ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

মতামত

শ্রমিকদের চিৎকার দুনিয়া জুড়ে: কে শুনে কার কথা

শ্রমিকদের চিৎকার দুনিয়া জুড়ে: কে শুনে কার কথা

শ্রম আর পুঁজি। এ দুটি শব্দে যেন গোটা দুনিয়ায় বিভেদ তৈরি করেছে। কারণ যারা কায়িকশ্রমে নিয়োজিত থাকে তাদেরকে সাধারণ শ্রমিক বলা হয়। পুঁজি হলো সেই ব্যবস্থা যা শ্রমিকদের শ্রম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের যাবতীয় কাজ চলে। কিন্তু শ্রমিকদের রাষ্ট্র কাঠামো কত আছে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজে গিয়ে দেখা যাবে শ্রমিক রাষ্ট্র কাঠামো কিঞ্চিৎ। তবে আলোচনা - পর্যালোচনা বিশেষ প্রয়োজন বাংলাদেশের কাঠামোতে শ্রমিকদের অধিকার এবং শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে। পাহাড় থেকে সমতলে নারী পুরুষ শ্রমিকদের চিৎকার গোটা দেশে বিদ্যমান রয়েছে। তবে উদ্বিগ্নতার জায়গা বেশি কারণ রাষ্ট্রীয় মালিকানার চেয়ে ব্যক্তি কেন্দ্রিক ভাবে গড়ে কলকারখানা যেখানে উৎপাদন করা হয়। আমরা প্রতিনিয়ত যা ব্যবহার করি তাকে পণ্য বলা হয়।  পণ্য উৎপাদন করতে যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাকে উৎপাদন যন্ত্র বলা হয়।উৎপাদন করেন দুই শ্রেণির মানুষ একজন হলো মালিক আর অন্যজন হলো শ্রমিক। তবে মালিকের মধ্যে দুই শ্রেণি লক্ষ্য করা যায়। কখনো রাষ্ট্র নিজেই হতে পারে অথবা রাষ্ট্রের কোনো এক ব্যক্তি হতে পারে। তবে বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় গুটিকয়েক সমাজতান্ত্রিক দেশ ছাড়া বাকি দেশগুলো উৎপাদন যন্ত্রগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়ে থাকে। ফলে উৎপাদন যন্ত্র যখন নিজের আয়ত্তে থাকে তখন মালিক ব্যক্তিগত লাভের আশায় পণ্য তৈরি করে। আর সেই পণ্যগুলো যারা তৈরি করে তারা হলো যাদের নিজের কোনো জমিজমা নেই, কোনো টাকা-কড়ি নেই আবার নেই কোনো উৎপাদন যন্ত্র। যা আছে তা হলো শুধু নিজের শরীর শক্তি। ফলে সেই শক্তি অথবা শ্রম দিয়ে যারা জীবন বাঁচায় তাকেই, মজুর বা শ্রমজীবী মানুষ বলে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে যারা পুঁজি খাটিয়ে উৎপাদন যন্ত্র আর শ্রমিকদের মাধ্যমে পণ্য তৈরি করে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে লাভ বা মুনাফা করা।

মতামত বিভাগের সব খবর

ঝুঁকি বনাম জীবিকা

ঝুঁকি বনাম জীবিকা

বর্তমান সময়ের শহরভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যাটারিচালিত রিক্সা একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি শ্রমিকের শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দিয়েছে এবং কিছুটা হলেও পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে। সহজ ব্যবস্থাপনার কারণে তুলনামূলকভাবে বয়সী বা শারীরিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিরাও সহজেই এ ধরনের রিক্সা চালাতে সক্ষম হচ্ছেন। রাজধানীসহ  দেশের বিভিন্ন শহরে বর্তমানে প্রায় ৪৫ হাজার ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচল করছে। তবে যথাযথ নিয়মকানুন ও লাইসেন্সবিহীন চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে, যা জননিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব রিক্সার জন্য আলাদা লেন তৈরি করা গেলে এবং সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনায় চালনা নিশ্চিত করা গেলে এটি হতে পারে একটি কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন মাধ্যম। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এটি কর্মসংস্থান ও আয়ের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব রাখছে। হ্নরিক্সার সংখ্যা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেলে যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই ব্যাটারিচালিত রিক্সার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। প্রতিটি এলাকা বা ওয়ার্ডের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক রিক্সাকে লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে পরিচালিত করা যেতে পারে। লাইসেন্স নবায়ন, ফিটনেস পরীক্ষা এবং নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে রিক্সাগুলোর মান নিশ্চিত করা সম্ভব। পাশাপাশি নতুন রিক্সার নিবন্ধন ও পরিচালনার দায়িত্বে স্থানীয় প্রশাসন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। হ্নঅতএব, সঠিক পরিকল্পনা ও কঠোর নিয়মকানুনের মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত রিক্সাকে একটি নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থায় রূপান্তর করা সম্ভব।

নৈরাজ্য বন্ধ করুন

নৈরাজ্য বন্ধ করুন

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা, প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স এসবের কিছুই মানছে না অটোরিক্সার চালক ও তার মালিকরা। তারা শহরটাকে অচলাবস্থায় পর্যবসিত করে তুলেছেন। তাদের আন্দোলনের কোনো ধরনের যৌক্তিকতা না থাকলেও সড়কজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আন্দোলন চালানোর কারণে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত ভয়াবহ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। তাদের আন্দোলনে অনেক পুলিশ সদস্যও আক্রান্ত হয়েছে। তবে তাদের নৈরাজ্যের কারণে সাধারণ মানুষ সড়কে নেমে তাদের প্রতিহত পর্যন্ত করতে দেখা গেছে। অটোরিক্সার সবচেয়ে বেশি গ্যারেজ ও কারখানা রয়েছে বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী ও রায়েরবাগ এলাকায়। তবে বড় বড় অটোরিক্সার ফ্যাক্টরি রয়েছে গাজীপুরে। ষেখান থেকে ঢাকার শোরুমে গাড়ি আসে। কোনো ধরনের লাইসেন্স এবং সিটি করপোরেশনের অনুমতি ব্যতিরেকেই অবলীলায় চলছে এহেন কর্মকাণ্ড। কমলাপুর স্টেডিয়াম এলাকায় বিশাল শোরুম গড়ে তোলা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিদিনই শত শত অটোরিক্সা দেশের প্রত্যাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। ব্যাঙের ছাতার মতো অটোরিক্সা একদিকে যেমন সড়ক ও মহাসড়কের জন্য বিপদ ডেকে আনছে তেমনি দুর্ঘটনার জন্য অটোরিক্সাও এগিয়ে রয়েছে। প্রতিদিন যত ধরনের দুর্ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে তার মধ্যে অটোরিক্সাই বেশি দুর্ঘটনায় কবলিত হচ্ছে। তবে সড়কে থাকা ট্রাফিক পুলিশের অভিযোগের অন্ত নেই। তারা বলেন, অটোরিক্সা ডানে বামে ঘুরাতে গেলেই বিপত্তিতে পড়তে হয় পেছনে থাকা গাড়িকে। ইনডিকেটর না থাকায় কোনো দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে মোড় নেবে তা পেছনের গাড়ি জানতে পর্যন্ত পারছে না। তাতেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আবার যানজট সৃষ্টি হওয়ায়ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। শুধু ঢাকা শহরেই পায়েচালিত রিক্সাই রয়েছে ১৫ লাখের বেশি। দিন দিন অটোরিক্সার নৈরাজ্যের কবলে ব্যস্ততম সড়কগুলোকে তীব্র যনজটে নাকাল হতে হচ্ছে। অফিসগামী এবং অ্যাম্বুলেন্স সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে। এতদিন শহরের লিংকরোড ব্যবহার করলেও অটোরিক্সা এখন ব্যস্ততম সড়কে চালানোর জন্য তাদের আন্দোলন রীতিমতো শুধু অন্যায়ই নয় এটা বড় ধরনের অপরাধের শামিলও বলা চলে।  পায়েচালিত রিক্সা পরিবেশবন্ধব হলেও অটোরিক্সা দেশের উৎপাদিত বিদ্যুতের বড় একটা অংশ গিলে খেয়ে ফেলছে। তাতে করে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি পড়তে হচ্ছে দেশবাসীকে। তবে বেশিরভাগ অটো গাড়ির চার্জের বিদ্যুৎ লাইন অবৈধ। একটি দেশের সড়কের পরিকাঠোমো যদি এভাবে লাইসেন্সবিহীন গাড়ির দখলে চলে যায় তাতে নৈরাজ্যে ভয়াবহতার দিকে যাবে এটাই স্বাভাবিক। এর লাগাম যদি এখনই টানা না যায় তাহলে শহরের সড়কগুলো একেবারে অচলাবস্থা পতিত হতে বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়বে না। তবে এ খাতে মালিক পক্ষের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানেই চলে আন্দোলন এবং নৈরাজ্য। সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে। মালিক পক্ষের সিন্ডিকেটধারী এসব নেতাকে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না এমনকি আইনের কঠোরতায় শিথিলতা প্রদর্শনও কাম্য নয়। মুন্সীগঞ্জ থেকে

বন্ধ হোক ব্যাটারিচালিত রিক্সা

বন্ধ হোক ব্যাটারিচালিত রিক্সা

কাছ থেকে যতটুকু দেখার সুযোগ হয়েছে বা দেখেছি তাতেই বলতে পারি ব্যাটারি চালিত রিক্সার মধ্যে একটিও পজেটিভ গুণ নেই। কোনো একটা দিক থেকেই এই রিক্সা মানুষের উপকারে আসতে পেরেছে বলে আমার মনে হয় না। নির্মিত এই রিক্সার যে নির্মাণ কৌশল তাতেই রয়ে যায় মারাত্মক ত্রুটি। গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তেমন কোনো যুতসই ব্যবস্থা রাখার সুযোগ নেই বলেই এই রিক্সা চালানোর সময় চালক পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। এই রিক্সা যারা চালায় তারা প্রশিক্ষিত নয়, তাদের কারো কাছে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা আছে বলে মনে হয় না। যার কারণে তারা উল্টোপথে যেমন গাড়ি চালায় তেমনি অযাচিতভাবে ডানে বামে ঘুরানো এবং যত্রতত্র পার্কিং করে সড়কপথে জট তৈরির মাধ্যমে মারাত্মক অসুবিধা সৃষ্টি করতে একবারও ভাবে না। সংখ্যায় ক্রমবর্ধমান এই রিক্সায় প্রতিদিন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ দরকার হয় তা দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর পক্ষে যোগান দিয়ে যাওয়া কখনও সম্ভব ছিল না। অধিকন্তু এই রিক্সার অনেক মালিককে দেখা গেছে অবৈধভাবে জাতীয় লাইন থেকে সংযোগ নিয়ে প্রতিদিন ব্যাটারি চার্জ করতে। এতে করে স্বাভাবিক অবস্থায় বিদ্যুতের যেমন ঘাটতি পড়ছে অপরপক্ষে কর্তৃপক্ষও হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ বিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে এসব রিক্সার মালিক হচ্ছে স্থানীয় মাস্তান টাইপের লোক যাদের অধীনে এলাকার উঠতি বয়সের ছেলেরাই (যারা বর্তমানে কিশোর গ্যাং বলে সর্বাধিক পরিচিত) এই রিক্সা চালায়। তাদের কাছে যাত্রী সাধারণের কোনো মান সম্মানের বালাই নেই। যাত্রীরা কিছু টাকা এবং সময় বাঁচানো লোভ থেকেই এ রিক্সার ব্যাবহার করলেও এক্সিডেন্ট হয়ে হাত-পা ভেঙ্গে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে তাদের অনেকে। এসব রিক্সা যারা চালায় তাদের কিছু অংশ প্যাডেল রিক্সার চালক, তারা চাইলে জীবন সংহারি এই বাহনের পরিবর্তে পুনরায় প্যাডেল রিক্সা চালাতে পারে। সুতরাং বলা যায় এইসব ঘাতক রিক্সার চালকদের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা খোঁজার দাবী সম্পূর্ণই অযৌক্তিক। সঠিকভাবে বিচার করলে দেখা যাবে, ইতিমধ্যে সড়ক মহাসড়কে যেসব গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে তার অধিকাংশই এই ব্যাটারি চালিত রিক্সা এবং অকালে জীবন দানকারী অধিকাংশই এই ঘাতক রিক্সার যাত্রী। সুতরাং সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমি বলতে চাই এই সব ব্যাটারিচালিত রিক্সা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হোক! কোতোয়ালি, চট্টগ্রাম থেকে

বেপরোয়া বিশৃঙ্খল

বেপরোয়া বিশৃঙ্খল

চলাচলের জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য যান হচ্ছে রিক্সা। রিক্সা একটি জাপানিজ শব্দ। ১৮৬৯ সালে জোনাথোন স্কোবি রিক্সা উদ্ভাবন করেন। বাংলাদেশে ১৯৪১ সাল থেকে রিক্সা চলা শুরু হয়। রিক্সা একটি তিন চাক্কার পেডেল যুক্ত ছাউনিওয়ালা যান। এটিতে দুজন থেকে চারজন পর্যন্ত চড়তে পারে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য অতি সহজে আমরা রিক্সা বেছে নেই। ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি রিক্সা ব্যবহৃত হয়। পার্কে যাওয়ার জন্য, স্কুলে যাতায়াতের জন্য, অফিস-আদালতে তাড়াতাড়ি পৌঁছানোর জন্য রিক্সা ব্যবহার করে থাকি। তাই ঢাকাকে রিক্সার নগরী বলা হয়। প্রথমে রিক্সাকে টেনে টেনে যাত্রী পরিবহন করা হতো, এর পর পায়ে চালিয়ে, বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিক্সার বহুল প্রচলন। রিক্সার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহও সহজলভ্য হয়েছে। জরিপ অনুযায়ী, ঢাকা শহরে প্রায় ১০ লাখ রিক্সা রয়েছে। এই দশ লাখ রিক্সার পিছনে চালক    রয়েছে ১৫ লাখ। তবে পায়েচালিত রিক্সার চেয়ে ব্যাটারিচালিত রিক্সার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। শুধু বাড়ছে না, তাদের বেপরোয়া গতিতে রিক্সা চালানোর ফলে দুর্ঘটনা হচ্ছে। ছোট থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ ভয়ে ব্যাটারিচালিত রিক্সায় উঠতে চায় না। রিক্সার সর্বোচ্চ গতি ১৫কি.মি. কিন্তু তারা এর চেয়ে অনেক বেশি গতিতে রিক্সা চালিয়ে বেড়ায়। যা কিনা পরবর্তীতে বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। পায়ে রিক্সা চালালে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তাছাড়া বেশিরভাগ রিক্সা চালকদের লাইসেন্সও করা থাকে না। যাত্রীর সংখ্যার চেয়ে দেশে রিক্সার সংখ্যা বেশি। অগণিত রিক্সার কারণে জ্যামের পরিধিও অধিক। যার কারণে ট্রাফিক পুলিশের রিক্সা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম পোহাতে হয়। এরা ট্রাফিক সিগন্যাল না মেনে যত্রতত্র রিক্সা ব্রেক বা থামিয়ে থাকে। তাছাড়া তারা সড়ক ছেড়ে মহাসড়কেও দূরপাল্লার বাসের সঙ্গে টক্কর দিয়ে থাকে। কিছুদিন পর পর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এদের ধরা হলে, জরিমানা করলেও সেই পূর্বের মতো হয়ে যায়। আমরা জানি একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না, তাই আমাদের সচেতনতা  তৈরি করতে হবে। রিক্সা নয়, ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচল বন্ধ করতে হবে। যততত্র রিক্সার গ্যারেজ তৈরি বন্ধ করতে হবে। গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহর সব জায়গায় যে যেভাবে পারে গ্যারেজ করে থাকে কোনো লাইসেন্স ছাড়াই। এসব গ্যারেজ বন্ধ করতে হবে। ন্যূনতম ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিতে হবে। জরিপ করে অদক্ষ চালক পরিবর্তন করতে হবে। চাঁদাবাজি দিয়ে ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলার অনুমতি বন্ধ করতে হবে। আমরা চাই না খেটে-খাওয়া মানুষ না খেয়ে থাকুক। রিক্সা চলবে কিন্তু পায়ে চালিয়ে। যাতে দুর্ঘটনার মোকাবিলা থেকে সকলে রক্ষা পায়। ‘জ্যাম নিরসন হোক, পায়েচালিত রিক্সা চলুক’ এই প্রতিপাদনে ব্যাটারিচালিত রিক্সা বন্ধ করা প্রয়োজন।

বিষয় ॥ ব্যাটারিচালিত রিক্সা

বিষয় ॥ ব্যাটারিচালিত রিক্সা

বর্তমানে সড়কের সবচেয়ে আতঙ্কের যানবাহন হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিক্সা। মানুষ তার সময়-স্বল্পতা দূর করার জন্য ব্যাটারিচালিত রিক্সা ব্যবহার করলেও বর্তমানে এটি জীবন কেড়ে নেওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এর বেপরোয়া গতির কারণে মূহুর্তের মধ্যেই মানুষের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। গত ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরের কাপাসগোলায় বেপরোয়া গতির একটি ব্যাটারিচালিত রিক্সা খালে পড়ে ছয় মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়। এরকম আরো অনেক দুর্ঘটনার কবলে প্রতিদিনই পড়ছে সাধারণ জনগণ । কেউ মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে, কেউ বরণ করে নিচ্ছে আজীবনের পঙ্গুত্ব। ব্যাটারিচালিত রিক্সার চলাচল ঢাকা শহরসহ দেশের অন্যান্য শহর এবং গ্রামেও অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে। ট্রাফিক আইন না মেনে নগরীর প্রধান প্রধান  সড়কে বিশৃঙ্খলা  সৃষ্টি  করছে। যেখানে সুযোগ পাচ্ছে সেখান দিয়েই তারা গাড়ি চালাচ্ছে। ফলে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা শহরে প্রায় ১০ লাখের বেশি ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচল করছে। এছাড়া ব্যাটারিচালিত রিক্সার ব্যাটারি চার্জ করতে প্রচুর বিদ্যুৎ অপচয় হয়।  যা দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি সৃষ্টি করে। বাংলাদেশ দারিদ্র্য জর্জরিত একটা দেশ। এদেশে জীবিকার তাগিদে  মানুষ যখন যেই কাজ পায় সেই কাজই করে। ক্ষতির বিষয়ে ভাবার আগে তারা জীবিকার কথা চিন্তা করে। কারণ তাদের অধিকাংশ দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসে। তাই চালকদের জীবিকার কথা চিন্তা করে এবং সড়কের দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা মোকাবিলা করতে আগে সরকারকে সজাগ হতে হবে। সর্বপ্রথম তাদের জন্য নতুন জীবিকার বন্দোবস্ত করতে হবে। চলাচলের প্রধান প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিক্সার অবাধ চলাচল বন্ধ করতে হবে। চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চালকদের দ্বারা সড়কে দুর্ঘটনারোধ করা সম্ভব এবং পথচারী ও যাত্রীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়। ট্রাফিক আইন ব্যবস্থা আরও বেশি কঠোর করতে হবে। ব্যাটারিচালিত রিক্সা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করলে দেশে আর্থসামাজিক সংকট দেখা দিতে পারে। এইজন্য  দেশের সার্বিক দিক বিবেচনা করে সরকারকে আশানুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।  সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। সময় নিয়ে হলেও সরকারকে ব্যাটারিচালিত রিক্সার বিষয় নিয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান করতে হবে। সড়কের শৃঙ্খলাই দেশের সৌন্দর্য। ফেনী সরকারি কলেজ, ফেনী থেকে

সড়ক দাপানো ঝুঁকিপূর্ণ যান

সড়ক দাপানো ঝুঁকিপূর্ণ যান

এমনিতে রিক্সার জ্বালায় অতিষ্ঠ শুধু নগরবাসী নয়, গোটা দেশবাসী। তারপর শুরু হয় কৌশলে প্রথমে প্রতিবন্ধী-পঙ্গু লোকদের নিয়ে ব্যাটারি চালিত রিক্সা। এখন গোটা দেশে পঙ্গু-প্রতিবন্ধি নয়, সচল ব্যক্তিরাই ব্যাটারি চালিত রিক্সা-ভ্যান চালায়। তবে বিগত সরকারের আমলে পুলিশকে নিয়মিত মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিয়ে এ ধরনের রিক্্রার প্রর্বতন ঘটে। ব্যাটারি চালিত রিক্সার কারণে শুধু রাজধানী নয়, সাড়া বাংলাদেশের ট্যাফিক ব্যবস্থা একবারে অচল হয়ে পরেছে। প্রতিদিন এ ধরনের রিক্সা দৌরাত্বে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে  পড়ছে। তারা রাজপথে শুধু ভাংচুর করে  নৈরাজ্য সৃষ্টি করে থাকে তারা পুলিশের দৃষ্টিতে রাজপথের জন্য ভীষণ ভয়ংকর। ব্যাটারি চালিত রিক্সার চালকরা কোন প্রকার ট্রাফিক আইন মানতে চায় না বা মানার কোন আগ্রহই নেই। আগের  মেয়র ও এখন প্রশাসকরা হুংকার দিয়েছে রাজধানীতে ব্যাটারি চালিত রিক্সা চলতে দেওয়া হবে না। কয়েকবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সভা করে ব্যাটারি চালিত রিক্সা-ভ্যান বন্ধের নির্দেশনা জারি করেও কোন লাভ হয়নি। এখন খোদ সরকারের পক্ষে এটি নিয়ন্ত্রণ  করা কঠিন হয়ে পরেছে। যদিও এধরনের রিক্সায় প্যাসেঞ্জার উঠতে আরাম বোধ করে কিন্তু এ রিক্সাগুলো রাস্তাঘাটে বিপদজ্জনক ও অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এধরনের রিক্সার কারণে সাধারণ রিক্সায় এখন আর যাত্রী উঠতে না চাওয়াতে লাইসেন্সঅলা রিক্সাওয়ালা ও তাদের মালিকরা ক্ষুব্ধ। বিনা লাইসেন্সে ব্যাটারি চালিত রিক্সাগুলো শহর-বন্দর গ্রামের পথে ঘাটে চলছে এবং এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মাঝে মাঝে সরকারের চাপে প্রশাসন তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ব্যাটারির রিক্সা চালকরা একজোট হয়ে ফুঁসে উঠে।  কিছু হলেই তারা শুরু করে রাজপথে গাড়ী ভাংচুর এমন কি হোন্ডা-সিএনজি চালকদের মারতেও দ্বিধাবোধ করে না। ব্যাটারি চালিত রিক্সার নীতিমালা বা লাইসেন্স  না থাকার কারণে সিটি কর্পোরেশনগুলো  রাজস্ব হারাচ্ছে। এসকল রিক্সার ব্যাটারিতে প্রতিদিন চার্জের জন্য অনেক বিদ্যুৎ খরচ হয়ে থাকে। অবৈধ লাইনের মাধ্যমে বা চুরি করে বা বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে ম্যানেজ করে ব্যাটারি চালিত রিক্সার ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার অনেক অভিযোগও রয়েছে। সরকার পারে না এমন কাজ নেই। সময়মত বাধা না দেওয়াই ছিল তাদের কাল। তবে রাস্তায় ব্যাটারি চালিত রিক্সাগুলো যেভাবে চালায় ইহা বিপজ্জনক।  সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব ব্যাটারি বা মোটরচালিত রিক্সা ও ভ্যান চলছে তা বন্ধের সরকারী সিদ্বান্ত যৌক্তিক বটে।  তবে সরকারকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এই ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া রিক্সাগুলো তুলে দেওয়া এখন আরেকটি সমস্যা দেখা দিবে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ সমস্যা নিরসনে রিক্সামালিক, শ্রমিক নেতা ও রিক্সা চালকদের নিয়ে একটা ঐক্যমতের সিদ্ধান্তে পৌছাতে চেষ্টা করুন যা হবে দেশবাসী ও নগরবাসীর জন্য উত্তম।   গেন্ডারিয়া, ঢাকা থেকে

বাংলাদেশের শ্রমমান ও অধিকার প্রসঙ্গে

বাংলাদেশের শ্রমমান ও অধিকার প্রসঙ্গে

কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক নির্ণয়ে সে দেশের শ্রম অধিকার সংক্রান্ত বিষয়াদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সময়ে পোশাক শিল্পে সংঘটিত দুঃখজনক ঘটনায় আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাপের মুখে মালিকেদের Accord প্রদত্ত গাইডলাইনস ও বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুসরণ করতে বাধ্য করা হলেও অদ্যাবধি অনেক জায়গায় এর ব্যত্যয় ঘটে চলেছে। এমনকি আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুসারে যে সমস্ত শ্রম অধিকার রয়েছে মালিকরা তা সুকৌশলে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। মূলত মালিকদের অসহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব, পক্ষদের মধ্যকার পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার সংকট, শোভন কর্মপরিবেশের অনুপস্থিতি, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকাণ্ডে মালিকদের বাধা প্রদান, কারখানা পর্যায়ে কালেক্টিভ বার্গেনিংয়ের অনুপস্থিতি ইত্যাদি বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলে শ্রম আইন ও অধিকার সুনিশ্চিতসহ শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক দৃঢ়তর হবে। এতে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে, যা প্রকারান্তরে ক্রমবর্ধমান কর্মসংস্থান, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, টেকসই উন্নয়নের অর্জনের পথকে সুগম করবে। পত্রিকান্তরে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশের শ্রমমান ও অধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে মোট ১১টি বিষয়ের ওপর প্রাধান্য দিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর তাগিদ দিয়েছেন। এগুলো হলো- ট্রেড ইউনিয়নের কর্মী ও শ্রম অধিকার কর্মীদের ওপর যারা নিপীড়ন করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যে সমস্ত মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ শ্রমিক নেতা ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কাজ করে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা; বাংলাদেশের শ্রম আইন সংশোধনপূর্বক আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সুনিশ্চিত করা। ইপিজেড অঞ্চলের শ্রমিকরা স্বাধীনভাবে ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) ৩৪ ধারা সংশোধন ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে (এসইজেড) সেটির প্রয়োগ করা। বেজা ও এসইজেডের শ্রমিকরা যাতে সংগঠিত হতে পারে ও যৌথ দরকষাকষিতে সক্ষম হয় তা নিশ্চিত করা; ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধনের আবেদন প্রক্রিয়া ৫৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা। শ্রম অধিদপ্তরের মাধ্যমে তার বিদ্যমান নিবন্ধন পোর্টালে অপেক্ষমাণ থাকা সব ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশনের আবেদন হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ। বার্ষিক বাজেটের মাধ্যমে শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ ও এর জন্য তহবিল বরাদ্দ দেওয়া; শ্রম পরিদর্শকের পদ অনুমোদন এবং নিবন্ধন বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করার অভ্যাস বন্ধ করা। শ্রম অধিকার সংক্রান্ত ইউএসটিএ কর্তৃক উল্লিখিত ১১ দফার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে বিলসের নির্বাহী পরিচালক ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান আহমেদ বলেন, ১১ দফা বাস্তবায়নে কিছু কমিটি হয়েছে। আইন ও বিধি সংশোধনের কাজ চলছে। তবে মালিকপক্ষ যদি এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ না করে তাহলে তেমন কোনো লাভ হবে না। কারখানার অভ্যন্তরে মালিক ও শ্রমিকের মধ্যকার যৌথ দরকষাকষির পরিবেশ তৈরি করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ভালো কিছু আশা করা যায়। এটা সত্য যে, মে দিবস শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অনন্য মাইলফলক যা ১৮৮৬ সালে সংঘটিত হয়েছিল। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এখনো ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে শ্রম আইন ও বিধিতে অনেকগুলো শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে সরকারের অসহযোগিতা এখনো রয়ে গেছে। যে তথ্য জমা দেওয়া হয়, তা শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক আবার চাওয়া হয়। এমন ইনফরমেশনও চাওয়া হয় যা আইন/রুলসে উল্লেখ নেই। যেমন- ইউনিয়ন করার জন্য মালিকপক্ষের প্রত্যয়নপত্র। যে মালিক ট্রেড ইউনিয়ন হোক চান না তিনি কি প্রত্যয়নপত্র দেবেন? এমনকি, স্বাক্ষর মেলেনি এ অজুহাতেও ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন আবেদন বাতিল করা হয়। তবে এটা সত্য যে, অনেক সময় মালিক আজ্ঞাবহ পকেট ইউনিয়ন করার জন্য প্রত্যয়নপত্র দিয়ে থাকেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কোলি এম রড্রিগেজ কারখানার ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন সহজ করা, জীবনধারণের জন্য শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত এবং শ্রমবিষয়ক কর্মপরিকল্পনা-শ্রম আইনের দ্রুত সংস্কার- এ বিষয়গুলোর ওপর সমধিক জোর দিয়েছেন। ট্রেন ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিতসহ শ্রম বিরোধ নিরসনে শ্রমিক, মালিক ও সরকারের সম্মিলিত উদ্যোগে ১৮ দফার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধদল প্রশংসা করলেও ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় এখনো সহজ না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন। অনেক সময় মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে শ্রম অধিদপ্তর ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে-এ ধরনের অভিযোগ হরহামেশা পাওয়া যায়। এ বিষয়টি জানতে চাইলে শ্রমসচিব বলেন, অভিযোগটি অমূলক নয়। ইতোমধ্যে কয়েকটি কারখানা ও সরকারি দপ্তর পরিদর্শন করে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে এ ব্যাপারে কাজ চলছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে শোষণের শিকার হচ্ছে। পাচ্ছে না ন্যায্য মজুরি, শোভন কর্মপরিবেশ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কর্ম ঘণ্টা অনুসরণের সুযোগ। শ্রমের বিনিময়ে যে মজুরি পান তা দিয়ে মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই দুঃসময়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাটাই দায়। অন্যদিকে দেশে বেকারত্ব একটি বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় জীবন ও জীবিকার তাগিদে শ্রমিকরা কাজ করতে বাধ্য হলেও প্রতিকূল পরিবেশ ও উদ্ধৃত শ্রমবাজার হওয়ায় সস্তা দামে ও কঠিন শর্তে শ্রমিকগণ তাদের শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। মনে রাখতে হবে সমাজদেহে এ ধরনের শ্রেণি শোষণ বিদ্যমান রেখে বৈষম্যহীন সমাজ গঠন তো দূরের কথা, গণতন্ত্র ও মানবতাবোধ প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব নয়। এটা সত্য যে, শ্রমজীবী মানুষ আবহমানকাল থেকে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করে বহু ব্যবস্থার পরিবর্তন করলেও শোষণের অবসান ঘটাতে পারেনি। বরং মালিকরা নিত্যনতুন কৌশলের মাধ্যমে শোষণের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে চলেছে। ফলে মে দিবস সংঘটিত হওয়ার ১৩৮ বছর পরও শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলমান রয়েছে। বাংলাদেশে শ্রমমান ও অধিকার সুনিশ্চিত করতে হলে সরকার, শ্রমিক, মালিকের মধ্যকার পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান ও নিবিড় যোগাযোগ অনস্বীকার্য। উপরন্তু জাতীয় চাহিদাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও শিল্পের বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা বজায় রাখা, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা ও সার্বিক মুক্তি অনেকাংশে নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে সরকারকে অনুঘটকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। জানিনা, বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্য আকাশে সেই স্বর্ণালী দিনের রঙিন সূর্য কবে উদয় হবে? যাদের শ্রমে-ঘামে কলকারখানা চলে, রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মিত হয়, ধনিক শ্রেণির বিলাস-বৈভবের নানা উপকরণ তৈরি হয়, তাদের জীবনযাত্রার মান-মর্যাদা-অধিকার প্রতিষ্ঠায় হোক- এবারের মে দিবসে এই হোক অঙ্গীকার। লেখক : অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বাজেট বাস্তবায়নে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে

বাজেট বাস্তবায়নে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে ১ নম্বর অগ্রাধিকারে রেখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সাজাচ্ছে সরকার। বাজেটে সুযোগ তৈরি করা হবে গ্রামীণ পর্যায়ে কর্মসংস্থানের। এজন্য উজ্জীবিত করা হবে রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কারসহ গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের কর্মযজ্ঞকে। বড় তেমন কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে না। করা হবে না ঢাউস আকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিও (এডিপি)। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় ভাতা কিছুটা বাড়ানো হবে। বাড়ানো হবে ভাতাভোগীর সংখ্যা। সবই করা হবে সীমিত সাধ্যের মধ্যে থেকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট তৈরির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ ধারণা পাওয়া গেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্র্বর্তী সরকারের এটি হবে প্রথম বাজেট। আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। টেলিভিশনের পর্দায় অর্থ উপদেষ্টা বাজেট ঘোষণা করবেন ২ জুন। রাজস্ব সংগ্রহের বড় কোনো উৎসের সন্ধান না পাওয়ায় আগামী বাজেট তেমন বড় করা হচ্ছে না। এ কারণেই চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার কমানো হচ্ছে অন্তত সাত হাজার কোটি টাকা। অহেতুক উচ্চাভিলাষী নয়; বরং একটি বাস্তবভিত্তিক বাজেটের দিকেই এগোচ্ছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে, যা ৯ দশশিক ১০ শতাংশের ঘরে থাকছে। নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা থাকবে। সরকার প্রথমে আগামী অর্থবছর শেষে এ হার ৭ শতাংশে নামিয়ে আনবে বলে ঠিক করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ায় এ হার আরও কমবে বলে সরকার আত্মবিশ্বাসী। বাজেট মোটামুটি চূড়ান্ত করার জন্য সচিবালয়ে সম্প্রতি অনলাইনে আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিল ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।  ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হতে পারে বলে জানা যায়। উল্লেখ্য, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। রাজনৈতিক সরকারের অর্থমন্ত্রীরা বাজেট উপস্থাপন করে থাকেন জাতীয় সংসদে। সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট উপস্থাপন করবেন টেলিভিশনের পর্দায়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করা হবে। সর্বশেষ ২০০৭-০৮ সালে টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে দুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। মূল্যস্ফীতি (নিয়ন্ত্রণকে) প্রথম অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। এ ছাড়া নজর থাকবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জ্বালানি সাশ্রয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বাজেটে। মানুষের জীবনযাত্রা যেন সহজ হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে বলে জানা যায়। চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রাখা হবে। আগামী অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কিছুটা কমিয়ে ইতোমধ্যে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে থাকবে। এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হবে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো। বরাদ্দের দিক থেকে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা এবং শ্বেতপত্র কমিটি ও টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের সুপারিশের প্রতিফলন থাকবে বাজেটে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগামী অর্থবছরে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হতে পারে, যা চলতি বাজেটে ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্য কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৮১৭ টাকা। কিন্তু আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ ২১ শতাংশ। রাজস্ব আয় চার লাখ কোটি টাকা করতেই ঘাম ছুটে যায়। সে বিবেচনায় আগামী বাজেটও উচ্চাভিলাষী হবে। এতে ঘাটতি বড় হবে। এটা কোনোভাবেই ছোট বাজেট হবে না, মূল্যস্ফীতি কমার বাজেটও হবে না, এমনকি বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ার বাজেটও হবে না। সাত হাজার কোটি টাকা কমানোর কথা বলা মানে হচ্ছে, কল্পনার সঙ্গে কল্পনার তুলনা করা। অনেকটা এ রকম আগের সরকার চাঁদে যাওয়ার কথা বলেছিল, এখন বলা হবে মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার কথা। আগের সরকার যে বাজেট ঘোষণা করত, তার অনেকটাই অবাস্তবায়িত থাকত। বর্তমান সরকার সেই ঘোষিত বাজেটের চেয়ে মোট ব্যয় সাত হাজার কোটি টাকা কমানোর কথা বলছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প বাদ দেওয়ায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি কমছে। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ও বিনিয়োগে মন্দার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, শ্রমিক অসন্তোষের মুখে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে রাজস্ব আহরণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কমছে। এসব সংকটের কারণে চলতি অর্থবছরের শুরুতে (জুলাই) ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করলেও ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে জুনের মধ্যে সংশোধিত বাজেটের আকার অনুযায়ী অবশিষ্ট চার লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে। এদিকে অর্থ ব্যয় না হওয়ার শঙ্কায় চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বাজেট থেকে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ছেঁটে ফেলা হয়েছে। এতে সংশোধিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। বছরের শেষ সময়ে একসঙ্গে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। পাশাপাশি অপচয়, দুর্নীতি ও গুণগত মান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকে। অর্থ বিভাগ এ শঙ্কার কথা জানিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, শেষ সময়ে মন্ত্রণালয়গুলোর অস্বাভাবিক খরচের কারণে সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। এছাড়া রাজস্ব আহরণ ও ব্যয়-এ দুয়ের মধ্যে কোনো পরিকল্পনা থাকছে না। এতে অপরিকল্পিত ঋণ গ্রহণ এবং ঋণসংক্রান্ত ব্যয়ের দায়ভার বহন করতে হয় সরকারকে, যা আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট করে দিচ্ছে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে এসব বিল যাচাই-বাছাই করে দিচ্ছে। যে কারণে ব্যয় কম হচ্ছে। তবে কোনো বছরই বাজেটের পুরো অর্থ ব্যয় হয় না। শেষ সময়ে একসঙ্গে তাড়াহুড়া করে টাকা ব্যয় করতে গিয়ে অপচয়, দুর্নীতি ও অর্থব্যয়ের গুণগতমান নষ্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করে উন্নয়ন কাজের বিল যাচাই-বাছাই করে দেওয়া ভালো হবে। বাজেট কাটছাঁট প্রসঙ্গে অপ্রয়োজনীয় কিছু প্রকল্প যেগুলো রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নেওয়া সেগুলো বাদ দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে কিছু টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন কম হওয়ার পেছনে কয়েকটি সংকট শনাক্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে সামগ্রিকভাবে অর্থ সংকট বাস্তবায়নে বড় সমস্যা। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণ চলতি অর্থবছরে বেড়েছে। এই অর্থ ছাড় ও এর ব্যবহার করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে অর্থায়ন নিয়ে ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব রয়েছে। আগের সরকার রাজনৈতিকভাবে অনেক প্রকল্প নিয়েছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার এসে এ ধরনের প্রকল্প বাদ দিয়েছে। এ ছাড়া অর্থবছরের শুরুতে চলে আসে রাজনৈতিক অস্থিরতা, যা গত ৮ মাস ধরে অব্যাহত আছে। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটি বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ভারসাম্যে সংকট এবং বিনিয়োগ কমে আসায় এ বাজেট বাস্তবায়নে বড় ধাক্কা লেগেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রাজস্ব আহরণ, মোট ব্যয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বাস্তবায়ন ও পরিচালন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে আছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও জুলাইয়ে আন্দোলনে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলে। দেশের বন্দরগুলো অকার্যকর হয়ে পড়লে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাহত হয়। সারাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে (এডিপি) নেমে আসে স্থবিরতা। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি এই ৮ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয় ৫ লাখ ৬ হাজার ২ কোটি টাকা। সেখানে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণে বাজেট বাস্তবায়নে প্রথম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অর্থায়নের সমস্যা। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়ার পরও অনেক মন্ত্রণালয়ের ব্যয় করার সক্ষমতা থাকছে না। এটি একটি সমস্যা। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে অর্থ ব্যয়ের কোনো পরিকল্পনা নেই, বছরের শুরুতে বেতন-ভাতা, ইউটিলিটি বিল ছাড়া অন্য কোনো ব্যয় তেমন করা হয় না। কিন্তু শেষ দিকে আবার অস্বাভাবিকভাবে টাকা খরচ হয়। বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর অদক্ষতা তো আছেই। আছে অনেক ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তি পিডি হিসেবে নিয়োগ না পাওয়া ও জমি অধিগ্রহণে জটিলতা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আলোচনায় আসে না, সেটি হচ্ছে অননুমোদিত প্রকল্প। অননুমোদিত প্রকল্পের তালিকাও কম বড় নয়। তদবিরের তোড়ে এগুলো অনুমোদিত হয় এবং বছরের মাঝামাঝি সময়ে থোক বরাদ্দ থেকে অর্থ স্থানান্তর করে এগুলোর নামে দেওয়া হয়। এই করতে করতে অর্থবছর শেষ হয়ে যায়, কিন্তু খরচ আর হয় না। বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে এসব সমস্যাও দূর করা দরকার। লেখক : সাবেক কর কমিশনার ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান-ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন

মূলধারায় কারিগরি শিক্ষা

মূলধারায় কারিগরি শিক্ষা

অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা দেশের শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করার কথা বলেছেন। রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন : বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে একথা বলেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। এও বলেছেন যে, দেশে কারিগরি শিক্ষা অবহেলিত। এই শিক্ষাব্যবস্থাকে বলা হয় ট্রেড কোর্স বা মিস্ত্রি বানানোর কারখানা। এ ধরনের নেতিবাচক ধারণা ও মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এখানে কাঠামোগত সংস্কার, সিলেবাসের আধুনিকায়নসহ যোগ্য প্রশিক্ষিত শিক্ষক গড়ে তুলতে হবে। দেশে উচ্চশিক্ষিত অনেক বেকার রয়েছেন, যারা চাকরি পান না। এর বিকল্প হিসেবে জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষায়। উল্লেখ্য, দেশে ১৫-২৯ বছর বয়সী যুব সমাজ রয়েছে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। জনমীতির এই ইতিবাচক পরিবর্তনকে কর্মক্ষম জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হলে জোর দিতে হবে মানসম্মত কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ওপর। সরকার সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে সরকারের ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ তথা স্মার্ট সিটিজেন গড়ে তোলার ওপর। এর জন্য সবিশেষ জোর দেওয়া হবে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণসহ কর্মসংস্থানের ওপর। দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট যত দক্ষতা আছে, সেসব নিয়ে আসা হবে নতুন কারিকুলামে। যাতে শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষাগ্রহণসহ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এর জন্য প্রয়োজনে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠ্যক্রম ঢেলে সাজানো হতে পারে। তবে দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার অবস্থা বেহাল। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সারাদেশে মোট কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সাত হাজারের বেশি। পরিতাপের বিষয় হলো, অধিকাংশেরই প্রায় চাল-চুলো নেই, নামেই কারিগরি শিক্ষা! বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কথা বাদ দিলেও অধিকাংশ সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই। একই অবস্থা অন্যান্য পলিটেকনিকেও। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়সহ বুয়েট, মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পায় না। অথচ পলিটেকনিক ডিপ্লোমা শিক্ষার মান উন্নত ও মানসম্মত হলে শিক্ষার্থীরা এখানে স্বচ্ছন্দ্যে ভর্তি হতে পারে। বৈশ্বিক শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশেই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিষয়টি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। তবে এর জন্য অত্যাবশ্যক কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা।

মহান মে দিবস

মহান মে দিবস

আজ মহান মে দিবস। বিশ্বের কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষের সংহতির দিন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোসহ বড় বড় শহরে শ্রমিকরা দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ ও শ্রমের ন্যায্য মজুরির দাবিতে সর্বাত্মক ধর্মঘট শুরু করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মালিকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মিছিল-সমাবেশ করে। এর আগে শ্রমিকরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতেন। দৈনিক ১৪-১৮ ঘণ্টা অমানুষিক পরিশ্রম করার পরও তারা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হতেন। শোষণেরও শিকার হতে হতো তাদের। শ্রমিকের শ্রমের ওপর ভিত্তি করে সভ্যতা গড়ে উঠলেও তারা বরাবরই ছিলেন উপেক্ষিত। এমনকি তাদের নির্দিষ্ট কোনো ছুটির দিনও ছিল না। এ শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হতে থাকে। শোষণ-বঞ্চনার প্রতিবাদে সংঘবদ্ধ শ্রমিকরা ১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে যে আন্দোলনের সূচনা করেন, তা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যায় ৩ ও ৪ মে। শাসকগোষ্ঠী আতঙ্কিত ও দিশাহারা হয়ে পড়ে। তারা শ্রমিকের ওপর লেলিয়ে দেয় পুলিশ। শিকাগো শহরের ওই শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে কমপক্ষে ১০ জন শ্রমিক নিহত এবং বহু আহত হন। অনেক শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তারসহ দিনের পর দিন আটকে রাখা হয় কারাগারে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৭ জনকে দণ্ডিত করা হয় মৃত্যুদণ্ডে। শ্রমিক আন্দোলনের ওই অধ্যায়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ১৮৯০ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্যারিস কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর বেশ ক’বছর পর ১৯০৪ সালের পর থেকে ক্রমান্বয়ে বিশ্বের ৮০টি দেশে পালিত হয়ে আসছে মে দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে উদ্যাপিত হয় দিবসটি। শ্রমিক বঞ্চনার ইতিহাস নতুন নয়। সব যুগে, সব সমাজে এটি ছিল ও আছে। প্রায়ই তারা প্রাপ্য অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নামতে বাধ্য হন। শ্রমিক কল্যাণে আমাদের দেশে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তাদের সার্বিক চাহিদা ও কল্যাণ পুরোপুরি সুনিশ্চিত হয়েছে তা বলা যায় না। এখনো কোনো কোনো ক্ষেত্রে দৈনিক ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করে অনেক শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পান না। তার ওপর বেতন বকেয়া, শ্রমিক ছাঁটাই, লকআউট ইত্যাদি কারণেও তাদের দুঃখ-দুর্দশার অন্ত থাকে না। কোনো কোনো কারখানায় কাজের পরিবেশও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় শ্রমিকদের দুর্ঘটনায় প্রাণ দিতে হয়। চা, চামড়া, পাটসহ অন্যান্য শিল্পের চিত্রও প্রায় একই। একটা কথা সকলকে মনে রাখতে হবে, শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণ ব্যতীত যেমন শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়, তেমনি অহেতুক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা শিল্পের ক্ষতিসাধনও শ্রমিকের ভাগ্য বিড়ম্বনা বাড়ায়। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মে দিবসের প্রাসঙ্গিকতাকে ভাবতে হবে নতুন করে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতি, বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রায় সব শিল্পকারখানা প্রবেশ করেছে অটোমেশনের যুগে। শ্রমিকদের কিছু জায়গা দখল করে নিচ্ছে রোবট, কম্পিউটার, মাল্টিটাস্কিং ইত্যাদি। দেশের ত্রিশ লক্ষাধিক পোশাক শিল্প শ্রমিকদের বড় অংশ নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিত। অটোমেশন হলে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক যাবে কোথায়? এর জরুরি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে শিল্পকারখানার মালিক, বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবকদের। মে দিবসে বিষয়টা আলোচনায় উঠে আসুক সর্বস্তরেÑ এমনটাই প্রত্যাশা।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কতটা মানসম্মত

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কতটা মানসম্মত

প্রতি বছরের ন্যায় ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিন টাইমস হায়ার এডুকেশন (ঞঐঊ) প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাঙ্কিং। ২০০৪ সাল থেকে প্রকাশিত হওয়া এই ম্যাগাজিনটিতে ১১৫টি দেশ বা রাজ্যের ২৮৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান, গবেষণা, বিশ্লেষণ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের শিক্ষার মান, প্রয়োগিকতা পদ্ধতি প্রভৃতি বিষয় সামনে রেখে সেরামানের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ করেছে অনলাইনভিত্তিক এই ম্যাগাজিন। এ বছর সেরা দশের প্রথমে আছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি। দুই, তিন ও চার নম্বর অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের- মাচাচুয়েট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, হারভার্ড ইউনিভার্সিটি ও প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি। ৪ ও ৫ নম্বরে আছে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি এবং হার্বার্ড ইউনিভার্সিটি। ৬ থেকে ৯ এ রয়েছে স্টান্ডফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন এবং ১০ নম্বরে রয়েছে ইয়েল ইউনিভার্সিটি। এবারের সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি যুক্তরাজ্যভিত্তিক এবং বাকি ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় ১১তম এবং চীনের সিংগুয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি ১২তম হওয়ার সম্মান লাভ করেছে। মুসলিম ৩০টির অধিক দেশের মধ্যে সৌদি আরবের বাদশা ফাহাদ পেট্রোলিয়াম ও মিনারেলস বিশ্ববিদ্যালয় ১৭৬তম এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি বিশ্ববিদ্যালয় ৯১তম স্থান লাভ করে। বাংলাদেশ র‌্যাঙ্কিং– এ ২৮৫৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮০১ থেকে ১৫০০+ সিরিয়ালে রয়েছে। যেখানে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ এ যাবত রেকর্ড সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের ধরে অবস্থান রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো– গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি দেশের সেরা ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেতাব অর্জন করেছে। বাকি ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, চুয়েট, কুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, আইইউবিএটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউল্যাব এবং বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। পর্যালোচনায় দেখা যায়, সার্কভুক্ত ৮টি দেশের মধ্যে  ইন্ডিয়ার ১৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে, যার প্রথম তিনটি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সাইন্স ২০১-২৫০ এবং আন্না ইউনিভার্সিটি ও মহাত্মা গান্ধী ইউনিভার্সিটি  ৪০১-৫০০ সিরিয়ালের মধ্যে। পাকিস্তানের ৯৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কায়েদে ই আজম ইউনিভার্সিটি ৪০১-৫০০ এবং এয়ার ইউনিভার্সিটি ৬০১-৮০০ এর  মধ্যে। নেপালের মাত্র দুটি ইউনিভার্সিটি স্থান পেয়েছে কাঠমান্ডু ইউনিভার্সিটি এবং ত্রিভুবন  ইউনিভার্সিটি– উভয়ই ১৫০১ সিরিয়ালে। শ্রীলংকার নয়টি ইউনিভার্সিটি স্থান পেয়েছে যেখানে ১০০১-১২০০র  মধ্যে আছে  ইউনিভার্সিটি অব কলম্বো। তবে সার্বভুক্ত ৮টি দেশের মধ্যে ভুটান, মালদ্বীপ এবং আফগানিস্তানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়নি। লেখক : শিক্ষার্থী

কুতুবদিয়া রক্ষায় চাই টেকসই বেড়িবাঁধ

কুতুবদিয়া রক্ষায় চাই টেকসই বেড়িবাঁধ

কুতুবদিয়া-প্রায় ৬০০ বছর পূর্বে কক্সবাজার থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকচিরে জেগে ওঠা একটি দ্বীপ। বাংলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপ নানা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। রয়েছে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা। এই অপার সম্ভাবনার মাঝেও কুতুবদিয়া বরাবরই অবহেলিত। সারা দেশে এতো উন্নয়ন কিন্তু এ উন্নয়ন আজও স্পর্শ করেনি কুতুবদিয়াকে। চিকিৎসা সেবা, শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দ্বীপটি। সূচনালগ্ন থেকেই  ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করেছে এ উপকূলকে। যেমন– ১৫৫৯, ১৭৯৫ এর ঘূর্ণিঝড়। কুতুবদিয়া বিখ্যাত বাতিঘরের জন্য। ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত সেই ঐতিহাসিক বাতিঘর বিলীন হয় ১৯৬০-এর জলোচ্ছ্বাসে, (পরবর্তীতে নতুন বাতিঘর তৈরি হয়)। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব ছিল সবচেয়ে মর্মান্তিক। প্রাণ হারায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ। লণ্ডভণ্ড হয়েছিল পুরো কুতুবদিয়া। কুতুবদিয়ার দুই লাখ মানুষ আজও রাতযাপন করছে অনিশ্চয়তায়। এ সংকটের মূলে রয়েছেÑ স্থায়ী বেড়িবাঁধের অভাব। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাড়ছে সমুদ্রের পানির উচ্চতা। বাড়ছে দুর্যোগ। এ দুর্যোগের হিংস্রতা কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায়। কুতুবদিয়ার চারপাশে ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে বেশিরভাগ অংশেই স্থায়ী বেড়িবাঁধ নেই। ফলে সামান্য দুর্যোগেই প্লাবিত হয় এই উপকূল। বর্ষাকালে এ দুর্যোগ বেড়ে যায় হাজার গুণে। এ সময় সামান্য বৃষ্টিতে সাগরের পানি স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে একটু বাড়লেই যেসব বালির বাঁধ দেওয়া হয়, তা ভেঙে পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। দ্বীপের বেশিরভাগ মানুষ পেশায় কৃষক, লবণ চাষী এবং জেলে। এ পরিস্থিতিতে ফসলি জমি লবণাক্ত পানিতে নষ্ট হয়, পুকুরের মাছ মারা যায়, গাছপালা উজাড় হয়, লবণ চাষের জমি নষ্ট হয়। ফলসরূপ খাদ্যসংকটে ভোগে পুরো দ্বীপ। এছাড়া মানুষ  এবং পশুপাখি হারায় তাদের সহাবস্থান। বিশুদ্ধ পানির সংকটে নানা অসুস্থতায় মৃত্যু হয় অনেকের। ২১৫.৮ কিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপ ভাঙনের ফলে ক্রমে দুই-তৃতীয়াংশ আয়তন হারিয়েছে। এখনো সাগরের ঢেউয়ের প্রভাবে ভেঙ্গে সমুদ্রে পরিণত হচ্ছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুতুবদিয়া। কুতুবদিয়ার অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। গত কয়েক বছরে বেশকিছু বাজেট বেড়িবাঁধের জন্য এলেও স্বার্থান্বেষী মহল সে টাকা লুটে নিয়ে ধরিয়ে দেয় কিছু বালির বস্তা। এ দ্বীপের দুই লাখ মানুষ চায় তাদের জীবনের নিরাপত্তা। এটা তাদের অস্তিত্বের লড়াই। তারা চাই যথাযথ উপায়ে কুতুবদিয়ার চারপাশে যেন টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়। কুতুবদিয়ার মানুষের প্রাণের দাবি– স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।

শীর্ষ সংবাদ:

যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে: আমীর খসরু
জামায়াত নেতারা রাজাকার হলে পাকিস্তানে গাড়ি বাড়ি থাকতো : শামীম সাঈদী
এনসিপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই- উমামা ফাতেমা
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েই সাগরে ডুবে গেল মার্কিন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান
জামিন পেলেননা তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিন
লন্ডনে আজ আর্সেনাল পিএসজি মহারণ
১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা, তালিকায় আছেন নুসরাত ফারিয়া-অপু বিশ্বাস-ভাবনাসহ অনেকেই
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বর্ণের দাম, রেকর্ড উচ্চতা থেকে পতনের পথে
কুমিল্লায় পুলিশ-সেনাবাহিনীর চাকরির নামে প্রতারণা: দালালসহ ১৩ জন গ্রেফতার
১২ বছর বয়সী ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার