
‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ বহুল প্রচলিত এক প্রবাদ আমাদের এ অঞ্চলে। এর অনেক দৃশ্যমান বাস্তবতাও দেখা যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি অবকাঠামো বিনির্মাণে। গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা তা জানি। বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রীয় অর্থের ব্যাপক তছরুপ দেখতে পাই, যার সঙ্গে জড়িত ঠিকাদার, রাজনীতিক এমনকি দুর্নীতিগ্রস্ত আমলারা। দেশের প্রান্তিক ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুপ্রশিক্ষিত করে জনশক্তিতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে সরকার, দেশের বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে একের পর এক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি তৈরি করেছে। অথচ দেশে এত একাডেমির প্রয়োজন নেই।
গ্রামের মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনের কথা বলে, কোনো ধরনের গবেষণা কিংবা সমীক্ষা ছাড়াই এগুলো তৈরি করা হয়েছে। বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে শুধু রাজনৈতিক কারণে গোপালগঞ্জ, জামালপুর ও রংপুরে ৬১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩টি পল্লী উন্নয়ন একাডেমি নির্মাণ করা হয়। যেখানে ছোট-বড় ১৮টি ভবন। তিন বছর আগে তৈরি এসব ভবনের কোনোটি ১০তলা, কোনোটি ছয়তলা। তবে দু-একটি ভবনের কদাচিৎ ব্যবহার হলেও অধিকাংশের কোনো ব্যবহার নেই। ভবনগুলোর চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আবর্জনা। বাইরের চত্বরে ঝোপঝাড় গজিয়ে আগাছায় ভরে গেছে। ভবনের ভেতরে, কোথাও বাইরে চুনকাম খসে গেছে, জমেছে ধুলোবালি ও বাসা বেঁধেছে মাকড়সা। অব্যবহৃত থাকায় নষ্ট হচ্ছে প্রশিক্ষণের যন্ত্রপাতি।
জামালপুরের মেলান্দহে ৫০ একর জমির ওপর ২০২২ সালে ১৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) নির্মাণের পর থেকে খালি পড়ে আছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের একই লক্ষ্যে গোপালগঞ্জ ও রংপুরে দুটি পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়, যার খরচ যথাক্রমে প্রায় ৩৪৫ কোটি ও ১৩৪ কোটি টাকার বেশি। সীমিত পরিসরে গোপালগঞ্জে কার্যক্রম চললেও রংপুরে একাডেমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে অনেক দিন। আওয়ামী মাফিয়া সরকার, দেশের আনাচে-কানাচে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে, শুধু রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের জন্য, নিয়েছে অনেক মেগা প্রকল্প। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে অনেক থলের বেড়াল।
ওই সরকারের আমলে যশোরে আরও একটি একাডেমির নির্মাণকাজ শুরু হয়, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। যত উন্নয়ন তত দুর্নীতি। অন্তর্বর্তী সরকার পর্যালোচনা করছে, এটির কাজ চলবে কিনা সে বিষয়ে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনবল নিয়োগ না হওয়ায় আড়াই বছরেও জামালপুর পল্লী উন্নয়ন একাডেমির কার্যক্রম চালু হয়নি। ভবনের পাশাপাশি দুটি ট্রাক্টর ও যন্ত্রাংশ পড়ে আছে। এগুলো সচল আছে কিনা, তা কেউ বলতে পারে না।
১০তলা প্রশাসনিক ভবন, পাঁচতলা ক্যাফেটেরিয়া ও গেস্টহাউস, দোতলা মেডিক্যাল সেন্টার। আরও আছে লাইব্রেরি ভবন, হোস্টেল, মহাপরিচালকের বাংলো, ফ্যাকাল্টি কোয়ার্টার, স্টাফ কোয়ার্টার। এসব ভবনের আসবাব, বৈদ্যুতিক পাখা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণসহ (এসি) অন্যান্য সরঞ্জাম অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। আমরা প্রস্তাব রাখতে চাই সরকারের কাছে, এসব অবকাঠামো স্বাস্থ্য খাত কিংবা কারিগরি শিক্ষা কিংবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে দিলে সেটি স্থানীয় জনগণের ক্ষমতায়নে সহায়ক হবে।
প্যানেল