ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

মতামত

ডিজিটাল পেমেন্ট কিউআর কোড ব্যবহারের সতর্কতা

ডিজিটাল পেমেন্ট কিউআর কোড ব্যবহারের সতর্কতা

বর্তমান সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পেমেন্টের অন্যতম জনপ্রিয় কিউআর কোড ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, যা আপনাকে সাইবার জালিয়াতি থেকে রক্ষা করতে পারে। কিউআর কোড স্ক্যান করার আগে নিশ্চিত করুন যে এটি একটি নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে এসেছে। সন্দেহজনক কিউআর কোড স্ক্যান করা থেকে বিরত থাকুন এবং অপরিচিত উৎস থেকে আসা লিঙ্কগুলিতে ক্লিক করা উচিত নয়। এছাড়াও, ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ক্রেডিট কার্ডের বিবরণ বা পাসওয়ার্ড প্রবেশ করার আগে, সেই সাইটের নিরাপত্তা যাচাই করা উচিত। নিরাপদ থাকতে, কিউআর কোড ব্যবহারের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখবেন:

মতামত বিভাগের সব খবর

শেফফিল্ডের ‘শব্দ উৎসবে’ একদিন

শেফফিল্ডের ‘শব্দ উৎসবে’ একদিন

লন্ডনের রাস্তায় তখন রবিবারের সকাল। ১৩ জুলাই। সাড়ে ৮টার মতো বাজে। প্রতিদিন এ সময়ে রাস্তায় রাস্তায় জীবনের মিছিল নেমে যেত, আজ এখনো সবকিছু ঝিমোচ্ছে। লোক ও গাড়ি চলাচল দুই-ই ফাঁকা। দোকানপাট বন্ধ। কফিশপের মনমাতানো গন্ধ শহরের বাতাসে পাক খেয়ে খেয়ে উড়ে যেতে শুরু করেছে কেবল। ঠিক এমন সময়, ইস্ট লন্ডনের মাইলঅ্যান্ড এলাকা থেকে এক বাসভর্তি আমরা ত্রিশ জন- কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কণ্ঠশিল্পী, অভিনয়শিল্পীদের একটি দল,   চলেছি লন্ডন ছেড়েদূরে, শেফিল্ড শহরে। যুক্তরাজ্যের মানচিত্রে শেফিল্ডের অবস্থান সাইথ ইয়র্কশায়ার কাউন্টিতে। লোকসংখ্যা সাড়ে পাঁচশ’ হাজারের মতো। বাঙালির সংখ্যা সরকারি হিসেবে চার হাজার দুইশ ছেষট্টি জন, যা কিনা ওখানকার মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। শেফ নদের তীরে গড়ে ওঠা এই শহর ‘স্টিলের নগরী‘ হিসেবে খ্যাত। শিল্পবিপ্লবের সময়ে এখানে অনেকগুলো স্টিল-শিল্প নির্ভর কারখানা গড়ে উঠেছিল। এখানকার ‘শেফিল্ড স্টিল’ এবং কাটলারি (ছুরি, কাঁচি ইত্যাদি) এক সময় আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ছিল। কালের বিবর্তনে অবশ্য ব্রিটেনের অন্য সব জায়গার মতোই শেফিল্ডও তার কারখানাগুলো গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। অতীতের বেশ কিছু স্মৃতি চিহ্ন বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এ শহর অতি মনোরম সবজ বন-বনানীতে ঘেরা। এখানে প্রায় ২৫০টিরও বেশি পার্ক, বন্য টিলা, উন্মুক্ত সবুজ বনাঞ্চল আছে যার পরিমাণ ব্রিটেনের অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে বেশি। অতি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল-থিয়েটার, মিউজিয়াম, লাইভ মিউজিক, ইংলিশ ফুটবলের দুটি ঐতিহ্যবাহী দল, দুটো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়- সবমিলিয়ে অতি জমজমাট একটি সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক শহরে আজ আমাদের নিমন্ত্রণ। শেফিল্ড সাহিত্য একাডেমির বার্ষিক আয়োজন সাহিত্য উৎসবে যোগ দিতে চলেছি আমরা। আয়োজকরা অনুষ্ঠানটির নামকরণ করেছেন: শব্দ উৎসব। শেফিল্ড সাহিত্য একাডেমির সেøাগানটি হচ্ছে: এ শহরের হৃদয় রেখা, বাংলাভাষার নিঃশব্দ লেখা। পুরো ৪ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে (লন্ডন থেকে শেফিল্ডের দূরত্ব প্রায় ১৬৭ মাইল) যখন অকুস্থলে পৌঁছালাম, মনে হলো, তারা চাইলে সেøাগানটি এবার বদলে দিতে পারেন। হলভর্তি মানুষের কলকাকলিতে মুখরিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছেন যারা গত তিন-চার বছর ধরে নিয়মিত ভাবে, তারা সেøাগানে ‘নিঃশব্দ’ শব্দটি বদলে ‘সশব্দ’ বসিয়ে দিতে পারেন এবার অনায়াসে।

জুলাই আন্দোলনে ঢাকার প্রথম শহীদ

জুলাই আন্দোলনে ঢাকার প্রথম শহীদ

আমার ভাইয়া শহীদ ফারহান ফাইয়াজ এখন এই নামেই পরিচিত। ভাইয়ার পুরো নাম মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া ফাইয়াজ। গত ১৮ জুলাই, ২০২৪ তারিখে ভাইয়া ‘শহীদ ফারহান ফাইয়াজ সড়ক’ (পুরানো ধানমন্ডি ২৭) এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচারী বাহিনীর গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয় আর সে সময়েই তার জীবনের আলো নিভে যায়। ভাইয়া ছিল ঢাকার প্রথম শহীদ। আমার ভাইয়া ছিল আমার থেকে ১ বছর ১০ মাসের বড়। ওর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। এখনো অবশ্য ১৭ ওর বয়স কারণ ও তো ১৭ তেই আটকে থাকবে... ভাইয়া ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। আমরা ছিলাম এক ভাই এক বোন। আর এখন? আমি তো একা, খালি হাহাকার জীবনে আমার একমাত্র ফুলের মতো জলজ্যান্ত ভাইকে স্বৈরাচারী বাহিনী টার্গেট করে ঠিক বুক বরাবর গুলি করে মেরেছে!! আমার ভাই ছোট থেকেই ছিল খুব মেধাবী... তার ছোট একটা উদাহরণ আপনাদের দেই  ভাইয়া কে যখন ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি করা হয় তখন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে ভাইয়া ভর্তি পরীক্ষায় দশম স্থানের অধিকারী হয়। শুধু এটা না ওর স্কুলের শিক্ষকদের কাছে কিংবা যত শিক্ষক এখন পর্যন্ত ভাইয়াকে পড়িয়েছে প্রত্যেকের কাছেই ওর বেশ সুনাম রয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষকই বলত ভাইয়া কে কোনো পড়া একবার দেখিয়ে দিলে দ্বিতীয়বার তা আর দেখানো লাগতো না... আমার ভাইয়া কখনো বই নিয়ে সারা দিন বসে থাকত না তবে যে সময়ই পড়ত খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ত আর খুব অল্পতেই কোনো পড়া ক্যাপচার করে ফেলতে পারতো ব্রেইনে.. মেধা যেমন ছিল ঠিক তেমনি দেখতে শুনতেও ছিল খুব নম্র, ভদ্র, উদার, মানবিক। ভাইয়া যেখানেই যেত সবাই তাঁকে পছন্দ করত। করবেই না বা কেন? আমার যেই ভাই কখনো কারও সঙ্গে ঝগড়া তো দূরে থাক গলা উঁচু করেও কোনো দিন কথা বলেছে। এরকম মন্তব্য পাওয়া অসম্ভব। নিজের ভাই বলে আমি বলছি না আমার ভাই না আসলে একটা ফেরেশতা ছিল বটে... কেননা ওর চেহারা তে একটা নূর দেখতে পেতাম আমরা সবসময় আর নূর হবেই না বা কেন ও তো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত তাহাজ্জুদসহ। আর ছিলই তো নিষ্পাপ একটা বাচ্চা। ভাইয়ার বন্ধু-বান্ধবরা আর টিচার ভাইয়ার সৌন্দর্যের জন্য তাকে দুষ্টমি করে ধলা বলেই ডাকত। ভাইয়া ছোট থেকেই তার স্কুলের সাইন্স ফেস্টের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। সে প্রত্যেক বছর ফেস্টে পার্টিসিপেট করত আর অনেক ক্রিয়েটিভ জিনিস বানাত কখনো কখনো কোনো কিছুর হেল্প ইউটিউব থেকে নিত আর সেভাবেই বহু আকর্ষণীয় জিনিস বানাতো। আর গত বছর (ফেব্রুয়ারিতে) ভাইয়া নিজে সাইন্স ফেস্টের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছিল ফেস্ট টাকে পরিপূর্ণভাবে ম্যানেজ করার জন্য। ও ছিল সাইন্স ক্লাবের একটিভ মেম্বার, ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার আলাপও চলছিল। বড় হয়ে হতে চাইত সায়েন্টিস্ট কিংবা গবেষক তো কখনো জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার। যখন ভাইয়া কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে তখন থেকেই সে ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স অর্থাৎ যেই বই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরে সেই বই সে কলেজে থাকতেই পড়ত। এরকম বহু একাডেমিক বই সে কলেজে থাকতেই পড়ত... এছাড়াও সে বিভিন্ন রকমের বই পড়ত... ভাইয়ার ইচ্ছা ছিল এইচএসসি এক্সাম শেষ করে হায়ার এডুকেশন এর জন্য টক তে চলে যাওয়া যদিও বাবা প্রথমে রাজি হয়নি... পরে ভাইয়া যখন বাবাকে চ্যালেঞ্জ করে যে সে এইচএসসির পর বুয়েটে এক্সাম (এর জন্যই ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স বইটা পড়ত) দিয়ে চান্স পেয়ে দেখাবে তবে তাও সে টক তেই পড়তে যাবে এবং পড়া শেষ করে আবার দেশে ফিরে এসে দেশের মানুষের জন্য কিছু করবে তখন বাবা রাজি হয়... আর তারপর সেরকম প্রস্তুতিই নেওয়া হচ্ছিল কিন্তু তারপর তো... এবার ভাইয়ার উদারতার গল্প বলা যাক... গত বছর যখন ভাইয়া সাইন্স ফেস্টে ভলান্টিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তখন ও নিজে না খেয়ে ওর নিজের খাবারের প্যাকেট টাই এক জুনিয়র ভাইকে দিয়ে দেয়। এমনকি কোভিড-১৯-এর সময়েও রাস্তার বহু অসহায় মানুষকে সে খাবার বিতরণ করে। এটাতো জাস্ট উদাহরণ দিলাম এরকম বহু বৈশিষ্ট্যে ভাইয়ার মধ্যে বিদ্যমান ছিল যা বলে শেষ করা যাবে না। বলা যায় ভাইয়ার আদর্শে মানবতা ও উদারতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল। যে সব সময় নিজের কথা না ভেবে পরের কথা ভাবতো আর ছিলই তো পরোপকারী। নিজের সর্বস্ব দিয়ে পরকে ভালো রাখতে চেষ্টা করত। ঠিক যেমন পরকে ভালো রাখতে গিয়েই সেই অভিশপ্ত ১৮ জুলাই, ২০২৪ ভাইয়া শহীদ হয়!! সেদিন ছিল দুর্বিষহ ১৮ জুলাই যেদিন ভাইয়া সকাল ১০:৩০ টার দিকে জিদান ভাইয়ার (ভাইয়ার বন্ধু) ফোন কল পেয়ে ঘুম থেকে উঠে যায় আর তারপর তাড়াহুড়া করে গোসল করে রেডি হয়ে কলেজের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে  আম্মুকে সালাম দিয়ে ১১:৩০ টার দিকে বের হয়ে যায়। আম্মু অনেকবার বারণ করেছিল কিন্তু ও শুনেনি... তারপর তো আম্মু আর আমি অনেক টেনশনে পড়ে যাই চারদিক থেকে অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ শুনতে পাই। ভাইয়া কে আম্মু কল করে ১ টার একটু পর তার পরও কল রিসিভ করে বলে ও ধানমন্ডির রাপা প্লাজার ওখানে লুকিয়ে আছে আর আম্মু তখন বলে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসতে। তারপরেই কলটা কেটে যায়। আবারও আম্মু অনেকবার কল করে কিন্তু তারপর আর কল ধরে না ভাইয়া। ভাইয়া নাকি ধানমন্ডি ২৭ জেনেটিক প্লাজার সামনে ওর জুনিয়র ভাইদের কে সামনে থেকে সরাতে গিয়ে ১:৪৫ থেকে ২:১৫ টার মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয় আর ২:৩০ টার দিকে ভাইয়ার ফ্রেন্ড ওয়াসিফ ভাইয়া বাবাকে কল করে জানায় আর বাবা দ্রুত সিটি হসপিটালে ছুটে যায়... তারপর আর তো পেল না বাবা ভাইয়াকে... ভাইয়ার নাম তখন শহীদের লিস্টে যোগ হয়ে যায়... ঢাকার প্রথম শহীদ ফারহান ফাইয়াজ!!! ভাইয়া শহীদ হওয়ার পর পরই আমার আন্টি নাজিয়া খান ফেসবুকে একটি পোস্ট করে যেখানে লিখা ছিল যে This is my Farhan Faiyaaz.  He is dead now.I want justice.  এই  পোস্ট ১৮ জুলাই যখন বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে তখন সবার মনে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কেউ আর নিজেকে ঘরে আটকিয়ে রাখতে পারে না নির্বিশেষে সবাই মা, বোন, ভাই, শিক্ষক, পেশাজীবীরা রাজপথে নেমে পরে বিচারের জন্য। ভাইয়ার মৃত্যুর পর আন্দোলনে যোগ হয় নতুন মাত্রা। কোটা সংস্কার আন্দোলন রূপ নেয় জুলাই গণঅভ্যুত্থান হিসেবে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো ভাইয়ার ঘটনার পরেই জানতে পারে বাংলাদেশের এই করুণ পরিস্থিতি সম্পর্কে। তারপর তারা যখন খুনি হাসিনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তখনই খুনি হাসিনা ১০ দিনের জন্য ইন্টারনেট অফ করে দেয় আর এরই মধ্যে সে গণহত্যা চালায় এমনকি অনেক লাশ গুম করে পুড়িয়েও ফেলেছিল। বিল, ঝিল ও নদীতে ফেলে দিয়েছিল। এইতো ১৮ জুলাই যখন আমরা ভাইয়াকে দাফন করার জন্য আমাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলাম তখনো আমাদের গাড়িতে হামলা করা হয় এবং কাঁচ ভেঙে দেয় আওয়ামী লীগের বাহিনীরা। আমার খালা আমার পাশেই বসেছিলেন আর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গাড়ি লক করা না থাকায় গেট খুলে আমার খালাকে গাড়ি থেকে নামানো শুরু করে। ওরা যদি জানত আমার ভাই একজন শহীদ তাহলে হয়ত কখনো ভাইয়াকে আর দাফন করতে পারতাম না... আমরা ওদেরকে ডেথ সার্টিফিকেট দেখিয়ে কোনো মতে যেতে পারি নারায়ণগঞ্জ।  আর আমাদের দাফন করার টাইম ও মাত্র ৪০ মিনিট দেওয়া হয়ছিল আর দেখেন ইতিহাসের কি নির্মম পরিহাস হাসিনা যখন দেশ ছেড়ে পালায় তখন ও তাঁকে এই রকম সময়ই হাতে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। আর ১৮ জুলাই যেহেতু আমার ভাইয়ার ঘটনা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে তখন কিন্তু অনেকেই বাইরের দেশগুলোতে আমার ভাইয়ার ছবি নিয়ে প্রোটেস্ট করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বে হাসিনা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হয় এবং আন্দোলন বেগবান হয়, এরই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। পরিশেষে আমি বলতে চাই আমি আসলে জানি না যে দেশ আসলে এই শহীদের রক্তের ঋণ কখনো শোধ করেতে পারবে কিনা। আমার ভাই তো দেশের জন্য সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে জীবন দিয়েছিল দেশের কথা ভেবে দেশের মানুষের কথা ভেবে। আর ওর ফেসবুক বায়ো তেও লিখা ছিল one day you will leave this world behind, so live a life you will remember. অর্থাৎ একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে তাই এমন জীবন গড় যাতে মৃত্যুর পরেও মানুষ তোমাকে মনে রাখে। মানুষ কত দিন মনে রাখবে জানি না কিন্তু আমাদের পরিবারের জন্য এই ক্ষত সরা জীবনের জন্য অপূরণীয়। আমি বলব আমার পরিবারই শুধু ভাইয়াকে হারায়নি এই পুরা জাতি একটা রত্ন কে হারিয়ে ফেলল এই দেশ থেকে!!  এর বিচার দেখার জন্যই শুধু অপেক্ষা করি এখন প্রতিদিন জানি না এই অপেক্ষা কবে শেষ হবে আর ভাইয়ার সঙ্গে আবার কবে দেখা হবে... দেখা হবে জান্নাতের সিঁড়িতে। দেখা হবে আরশে আজিমের অভিমুখে। সেই অপেক্ষায়...

ফুসফুসের ক্যান্সার ॥ সচেতনতা ও করণীয়

ফুসফুসের ক্যান্সার ॥ সচেতনতা ও করণীয়

ফুসফুসের ক্যান্সার একটি ভয়াবহ রোগ। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ মানুষ এই রোগে মৃত্যুবরণ করেন। অনেক সময় রোগ নির্ণয়ের এক বছরের মধ্যেই মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। তবে আশার কথা হলো, যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা যায় এবং যথাযথ চিকিৎসা শুরু করা হয়, তাহলে এই রোগ সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য। ক্যান্সার কেন হয় আমাদের দেহ গঠিত হয়েছে ৭৫ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ দিয়ে। এই কোষগুলো নির্দিষ্ট নিয়মে বিভাজিত হয়ে বৃদ্ধি পায় এবং একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা পর্যন্ত পৌঁছালে বৃদ্ধি থেমে যায়। এই বৃদ্ধির পেছনে কাজ করে ক্রোমোজোমে থাকা জিন। কিন্তু কোনো কারণে যদি কোষ এই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে, তখন তা ক্যান্সার সৃষ্টি করে। এই অনিয়ন্ত্রিত কোষ সাধারণত শরীরের কোনো কাজেই আসে না বরং সেগুলো স্বাভাবিক কোষের কাজে বাধা সৃষ্টি করে। জিন অকেজো হয়ে যাওয়ার জন্য অনেক সময় জন্মগত দুর্বলতা দায়ী হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী পরিবেশগত ক্ষতিকর উপাদান। ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ কি কি ফুসফুসের ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারণ হলো ধূমপান। ধূমপানের ধোঁয়ায় প্রায় ৪০০০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যার মধ্যে অন্তত ৬০টি সরাসরি ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ধূমপানের পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো দূষিত বায়ু। কল-কারখানা, যানবাহনের ধোঁয়া, গাছপালা নিধন, জলাশয় ভরাট এবং অতিরিক্ত জনঘনত্ব পরিবেশ দূষণের অন্যতম উৎস। এই দূষণে থাকা অতিক্ষুদ্র কণা ও গ্যাসীয় পদার্থ ফুসফুসের ক্ষতি করে এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি ফুসফুসের ক্যান্সারের বেশকিছু লক্ষণ থাকে যা রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে ইঙ্গিত দিতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কাশি, যা সাধারণ ওষুধে সারে না এবং কখনো কখনো রক্তসহ দেখা যায়, তা ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান উপসর্গ। যদি তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি থাকে, তাহলে তা গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। বুকে একদিকে ব্যথা থাকা এবং শ্বাস নিতে গেলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া, হালকা থেকে মাঝারি জ্বর যা রাতে বেশি হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট- এই উপসর্গগুলোও ফুসফুস ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে। কখনো কখনো ফুসফুসের বাইরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য অঙ্গের সমস্যাও দেখা দেয়, যেমন মস্তিষ্কে ছড়ালে মাথাব্যথা বা মেরুদণ্ডে ছড়ালে পিঠব্যথা। আবার কিছু ক্যান্সার কোষ হরমোন জাতীয় পদার্থ নিঃসরণ করে যা শরীরে ক্যালসিয়াম বাড়িয়ে দেয় এবং হাড় দুর্বল হয়ে যায়। রক্তশূন্যতা, ক্ষুধামন্দা এবং দুর্বলতাও ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ক্যান্সার সন্দেহ হলে কি করণীয় ফুসফুসে ক্যান্সার সন্দেহ হলে রোগ নির্ণয়ের প্রথম ধাপ হলো বুকের সিটিস্ক্যান। যদি সেখানে সন্দেহজনক কিছু দেখা যায়, তাহলে প্রয়োজন হয় টিস্যু সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করা, যাকে বলা হয় বায়োপ্সি ও হিস্টোপ্যাথলজি। কখনো কখনো ক্যান্সারের ধরন নিশ্চিত করার জন্য ইমিউনো-হিস্টোকেমিস্ট্রি নামক বিশেষ পরীক্ষা প্রয়োজন হয়। যদি টিউমার ফুসফুসের কেন্দ্রের দিকে থাকে, তাহলে ব্রঙ্কোস্কোপি করে সহজেই টিস্যু সংগ্রহ করা যায়। রোগ শনাক্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপ হলো ক্যান্সার শরীরে কতটা বিস্তৃত হয়েছে তা নির্ধারণ করা। এই বিস্তৃতির ভিত্তিতে ক্যান্সারকে চারটি স্তরে ভাগ করা হয়। স্টেজ ১ এবং ২ বোঝায় যে ক্যান্সার ছোট আকারের এবং কেবল ফুসফুস বা তার কাছাকাছি লসিকা গ্রন্থিতে সীমাবদ্ধ। স্টেজ ৩ বোঝায় বড় আকারের টিউমার অথবা দূরবর্তী লসিকা গ্রন্থিতে বিস্তার। আর স্টেজ ৪ বোঝায় ক্যান্সার শরীরের অন্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা কি ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি। তবে সব ধরনের চিকিৎসার কার্যকারিতা নির্ভর করে ক্যান্সারের স্টেজ ও রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে অর্থাৎ স্টেজ ১ বা ২ এ থাকলে অপারেশনের মাধ্যমে রোগীকে পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব এবং রোগী একটি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারেন। কোথায় অপারেশন করাবেন বর্তমানে দেশে অত্যাধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে এবং অভিজ্ঞ থোরাসিক সার্জনরা রয়েছেন। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হসপিটালে আন্তর্জাতিক মানের ক্যান্সার সার্জারি হচ্ছে নিয়মিত। বুকের অপারেশন নিয়ে একসময় সাধারণ মানুষের মাঝে ভয় থাকলেও আধুনিক যন্ত্রপাতি, নিরাপদ অ্যানেসথেসিয়া এবং অভিজ্ঞ সার্জনের কারণে এখন এই অপারেশন অনেক নিরাপদ, স্বাভাবিক এবং তুলনামূলকভাবে খরচও কম। তবে মনে রাখতে হবে, ফুসফুস ক্যান্সারের অপারেশন একটি প্রক্রিয়া যেখানে বিশেষ দক্ষতা প্রয়োজন হয়। শুধু টিউমার অপসারণ করলেই হয় না, ক্যান্সারের সম্ভাব্য বিস্তার রোধে নির্দিষ্ট লসিকা গ্রন্থিগুলোকেও (যেমন, স্টেশন- ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ইত্যাদি) অপসারণ করতে হয়। একজন দক্ষ থোরাসিক সার্জনই কেবল এই বিষয়গুলি ভালোভাবে অনুধাবন করে যথাযথভাবে অপারেশন করতে পারেন। যারা ধূমপায়ী, অতীতে ধূমপায়ী ছিলেন, পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস আছে অথবা কল-কারখানায় কাজ করেন, তাদের বছরে অন্তত একবার লো-ডোজ সিটিস্ক্যান করানো উচিত। এই স্ক্যানের রেডিয়েশনের মাত্রা কম হলেও এটি প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুসের অসুস্থতা শনাক্ত করতে সাহায্য করে। ফুসফুস ক্যান্সার ভয়াবহ হলেও সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময় সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গ তেমন স্পষ্ট না হলেও, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, রক্তসহ কাশি, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্তই হতে পারে জীবন বাঁচানোর চাবিকাঠি।

নকল ও ভেজাল পণ্য বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি

নকল ও ভেজাল পণ্য বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি

গত ৯ জুলাই একটি প্রোগ্রামে নাস্তায় অন্যান্য ফুড আইটেমের সঙ্গে আপেলও খেতে দেওয়া হয় আমাদের। কিন্তু আমি আপেলটি অফিসে নিয়ে আসি এবং টেবিলে রেখে দিই। আজ ১১ দিন অতিবাহিত হলেও আপেলটি সেইভাবে আছে এবং একটুও নরম হয়নি। তাহলে বুঝেন কি শক্তিশালী আপেল আমরা বাজার থেকে কিনে খাই! যা রীতিমতো ভয়ানক। আসলে আমরা বাজার থেকে ফল কিনে খাই না, খাই বিষ। অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল বা ফলে রাসায়নিক মেশায় যা মানবদেহের জন্য চরম হুমকি। এভাবে আমাদের সন্তানকে ফলের পরিবর্তে বিষ খাওয়াই। আমাদের বাজার মনিটরিং এতটা দুর্বল! যা অসৎ এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এসব দুর্বলতার কারণে বাজারে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে এবং নানা ধান্দাবাজ সমাজে তৈরি হয়।  গত ২২ মার্চে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কর্তৃক পরিচালিত কয়েকটি অভিযানে বাজারে আমদানিনিষিদ্ধ, নকল, ভেজাল প্রসাধনী ও স্কিনকেয়ার পণ্য ধরা পড়ে। নিয়মিতভাবে এ ধরনের পণ্যের বিক্রি, বিপণন ও বিতরণ রোধে সংস্থাটির অভিযান চালানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে আমদানি বা বিপণন করা কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার পণ্যের অর্ধেকই ভেজাল ও নকল বলে অভিযোগ রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এই অভিযোগ সত্য হিসেবে প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু কঠোর বিচার হয় না। তাই এসব অপরাধের প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভেজাল ও গুণমানহীন বিদেশি কসমেটিকস বা প্রসাধনী, ফল জাতীয় পণ্য ও স্কিনকেয়ার পণ্য বিক্রির কারণে আমরা নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। এমনকি অনেকে মরণব্যাধি ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব পণ্য নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভেজালকারী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা উচিত। গণমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, সম্প্রতি বিএসটিআই আমদানি করা ৩৪টি পণ্য পরীক্ষা করে দেখতে পায় যে এসব পণ্যের ১৭টিই ভেজাল ও মানহীন। এক সময় করোনায় যখন বিশ্ব এক মহামারি ও অস্থির সময় অতিক্রম করেছিল, সেখানে বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভুয়া মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করে ব্যবসা করেছিল। করোনাকালেও নকল বা ভেজাল ওষুধ বিক্রি করা বন্ধ হয়নি। বরং নকল মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং নকল ওষুধের ব্যবসা রমরমা। করোনায় ওদের বিবেক জাগ্রত হয়েছিল না। খুবই দুঃখ লাগে। যেখানে যায় সেখানে নকল, ভেজাল ও অবৈধ পণ্যের বিস্তার। সে কারণে সৎ ব্যবসায়ীরা বাজারে টিকে থাকতে পারছে না। মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ জীবন রক্ষাকারী ওষুধও নকল বিক্রি হচ্ছে। এই চক্রের রয়েছে বিশাল নেটওয়ার্ক। তারা অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এবং বিদেশে পাচার করছে। এসব নকল বা ভেজাল পণ্য কিনে আমাদের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দেশ-বিদেশের বিখ্যাত কোম্পানির প্রায় সব পণ্য নকল বাজারে পাওয়া যায়। শপিং মল, ফুটপাত এবং ছোটখাটো সব বাজারে এসব নকল পণ্য বিক্রি হচ্ছে সস্তা দামে। নানা কৌশলে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে, যা আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতার পক্ষে যাচাই করা কঠিন। এতে শুধু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি না, বরং সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  পুরান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ কারখানায় তৈরি হচ্ছে নামি-দামি ব্র্যান্ডের নকল পণ্য। কিছু অসাধু ও ধান্দাবাজ লোক বিদেশ থেকে দামি ব্র্যান্ডের পণ্যের প্যাকেট দেশে নিয়ে আসে। এরপর ওই প্যাকেটে নকল পণ্য ঢুকিয়ে তা বাজারে বিক্রি করছে। নকল ও ভেজাল পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে এবং অনেক অভিযানে পণ্য আটক হচ্ছে। অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হলেও নকল পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ করা যাচ্ছে না। নকল ও অবৈধভাবে পণ্য যেসব বাজারে বিক্রি হচ্ছে এর মধ্যে প্রসাধনী, ওষুধ, সিগারেট, মোবাইল ফোনসেট ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস উল্লেখযোগ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুসারে, ১৫টি চক্র বছরে অন্তত ১০ কোটি টাকার নকল ওষুধ বাজারজাত করছে। ২০২৪ সালের জুনে রাজধানীর বাবুবাজার থেকে ৩০ লাখ টাকা মূল্যমানের নিবন্ধনহীন নকল ওষুধ জব্দ করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এছাড়াও এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯ সালে প্রায় ৩২ কোটি টাকা মূল্যের নকল ওষুধ জব্দ এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় ৪৭ কোটি টাকা মূল্যের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়। আমরা সাধারণ ক্রেতারা কোথায় যাব এবং কাকে বিশ্বাস করব। বিভিন্ন ইস্যুতে প্রিয়জনকে উপহার দিতে গিয়ে দিচ্ছি বিষ বা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। হাত বাড়ালেই মিলছে নকল আর ভেজাল প্রসাধনী। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর দাম অনেক ক্ষেত্রে লাগামহীন। এর মধ্যে বহু সুরক্ষাসামগ্রীর মানও খারাপ। অতীতে সংবাদপত্রে দেখতে পেয়েছি, কেউ কেউ হাসপাতালে ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া গ্লাভস, মাস্কসহ অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে তা রিসাইকল করে আবার বাজারে বিক্রি করছে করোনার সময়। এছাড়া এসব স্বাস্থ্যসামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি পেলে একদল অসাধু ব্যবসায়ী এসবের মূল্যবৃদ্ধি ও বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর দাম ও মান নিয়ে ব্যাপক আইনি মনিটরিং দরকার। অন্যথায় পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (গ)-এর ১(ঙ) ধারায় খাদ্যে ভেজাল, ওষুধে ভেজাল মেশালে বা ভেজাল খাদ্য ও ওষুধ বিক্রি করলে বা বিক্রির জন্য প্রদর্শন করার অপরাধ প্রমাণ হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে এই আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। কিন্তু আইনে কিছু মামলা হলেও শাস্তির নজির আমাদের চোখে পড়ছে না। বর্তমানে নকল ও ভেজাল পণ্য রোধে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ও বিএসটিআই অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। বিএসটিআই আইন-১৯৮৫ সংশোধন করে ২০১৮ সালে নতুন আইন করা হয়। নতুন আইনেও জরিমানা দুই লাখ টাকা এবং সাজার মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই বছর নির্ণয় করা হয়। আইনে দুই লাখ টাকা জরিমানা তেমন কিছুই মনে করছে না অসাধু ব্যবসায়ীরা। এটা এক ধরনের দুর্বলতা। আইনের এই দুর্বলতা দূর করা দরকার। আইনটি হওয়া উচিত জামিন অযোগ্য। কারণ অপরাধীরা অপরাধ করে জামিন পেয়ে যায়। নতুন আইন না হওয়া পর্যন্ত প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগে নকল ও ভেজাল পণ্য রোধে ভূমিকা সরকার রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নকল বা ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ করতে না পারলে দেশের আর্থিক ক্ষতি ও স্বাস্থ্যঝুঁকিও তীব্র আকারে বাড়বে। নকল বা ভেজাল পণ্যে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হাজার হাজার কোটি টাকা। তাই সরকারকে যেভাবেই হোক এসব বন্ধে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু পদক্ষেপ নিলে হবে না, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। নকল পণ্য রোধে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নকল পণ্যের বিষয়ে সাধারণ ভোক্তা বা নাগরিককে সচেতন করতে হবে, যাতে তাঁরা ক্রয়ের সময় অধিকতর সতর্ক থাকে। সচেতনতা তৈরি হলে ভোক্তা নিজেই নকল পণ্য ক্রয় থেকে বিরত থাকবে। নকল পণ্য ঠেকাতে সরকার এবং আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নকল পণ্য এক ধরনের নীরব ঘাতক এবং শিশুদের চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। ছোট থেকে ভেজাল জিনিস খেতে হচ্ছে, যা তাঁদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করছে। প্রয়োজনে আরও কঠোর আইন করে হলেও সমাজের এই নীরব ব্যাধি বন্ধ করতে হবে। নকল বা ভেজালবিরোধী কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার ও সম্মাননা দেওয়া যেতে পারে, যা নকল পণ্য রোধে কার্যকর হবে। নকল পণ্য বন্ধে সরকারের ওপর শুধু দায়িত্ব দিলে হবে না। বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের উচিত নকল প্রতিরোধে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানো ও নিজস্ব টিম তৈরি করা। নকল ও ভেজাল পণ্য রোধ করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তবে সরকারকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে এটাই আমাদের কামনা। সরকার খুবই তৎপর হলে এখানেও সফলতা আসবে। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

নদী উদ্ধারে গতি

নদী উদ্ধারে গতি

পাহাড়িকন্যা সোমেশ্বরী। লাল সিলিকন বালু বাংলাদেশ ও ভারতের আন্তঃসীমান্ত নদীটিকে করেছে মায়াবী; অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এই নদীতে সারা বছর নৌকা চলত, মাছ পাওয়া যেত, পানি টলটল করত। কিন্তু এখন বর্ষাকালের দুই-তিন মাস ছাড়া অন্য সময়ে পানি থাকে না। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনই সর্বনাশ ডেকে এনেছে সোমেশ্বরী নদীর। শুধু সোমেশ্বরী নয়; বালু উত্তোলন, দখল-দূষণ, অপ্রতুল বৃষ্টি, টানা তাপপ্রবাহ নানা কারণে দেশের নদীগুলো ক্রমাগত শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেক নদ-নদী আবার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে সংকুচিত হয়ে এসেছে। কিছু নদী এতটাই শুকিয়ে গেছে যে, সেগুলো নৌচলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দেশে এ রকম ৭৯টি নদী শুষ্ক মৌসুমে প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে যায় বলে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলার নদীর দখল-দূষণ নিয়ে কম সম্পাদকীয় লেখেনি জনকণ্ঠ। নানা সুপারিশ এবং পরামর্শ দিয়েছে। যাদের অপরিণামদর্শিতার কারণে নদীগুলো তার যৌবন হারাচ্ছে, মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে। পরিতাপের বিষয় হলো, গণমাধ্যম বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও সজাগ হয়নি কর্তৃপক্ষ। বরং অসাধু চক্রের নদী দখল এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মুনাফার ভাগ নিয়েছে। সার্বিক অনৈতিকতার ফলে আজ বাংলার নদীগুলো বিপন্নপ্রায়। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) গবেষণায় পানি প্রবাহের অভাবে নদীসমূহের মুমূর্ষু দশা সম্পর্কে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ‘বাংলাদেশের শুকিয়ে যাওয়া নদী’-শিরোনামে সংস্থাটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সরকারি তালিকাভুক্ত ১ হাজার ১৫৬টি নদীর মধ্যে অন্তত ৭৯টি শুকিয়ে গেছে অথবা শুকিয়ে যাওয়ার পথে। জলবায়ু সংকট বৈশ্বিক আবহাওয়াকে দিন দিন বৈরী করে তুলেছে। এ কারণে শুধু নদ-নদীই নয়, এগুলোর ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কৃষিকাজ, জীববৈচিত্র্য, প্রাণপ্রকৃতি, জ্বালানি উৎপাদন কিংবা নদীকেন্দ্রিক পণ্য পরিবহনও এখন পড়েছে হুমকিতে।  আমরা মনে করি, সরকারকে অবিলম্বে এসব নদীর দিকে মনোযোগ দিতে হবে এবং নৌপরিবহনকে উৎসাহিত করতে হবে। গবেষণা অনুসারে, দেশে প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ নদী, খাল ও স্রোতধারা রয়েছে। বর্ষাকালে এর মধ্যে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার নৌচলাচলের উপযোগী থাকে। শুষ্ক মৌসুমে এই সংখ্যা নেমে আসে ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটারে। সড়কপথ ব্যবহারে প্রতি টন কিলোমিটারে ২.৮১-৩.৫১ টাকা এবং রেলপথে ১.৯৬ টাকা খরচ হয়। অথচ জলপথে খরচ হয় মাত্র ১.১২ টাকা। এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান যথার্থই বলেছেন, কিছু নদী প্রাকৃতিক কারণে শুকিয়ে যায়, কিছু মানুষের কার্যকলাপের কারণে শুকিয়ে গেছে। কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে, প্রতিটি নদীর শুকিয়ে যাওয়ার কারণ নির্ধারণ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার নদী উদ্ধারের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা আরও গতি পাক। একইসঙ্গে দখল-দূষণের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে কঠোর আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।

অঙ্গ দান ও প্রতিস্থাপনে স্বস্তি

অঙ্গ দান ও প্রতিস্থাপনে স্বস্তি

রোগীদের জীবন বাঁচাতে এবং বিদেশনির্ভরতা কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার ‘মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। নতুন আইনে আত্মীয়দের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপনের (সোয়াপ ট্রান্সপ্লান্ট) সুযোগ থাকছে এবং অঙ্গ দানের পরিধি আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। আগের আইনে শুধু বাবা-মা, ভাই-বোন বা সন্তান অঙ্গ দান করতে পারতেন। নতুন আইনে ‘নিকটাত্মীয়’-এর সংজ্ঞায় ভাতিজা-ভাতিজি ও ভাগনে-ভাগনিকেও অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। ফলে আরও বেশি মানুষ বৈধভাবে অঙ্গ দানে সক্ষম হবেন। পাশাপাশি দেশের ভেতরেই কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও ব্রেন ডেড রোগীদের কিডনি প্রতিস্থাপন বা ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টের সুযোগ বাড়ানো হয়েছে। অঙ্গ দানকারীদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জীবিত থাকাকালীন তাদের নাম সরকারি তালিকায় রাখা হবে এবং দেহদানকারীদের মর্যাদা দেওয়া হবে। চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে সচরাচর দেখা যায়, অনেক রোগীর আত্মীয় কিডনি দিতে চাইলেও রক্তের গ্রুপ বা টিস্যু ম্যাচ না করায় তা সম্ভব হয় না। বর্তমানে অন্য কোনো রোগীর আত্মীয়ের সঙ্গে রক্তের গ্রুপ বা টিস্যু ম্যাচ হলে উভয়ের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করা যাবে। এক্ষেত্রে একই দিনে উভয়ের অস্ত্রোপচার হবে। সেই লক্ষ্যে একটি জাতীয় ডোনার পুল তৈরি করা হবে।  সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনের দরকার পড়ে। কিন্তু দেশে বছরে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ জনের বিকল কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। অবশিষ্ট রোগী ভারত, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর ও আমেরিকায় গিয়ে প্রচুর ব্যয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করাচ্ছেন। সাধারণত ডোনার সংকটের কারণেই দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের হার কম। দাতা পাওয়া গেলেও সবসময় রক্তের গ্রুপ বা টিস্যু ম্যাচ হয় না। তাই ডোনার সোয়াপের সুযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে বহু রোগীকে চিকিৎসার জন্য ভারত, সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডে যেতে হয়। সংশোধিত আইনটি বাস্তবায়িত হলে দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সহজ হবে, চিকিৎসার মানোন্নয়ন ঘটবে এবং বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে বলে প্রত্যাশা। এতে প্রতি বছর দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। চিকিৎসকদের মতে, দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। তবে দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপন চালু করলেই হবে না। এই বিষয়ে দেশে বিদ্যমান আইনের সংস্কারের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন তৈরি করতে না পারলে অকার্যকর থেকে যাবে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সফলভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলে দেশের রোগীদের জন্য স্বস্থি বয়ে আনবে। সেই সঙ্গে এর মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।   

মানবিক অধিকার ও মূল্যবোধ

মানবিক অধিকার ও মূল্যবোধ

অধিকার আর মূল্যবোধ সমার্থক নয়। তার পরেও সমন্বয় আর অবিচ্ছেদ্য বিষয় হিসেবে অস্বীকার করার কোনো পথ নেই। অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্তই শুধু নয় নিত্য জীবনের অতি প্রাসঙ্গিক হিসেবে বিবেচ্য হওয়া ও ন্যায্যতা দাবি করে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য- এই পাঁচটি মৌলিক অধিকার জনগণের নিত্য চাহিদারও প্রত্যয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে সেই পুরাকাল থেকে। জীবনযাপনের জন্য প্রথম সংস্থানের মধ্যে থাকে আহার সামগ্রী। অতি আদিম প্রাচীন সমাজ থেকেই। আদিম সমাজ দেখার সৌভাগ্য অনেকেরই হয়নি। তবে মাতৃজঠর থেকে শিশু পৃথিবীর আলো দেখার বিষয়টি মা থেকে প্রতিটি পরিবারই উপলব্ধি করেন। কাঁদতে কাঁদতে কোনো শিশু যখন জন্ম নেয় তখন মায়ের সযত্ন আদরই শুধু নয়- কান্না থামে যখন সদ্যজাত সন্তানকে মুখে কিছু দেওয়া হয়। সেই আদিম, অসভ্য, বর্বর যুগ থেকে এখন আমরা শিল্প প্রযুক্তির উন্নত বিশ্বের মধ্যগগনে অবস্থান করছি। আর সবার আগে অন্নের জোগান দেওয়া মনে হয় আজও মুখ্য বার্তা বয়ে বেড়াচ্ছে। সময়ের হেরফেরে পরিবর্তন, পরিবর্ধন আর যৌক্তিক পালাক্রমেও তেমন নিরেট বাস্তবতা আজও নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। মানব সভ্যতা যতই এগিয়েছে প্রাপ্য অধিকারও নতুন সময়ের অনুষঙ্গ হয়েছে। তেমন ক্রমপ্রসারণে আচার, ব্যবহার আর শিষ্টাচারের মাত্রায় এসেছে মূল্যবোধ যা পারিপার্শ্বিক আর অন্তরের নিভৃত চেতনা থেকে সমৃদ্ধ হয়ে স্বজাত্যবোধ, মূল্যবোধকে আধুনিক সময়ের অনুষঙ্গ করেছে। সেখানে শুধু বংশগত ঐতিহ্যই নয় জাতিগত, সম্প্রদায়গত অবস্থান আরও বেগবান দৃঢ় বন্ধনে আটকে দিয়েছে। অধিকার বিভিন্নভাবে মূল্যবোধকে চালিত করা সময় ও নিয়মের অধীন। মানব সমাজ, অধিকার আর মূল্যবোধ বিষয়গুলো বৃহত্তর সামাজিক অঙ্গনের বন্ধনকে ত্বরান্বিত করে। এখন বিশ্বায়নের যুগে তা দ্রুততার সঙ্গে জগৎজোড়া সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করে যাচ্ছে। বদলে যাওয়া আধুনিক ও নতুন বাংলাদেশ সময়ের গতি প্রবাহে হরেক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পথ পাড়ি দিয়ে নবতর নিশানায় আপন গন্তব্যে চলমান থাকাও পরিস্থিতির অপরিহার্যতা। ষোলো বছরের দীর্ঘ অপশাসনে কত অবাঞ্ছিত বিষয় গণমানুষকে তাড়া করেছে। স্বস্তি আর শান্তির বার্তায় কোানাভাবেই অতি সাধারণ মানুষের জীবন নির্বিঘ্ন, নিরাপদ ছিলই না। পদে পদে লঙ্ঘিত হয়েছে মানবাধিকার, মানবিক মূল্যবোধের চরম স্খলন। দীর্ঘ শাসনের একাধিপত্য আর একনায়কত্বে ক্ষমতার বেদখলই শুধু নয় স্বেচ্ছাচারিতাও স্খলনের প্রান্তসীমায় গিয়ে ঠেকে। দীর্ঘ শাসন কখনোই জাতি আর শাসকবর্গের জন্য মঙ্গলজনক হয়ই না। ক্ষমতার দাপট তার অপছায়া নৈরাজ্যকে আলিঙ্গন করে। সেটা শুধু অত্যাধুনিক উন্নত শিল্প প্রযুক্তির জন্যই হয়েছে তা কিন্তু নয়। ক্ষমতা বরাবরই স্বৈরশাসনের এক অঘোষিত অস্ত্র যা কি না প্রভাবশালী শাসকদের মারণাস্ত্র বললেও বেশি বলা হয় না। বিশ্ব ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় যুগে যুগে তা প্রমাণও হয়েছে। ষোড়শ শতাব্দীতে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক ম্যুাকিয়াভেলি তার দূরদর্শী রাষ্ট্রতত্ত্ব বোধে উচ্চারণ করেছিলেন- সকল ক্ষমতাই মানুষকে বিকৃত করে। চরম ক্ষমতা মানুষকে চরমভাবে স্বৈরাচারী করতে নির্ণায়কের ভূমিকায় নামে। ক্ষমতা এমন এক মোহময় শক্তি যাতে শাসকবর্গের মোহভঙ্গ হতেও দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায়। ভারত উপমহাদেশ থেকে অতি ক্ষুদ্র বাংলাদেশ ও হরেক শাসনামলে বিভিন্ন রাজবংশের উত্থান-পতনের শিকার হয়েছে। তবে ক্ষুদ্র বাংলাদেশের স্বাধীন সত্তার ইতিহাস বর্ণিত হলেও উর্বর পলিমাটির বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন রাজা-বাদশাহদের একাধিপত্য থেকে মুক্তি না পাওয়া ও ইতিহাসের চরম অনিশ্চয়তা। ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসন থেকে মুক্ত হয়ে যে স্বাধীন বাংলাদেশের গোড়াপত্তন হয় সেখানেও স্বৈরাশাসনের নবতর অভিগমন ঐতিহাসিক পালাক্রমের বিবর্ণ অধ্যায়। আমাদের উর্বর পলিমাটির এই বরেন্দ্র বঙ্গভূমির নিত্যনতুন ইতিহাসও আধুনিক কোনো দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়। গণতন্ত্র যে জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং যথার্থ আম জনতার নিজস্ব ভিত্তি আর শক্তি সেটাও পরম্পরায় অবদমিত থাকে ঐতিহাসিক রূপান্তরের বিবর্ণ অধ্যায়। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে রাষ্ট্র নায়করা একবার নির্বাচিত হতে পারলে আর পেছন ফিরে তাকান না পর্যন্ত। যতক্ষণ না তাদের গণআন্দোলন কিংবা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মসনদচ্যুত করা হয়েছে। মসনদই বটে! রাজা-বাদশাহ্্র মতো বংশানুক্রমিকভাবে ক্ষমতাকে মুষ্টিবদ্ধ করে জনগণ থেকে শুধু বিচ্ছিন্নই নয় বরং অধিকার, ন্যায্যতা, প্রাপ্যতা থেকে বঞ্চনার ক্রমাগত আর করুণ ইতিবৃত্ত জনগণকে বেপারোয়া করতেও পিছু হটাইনি। সাধারণ মানুষ এমন এক গণশক্তি যারা অস্ত্র নয় দেশপ্রেমের অবিশ্রান্ত জোয়ারে ভেসে চলা এক নিরবচ্ছিন্ন ধাবমান সামুদ্রিক ঢেউ বললেও কম বলা হয়। তেমন জোয়ারে স্বৈরশাসনের পতনোন্মুখ রাজ সিংহাসনও ধুলায় লুণ্ঠিত হয়ে দেশ ও জনরোষের ভীত হয়ে পলায়নবৃত্তি মেনে নেয়। দুঃশাসন নিজেই এক পলাতক, ভীরু, অপরিণামদর্শিতার চরম আস্ফালন। যার কাঁপন ধরা অপশক্তি জাতি ও জনগণকে সাময়িক বেকায়দায় ফেললেও ঘুরে দাঁড়ানোর অজেয় শক্তিমত্তাও যেন জেগে ওঠে। যা যুগ ও সময়ের দুরন্ত গতিবেগের এক নির্মোহ আবেগই নয় বরং ভেতরের বোধে জিইয়ে থাকা যথার্থ দেশাত্মবোধের  অনির্বাণ দীপ্তি।  আমরা এখন উদ্দীপ্ত জুলাইয়ের পরম বৈপ্লবিক সময়কে আলিঙ্গন করছি। অপরাজেয় স্রোতশক্তির পরম বরমাল্যে ছুটে চলা অস্ট্রিক জাতিগোষ্ঠীর লড়াকু বিজয় গাঁথার অমূল্য সম্ভার। মানবাধিকার জনগণের পরম শক্তি আর আপন শৌর্যে এগিয়ে যাওয়ার অনন্য বরমাল্য। গণঅভ্যুত্থানের বছর পূর্তিতেই ঢাকায় মানবাধিকার কার্যালয়ের দ্বার উন্মোচন জাতির জন্য পরম সৌভাগ্য। আধুনিক ও বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশের জন্য সামনে এগিয়ে চলার নবতর নিশানা তো বটেই। জুলাইয়ের রক্তঝরা অভিযাত্রায় নতুন বাংলাদেশের অভ্যুত্থান আর এক স্মরণীয় বরণীয় অধ্যায় সংযুক্ত হলো অপরাজেয়ও যুগ-যুগান্তরের স্বাধীন বঙ্গভূমির মানচিত্র। গৌরবময় অর্জনের এই যাত্রাপথ কখনো নিষ্টণ্টক কিংবা নিরাপদ থাকে না। নানামাত্রিক দাবি দাওয়া পরিস্থিতি বেসামাল করতে সময় নেবে না। তবে এই মুহূর্তে প্রয়োজন শান্তি-শৃঙ্খলা মেনে সামনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সুষম অবস্থা তৈরি করাই শুধু নয়, টিকিয়ে রাখাও বাঞ্ছনীয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা ও জরুরি ছিল অস্বীকার করার উপায়ই নেই। তবে ঠান্ডা মাথায় যৌক্তিক বিচার-বুদ্ধি, বিবেচনায় সামনে একটি সার্বজনীন নির্বাচনের প্রত্যাশা অনিবার্য। যার জন্য কিছু সময় তো লাগবেই। নির্বাচন পদ্ধতিও হরেক সংস্কার-অপসংস্কারের মান্ধাতা আমলের নানামাত্রিক বিপত্তিকে সামলানো আর এক অবশ্য পালনীয় কর্মযোগ। সেটা করতে গেলে সময়-সুযোগ অনিবার্য। তাড়াহুড়া করে পুরানো বিধিকে নির্মূল করা অত সহজসাধ্য নয়। অনেক অসহনীয় নিয়মকানুন সমাজ কাঠামোর অভ্যন্তরে গেঁথে আছে। যা যথার্থভাবে নির্মূল করতে ব্যর্থ হলে সময়ের নতুন বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যেতে হোঁচট খেতে পারে। তাই ভেতরের সমস্ত আবর্জনা উপড়ে ফেলে নতুন সময়ের বরমাল্যে আধুনিক ও যৌক্তিক বাংলাদেশ সামগ্রিক পরিস্থিতির অপরিহার্যতা। 

আরও চাই ডে-কেয়ার সেন্টার

আরও চাই ডে-কেয়ার সেন্টার

আমাদের দেশের বেশির ভাগ উচ্চ শিক্ষিত মায়েদের বাচ্চার দেখাশোনার কথা চিন্তা করে কর্মময় জীবন হতে ফিরে আসতে হয়। কেউ কেউ বাচ্চাদের কথা ভেবে চাকরিতে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে একদম ঝেরে ফেলে দেয়। কারও কারও চাকরির পাশাপাশি বাচ্চা নিয়ে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এমনকি কেউ কেউ বাধ্য হয়ে সাহায্যকারীর কাছে বাচ্চা রেখে চাকরিতে যায়, যাতে করে বাচ্চাদের অনেক অত্যাচার সইতে হয়। এমন অঘটন রীতিমতো ঘটে যাচ্ছে। এতে বাচ্চাদের হুমকির মধ্যে রেখে মায়েদের কর্মস্থলে যেতে হয়। আর শিল্পায়নের প্রভাবে দিন দিন পোশাক কারখানাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে এখন কেউ বাসাবাড়িতে সাহায্যকারীর কাজ করতে রাজি হয় না। সবাই ভালো বেতনের আশায় ছুটে যায় পোশাক কারখানাসহ আরও হরেক রকম কাজের সন্ধানে। এটাও একটা ভালো মাধ্যম যাতে দরিদ্রতা হ্রাস পাচ্ছে অনেকাংশে। এখন কথা হলো, সবাই যদি চাকরিতে ছুটে যায় তাহলে বাচ্চাদের দেখাশোনা কে করবে? আর পারিবারিকভাবে কর্মজীবী মহিলাদের সুযোগ দেওয়ার মতো আমাদের দেশে সেরকম মানসিকতা এখনো গড়ে ওঠেনি, আছে হয়তো গুটিকয়েক। কিন্তু বেশির ভাগ কর্মজীবী মায়েদের বাচ্চা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অন্যদিকে বৃদ্ধ দাদা-দাদু কিংবা নানা-নানুও বাচ্চাদের রাখার মতো থাকেন না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। দেখা যায় চাকরি এবং বাচ্চাদের নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ে মায়েদের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে দিনাতিপাত করতে হয়। সংসারে শুরু হয় নানা ধরনের অশান্তি। আমাদের দেশে যদি যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বীমা, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি, বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবী মহিলাদের চাকরির পাশাপাশি ছোট বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করার মতো মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করা হতো তাহলে মায়েদের আর এভাবে ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হতো না। এতে উচ্চশিক্ষিত হয়েও ঘরে বসে না থেকে কর্মজীবনে ফিরে যেত অনেক মায়ে। আমাদের দেশে বাচ্চারা অপরিচিত কারও কাছে নিরাপদ নয় তাই সরকারিভাবে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করার জন্য সরকারের কাছে বিনীতভাবে আবেদন জানাই। বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় গুটিকয়েক ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে কিন্তু আমি মনে করি এটি শুধু রাজধানী কিংবা কয়েকটা জেলা শহরে না করে পুরো দেশে স্থাপন করা জরুরি। এর মাধ্যমে বাচ্চাদের নিয়ে মায়েদের ভোগান্তি যেমন কমে যাবে তেমনি সেসব ডে-কেয়ার সেন্টারে কাজ করার সুযোগ হবে অনেক মানুষের। এতে বেকারত্ব কিছুটা হলেও দূর করা সম্ভব হবে। ফলে অগণিত ডে-কেয়ার সেন্টারে কোমলমতি শিশুরা থাকবে শতভাগ নিরাপদ আর মায়েরা থাকবেন চিন্তামুক্ত। যাতে কর্মজীবী মায়েরা কাজে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি আরও অনেক মায়ের কাজের প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তুলতে পারবে। উন্নত দেশগুলোতে ডে-কেয়ার সেন্টার থাকার কারণেই মায়েদের কর্মক্ষেত্রে যেতে কোনো দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় না। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ যেভাবে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের ফলে এটি আরও উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে বলে আমি আশা করছি। সরকারের কাছে এটি প্রত্যাশা করছি যাতে অধিকাংশ মায়েরা শিক্ষিত হয়েও গৃহিণী নামক ঘরকুনো না থেকে যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী নিজেদের দেশের সেবায় নিয়োজিত রাখতে পারবে। যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী নিজেকে ঢেলে সাজাতে পারবে। নারীদের একটা পরিচয় থাকবে। শিক্ষিত হয়েও যারা বাচ্চাদের জন্য ঘরকুনো হয়ে থাকে সেসব নারীর পরিচয় দেওয়ার মতো কিছু থাকে না, অন্যদিকে একটা সময় যখন বাচ্চারা নিজেদের অবস্থানে চলে যায় তখন সেসব মায়ের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। নিজের বলতে কিছুই থাকে না। কখনো স্বামীর করুণা নিয়ে, কখনো সন্তানের করুণা নিয়ে নিজেকে কোনোরকম টিকিয়ে রাখতে হয়। অনেক অনেক উচ্চশিক্ষিত এমন মায়েদের মাঝপথে হঠাৎ আকস্মিকভাবে স্বামীর মৃত্যু কিংবা সন্তানদের অবহেলিতজনিত কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয়। তাই সরকারের কাছে আমার একটাই আহ্বান, মহিলাদের কাজে আগ্রহী করার জন্য অতি অবশ্যই ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রতিও অনুরোধ- দিবাযত্ন কেন্দ্র বা ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারীর অগ্রযাত্রার জন্য এটি জরুরি।

আধুনিক ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম গণহত্যা

আধুনিক ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম গণহত্যা

ইসরাইলের সঙ্গে ইরানের চলমান সংঘাত যুক্তরাষ্ট্রের চাপে স্থগিত হওয়ায় গাজায় চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের দিকে আবারও আন্তর্জাতিক মনোযোগ ফিরে এসেছে। যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিনিময় নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতি না হলে গাজাজুড়ে সামরিক অভিযান উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ানোর হুমকি প্রদান করেছে ইসরাইলি কর্মকর্তারা। এদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলি ইসরাইল মেনে নিয়েছে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত চুক্তি কার্যকর থাকার সময় যুদ্ধ বন্ধে আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করব। তিনি আরও বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার সহায়তায় কাতার ও মিসরবাসী কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তারাই চূড়ান্ত চুক্তির প্রস্তাব দেবেন। আশা করি, হামাস চুক্তিটি গ্রহণ করবে। কারণ এটি আর ভালো হবে না; বরং এটি শুধু আরও খারাপ হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। গাজা যুদ্ধের অবসানে মার্কিন প্রচেষ্টার মধ্যেই আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে। হামাসের ওই হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী গাজায় অভিযান শুরু করে। ইসরাইলের পরিচালিত অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৩৬৫ জন নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ৩২ হাজার ২৩৯ জন আহত হয়েছেন। তবে ইসরাইল দৈনিক হারেৎজ প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের আগ্রাসনে প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন; যা ভূখণ্ডটির জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ। নিহতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই শিশু এবং নারী, যা দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পরে অধিকাংশ যুদ্ধের তুলনায় ব্যতিক্রমী। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করে, ইসরাইল গাজাবাসীর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অর্থাৎ জেনোসাইড চালাচ্ছে। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন সংস্থাটির মহাসচিব আ্যাগনেস ক্যালামার্ড। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, জেনোসাইড কনভেনশনে নিষিদ্ধ ৫টি কর্মকাণ্ডের অন্তত ৩টি ইসরাইল ঘটিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ড, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিসাধন এবং সুরক্ষিত গোষ্ঠীকে ধ্বংসের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের জীবনমানের ক্ষতি করা। বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ ও ইসরাইলি কর্মকর্তাদের প্রদত্ত বিবৃতি পর্যালোচনা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, গাজায় জাতিগত হত্যা চালানোর উদ্দেশ্যেই ইসরাইল সামরিক অভিযান শুরু করেছিল। লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব হোলোওয়ের অধ্যাপক মাইকেল স্প্যাগ্যাট বলেন, সমীক্ষাটির তথ্য গাজা যুদ্ধকে একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম রক্তক্ষয়ী সংঘাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রায় দুই বছরের যুদ্ধে ফিলিস্তিনের বেশির ভাগ এরই মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনের জনগণের বেশির ভাগেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক মেইরাভ জোনসাইন বলেন, ট্রাম্প যদি সত্যিই চান, তাহলে নেতানিয়াহুকে এই যুদ্ধ থামাতে বাধ্য করতে পারেন। তবে এখন পর্যন্ত গাজার যুদ্ধ পরিস্থিতিকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে অস্ত্র ও কার্যত দায়মুক্তি দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করার সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এই যুদ্ধ থামাতে দেখছি না, যদি না তার স্বার্থের সঙ্গে সরাসির সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে। কিন্তু ট্রাম্প ইসরাইলকে আপাতত অবাধ স্বাধীনতা দিচ্ছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এদিকে ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। গাজায় অভিযান যাতে শীঘ্রই বন্ধ করা হয় সেজন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তিনি আহ্বানও জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, গাজায় আমরা যা করছি তা আর কাজ করছে না। এই যুদ্ধ একটি অচলাবস্থা তৈরি করেছে এবং গাজায় সামরিক অভিযান থামানোর এখন সময় এসেছে। নেদারল্যান্ডসের হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোগান বলেছেন, গাজার মানবিক সংকট অব্যাহতভাবেই বেড়েই চলেছে এবং সেখানে জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। গাজার মানবিক সংকটের সমাধান খুঁজে বের করার কথাও বলেন। মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি অর্জনে সবাইকে আবদান রাখার আহ্বান জানান।ইসরাইলের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের চূড়ান্তভাবে উচ্ছেদ করা। ইসরাইলের এই নীতিকে বাস্তবায়ন করতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো সহযোগিতা করছে। একই সঙ্গে আরব রাষ্ট্রগুলোও এ বিষয়ে নীরবতা পালন করছে। আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির প্রধান মিরিয়ানা স্পলিয়ারিচ ফিলিস্তিনের গাজাকে ‘পৃথিবীর নরক থেকেও ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেছেন। শিশুদের ওপর সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘের তৈরিকৃত ‘কালোতালিকায়’ টানা দ্বিতীয় বছরের মতো ইসরাইলের নাম উঠে এসেছে। জাতিসংঘ কর্তৃক ‘চিলড্রেন ইন আর্মড কনফ্লিক্ট’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ^জুড়ে শিশুদের ওপর নজিরবিহীন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ফিলিস্তিনের শিশুরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয়েছে। ইসরাইলকে কালোতালিকাভুক্তির কারণ হিসেবে জাতিসংঘ বলেছে, ইসরাইলি বাহিনীর অবিরত হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশু প্রাণ হারিয়েছে, নয়তো পঙ্গু হয়েছে। ফিলিস্তিনের বিদ্যালয় এমনকি হাসপাতালেও নিয়মিত হামলা চালিয়ে ইসরাইল শিশুদের হত্যা করেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো প্রদান করে। প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছিল, গাজায় সব পক্ষকে মেনে চলার জন্য একটি স্থায়ী, নিঃশর্ত ও দ্রুত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিতে হবে এবং হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীর হাতে থাকা সব ইসরাইলি বন্দিকে সম্মানজনকভাবে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান করতে হবে। প্রস্তাবটিতে আরও বলা হয়েছিল, গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছাতে যেসব বাধা আছে সেসব বাধা এবং গাজার ওপর আরোপ করা সব নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে হবে; জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থা যেন নিরাপদে বাধা ছাড়া ত্রাণ পৌঁছাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪টি সদস্য রাষ্ট্র এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট প্রদান করলেও যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র বিরোধিতা করায় সেটি বাতিল হয়ে যায়। এই ভেটোর ঘটনার অনেকটা সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা দেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) চারজন বিচারককে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র শুধু গাজায় যুদ্ধবিরতি থামানোর প্রস্তাবে বাধা না দিয়ে যারা যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এছাড়াও গাজায় সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) আরেকটি মামলা চলমান রয়েছে। বর্তমানে গাজা উপত্যকাকে জাতিসংঘ বিশে^র সবচেয়ে খাদ্য সংকটাপূর্ণ ও ক্ষুধার্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২৩ লাখ মানুষই এখন বিপর্যয়কর ক্ষুধার মুখোমুখি; যা চরম মানবিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত প্রদান করছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিসের (ওসিএইচএ) মুখপাত্র জেন্স লারকে বলেছেন, এই ভূখণ্ডের পুরো জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। গাজায় মানবিক সহায়তা আবারও হামাসের দখলে যাচ্ছে- এমন তথ্য পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি কার্যকর পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন সেনাবাহিনীকে। ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ হুমকি দিয়েছেন, যদি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় এবং হামাসের কাছে সহায়তা পৌঁছানো ঠেকানো না যায়, তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন। এমতাবস্থায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহ আবারও স্থগিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাসের দেওয়া যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির প্রস্তাবটিও ইসরাইল প্রত্যাখ্যান করেছে। ট্রাম্পের মধ্যস্ততায় গঠিত এক খসড়া পরিকল্পনায় হামাসের কাছে থেকে ১০ জন জীবিত জিম্মির মুক্তি এবং প্রায় ৭০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়। তবে প্রস্তাবটি অগ্রহণযোগ্য এবং কোনো দায়িত্বশীল সরকার এটি গ্রহণ করতে পারে না বলে ইসরাইলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, হামাস এমন সব শর্ত দিচ্ছে, যা গ্রহণ করলে যুদ্ধের মূল লক্ষ্য অর্থাৎ হামাসকে নির্মূল করা এবং সকল জিম্মি মুক্তি- তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। এই প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয় এবং ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের মূল প্রস্তাব থেকে এটি অনেক দূরে বলে তিনি মন্তব্য করেন। আর ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আগেই ঘোষণা করেছিলেন, হামাসকে ধ্বংস না করে, গাজায় তাদের প্রভাবকে উৎখাত না করে এবং সব জিম্মিকে মুক্ত না করা পর্যন্ত যুদ্ধ থামবে না। ইসরাইল প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ পর্যন্ত তারা ২০ হাজার এর বেশি হামাস যোদ্ধা এবং ৭ অক্টোবরের হামলায় অংশ নেওয়া ১ হাজার ৬০০ জনকে হত্যা করেছে। আর ইসরাইলের সেনাবাহিনীতে নিহত সদস্যের সংখ্যা ৪২০ জন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছিল, দখলকৃত গাজায় বেসামরিক মানুষকে ক্ষুধার মুখে ফেলাকে ইসরাইল যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। এখন ত্রাণকেও হত্যার কৌশল হিসেবে এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে।  জাতিসংঘ বলছে, গাজা উপত্যকার প্রায় ৮৫ শতকাংশ এলাকা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে কিংবা উচ্ছেদ আদেশের মুখে। আবার কোথাও কোথাও উভয় অবস্থাই রয়েছে। এখন দখলকৃত পশ্চিম তীর ইসরাইল স্থায়ীভাবে দখলে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। চলতি মাসের মধ্যেই দেশটির পার্লামেন্ট নেসেটে পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির মন্ত্রিসভার সদস্যরা। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার ফ্রানচেসকা আলবানিজ ইসরাইলের সঙ্গে সকল ধরনের বাণিজ্যিক ও আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিশ^ সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। ইসরাইলের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ‘গণহত্যার অর্থনীতি’ বলে অভিহিত করেন তিনি। আলবানিজের উপস্থাপন করা ‘ফ্রম ইকোনমি অব অকুপেশন টু ইকোনমি অব জেনোসাইড’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ইসরাইলের দখলদারি ও উপনিবেশ গঠনের পরিকল্পনাকে টিকিয়ে রাখছে তা উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, অধিকৃত ফিলিস্তিনের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। ইসরাইল আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর গণহত্যার জন্য দায়ী বলে তিনি মন্তব্য করেন। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বাণিজ্য প্রসারে রেমিটেন্সের প্রভাব

বাণিজ্য প্রসারে রেমিটেন্সের প্রভাব

এটি সর্বজনবিদিত যে, চলমান যুদ্ধবিগ্রহসহ নানামুখী উদ্ভূত সমস্যায় বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা প্রায় পর্যুদস্ত। অধিকন্তু বিশ্বরাজনীতি জটিল থেকে জটিল আকার রূপ পরিগ্রহ করে চলছে। এই সংকট খুব শীঘ্রই দূরীভূত হওয়ার নয়। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন শুল্কনীতি সমস্যাকে আরও তীব্র ও দীর্ঘায়িত করছে। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেও এর প্রভাবে অর্থনৈতিক সব সূচকেই সন্তোষজনক অবস্থান পরিলক্ষিত হচ্ছে না। দেশের মুদ্রাবাজারে চরম অস্থিরতায় ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজারে ডলারের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রারও সংকট তৈরি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি বহুবিধ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। টালমাটাল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুরবস্থায় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসী আয় গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে প্রতিভাত। প্রবাসীদের অতি কষ্টার্জিত রেমিটেন্সের ওপর ভর করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাত সচলে সহায়ক হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তনে এর অবদান অতি সুস্পষ্ট। দেশের জিডিপিতে অবদান রাখা এই রেমিটেন্স পরিণত হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য অংশীদার। করোনাকালীন অর্থনীতিতেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল এই রেমিটেন্স।  ১৩ জুলাই ২০২৫ গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেকর্ড ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। এটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। ধারাবাহিকতায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসের প্রথম ১২ দিনে রেমিটেন্স এসেছে প্রায় ১ হাজার ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো গড় দৈনিক রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ৮৯ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে দেশে রেমিটেন্সের প্রবাহ ছিল ৯৪৮ মিলিয়ন ডলার। উল্লিখিত সংস্থার পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আগস্ট মাস থেকে ধারাবাহিকভাবে রেমিটেন্স প্রবাহ ছিল দুই বিলিয়ন ডলারের ওপরে। আগস্ট ২০২৪ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত প্রতি মাসে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ যথাক্রমে ২.২২ বিলিয়ন, ২.৪০, ২.৩৯, ২.২০, ২.৬৪, ২.১৯ এবং ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার। মার্চে আসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স, যার পরিমাণ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। এপ্রিল মাসের ২১ দিনে এসেছিল ১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।  রেমিটেন্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকায় বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এটি আবার ৩০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। ১৬ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত দেশের মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ২৬ দশমিক ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্টপজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) পদ্ধতি অনুসারে ওই তারিখে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ ২৪ হাজার ৯৯৫ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের ভাষ্য, রেমিটেন্সের রেকর্ড প্রবাহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এবং দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশের রেমিটেন্স হঠাৎ বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রবাসীরা বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত হয়েছেন। ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। ব্যাংকগুলোকে এলসি খুলতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে। এখন সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে। তাছাড়া প্রবাসী আয়ের ঊর্ধ্বগতি এবং প্রত্যাশিত রপ্তানি আয়ের ফলে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকা শক্তিশালী হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে মার্কিন ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে। ডলারের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা ছিল, তাও কিছুটা কমে এসেছে।   দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো রেমিটেন্স আসার শীর্ষস্থানে থাকলেও গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে প্রবাসী আয় আসার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ অবস্থানে অধিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় এসেছে ১৪৪ দশমিক ৪৯ কোটি মার্কিন ডলার, যা মোট প্রবাসী আয়ের প্রায় ১৮ শতাংশ। ওই সময়ে দেশে মোট প্রবাসী আয় এসেছিল ৮০১ কোটি ডলার। এপ্রিল মাসে আসে ৩৩ কোটি ৭ লাখ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের পর জানুয়ারি-মার্চ মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউএই থেকে। উক্ত সময়ে দেশটি থেকে এসেছে প্রায় ১০৯ কোটি ডলার। একই প্রান্তিকে সৌদি আরব থেকে এসেছে প্রায় ১০৫ কোটি ডলার, যুক্তরাজ্য ৯৭ কোটি ডলার, মালয়েশিয়া ৬৩ কোটি ডলার, কুয়েত ৪৬ কোটি ডলার, ওমান ৪৪ কোটি, ইতালি ৪০ কোটি এবং কাতার থেকে ৩১ কোটি ডলার।   বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক রোমিটেন্স প্রাপ্তিতে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ৭ম অবস্থানে। রেমিটেন্স প্রাপ্তিতে শীর্ষে রয়েছে ভারত। ২০২৪ সালে দেশটিতে প্রবাসী আয় এসেছে আনুমানিক ১২৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। এটি ছিল বৈশ্বিক রেমিটেন্সের ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল মেক্সিকো। দেশটিতে ৬৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পাঠিয়েছে ওই দেশের প্রবাসীরা। তৃতীয় স্থানে থাকা চীনা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২১ শতকের শুরু দিকে চীনের প্রবাসী আয় বৈশ্বিক রেমিটেন্সের মাত্র ১ শতাংশের নিচে থাকলেও ২০১০ এর শুরুতে তা ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়ে ভারতের সমান হয়ে যায়। কিন্তু ২০১০ এর শেষ দিকে এটি ধীরে ধীরে ১০ শতাংশের নিচে নেমে যায়। ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে ফিলিপাইন। রেমিটেন্স আয়ের দিক থেকে অষ্টম স্থানে থাকা দেশটির নাম মিসর। দেশটিতে প্রবাসী আয় আসে ২২ বিলিয়ন ডলার। নবম ও দশম অবস্থানে আছে যথাক্রমে গুয়েতামালা ও জার্মানি। উভয় দেশের প্রবাসীরা নিজ দেশে সাড়ে ২১ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছে। উল্লেখ্য, বছরে এশিয়ার মধ্যে প্রবাসী আয়কারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।   অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিপত্র অনুযায়ী, প্রবাসীদের জন্য আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির ব্যবস্থা চালু, নিয়ম-কানুন সহজীকরণ ও নগদ প্রণোদনা বাড়ানোর মতো পদক্ষেপের ফলে রেমিটেন্স প্রবাহ লক্ষণীয়ভাবে বাড়তে শুরু করেছে। এছাড়া প্রবাসীদের সম্মাননা ও যাত্রার অভিজ্ঞতা আরও আরামদায়ক করতে গত নভেম্বরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চালু করা হয় ‘প্রবাসী লাউঞ্জ’। নীতিপত্রে আরও বলা হয়েছে, ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট ব্যবস্থা চালুর পর বৈধ ও অনানুষ্ঠানিক বাজারের বিনিময় হার ব্যবধান অনেকটা কমে এসেছে। এর ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রেমিটেন্স প্রবাহ আরও বেড়েছে এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল থেকেছে। তাছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমটি) দক্ষ কর্মীদের বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করছে বিএমইটি। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ-কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এর মাধ্যমে বাজার চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতা উন্নয়ন, সার্টিফিকেশন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করা হচ্ছে।  দক্ষ শ্রমবাজার সম্প্রসারণে আরও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে বিএমইটি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল এবং ইন্ডাস্ট্রি কম্পিটিটিভনেস অ্যান্ড ইনোভেশন প্রোগ্রামের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরিতে অব্যাহতভাবে কাজ করছে। মোদ্দাকথা, দেশের নানামুখী সংকট উত্তরণে অর্থব্যবস্থার সমৃদ্ধিকরণ অতীব জরুরি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আশু পদক্ষেপ হিসেবে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো পর্যাপ্ত আমদানির ক্ষেত্রে ডলার সমস্যা যাতে অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায় সেজন্য প্রবাসী আয় আকর্ষণে অধিকতর মনোযোগ আবশ্যক। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বৈধ পথে যাতে রেমিটেন্স অধিক পরিমাণে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে পারে; তার জন্য নতুন নতুন প্রণোদনা-সুবিধাদির প্রায়োগিক পন্থা প্রবল প্রত্যাশিত। লেখক : শিক্ষাবিদ

সাঁতার শেখার প্রয়োজনীয়তা

সাঁতার শেখার প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। বলা যায়, নদীই বাংলার জীবন, নদীই বাংলার প্রেম। বাংলার জনজীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে নদী। বর্ষায় নদীগুলো ফিরে পায় ভরা যৌবন। সেই সঙ্গে সারা বছর ঘটে নানা ধরনের দুর্ঘটনা। পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা এখন যেন একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণায় জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৫০টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে ৩২ জন চার বছরের কম বয়সী। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। ১৯৮৪ সাল থেকে সাঁতার গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলা হিসেবে স্বীকৃত। কিছু কিছু দেশে সাঁতার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সাঁতার শেখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি জীবন দক্ষতা। এটি শুধু জীবন রক্ষা করে না, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাও নিশ্চিত করে। নিয়মিত সাঁতার কাটলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে যায়। সাঁতার জানা থাকলে ব্যক্তি নিজেকে ও অন্যকে দুর্ঘটনার সময় বাঁচাতে পারে। সাঁতার কাটলে শরীর চর্চা হয় এবং মানসিক চাপ হ্রাস পায়। সাঁতার কাটার সময় এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। মুক্ত সাঁতার, চিত সাঁতার, বুক সাঁতার, প্রজাপতি সাঁতার,পার্শ্ব সাঁতার।ব্যায়ামের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হলো মুক্ত সাঁতার, চিত সাঁতার ও বুক সাঁতার। গবেষণায় জানা যায়, সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টা করে নিয়মিত সাঁতার কাটা একজন ব্যক্তির মৃত্যুর ঝুঁকি কর্মহীন ব্যক্তির তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসে। সাঁতার নিঃসন্দেহে শরীরের জন্য উপকারী।  একই সুইমিং পুলে অনেকের ব্যবহারে ত্বকের সমস্যা, অ্যালার্জি বা র‌্যাশ হতে পারে। অত্যধিক ক্লান্তি, ঠান্ডা লাগা বা গরমে অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে সাঁতার কাটা ঠিক নয়। মুখে চুইংগাম জাতীয় কিছু রেখে সাঁতার কাটা বিপজ্জনক হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টি বা বিদ্যুৎ চমকালে পানিতে না যাওয়াই ভালো। লাইফ গার্ডের নিয়ম অনুসরণ করে সাঁতার কাটতে হবে। সোরিয়াসিস বা চর্মরোগ থাকলে সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সাঁতার না কাটাই উত্তম। গ্রামের পাশাপাশি শহরেও এখন সাঁতার শেখার সুযোগ রয়েছে। অভিভাবকদের উচিত নিজ দায়িত্বে শিশুদের সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করা। আমাদের উক্তি হোক: “চলো সাঁতার শিখি, নিজে বাঁচি এবং অন্যকে বাঁচাই।”  

নদী ভাঙনে স্বপ্নভঙ্গ

নদী ভাঙনে স্বপ্নভঙ্গ

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রধান সমস্যা ও আতস্কের নাম নদী ভাঙন। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার ৬নং চর শৌলমারী ইউনিয়নের সোনাপুর, ঘুঘুমারী, সুখের বাতি ও খেদাইমারী গ্রাম এবং উলিপুর উপজেলার ১৩নং সাহেবের আগলা ইউনিয়নের খেওয়ার চর, উত্তর নামাজের চর ও দক্ষিণ নামাজের চর গ্রাম ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবাহমান স্রোতের গতিতে প্রতিদিন ভেঙে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঘুঘুমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় তিন হাজার বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রিয় বিদ্যালয় ভেঙে যাওয়ার কারনে অনেক শিশু পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখন উত্তর নামাজের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ নামাজের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ নামাজের চর কলেজ, সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাইস্কুলসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। যাদের বাড়ি নদীতে বিলিন হয়েছে তারা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছে। অনেকের বাপ দাদার কবর পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদ গ্রাস করে নিয়েছে। অনেকে ভিটা মাটি হারিয়ে সঙ্গী দুর্দশার মধ্যে আছে। এ ছাড়াও নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে কৃষি জমি ও ফসল এতে অসহায়ত্বেও হচ্ছে এ এলাকার মানুষ। বিধ্বসী নদীর কারণে এ এলাকার মানুষের সুন্দর স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে। যার দেশের ফলে দিন দিন বেকারত্বের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই।   

ইতিহাসের দায় ও ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি

ইতিহাসের দায় ও ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি

গত বছরের জুলাই মাসটা যেন ইতিহাসের পৃষ্ঠায় লেখা এক অগ্নিময় অধ্যায়। সেই সময়ে রাস্তায় নামে হাজারো মুখ- শুধু মুখ নয়, প্রত্যেকে ছিল প্রতিরোধের প্রতীক। রাস্তায় পায়ে পায়ে জমেছিল ক্ষোভ, কণ্ঠে কণ্ঠ মিলেছিল বঞ্চনার বিরুদ্ধে, আর চেতনায় জেগেছিল পরিবর্তনের জোরালো আকাক্সক্ষা। দীর্ঘ সময় ধরে জনগণ ছিল এক ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রযন্ত্রের বলির পাঁঠা। একদিকে ছিল ক্ষমতাসীনদের অবৈধ দখলদারিত্ব, অন্যদিকে জনগণের কণ্ঠরোধ, বাক-স্বাধীনতার পায়ে শিকল, আর সর্বোপরি ভোটাধিকার হরণের নির্মম অপপ্রয়াস। মানুষ হারিয়ে ফেলেছিল বিশ্বাস, হারিয়ে ফেলেছিল নিজের রাষ্ট্রে নিজের নাগরিকত্বের আত্মবিশ্বাস। এই অভ্যুত্থান ছিল পূর্বাপর ক্ষোভের বিস্ফোরণ। এটি কেবল একটি সরকারের বিরুদ্ধে নয়, একটি কাঠামোগত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ছিল। যে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের কথা শোনে না, যে রাষ্ট্র মানুষকে অবিশ্বাস করে, ভয় পায়- তার পতন অবশ্যম্ভাবী। জুলাইয়ে সেই পতন ঘটেছিল গণচেতনার ঢেউয়ে। ছাত্র, তরুণ, নারী, শ্রমিক- সবার কণ্ঠ একসঙ্গে উচ্চারিত হয়েছিল : ‘আর না।’ তবে আজ, একবছর পর দাঁড়িয়ে ফিরে তাকালে প্রশ্ন জাগে- কী বদলেছে? শুধু ব্যক্তি বা সরকার নয়, বদলেছে কি রাষ্ট্রের চেতনা? মিডিয়ায় এখনো অনেক সময় সত্যকে ছেঁটে ফেলা হয়, বিরোধী কণ্ঠকে এখনো অনেক সময় ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ বলে চিহ্নিত করা হয়, আর প্রশাসনের ভিতরে এখনো অনেক ক্ষেত্রে পুরানো সেই একচোখা দৃষ্টিভঙ্গি সক্রিয়। জুলাই আমাদের শিখিয়েছে প্রতিরোধ কেবল একদিনের নয়, এটা প্রতিদিনের চর্চা। একবার রাস্তা দখল করলেই যথেষ্ট নয়, বরং রোজকার প্রশাসন, নীতিনির্ধারণ, সিদ্ধান্তে জনগণের সক্রিয় উপস্থিতি নিশ্চিত করাই হলো প্রকৃত গণতন্ত্র। ইতিহাস শুধু গৌরবগাথা নয়, এটি দায়বদ্ধতার দর্পণ। তাই জুলাইয়ের অভ্যুত্থান যেন শুধু স্মৃতির চিহ্ন না হয়ে, হয়ে ওঠে ভবিষ্যতের পথনির্দেশ- যেখানে ফ্যাসিবাদ নয়, থাকবে স্বাধীনতা; দমন নয়, থাকবে অধিকার; আর ভয়ের সংস্কৃতির বদলে গড়ে উঠবে গণতান্ত্রিক সাহসের এক নতুন দেশ।