ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

গণপরিবহনের ভাড়া

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ১৬ জুলাই ২০২৫

গণপরিবহনের ভাড়া

পৃথিবীর সব জনপদে গণমানুষের জন্য জনবান্ধব হলো গণপরিবহন সেবা। ধনী দেশগুলোয় প্রতিটি পরিবারেই একাধিক গাড়ি থাকলেও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় আর্থসামাজিক বাস্তবতার কারণে ব্যক্তিকেন্দ্রিক তো দূরের কথা, পারিবার প্রতিও একটি গাড়ি রাখা সম্ভব হয় না। জীবন জীবিকার সন্ধানে মানুষেরা, নিরুপায় হয়ে গণপরিবহনকেই সাদরে গ্রহণ করে।
বাংলাদেশে আমাদের নাগরিক জীবনে মোটাদাগে যতগুলো সমস্যা আছে, গণপরিবহন তার মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে মেগাসিটি ঢাকাসহ বড় বড় শহরগুলোয় কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা গণপরিবহন ব্যবহার করে থাকেন।
বাংলাদেশে পরিবহন মালিকদের বড় একটি অংশ বাসভাড়া বাড়ানোর দাবিতে আবারও সরব হয়েছেন। তাদের দাবি, পরিচালন ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেল ও আমদানিনির্ভর যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক বাজেটে নতুন কর সংযোজনের ফলে, তাদের ব্যবসা গভীর সংকটে পড়েছে। অন্যদিকে বিআরটিএ বলছে, গণমানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে এই মুহূর্তে বাস ও পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মালিকদের কেউ কেউ আন্দোলনের ইঙ্গিতও দিচ্ছেন। আমরা মনে করি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে,  জনস্বার্থের বিষযটি মাথায় রেখে সব পক্ষকে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। বাস ভাড়া ও গণপরিবহন ব্যয় বেড়ে গেলে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ জনগণ। তাই আর্থ-সামাজিক বিশৃঙ্খলা এড়াতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে যৌথভাবে এখনই আশু ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
পরিবহন মালিকদের দাবি, ডলারের দাম এক বছরের ব্যবধানে ৮৪ থেকে ১২১ টাকা হয়েছে। ফলে গাড়ির আমদানি করা যন্ত্রাংশের দাম প্রায় দেড় গুণ বেড়েছে। পাশাপাশি টায়ার-টিউব, লুব্রিক্যান্ট, ইঞ্জিনের যন্ত্রপাতি, ব্রেকশুসহ বিভিন্ন উপকরণের দামও অনেক বেড়েছে। পরিবহন মালিকরা ব্যবসা পরিচালনায় আর্থিক চাপের মুখে পড়ছেন। এমন বক্তব্যের বাস্তবতার পাশাপাশি পরিবহন খাতে দেশে সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হয়। স্বাধীনতার পর গত ৫৪ বছরে যখন, যে সরকারই ছিল তাদের শ্রমিক নেতারা এখান থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে, যা ধ্রুব সত্য।
যদিও পরিবহন খাতে গণচাঁদাবাজি নিয়ে সরকারের কোন নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান নেই, তবে দেশের বিভিন্ন পরিবহন মালিকদের সংগঠন ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, প্রতিদিন সারাদেশে গড়ে ৫০ হাজারের বেশি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে। প্রতিটি ট্রিপে গড়ে ৫০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়, যা দিতে হয় হাইওয়ে, বন্দর, পুলিশ, শ্রমিক ইউনিয়নের কথিত উন্নয়ন ফান্ডে। বাস-লেগুনা, সিএনজি অটোরিক্সাসহ অন্যান্য গণপরিবহনের চাঁদার হিসাব ধরলে, তা দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। যার পুরোটাই নেয়া হয় যাত্রী ও ভোক্তাদের পকেট কেটে। আমাদের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব ব্যাপক ও বিস্তর। পরিবহন খাতের এ অস্বচ্ছতার দরুন, দেশে মূল্যস্ফীতি ও পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায় ফলে জনজীবনের ছন্দ হারিয়ে যায়। লক্কড়-ঝক্কড় ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্সবিহীন চালকের আধিক্য, তলানিতে থাকা যাত্রীসেবাÑ এই হলো বাস্তবতা। তার ওপর করা হচ্ছে ভাড়া বাড়ানোর অযৌক্তিক দাবি। এটা কি সুবিবেচনাপ্রসূত?

প্যানেল/মো.

×