
এক সময় ছিল যখন তথ্য খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। কারণ সহজলভ্য মাধ্যমের অভাবে তথ্য সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় প্রবাহিত হতো না।
কিন্তু যুগ বদলেছে। তথ্য এখন সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। চোখ খুললেই তথ্য, কান পাতলেই তথ্য। মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ দিলেই মেলে তথ্য। বিচিত্র সেই তথ্যগুলি অনেক ক্ষেত্রেই আপাতবিরোধী। কেউ বলছে কেউ মারা গেছে, আবার কেউ বলছে বেঁচে আছে। কোন ব্যক্তিকে কেউ বলছে দুর্নীতিবাজ, আবার কেউ তাকে বানাচ্ছে সমাজসেবক। এত আপাতবিরোধী তথ্যের ভীড়ে সত্য-মিথ্যা আলাদা করা এখন খুবই কঠিন, কখনো কখনো অসম্ভব।
সাংবাদিকতা তথ্য নির্ভর পেশা। সাংবাদিকতা মানুষের সত্য জানার অন্যতম মাধ্যম হলেও, এই কঠিন সময়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা হয়ে উঠেছে দারুন চ্যালেঞ্জিং। তবে তথ্য কোন ভাবে বস্তুনিষ্ঠভাবে একত্রিত করতে পারলে তা ছড়িয়ে দেওয়া অত্যন্ত সহজ। সাংবাদিক তার তথ্য সংবাদ আকারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুহূর্তে ছড়িয়ে দিতে পারে দিক দিগন্তে।
আজ আমরা এমন এক সময় পার করছি, যেখানে হাজার হাজার তথ্য চারদিকে ঘুরছে। কেউ একটি ভিডিও পোস্ট করল, মুহূর্তেই তা ভাইরাল। কিন্তু সেই ভিডিও কি সত্য? সেটি কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? ভুয়া? কনটেক্সটবিহীন? এ প্রশ্ন আর অনেকেই করে না।
এখন মিথ্যা তথ্য বিশ্বাস করা যেমন সহজ, তেমনি সত্যকেও অবিশ্বাস করা কঠিন নয়। আর এখানেই বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি।
আগে শুধু প্রিন্ট, টিভি কিংবা রেডিওতেই সাংবাদিকতা সীমাবদ্ধ ছিল। এখন সময় বদলেছে। প্রচলিত সংবাদ মাধ্যমের বাইরেও মানুষ তথ্য খুঁজে নেয় ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব বা ইনস্টাগ্রামে। অনেক সময় এসব মাধ্যমই হয়ে ওঠে প্রধান নিউজ সোর্স।
সুতরাং একজন সাংবাদিকের ব্যক্তিগত সামাজিক মাধ্যমের একাউন্ট এখন হয়ে উঠতে পারে সত্য প্রকাশের হাতিয়ার এবং কখনো কখনো তা প্রচলিত সংবাদ মাধ্যমের চাইতেও বেশি কার্যকর ও প্রভাবশালী। একজন সাংবাদিক যখন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একটি ঘটনার প্রামাণ্য তথ্য তুলে ধরেন সেটি পাঠকের চোখে কখনো কখনো যেকোনো প্রচলিত সংবাদ মাধ্যমের চেয়েও বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে কারণ এখানে ব্যক্তি-পরিচয়, দায়বদ্ধতা ও বাস্তবতা থাকে।
তাই সামাজিক মাধ্যমে একজন সাংবাদিকের দায় এখন বহুগুণ। সেখানে শুধু নিজের ভাবনা নয়, প্রকাশিত প্রতিটি তথ্যের পেছনে থাকা সত্যতা যাচাইয়ের দায়ও তার উপর বর্তায়।
স্পাইডার ম্যান কমিকস -এর "With great power comes great responsibility" বাক্যটি সামাজিক যুগের সাংবাদিকদের জন্য দ্ব্যর্থহীন ভাবে প্রযোজ্য।
তথ্যের রাজ্যে একজন সাংবাদিক রাজা। যথেচ্ছা আচরণ তিনি করতেই পারেন। তবে মনে রাখতে হবে তিনি শুধু সংবাদদাতা নন। তিনি সত্যের ধারক। সামাজিক মাধ্যমে তার প্রতিটি পোস্ট হতে পারে একেকটি প্রতিবেদন, প্রতিবাদ বা প্রমাণ। এখানে বস্তুনিষ্ঠতার উপস্থিতির কোন বিকল্প নেই আর তথ্যের জঞ্জালে এটাই টিকে থাকার সবচেয়ে বড় শক্তি। পছন্দ অপছন্দ, দল মত, ধর্ম বর্ণ সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে একজন সাংবাদিককে সত্য তুলে ধরতে হবে। এবং সেটি করতে হবে তার সামাজিক মাধ্যমেও। কারণ আজকাল মানুষ নিউজ পোর্টালের অপেক্ষা করে না তারা ফেসবুক স্ক্রল করে। তারা হেডলাইন পড়ে না তারা ক্যাপশন দেখে। তারা অফিসিয়াল ঘোষণা খোঁজে না তারা তাকে বিশ্বাস করে যাকে তারা অনুসরণ করে। এই অনুসরণ যেন একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিকের দিকে হয় এটাই সময়ের দাবি।
শেষ কথা, তথ্যের ভিড়ে হারিয়ে না গিয়ে, সত্যের পথে দাঁড়িয়ে থাকাটাই এখন সাংবাদিকতার নতুন চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ নিতে পারে সেই সাংবাদিকই, যার হাতে তথ্য বা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা সামাজিক মাধ্যমেও নিরাপদ।
রাজু