
ছবি: সংগৃহীত
কেক, বিস্কুট বা প্রিয় মিষ্টি চায়ের কথা মনে আসলেই যদি চিনিমুক্ত জীবন অচিন্ত্যনীয় মনে হয়, আপনি একা নন। কারণ, নাশতার গ্র্যানোলা থেকে শুরু করে সাধারণ সালাদ ড্রেসিং পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি খাবারের সাথেই কোনো না কোনোভাবে চিনি জড়িয়ে আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাত্র ৩০ দিন চিনি বাদ দিলে শরীরের উপর পড়ে অবিশ্বাস্য ইতিবাচক প্রভাব। আর বিষয়টি শুধু ওজন কমানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। চিনি বাদ দিলে শরীরে কী ঘটে এবং তার সুফল কতটা গভীর ও বিস্তৃত হতে পারে।
লিভারের চর্বি হ্রাস পেতে শুরু করে: ডা. সেঠির ভাষ্য অনুযায়ী, যখন আপনি চিনির বিশেষ করে ফ্রুক্টোজ-সমৃদ্ধ প্রক্রিয়াজাত চিনি খাওয়া ছেড়ে দেন। তখন লিভারের চর্বি কমে যেতে থাকে। এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অ্যালকোহল না খেলেও অনেকেই এখন ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। মাত্র এক মাস চিনিমুক্ত জীবন লিভারের প্রদাহ কমিয়ে ক্ষয়রোধে সহায়তা করতে পারে।
কিডনির কার্যকারিতা উন্নত হয়: যারা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সে ভুগছেন বা রক্তে চিনি ওঠানামায় অভ্যস্ত, তাদের জন্য চিনিমুক্ত হওয়া কিডনির ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে।
ধমনীতে প্রদাহ কমে যায়: চিনিমুক্ত জীবনের আরেকটি বড় সুফল হলো ধমনীতে প্রদাহ কমে যাওয়া। অতিরিক্ত চিনি ধমনীপ্রাচীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের পূর্বাভাস হিসেবে কাজ করতে পারে। চিনি ছাড়লে এই ঝুঁকি কমে।
মনোযোগ ও চিন্তার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায়: ডেজার্ট খাওয়ার পর মাথা ভার ভার মনে হয়? এটি কেবল কল্পনা নয়। চিনিমুক্ত থাকলে মস্তিষ্কে স্থিতিশীল শক্তি পৌঁছায়, যা মনোযোগ ও উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে: শ্বেত রক্তকণিকা আমাদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রধান সেনা। কিন্তু চিনি তাদের কার্যকারিতা দুর্বল করে। মাত্র এক মাস চিনিমুক্ত থাকলে আপনার ইমিউন সিস্টেম আরও সক্রিয় ও দৃঢ় হয়ে ওঠে।
দেহে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও জিঙ্কের শোষণ বেড়ে যায়: চিনিমুক্ত অবস্থায় শরীর গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থগুলো (যেমন: ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও জিঙ্ক) ধরে রাখতে সক্ষম হয়। এই খনিজগুলো হাড়, পেশি ও মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
৩০ দিন চিনি ছাড়লে আসলে কী হয়? ডা. সেঠির মতে, তখন দেহে ঘটে একটি অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন। লিভার সুস্থ হয়, মস্তিষ্ক তীক্ষ্ণ হয়, রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা মজবুত হয়, এবং শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পায় নতুন জীবন। এটি শাস্তি নয়, বরং দেহকে আরাম ও পুনরুদ্ধারের সুযোগ দেওয়া।
ফল খাওয়া যাবে কি? চিনিমুক্ত চ্যালেঞ্জ চলাকালীন বেশিরভাগ আসল ফল খাওয়া একেবারেই ঠিক আছে। কারণ সেগুলোতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি ফাইবার, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। তবে আঙুর, অতিরিক্ত পাকা কলা ও আমের মতো উচ্চ-চিনিযুক্ত ফল এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। পরিবর্তে বেরি, আপেল বা নাশপাতি বেছে নেওয়া উচিত। এছাড়া ফলের রস ও শুকনো ফল এড়িয়ে চলতে হবে।
শহীদ