ডিয়া।

তবে গবেষণা বলছে, জিল্যান্ডিয়ার বয়স এর চেয়েও বেশি — কমপক্ষে ১০০ কোটি বছর। প্রকৃতির বিচারে এক পর্যায়ে এটি সম্পূর্ণরূপে পানির নিচে তলিয়ে যায়। জেগে থাকে কেবল কয়েকটি দ্বীপ, যার মধ্যে অন্যতম নিউজিল্যান্ড। আজ অবধি জিল্যান্ডিয়ার মাত্র ৬ শতাংশ ভূমি জেগে আছে; বাকি ৯৪ শতাংশই রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে।

 

 

জিল্যান্ডিয়ার অস্তিত্বের বিষয়ে প্রথম ধারণা দেন ৩৭৫ বছর আগে, ১৬৪২ সালে ডাচ নাবিক আবেল তাসমান। তবে ২০১৭ সালে বিজ্ঞানীরা এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ মহাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এরপর দীর্ঘ ছয় বছর গবেষণার পর এর সীমানা চিহ্নিত করতে সক্ষম হন ভূতত্ত্ববিদরা।

বিবিসির তথ্যানুসারে, জিল্যান্ডিয়া মহাদেশটি প্রায় ৫০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এর অপর নাম ‘তে রিউয়া মাউয়ি’। এর ভূগর্ভে রয়েছে পর্বত, উপত্যকা, আগ্নেয়গিরি—যার বেশিরভাগই নিউজিল্যান্ডের কাছাকাছি প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে অবস্থান করছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রগর্ভে ডুবে থাকার কারণে এর মানচিত্র তৈরি ছিল অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ*। তবে আধুনিক প্রযুক্তি এবং দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার ফলে এই চ্যালেঞ্জ জয় সম্ভব হয়েছে।

 

 

বর্তমানে গবেষক দলটি জিল্যান্ডিয়ার পানির নিচে ডুবে থাকা পাথর ও ভূগঠনের উপাদান বিশ্লেষণ করছেন। তাদের লক্ষ্য—এই গোপন মহাদেশের পুরোনো ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস উন্মোচন করা।এই আবিষ্কার কেবল ভূতত্ত্বের দিক থেকে নয়, সমগ্র বৈজ্ঞানিক জগতে একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি। অদৃশ্য এক মহাদেশের মুখ উন্মোচন করে বিজ্ঞানীরা দেখালেন, পৃথিবীর গভীরে এখনো অনেক ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে, যা কেবল সময় আর অধ্যবসায়ের অপেক্ষায়।

ছামিয়া

×