
ছবি: সংগৃহীত
সুস্থ ও সবল হৃদপিণ্ড প্রতিটি মানুষের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য। আধুনিক জীবনযাত্রা এবং ক্রমবর্ধমান শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত হাঁটার ওপর জোর দিচ্ছেন, যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য একটি চমৎকার প্রাকৃতিক ঔষধ। কিন্তু হার্ট ভালো রাখতে প্রতিদিন ঠিক কতক্ষণ হাঁটা প্রয়োজন? এ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা এবং স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য হাঁটার গুরুত্ব
হাঁটা একটি সহজলভ্য এবং কার্যকর ব্যায়াম যা হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, রক্তচাপ কমায়, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত হাঁটা হৃদপিণ্ডের পেশিগুলোকে শক্তিশালী করে এবং রক্তনালীতে চর্বি জমতে বাধা দেয়, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
প্রতিদিন কতক্ষণ হাঁটবেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি গতির হাঁটা আবশ্যক। এই ১৫০ মিনিটকে আপনি বিভিন্নভাবে ভাগ করে নিতে পারেন।
প্রতিদিন ৩০ মিনিট: সবচেয়ে প্রচলিত এবং কার্যকর পরামর্শ হলো সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন, প্রতিদিন ৩০ মিনিট দ্রুত গতিতে হাঁটা। এটি একবারে করতে পারেন অথবা দুটি ১৫ মিনিটের সেশনে ভাগ করে নিতে পারেন। এমনকি দিনে তিনবার ১০ মিনিট করে হাঁটলেও একই রকম উপকার পাওয়া যায়।
দ্রুত গতির হাঁটা: "দ্রুত গতি" বলতে এমনভাবে হাঁটাকে বোঝায় যেখানে আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস কিছুটা দ্রুত হয়, কিন্তু আপনি তখনও কথা বলতে সক্ষম হন। অর্থাৎ, আপনি হাঁপিয়ে উঠবেন না, তবে শরীরের উষ্ণতা অনুভব করবেন।
ধাপে ধাপে বাড়ান: যারা সবেমাত্র হাঁটা শুরু করছেন, তাদের জন্য প্রথমে কম সময় নিয়ে শুরু করা উচিত, যেমন প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট। ধীরে ধীরে সময় এবং গতি বাড়িয়ে ৩০ মিনিটে পৌঁছানো সম্ভব। আপনার শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী আপনি সময় আরও বাড়াতে পারেন। সাধারণভাবে, যত বেশি হাঁটা যাবে, তত বেশি উপকারিতা পাওয়া যাবে।
হাঁটার অন্যান্য উপকারিতা
হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ছাড়াও নিয়মিত হাঁটার আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে:
ওজন নিয়ন্ত্রণ: হাঁটা ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে, যা ওজন কমাতে এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সহায়ক।
রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ: এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ হাঁটা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: হাঁটা মানসিক চাপ কমায়, মেজাজ ভালো রাখে এবং ঘুম উন্নত করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: নিয়মিত হাঁটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
হাড় ও পেশির শক্তি বৃদ্ধি: এটি হাড় এবং পেশিগুলোকে মজবুত করে, যা আর্থ্রাইটিস-এর মতো সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক।
ডাক্তারের পরামর্শ: যদি আপনার আগে থেকেই কোনো হৃদরোগ বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে, তাহলে হাঁটার রুটিন শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সঠিক জুতো: হাঁটার সময় আরামদায়ক এবং সঠিক জুতো ব্যবহার করুন।
পানি পান: হাঁটার আগে, হাঁটার সময় এবং পরে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
পরিশেষে বলা যায়, হৃদপিণ্ডকে সুস্থ ও সবল রাখতে হাঁটা একটি সহজ এবং কার্যকরী উপায়। এটি দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে নিলে কেবল হৃদরোগের ঝুঁকিই কমে না, বরং সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়।
ফারুক