ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

রসে গন্ধে পুষ্টিতে ভরা মৌসুমি ফল

ড. জাহাঙ্গীর আলম

প্রকাশিত: ২০:০০, ৩ জুলাই ২০২৫

রসে গন্ধে পুষ্টিতে ভরা মৌসুমি ফল

আম, লিচু, আনারস ও কলা প্রচুর পরিমাণে বাজারজাতকরণ হচ্ছে। ইতোমধ্যেই কাঁঠালও আসতে শুরু করেছে বাজারে। কৃষি অর্থনীতিতে এ ফলগুলোর গুরুত্ব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পঞ্জিকান্তরে জ্যৈষ্ঠ মাস গ্রীষ্মকাল। প্রচণ্ড খরতাপে অতিষ্ঠ থাকে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ। বিভিন্ন রসালো ফলের বিপুল জোগান এ সময় তাদের মনে শান্তির পরশ বোলায়। ফলের সৌরভ ও মিষ্টি রস একাকার হয়ে চারপাশে মুুগ্ধতা ছড়ায়। জ্যৈষ্ঠ মাসে সুস্বাদু ফলের সরবরাহ থাকায় একে অনেকেই বলে ‘মধুমাস’। কারণ এ মাসে মধুর স্বাদের হরেক রকম ফল পাওয়া যায়। এই চর্চা শুরু হয় আশির দশক থেকে। বিশেষ করে দেশের পত্র-পত্রিকায় এ নামকরণের প্রভাব পড়ে বেশি। অধুনা এর ব্যাপক প্রচলন সর্বত্র। আবিধানিক অর্থে মধুমাস হলো চৈত্র মাস। কবিগুরু তাঁর ১৩০৪ বাংলায় লেখা গানে ‘চৈত্র নিশীথশশী’এবং ‘উন্মাদ মধুনিশী’ অবিধায় আখ্যায়িত করেছেন। তবে ব্যবহারের আধুনিকতা ও জনপ্রিয়তায় এখন মধুমাস বলতে জ্যৈষ্ঠকেই নির্দেশ করে। জ্যৈষ্ঠ পেরিয়ে আসে আষাঢ়। পরে শ্রাবণ। তখনো থাকে রকমারি ফলের প্রাচুর্য। যে ফলগুলো মিশে আছে আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে। বিভিন্ন দেশীয় ফল আমাদের সংস্কৃতি ও সভ্যতার বড় অংশ। স্বাদ ও পুষ্টিতে অন্যন্য বাংলাদেশের ফল। 
এ দেশে ফলের উৎপাদন হয় প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টন। এর ৫০ শতাংশই উৎপাদিত হয় জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্যে। বাকি ৫০ শতাংশ উৎপাদিত হয় অবশিষ্ট ৯ মাসে। কয়েকটি ফল উৎপাদনে পৃথিবীর প্রথম সারির ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। গত ২০ বছর ধরে এদেশে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল গড়ে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় ফলের মাথাপিছু প্রাপ্যতা সম্প্রতি অনেক বেড়েছে। তাতে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে আমাদের পুষ্টিহীনতা। তবু ঘাটতি আছে ফলের। এ দেশে মোট ৭২ জাতের ফল সচরাচর দৃষ্টিগোচর হয়। এর মধ্যে ৯টি প্রধান এবং ৬৩টি অপ্রধান। প্রধান ফলগুলোর মধ্যে রয়েছে- আম, কলা, কাঁঠাল, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা, নারিকেল, কুল ও লিচু। এগুলে মোট ফল এলাকার প্রায় শতকরা ৭৯ ভাগ জমি দখল করে রয়েছে। অবশিষ্ট শতকরা ২১ ভাগ জমিতে অপ্রধান ফলগুলোর চাষ। অপ্রধান ফলগুলোর মধ্যে যেগুলো সচারাচর দৃশ্যমান সেগুলো হলো- সফেদা, কামরাঙা, লটকন, আমড়া, বাতাবি লেবু, কদবেল, বেল, জলপাই, খেজুর, তাল, তেঁতুল, জাম, জামরুল, আমলকী, বাঙ্গি, তরমুজ ইত্যাদি। বাকি ফলগুলো খুবই কম চাষ হয়, যেগুলো আমরা অনেকে চিনি, আবার অনেকেই চিনি না। এগুলোর মধ্যে আছে অরবরই, গাব, বিলেতি গাব, আতা, শরিফা, কাউফল, তৈ কর, চালতা, ডুমুর, পানিফল, মাখনা, বকুল, লুকলুকি, ডেউয়া, করমচা, কাঠবাদাম, গোলাপজাম, তুঁত, মনফল ইত্যাদি। ইদানীং কিছু নতুন ফলের আবাদও হচ্ছে। এর মধ্যে রাম্বুতান, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফল, এভোকেডো ও মালটা অন্যতম। এদের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমে আসছে। কিছুদিন আগেও প্রতি কেজি ড্রাগন ফলের দাম ছিল ৬০০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে বিদেশি ফল আমদানির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। মানুষ নাসপাতি, আপেল ও আঙুর কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে আম, লিচু, পেয়ারা ও বরই বেশি করে কিনে নিচ্ছে। ভোক্তারা মনে করেন, দেশি ফল কেমিক্যাল ও প্রিজার্ভেটিভ মুক্ত। দামেও সস্তা। তাই পারিবারিক চাহিদা পূরণে এবং মেহমান আপ্যায়নে ফলই প্রধান ভরসা।
বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রধান ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আম। ১৫ মে থেকে শুরু হয়েছে আম পাড়া। ইতোমধ্যেই গুটি, হিমসাগর, গোপালভোগ, লক্ষণভোগ, মিশ্রিভোগ, খিরসাপাত, ল্যাংড়া ইত্যাদি আগাম জাতের আমগুলো পেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এখন বাজারেও এদের সরবরাহ বেশি। হাঁড়িভাঙ্গা, আম্রপালি ও ফজলি আম সামনে বাজারে আসছে। বারি আম-৪, আশ্বিনা ও গৌরমতি আসবে জুলাইয়ের মধ্যভাগে। কাটিমন ও বারি ১১ জাতের আম সরবরাহ হয় বছরব্যাপী। খিরসাপাত আম বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত। এই আম শ্বাস ও আঁশবিহীন, রসালো। গন্ধে বেশ আকর্ষণীয় এবং স্বাদে মিষ্টি। হাঁড়িভাঙ্গা আমও অত্যন্ত সুস্বাদু ও আঁশবিহীন। জিআই স্বীকৃতি পাওয়া অন্যান্য আমের মধ্যে আছে ল্যাংড়া, আশ্বিনা, ফজলি ও নাক ফজলি। এদের বিশেষত্ব আলাদা। আগে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরেই ভালো জাত ও মানের আম হতো বেশি। এখন নতুন প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে সারাদেশেই ভালো জাতের আম উৎপাদন হচ্ছে। সাতক্ষীরা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভালো জাতের আম উৎপাদন হচ্ছে প্রচুর। বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। দুই বছর আগে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ করে। তাতে গুরুত্ব বেড়েছে রপ্তানির। গত বছর ২০২৪ সালে আম রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩২১ টন। এটি ছিল মোট উৎপাদনের মাত্র শূন্য দশমিক ০৫৫ শতাংশ। এবার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার টন। বিশ্বে আম রপ্তানি হয় প্রায় এক বিলিয়ন টন। তাতে বাংলাদেশের শরিকানা দাঁড়ায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ। বৈশ্বিক আমের বাজারের আকার প্রায় ৬৭.৪ বিলিয়ন ডলার। তাতে বাংলাদেশের হিস্যা অনুল্লেখযোগ্য।
মোট উৎপাদনের দিক থেকে আমের পর কাঁঠালের অবস্থান। উৎপাদন প্রায় ২০ লাখ টন। আরও আছে কলা, যার উৎপাদন প্রায় ১৯ লাখ টন। পেঁপে, পেয়ারা ও আনারসের উৎপাদন যথাক্রমে প্রায় ১১ লাখ, ৫ লাখ ও ৬ লাখ টন। কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে আমরা দ্বিতীয় এবং আম উৎপাদনে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছি। স্বাদে ও জনপ্রিয়তায় আমাদের দেশে লিচুর অবস্থানও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মোট উৎপাদন  প্রায় আড়াই লাখ টন। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। তবে আম সবার প্রিয় ও সুস্বাদু। এবার আমের উৎপাদন ভালো। লক্ষ্যমাত্রা ২৭ লাখ টন। আম উৎপাদনকারীরা এখন খুবই দুশ্চিন্তায়। উৎপাদিত ফল উপযুক্ত দামে বিক্রি করা আদৌ সম্ভব হবে কিনা, বাগানের খরচ উঠে আসবে কিনা এসবই তাদের দুশ্চিন্তার কারণ। মৌসুমি ফল পাকা ও পাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাজারজাত করতে হয়। এর মধ্যে আম, আনারস ও কাঁঠাল বাজারজাত করতে হয় জরুরি ভিত্তিতে। নতুবা পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সাধারণত মৌসুমি ফল প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ অপচয় হয়। অনেক সময় বাজারজাতকরণের ধীরগতির কারণে তা ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনের বর্তমান ভরা মৌসুমে আমাদের কৃষি বিপণন বিভাগ, হরটেক্স ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন এবং সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন এলাকার খামারপ্রান্ত থেকে আম, কাঁঠাল ও আনারস কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে তা বাজারজাত করা যেতে পারে। গরিব মানুষের মাঝে ত্রাণ হিসেবেও আম-কাঁঠাল বিতরণ করা যেতে পারে। তাছাড়া নওগাঁ, সাতক্ষীরা, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর ও পার্বত্য জেলাগুলো থেকে আম, কাঁঠাল ও আনারস পরিবহনের জন্য বিআরটিসির উদ্যোগে ট্রাক চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আগামী ২ মাস ফল পরিবহনের জন্য চালু থাকতে পারে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস। ইদানীং অনলাইনেও ফল বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিসের গাফিলতির জন্য তা সুনাম হারাচ্ছে। অনেক সময় সঠিক মান ও পরিমাণের পণ্য পাওয়া যায় না। তাই ব্যক্তি পর্যায়ে সড়কপথে বাধাহীন ফল পরিবহনকে উৎসাহিত করা উচিত। তদুপরি আম ও অন্যান্য মৌসুমি ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত বৃহৎ কোম্পানিগুলো এ সময় তাদের ক্রয় বাড়িয়ে দিয়ে ফলের দরপতন ও অপচয় থেকে কৃষকদের রক্ষা করতে পারে। তাছাড়া দেশের ফলচাষিদের সরকারি প্রণোদনার আওতাভুক্ত করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে ফল রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। আমাদের মৌসুমি ফল ইতোমধ্যেই চীন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং ওমানে রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানিকৃত ফলগুলোর মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল, জড়ালেবু, এলাচি লেবু, কুল, সাতকরা, আমড়া, সুপারি, জলপাই, পেয়ারা ও কলা। দিনের পর দিন বিদেশে এগুলোর চাহিদা বাড়ছে। আগামী দিনে মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডসসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি ফল রপ্তানির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। গত ৭ বছর ধরে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আমাদের আম রপ্তানি হচ্ছে। রাজশাহী ও সাতক্ষীরার চাষিরা অনেক বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেন এবং উত্তম কৃষি কার্যক্রম অনুসরণ করে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করছেন। এর উৎপাদন খরচ ও বিক্রয়মূল্য বেশি। বিদেশে এগুলোর রপ্তানি ছাড়াও আমাদের দেশের সুপার মার্কেটগুলো উন্নতমানের আম বাজারজাতকরণের দায়িত্ব নিতে পারে। গত ৫ বছর বাংলাদেশ থেকে ফল রপ্তানির আয় হ্রাস পেয়েছে। বৈশ্বিক আর্থিক সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বাজার ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি এবং বাংলাদেশে ফল ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের রপ্তানি প্রণোদনা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ করায় সম্প্রতি ফল রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পায়নি। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশি ফলের আন্তর্জাতিক বাজার ঊর্ধ্বগামী হবে বলে আশা করা যায়।
এখন একটি বিশেষ আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আম কূটনীতি। গত বছর জুন মাসে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের রাজশাহীর কিছু আমবাগান পরিদর্শন করানো হয়েছে। তাতে তারা বাংলাদেশের আম উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। উৎপাদন এলাকায় গিয়ে আমের স্বাদ অনুভব করতে পেরেছেন। এরপর চীনসহ অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। এবার চীন থেকে ৫০ হাজার টন আম নেওয়ার কার্যাদেশ এসেছে। অন্যান্য দেশও আমদানির পরিমাণ বাড়াচ্ছে। তাছাড়া অতীতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে পাকা আম। তাতে আমাদের আম রপ্তানির ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হচ্ছে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় লাখ লাখ বাংলাদেশি বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। আমাদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগই রেমিটেন্স হিসেবে আসে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। ওইসব দেশে আমাদের আম উপহার ভ্রাতৃত্ব ও আত্মার সম্পর্ক জোরদার করবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের আম কূটনীতি আরও জোরদার ও অর্থবহ হোক, এই কামনা সবার।
লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত কৃষি অর্থনীতিবিদ। সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং সাবেক উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ

প্যানেল

×