
ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথভাবে চালানো অভূতপূর্ব হামলার পর জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা IAEA-র সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিত করেছে ইরান। বুধবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
১৩ জুন শুরু হয়ে ১২ দিন ধরে চলা ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তেহরান ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) মধ্যে সম্পর্ক চরম উত্তেজনার পর্যায়ে পৌঁছায়। যুদ্ধবিরতির পরদিন, ২৫ জুন, ইরানের সংসদ সদস্যরা বিপুল ভোটে IAEA-র সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধের পক্ষে একটি প্রস্তাব পাস করেন। বুধবার সে আইন কার্যকর হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।
আইনের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে "জাতীয় অধিকার রক্ষার" লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে। বিশেষ করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণকে কেন্দ্র করেই ওয়াশিংটন-তেহরান বিরোধ তীব্র হয়েছে।
ইসরায়েল এবং কয়েকটি পশ্চিমা দেশ দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে—যদিও তেহরান সেই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে আসছে।
ইরান অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলার পরও IAEA কার্যত নীরব থেকেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিচার বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা সংস্থাটির মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসির “প্রতারণামূলক ও বিভ্রান্তিকর” ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন।
শীর্ষ বিচারক আলি মোজাফফারি বলেন, “IAEA’র প্রধান এই অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন। তাঁকে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে।”
ইরান IAEA প্রধানের বোমারু স্থান পরিদর্শনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান সম্প্রতি গ্রোসির কর্মকাণ্ডকে "বিধ্বংসী" বলেও মন্তব্য করেছেন।
এদিকে ইরানের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘কেহান’ এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, রাফায়েল গ্রোসি "ইসরায়েলি গুপ্তচর" এবং তাঁর মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।
জার্মানি ইরানের সিদ্ধান্তকে "বিধ্বংসী বার্তা" বলে আখ্যায়িত করেছে। বার্লিনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “কূটনৈতিক সমাধানের জন্য IAEA-এর সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা অপরিহার্য।”
ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি IAEA প্রধানের বিরুদ্ধে ইরান থেকে আসা “অস্পষ্ট হুমকি”-র নিন্দা জানিয়েছে।
১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং শত শত বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ইরান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় জবাব দেয়।
২২ জুন, যুক্তরাষ্ট্র ফোর্ডো, ইসফাহান ও নাতাঞ্জের ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় নজিরবিহীন হামলা চালায়। ইরান জানিয়েছে, এসব হামলায় অন্তত ৯০০ জন নিহত হয়।
তবে ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে ২৮ জন নিহত হয় বলে সেখানকার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মাধ্যমে "ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে"। তবে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত মাত্রা এখনো পরিষ্কার নয়।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি স্বীকার করেছেন, "পরমাণু স্থাপনাগুলোতে গুরুতর ক্ষতি" হয়েছে। তবে তিনি সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বোমা মেরে কোনো জাতির প্রযুক্তি ও জ্ঞান নিশ্চিহ্ন করা যায় না।”
শিহাব