
ছবি: সংগৃহীত
একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২১২৫ সাল নাগাদ দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা বর্তমানের মাত্র ১৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে। সিউলভিত্তিক গবেষণা সংস্থা কোরিয়ান পেনিনসুলা পপুলেশন ইনস্টিটিউট ফর ফিউচারের সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমান ৫ কোটি ১৬ লক্ষ জনসংখ্যা একুশ শতাব্দীর শেষে কমে দাঁড়াতে পারে মাত্র ৭৫ লক্ষে, যা আজকের সিউল মহানগরের জনসংখ্যাকেও (৯৩ লক্ষ) ছাড়িয়ে যাবে। গবেষকরা তিনটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনা করেছেন - সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় জনসংখ্যা ৭৫ লক্ষ, মধ্যম অবস্থায় ১ কোটি ১১ লক্ষ এবং সবচেয়ে ভালো অবস্থাতেও জনসংখ্যা কমে আসবে ১ কোটি ৫৭ লক্ষে।
এই ভয়াবহ পতনের পেছনে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ক্রমাগত জন্মহার হ্রাসকে। ২০২৪ সালে দেশটির মোট প্রজনন হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ০.৭৫, যা জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ২.১ হারের একেবারেই কাছাকাছি নয়। গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিয়ে ও সন্তান নেওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে কমছে, যার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে অর্থনৈতিক চাপকে। সামাজিক মাধ্যম বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তরুণরা এখন 'প্রেম' এর চেয়ে 'টাকা' এবং 'বাসস্থান' কে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
জনসংখ্যা পিরামিডের রূপান্তর এই সংকটের আরেকটি ভয়াবহ দিক। আগামী দিনগুলোতে দেশটির জনসংখ্যা পিরামিড 'স্টিংরে' আকার (তরুণদের প্রাধান্য) থেকে 'কোবরা' আকারে (বয়স্কদের প্রাধান্য) রূপান্তরিত হবে। ২১২৫ সাল নাগাদ প্রতি ১০০ কর্মক্ষম ব্যক্তির বিপরীতে বয়স্ক (৬৫+) ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াবে ১৪০, যা বর্তমানের ৩০ থেকে অনেক বেশি। এই পরিবর্তন দেশটির সামাজিক কাঠামো ও অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
এই সংকট মোকাবেলায় গবেষণা সংস্থাটি বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সন্তান পালনে আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি, কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য নিশ্চিতকরণ, অবসর বয়স বাড়ানো এবং অভিবাসন নীতি সংস্কার। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হল জনসংখ্যা বৃদ্ধি নির্ভর অর্থনীতি থেকে উৎপাদনশীলতা ভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তর।
গবেষণা প্রতিবেদনটি দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য একটি গুরুতর সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। দেশটি ইতিমধ্যেই বিশ্বের সর্বনিম্ন জন্মহার এবং দ্রুততম বার্ধক্যজনিত জনসংখ্যার সমস্যার সম্মুখীন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে এই সংকট শুধু সংখ্যার সমস্যা নয়, এটি পুরো সমাজ কাঠামোকেই বদলে দেবে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে তারা মত দিয়েছেন।
সূত্র: দ্য কোরিয়া হেরাল্ড
সাব্বির