ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

এ আই যুগে মানব মস্তিষ্ক

মো. আবুজর গিফারী

প্রকাশিত: ১৮:১১, ১১ জুলাই ২০২৫

এ আই যুগে মানব মস্তিষ্ক

সময়ের পরিক্রমায় প্রযুক্তি তার সীমানা অতিক্রম করে আজ মহাকাশ জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। প্রযুক্তির এই অভাবনীয় অগ্রগতির পেছনে রয়েছে মানব মস্তিষ্কের অসামান্য অবদান। মানুষের চিন্তা, গবেষণা ও উদ্ভাবনী শক্তির ফলেই আজ পৃথিবী এক ডিজিটাল বিশ্বে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠছে- এই প্রযুক্তিই কি শেষ মেশ মানব মস্তিষ্ককে নিষ্ক্রিয় করে দেবে? প্রশ্নটি হয়তো প্রথম শুনতে কিছুটা উদ্ভট বা অবাস্তব মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা এমন এক প্রযুক্তিনির্ভর যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে প্রযুক্তি পরিচালনার জন্য মানুষের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আর অপরিহার্য নয়। বিশেষত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-এর আবির্ভাব মানব চিন্তার বিকল্প হিসেবে ক্রমশ সামনে আসছে। বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্লেন চালনার ক্ষেত্রে দক্ষ পাইলটের বিকল্প হয়ে উঠছে। যুদ্ধক্ষেত্রে হাজার মাইল দূরে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে AI-এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। চ্যাটবট, অটোমেশন সিস্টেম এবং ডেটা অ্যানালাইসিসে AI -এর ব্যাপক ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবন, শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে OpenAI-Gi ChatGPT, DeepSeek কিংবা গুগলের এবসরহর এখন মানুষের চিন্তা ও বিশ্লেষণের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। আগে যেখানে কোনো বিষয়ের জন্য অনেক বই ঘেঁটে তথ্য খুঁজতে হতো, এখন চ্যাটজিপিটিতে একটি সঠিক নির্দেশনা দিলেই পাওয়া যাচ্ছে সুসংগঠিত ও পূর্ণাঙ্গ উত্তর। এটি সময় বাঁচালেও মানুষের চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তাকে কমিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এখন আর গভীরভাবে চিন্তা না করে AI-এর ওপর নির্ভর করে এসাইনমেন্ট সম্পন্ন করছে। ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ব্যায়াম ও সৃজনশীলতার সুযোগ কমে যাচ্ছে। এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সামনে মানবজাতির জন্য এক সংকট ঘনিয়ে আসতে পারে। শুধু দৈহিক শ্রম নয়, মানসিক পরিশ্রমও কমে যাবে। AI যখন মানুষের ভাবনার জায়গা দখল করে নেবে, তখন প্রশ্ন উঠবে- মানুষের প্রয়োজনটাই বা কী? তাই আমাদের উচিত, প্রযুক্তিকে সহযোগী হিসেবে গ্রহণ করা, তবে নির্ভরশীল হয়ে নয়। প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের নিজেদের চিন্তাশক্তি, বিশ্লেষণক্ষমতা এবং সৃজনশীলতাকে ব্যবহার করতে হবে। নাহলে একসময় হয়তো মানব অস্তিত্বই প্রযুক্তির ছায়ায় হারিয়ে যেতে বসবে। প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে মানবজগতের এক বড় আশীর্বাদ। তবে সেটি যেন অভিশাপে পরিণত না হয়, সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে। প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে মানুষের মৌলিক গুণাবলীকে বিকশিত করাই হবে ভবিষ্যৎ টিকিয়ে রাখার মূলমন্ত্র।

মো. আবুজর গিফারী
ঢাকা কলেজ

প্যানেল/মো.

×