
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি পাসপোর্ট হাতে ইসরায়েলের মাটিতে পা রাখা—এটা শুধু নিষিদ্ধ নয়, বরং বাংলাদেশি আইনে একটি গুরুতর অপরাধ। আর সেখানে গিয়ে নিজেকে ইসরায়েল ও ইহুদি জাতির পক্ষে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পরিচয় দেওয়া? এতে প্রশ্ন জাগে—কে এই ব্যক্তি? কেন তিনি দেশের আইন ভেঙে এমন একটি রাষ্ট্রে প্রবেশ করলেন, যার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই? আর কী এমন টান ছিল, যে কারণে তিনি নিজের ধর্ম, পরিচয় ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ ত্যাগ করলেন?
এই সব প্রশ্নের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ২৬ বছর বয়সী ডা. সাদমান জামান শুদ্ধ। চট্টগ্রামের ছেলে সাদমান স্কুলজীবন শুরু করেন একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে, এরপর মহসিন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে এমবিবিএস করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে, লন্ডনের কুইন ম্যারি ইউনিভার্সিটিতে। আর সেখান থেকেই শুরু হয় তার আত্মপরিচয়ের নাটকীয় পরিবর্তন।
ডা. সাদমানের নিজের দাবি, লন্ডনে পড়তে গিয়ে তার চিন্তাধারা, বিশ্বাস এবং পরিচয়ের একটি বড় রূপান্তর ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালেই তিনি যুক্ত হন ইহুদি ছাত্র সংগঠন *Jewish Society*-এর সঙ্গে। এবং ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মান্তরিত হয়ে গ্রহণ করেন ইহুদি ধর্ম। একই বছর, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী হিসেবে তিনি পা রাখেন ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে।
বাংলাদেশিদের ইসরায়েল ভ্রমণ নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও তিনি কীভাবে সেই দেশে প্রবেশ করলেন, সে প্রশ্ন এখন সচেতন মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে সাদমানের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি সব কিছু করেছেন আইনি প্রক্রিয়া মেনেই।
তার ভাষ্য, বাংলাদেশের পাঠ্যবইগুলোতে ইহুদিদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দেওয়া হয়, কিন্তু তার পরিবার ছিল ব্যতিক্রম। বিশেষ করে তার দাদা, যিনি একসময় বলতেন—“ইসরায়েলেরও বাঁচার অধিকার আছে।” তার দাদার দেওয়া একটি বই This is for Israel-ই নাকি তার জীবন বদলে দেয়।
সাদমান বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ ও ইসরায়েলের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব। সেই লক্ষ্যেই তিনি গঠন করেছেন ২২ জন বাংলাদেশিকে নিয়ে একটি কমিটি। তার কথায়, “আমি শুধু বলছি না, কাজও করছি। আমরা ইতিহাস বদলাতে চাই।”
তিনি অংশ নিয়েছেন ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতির বাসভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে, আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে, এমনকি পড়েছেন সেই জুতা ও ঘড়ি—যা তার দাদা তাকে উপহার দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যের ব্ল্যাকপুল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ট্রামা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত।
তবে তার এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক ও ধর্মীয় মহল থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে, এমনকি মৃত্যুর হুমকিও পেয়েছেন তিনি। নিরাপত্তার কারণে তার পরিবারও তাকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকেই তিনি দ্বিতীয়বার ইসরায়েল সফর করেন।
একজন বাংলাদেশি মুসলিম যুবকের এমন ধর্মান্তর, রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গ ও রাজনৈতিক অবস্থান—এটা কতটা নৈতিক, বৈধ বা দেশপ্রেমসুলভ—তা নিয়ে এখন চলছে তীব্র বিতর্ক। কেউ একে দেখছেন ব্যক্তিস্বাধীনতা হিসেবে, কেউবা বলছেন রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র।
ছামিয়া