ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

কিডনি বিকল হওয়ার ৫টি গোপন লক্ষণ, যা পিঠে ব্যথা বা ঘন ঘন প্রস্রাব নয়

প্রকাশিত: ১৩:২৯, ১৬ জুলাই ২০২৫

কিডনি বিকল হওয়ার ৫টি গোপন লক্ষণ, যা পিঠে ব্যথা বা ঘন ঘন প্রস্রাব নয়

ছ‌বি: সংগ্রহীত।

কিডনির সমস্যা বলতেই অনেকেই ভাবেন পিঠে ব্যথা বা ঘন ঘন প্রস্রাবের কথা। তবে দীর্ঘমেয়াদী কিডনি বিকলের কিছু সূক্ষ্ম ও গোপন লক্ষণ রয়েছে, যেগুলোর দিকে আমরা সাধারণত খেয়াল করি না। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি সমস্যার তেমন কোনো ব্যথা বা স্পষ্ট উপসর্গ থাকে না। এই গোপন লক্ষণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে শরীরকে রক্ষা করা সম্ভব। নিচে কিডনি বিকলের পাঁচটি অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত উপসর্গ তুলে ধরা হলো—

১. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা:
কিডনি হরমোন এরিথ্রোপয়েটিন (EPO) তৈরি করে, যা রক্তে লাল রক্তকণিকা গঠনে সহায়তা করে। কিডনি বিকল হলে এই হরমোন উৎপাদন কমে যায়, ফলে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয়। এর ফলে দেখা দেয় চরম ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুমভাব। সাধারণ বিশ্রামে এই অবস্থা কাটে না। এটি এক ধরনের রক্তাল্পতার (anemia) লক্ষণ, যা কিডনি রোগে প্রায়শ দেখা যায়।

২. মনোযোগে ঘাটতি ও স্মৃতিভ্রষ্টতা:
কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে বর্জ্য জমে যায়, যা মস্তিষ্কের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে। এর ফলে স্মৃতি দুর্বল হয়ে পড়ে, কথাবার্তা অগোছালো হয়ে যায়, এবং দৈনন্দিন কাজের কথা মনে রাখতে সমস্যা হয়। এই উপসর্গটি শুধু ক্লান্তির কারণে নয়, বরং রক্তে টক্সিন ও অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে ঘটে, যা ব্রেইন ফগ-এর সৃষ্টি করে।

৩. ত্বকে চুলকানি (কোনো র‍্যাশ ছাড়াই):
র‍্যাশ বা দৃশ্যমান কোনো ত্বকের সমস্যার উপস্থিতি ছাড়াই তীব্র চুলকানি হতে পারে কিডনি সমস্যার কারণে। বর্জ্য শরীর থেকে সঠিকভাবে বের না হওয়ায় এই টক্সিন ত্বকে জমে গিয়ে গভীরভাবে চুলকানির অনুভূতি তৈরি করে। এটি সাধারণ অ্যালার্জি থেকে আলাদা এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।

৪. হাত, পা ও চোখের চারপাশে ফোলা:
স্বাভাবিক কিডনি শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও লবণ অপসারণ করে। কিডনি বিকল হলে শরীরে তরল জমে গিয়ে ফোলা (edema) দেখা দেয়—বিশেষ করে পায়ের পাতা, হাত ও চোখের চারপাশে। জুতা আঁটসাঁট লাগে, আঙুল ফুলে যায় এবং আংটি ছোট হয়ে পড়ে। এই ফোলা কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ধীরে ধীরে বেড়ে যেতে পারে।

৫. ক্ষুধামান্দ্য ও খাবারের স্বাদ পরিবর্তন:
কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করলে রক্তে টক্সিন জমে গিয়ে খাবারের স্বাদ বিকৃত হয়। খাবারকে অনেক সময় নোনা, তেতো বা ধাতব স্বাদের মনে হয়। এতে ক্ষুধা কমে যায়, ফলে ওজন কমে এবং শরীর দুর্বল হতে থাকে। খাবারের প্রতি এই অনীহা কিডনি বিকলের গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে, যা দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনি সমস্যা প্রাথমিক অবস্থায় নীরব ঘাতকের মতো আচরণ করে। তাই এসব গোপন উপসর্গ উপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো ধরা পড়লে কিডনি রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ—দুটিই সম্ভব।

মিরাজ খান

×