
ছবি: সংগৃহীত
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জাপানে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ও বাস্তবতা নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, জাপানে যেতে যে পরিমাণ অর্থ লাগে, সৌদি আরবেও প্রায় একই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, তবুও জাপানমুখী হওয়ায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। কারণ, সেখানে যেতে হলে প্রয়োজন হয় ভাষাজ্ঞান ও দক্ষতা, যা সৌদি আরবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “সৌদি আরবে হোটেল খাতে যারা কাজ করেন, এমন ৪০-৫০ জনের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাদের মধ্যে গড়ে সাত-আট লাখ টাকা খরচ হয়েছে। একই অর্থে জাপানেও যাওয়া সম্ভব। কিন্তু পার্থক্য হলো—জাপানে পাওয়া যায় সৌদি আরবের চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশি বেতন।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, "তাহলে তো আমাদের জাপানমুখী হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তা হচ্ছে না। কেন?" তার জবাব—“জাপানে যেতে স্কিল ও জাপানিজ ভাষা জানা বাধ্যতামূলক, অথচ সৌদিতে এসবের কিছুই লাগে না।”
তিনি বলেন, জাপানে জনসংখ্যার একটি বড় অংশই বয়স্ক। সেখানে কর্মক্ষম মানুষের অভাব দিন দিন বাড়ছে। বিয়ে ও সন্তান জন্মে অনাগ্রহের কারণে এই সংকট ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। ফলে বিদেশি কর্মীদের চাহিদা দীর্ঘমেয়াদে বেড়েই চলবে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই চাহিদা পূরণে বাংলাদেশের সরবরাহ কি যথেষ্ট? ড. নজরুল বলেন, “আমাদের ‘সাপ্লাই’ বলতে যা বোঝায় তা হলো—অদক্ষ শ্রমিক, যারা ভাষা শিখতে আগ্রহী নয়। এই বাস্তবতা বদলাতে হবে। আমাদের প্রবাসীদের ভাষাজ্ঞান ও পেশাগত দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে। এটিই একমাত্র সমাধান।”
তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন, “এক বছরে কনস্ট্রাকশন খাতে ১,২০০ জনের চাহিদা ছিল, অথচ স্কিল টেস্ট দিতে এসেছে মাত্র ৫০ জন, আর পাশ করেছে মাত্র ৫ জন।”
উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের পদ্ধতিগত জটিলতাও বড় বাধা। শুধু শুধু ১০-১২ জনের সিগনেচার দরকার হয় সরকারি কাজে। এর পেছনে কারণ—লোকজনকে চাকরি দেওয়ার জন্য জটিলতা তৈরি করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “৫০ শতাংশ কর্মচারী আসলে পুরোপুরি কাজে ব্যস্ত নয়। কেউ কেউ বসে থাকে, কেউ কাজ করে না। অথচ যদি প্রসিডিউর সিম্পল করা যায়, দুর্নীতিও কমে আসবে।”
উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, জাপানমুখী কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকার ইতোমধ্যে 'জাপান সেল' চালু করেছে, যেখানে থাকবে একটি ডেডিকেটেড ওয়েব পেজ এবং নিয়মিত কনসালটেশন সেবা।
তিনি আরও জানান, স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য দুইটি মডেল গ্রহণ করা হয়েছে—
1. প্রাইভেট উদ্যোক্তা মডেল: একজন জাপানিজ উদ্যোক্তাকে দায়িত্ব দিয়ে তার মাধ্যমে স্কিল ট্রেনিং শুরু করা হয়েছে।
2. বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান অংশীদার মডেল: ‘আলসুন্না ফাউন্ডেশন’সহ কয়েকটি বিশ্বস্ত এনজিও’র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রবাসী কল্যাণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের চিন্তা চলছে।
উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি চিরন্তন সমস্যা। আমরা বিষয়টি সিরিয়াসলি ভাবছি। কিছু কিছু ব্যাংক, যেমন সিটি ব্যাংক, আমাদের উদ্যোগে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।”
তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আমাদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে প্রবাসীদের লোন দেওয়া হয়, তবে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় না। আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আমরা এটা নিয়েও সক্রিয়ভাবে ভাবছি।”
ছামিয়া