জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে স্থান পেয়েছে একাত্তরে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের দ্বারা সংঘটিত ভয়াবহ নৃশংস গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়টি, যা অবশ্যই ইতিবাচক বলতে হবে। আগামী ১৯ জুন থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৫৩তম অধিবেশনে বাংলাদেশের এই দাবির বিষয়ে আলোচনা হবে। অধিবেশনের ৩ নম্বর এজেন্ডায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের দাবিটি। উল্লেখ্য, এ বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের সম্মতিও মিলেছে, যা বিবৃতি আকারে প্রকাশ করেছে বিশ্বসংস্থাটি। এখন ’৭১-এ বাংলাদেশে সংঘটিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের গণহত্যার আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘের স্বীকৃতির বিষয়টি সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
এরফলে বাংলাদেশে ’৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত ভয়াবহ নৃশংস গণহত্যা তথা জেনোসাইডের বিশ্ব স্বীকৃতির পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হলো। এর আগে গত ২৪ এপ্রিল গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল জেনোসাইড স্কলার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইএজিএস) সর্বসম্মতিক্রমে পাস করে প্রস্তাবটি। এতে ’৭১-এর বাংলাদেশে সংঘটিত পাকি হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ’ ঘোষণা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বিশ্বের জেনোসাইড স্কলার্সদের পাশাপাশি অনেক বিজ্ঞ আইনজীবীও এই সংস্থার সদস্য। জেনোসাইড হিসেবে ঘোষণার যুক্তি হিসেবে ’৭১-এর ৯ মাসে সংঘটিত ভয়াবহ ও নৃশংস সব ঘটনার প্রমাণাদি ও বিবলিওগ্রাফি তুলে ধরা হয়। এই স্বীকৃতির বিষয়টি আইএজিএসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ’৭১-এর গণহত্যার বিশ্ব স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি আরও সহজ ও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসেও একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে ইতোমধ্যে, যা পালন করবে ইতিবাচক ভূমিকা।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পরিম-লে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বাঙালি জাতির ওপর ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত হামলা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ এবং তিন লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিষয়টিকে কেন্দ্র করে গণহত্যার স্বীকৃতির দাবি বাংলাদেশ জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সম্প্রতি সুইজ্যারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ২৫নং কক্ষে আলোচনাসভা, প্রতিবাদ, মানববন্ধন সর্বোপরি বাংলাদেশ জেনোসাইড বিষয়ক ভিডিও প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের গণহত্যা জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতির দাবিতে ৯ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে দেশেও পালন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি। এখন এটি বাস্তবায়নের জন্য সরকার, পররাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে আরও জোরালো ও বলিষ্ঠ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।