ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

বোঝা নয় সম্পদ

সাকী মাহবুব

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ১৬ জুলাই ২০২৫

বোঝা নয় সম্পদ

প্রবীণরা সমাজের অতীতের জীবন্ত ইতিহাস, যাঁদের মুখে লেগে থাকে হাজারো অভিজ্ঞতার রঙিন ক্যানভাস। তাঁরা আমাদের শেকড়, আমাদের পূর্বসূরি, যাঁদের হাতে গড়া আমাদের আজকের পথ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই মানুষগুলো আজ যেন হয়ে উঠেছেন সমাজের বোঝা- এ এক নির্মম বাস্তবতা। প্রবীণের যত্ন শুধু পারিবারিক দায়িত্ব নয়, এটি মানবিকতা ও নৈতিকতার পরীক্ষাও বটে। এক সময় যাঁরা আমাদের হাত ধরে চলতে শিখিয়েছেন, আজ তাঁরাই হাঁটতে পারেন না; যাঁরা একদিন আমাদের মুখে আহার তুলে দিয়েছেন, আজ তাঁরাই পরের সাহায্যে খেতে চান। এই চিত্র হৃদয়ে গভীর বেদনাবোধ জাগায়। ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- সব ধর্মেই প্রবীণের প্রতি সম্মান ও যত্নের কথা বলা হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে, তাদের একজন অথবা উভয়ের প্রতি কখনো ‘উহ্’ শব্দটি পর্যন্ত বলো না এবং তাদের ধমক দিও না। তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো।’ সাহিত্যেও প্রবীণের স্থান গুরুত্বপূর্ণ। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বৃদ্ধ বয়স যেন এক নিঃসঙ্গ নদীর মতো, যেখানে কেউ আসে না, শুধুই স্মৃতির স্রোত বয়ে চলে। প্রবীণের যত্ন মানে শুধুই ওষুধ-পথ্য নয়; বরং ভালোবাসা, সময় দেওয়া এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নাম। একটি কোমল কথা, একটি হাসিমুখ, একটি শান্তিময় উপস্থিতি- এসবই প্রবীণের জীবনে আশীর্বাদের মতো। তারা চায় না ধন-সম্পদ, তারা চায় একটু মনোযোগ, একটি স্পর্শ, একটি প্রশ্ন ‘কেমন আছেন?’ সমাজ যদি প্রবীণদের অবহেলা করে, তবে তা তার নিজের শিকড় কেটে ফেলার শামিল। কারণ প্রবীণরাই তো অভিজ্ঞতার বাতিঘর, জীবনের পাঠশালা। আমরা যদি আজ প্রবীণদের পাশে না দাঁড়াই, কাল আমাদের পাশে কেউ দাঁড়াবে না। যত্ন শুধু দায়িত্ব নয়, এটি হৃদয়ের ঋণ পরিশোধ। আসুন, প্রবীণদের প্রতি ভালোবাসা হোক আমাদের সমাজের সৌন্দর্য, এবং তাদের যত্ন নেওয়া হোক আমাদের জীবনের এক নৈতিক দীপ্তি। তাঁদের মুখে হাসি ফোটানোই হোক আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন।
পাংশা, রাজবাড়ী থেকে

প্যানেল/মো.

×