
চীনের বাজারে এক সময়ের পরিচিত দৃশ্য এখন যেন শুধুই স্মৃতি হয়ে গেছে। যখন কেউ বড় নোট নিয়ে বাসা থেকে বের হত, তখন এক ধরনের টেনশন কাজ করত। দোকান থেকে দোকানে ঘুরতে হতো, ভাবনা থাকত কোথায় নোট ভাঙ্গানো যাবে, আর দোকানদারদের চোখে যেন কিডনি চাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু সেই দিনগুলো এখন আর দেখা যায় না।
আজকাল চীনের সুপারমার্কেট, ক্যাফে, ট্যাক্সি, কিংবা রাস্তার পাশে ছোট দোকানগুলোতে সবাই চলে এসেছে নতুন যুগে। এখানকার বাজার এখন আর টাকার বদলে মোবাইল ফোনের স্মার্ট স্ক্রীনে লেনদেনের মাধ্যমে চলছে। ক্রিমের ঝকঝকে কিউআর কোড স্ক্যান করা মাত্রই পেমেন্ট হয়ে যাচ্ছে। আজকাল আর খুচরো টাকার খোঁজ করতে হয় না, এবং কাগজের নোটও আর ধরতে দেখা যায় না। এটি চীনের নতুন পরিচয়, যেখানে নগদ টাকা এবং কয়েনের ঠংঠং আওয়াজ যেন হারিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল যুগের ফিসফিসে সুরে।
টেকনোলজির গতিতে মানুষ চলেছে আরও দ্রুত। দোকানগুলোতে এখন ক্যাশ রেজিস্টারের পরিবর্তে রঙিন বোর্ড শোভা পায়, যা স্মার্টফোনে স্ক্যান করলেই লেনদেন সম্পন্ন হয়। তবে ভোরবেলা বাজারে কিছু বয়স্ক মানুষের দেখা মিলবে, যারা এখনও পুরনো কয়েন বা নোট হাতে ধরেন, যেন অতীতের কোনো স্মৃতি ধরে রেখেছেন। বেইজিংয়ের শিনমিন বাজারে এমন দৃশ্য এখন দেখা যায়।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এখন তারা শুধু বয়স্কদের জন্য নগদ টাকা রাখেন, কারণ ৮০ বছরের নিচে যারা তাদের সবাই মোবাইল পেমেন্ট ব্যবহার করেন। তবে, বয়স্কদের পক্ষে এই নতুন পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। বর্তমানে অনেক দোকানদারই ক্যাশ রেজিস্টার ব্যবহার করেন না। শুধুমাত্র কিউআর কোড স্ক্যান করলেই লেনদেন হয়ে যায়। এমনকি ট্যাক্সি চালক কিংবা খাবারের দোকানদারদের অনেক সময় খুচরো টাকা থাকে না, এবং তারা নগদ পেমেন্ট নিতে চান না।
চীনের পেমেন্ট সিস্টেম এখন পুরোপুরি ডিজিটাল হয়ে গেছে, যেখানে উইচেট এবং আলিপে দুটি অ্যাপের মাধ্যমে কেনাকাটা, খাবার অর্ডার, ট্যাক্সি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল এবং অন্যান্য পেমেন্ট করা হয়। ব্যাংকগুলো এখন শুধু বেতন জমা কিংবা বড় লেনদেনের কাজে ব্যবহৃত হয়। এক সময় যেখানে দৈনন্দিন লেনদেনের সব কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হত, আজকাল তা ফোনের স্ক্রিনে এসে স্থানান্তরিত হয়েছে।
চীনা সরকারও নিজেদের ডিজিটাল মুদ্রা, ডিজিটাল ইওয়ান চালু করেছে, তবে এটি এখনো বেশিরভাগ মানুষের কাছে অপরিচিত। সাধারণ মানুষ উইচেট এবং আলিপে ব্যবহার করেই তুষ্ট। ডিজিটাল অর্থনীতির এই অগ্রগতির ফলে শিগগিরই হয়তো কাগজের নোট পুরো পৃথিবী থেকেই হারিয়ে যাবে, এবং এক অদৃশ্য ডিজিটাল টাকার যুগ শুরু হবে, যেটি শুধু ফোনের স্ক্রিনে দেখা যাবে—কিন্তু কখনো ছুয়ে দেখা যাবে না।
রাজু