ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি

আসাদ পারভেজ

প্রকাশিত: ১৮:২৩, ১১ জুলাই ২০২৫

গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি

আওয়ামী লীগ তার ঐতিহ্যকে ধারণ করেই মনের মাধুরি মিশিয়ে অপশাসন কায়েম করেছে এদেশে। তার পুরো অপশাসনের বিএনপি সংগ্রাম করেছে- যা এদেশের মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণ অবগত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার জুলুম আর নিপীড়নে বিএনপি কি পরিমাণ ক্ষতির শিকার হয়েছে- তা ইতিহাস সাক্ষী। জাতীয়তাবাদী আদর্শে আমরা সংগ্রাম করেছি; ভারতের পরিকল্পনায় চালিত আওয়ামী লীগের সকল প্রকারের দোসরদের বিরুদ্ধে। অবশ্য এই সংগ্রামে আরও অনেকে শরিক হয়েছিল বিএনপির সঙ্গে- যাদের মানসিক ও রাজনৈতিক মতাদর্শ জাতীয়তাবাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। দীর্ঘ এই সংগ্রামে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সরকার ১৪২৮২৫টি মামলা- যার আসামির সংখ্যা ৫০৩২৬৫৫ জনের বেশি। গুম আর নির্যাতন আমাদের নিত্যসঙ্গী। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায়ে বিএনপির ধারাবাহিক এই সংগ্রাম আর ত্যাগই ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিল। অবশেষে তারেক রহমানের নানারকম দিকনির্দেশনায় ছাত্র-জনতা চূড়ান্ত সফলতা বয়ে এনেছে। সত্যিকারার্থে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় এই অভ্যুত্থানে রাজপথে নেমে এসেছিল দেশের আপাময় জনগণ। 
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও আম-জনতার গণঅভ্যুত্থান রচিত হয়েছে আমাদের অনেক ভাই-বোনদের রক্ত আর অকুতোভয় সাহসিকতায়। তাই কৃতজ্ঞচিত্রে স্মরণ করছি স্বাধীন দেশের কঠিন ক্লান্তি মুহূর্তে রক্তাক্ত অভ্যুদয়ের পিচ্ছিল পিচঢালা বন্ধুর পথে যে অগণিত আপামর ভাই-বোনেরা জাগতিক জীবন হারিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন তাদের সকলকে। এ সময়ে রাষ্ট্রের মূল ধারার যে কয়েকজন গণবুদ্ধিজীবী ফ্যাসিস্ট হাসিনার রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা না করে গত ১৬ বছর এবং অবশেষে আম-জনতার পক্ষে কলম ধরেছেন তাদেরকেসহ দেশের ক্লান্তিলগ্নের আন্দোলনকারী শহীদদের পরিবার-পরিজনকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। একই সঙ্গে ভালোবাসা আর বিপ্লবী অভিবাধন জানাই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সেই সকল অকুতোভয় সংগ্রামী মার্চ-পিপল বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রতিটি কর্মীকে- যারা জীবনকে বাজি রেখে জালিম ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ তার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ধূসরদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসী থাবা থেকে ভঙ্গুর এই দেশটিকে উদ্ধার করে নব এক বাংলাদেশরূপে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পেরেছেন। 
আমরা যে আজ স্বপ্নের দেশ গড়ার পরিকল্পনার কথা উচ্চস্বরে বলতে পারছি- তা বীরের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গত ১৬ বছর সংগ্রাম করেছে- জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী এই জাতি। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের আদর্শ আর বেগম জিয়ার পরামর্শে জাতির এই বলিষ্ঠ সৈনিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারেক রহমান। 
জুলাই-আগস্ট, ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান মানেই নব বাংলাদেশ- যেখানে নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে; এই জাতি। ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের সঙ্গে ১৫৮১ জন নিহত এবং ২২ হাজার আহতের মাধ্যমে এই জাতি নব বাংলাদেশ ঠিকই পেয়েছে? একই সঙ্গে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পেটুয়া পুলিশ বাহিনীর ১৪৪ ধারাকে ভেঙে যেসব জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের তোয়াক্কা না করে রাজপথে নেমে এসেছেন; তাদের শ্রমও মুক্তির পথকে করেছে মসৃণ। চলমান আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভেঙে ২০২৪-এর ১৯ জুলাই ঢাকার প্রেস ক্লাবে সরকারবিরোধী বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল বিএনপির নেতৃবৃন্দ। ৩ আগস্ট শাহবাগ চত্বর স্লোগানে মুখরিত করেছিল এমএ গাফফাররা (যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক)। ঢাকার রাজপথের নানা স্পটে নেতৃত্ব দিয়েছিল বিএনপি নেতা সেলিমুজ্জামান সেলিম (নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক)। তারেক রহমানের নির্দেশনায় বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দ হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে কাকরাইল থেকে মালিবাগ লোকে লোকারণ্য করেছিল- এগুলো সরকারের বিদায়কে সহজ করেছে। ফ্যাসিস্ট সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পরেরদিন ২০ জুলাই ঢাকা উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হকসহ অনেককে গ্রেপ্তার করে এবং ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে চরমভাবে নির্যাতনকালীন অসুস্থ হলেও হাসাপাতালে নেয়নি। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা মুক্ত এই বাংলাদেশের ভিত যে তৈরি হয়েছিল বেগম জিয়ার অবৈধ কারান্তরীণ জীবন আর তারেক রহমানের দেশের বাইরে থাকাটাই। এই দেশের লাল সূর্য আবারও উদিত হয়েছে আলো নিয়ে বেগম জিয়ার বন্দি জীবনের প্রতিটি সীমাহীন কষ্টার্জিত সময়ের মূল্যে।
এই যে, বাংলাদেশ! তা-তো ব্রিটিশ আর পাকিস্তানকে পরাজিত করেই তার স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। শেখ মুজিব ১৯৭০ সালের ভোটের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতেই চূড়ান্ত আগ্রহী ছিলেন। পাকিস্তান সরকারের নানারকম নির্যাতন ও হঠকারিতায় সেইদিন মেজর জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। বাকিটা ইতিহাস সাক্ষী। বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। অথচ ভারতের পরিকল্পনায় শেখ মুজিব ক্ষমতায় বসেই সব প্রকারের বাক-স্বাধীনতা হরণ করলেন। তিনি বাকশাল গঠন করে এক নায়কতন্ত্রের দিকে ধাবিত হলেন। ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ ইতিহাস এখানেও সাক্ষী। 
২০০৮ সালে শেখ হাসিনা নাটকীয়ভাবে ক্ষমতায়। একটানা সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশের ওপর সে চালিয়েছিল শাসনের নামে শোষণের জিঞ্জির। পৃথিবীর ইতিহাসে নিজ জাতির ওপর এমন নির্যাতনের খড়গ আর কেউ চালিয়েছেন কিনা জানা নেই। অথচ শেখ হাসিনার শাসনামলে এই জাতির ১৮ কোটি আম-জনতার ওপর কি পরিমাণ নিপীড়ন আর নির্যাতনের স্টিম রোলার চলেছিল- তা পূর্ণরূপে প্রকাশিত হলে, বিশ্ব আঁতকে উঠবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৩০০ জন আইনপ্রণেতার মধ্যে ১৫৩ জন নির্বাচিত হন বিনা ভোটে। তামাশার নির্বাচনে জয়ী হয়ে এই সরকার দেশকে কোথায় নিয়েছে, তা দেখতে ও অনুধাবন করতে কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই। যে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা চুরি হয়, যুবকের (এনজিও) মতো প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষকে নিয়ে তামাশা করে, শেয়ারবাজার ধ্বংসকারীদের নেতা সালমান এফ রহমানের মতো লোক বাবা কিংবা দরবেশ উপাধি পায় এবং ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫০ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা দায়দেনা থাকে, যুবলীগের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সম্রাট বাহিনীর ক্যাসিনোকাণ্ড দেশের যুব সমাজকে হতাশায় নিমজ্জিত করে, ডেসটিনির মতো প্রতিষ্ঠানে সাবেক সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জড়িত থেকে লাখো যুবককে পরিবারের কাছে কলঙ্কিত করে, হলমার্ক কেলেঙ্কারি ও অহরহ প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়, কোটা প্রক্রিয়ার কাছে মেধাবীরা বঞ্চিত হয়, ফুঁ দিয়ে বহুতল ভবন ভেঙে ফেলা যায়, মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠিত ফারমার্স ব্যাংকে আমানতকারীদের আমানত ফেরত পাওয়া যায় না, সে দেশ আবার কেমন করে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করে।
আওয়ামী লীগ একতরফা চাঁদাবাজি, ফটকাবাজি, তদবির, মাস্তানি কেবল নয়; বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বানিয়েছে ছাত্রলীগের অত্যাচার ও অনাচারের লীলাক্ষেত্র। নতুন প্রজন্মের কাছে আওয়ামী ছিল বিচ্ছিন্ন, সংস্কৃতি অঙ্গনে তাদের তেলেসমাতি, পারিবারিক দাপটসহ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ দেশটাকে তাঁবেদারি রাষ্ট্রে পরিণত করে। একই সঙ্গে এ দেশে আওয়ামী শাসনের গত ১৬ বছর ধরে সাংবিধানিক কোনো অধিকারই রক্ষা করা হয়নি। দেশের অধিকাংশ মানুষ সর্বদিকে চরমভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছেন। দেশের অর্থনীতির চাকা অচল হয়েছে। দৃশ্যমান উন্নয়ন করতে গিয়ে বৈদেশিক দেনায় দেউলিয়ার দোরগোড়ায় রাষ্ট্র। শিক্ষাঙ্গনের লেজুড়বৃত্তি আগামী প্রজন্মকে অন্ধকারে নিয়ে গিয়েছিল। একদিকে নারী ও শিশু ধর্ষণ বেড়েছে, অপরদিকে যৌনাচারের আখড়াগুলোকে অবাধে বিচরণের সুযোগ করে দিয়েছিল কতিপয় আওয়ামী লীগের দোসররা। আমলাতন্ত্রে চরমপ্রকারের পচন ধরেছিল। দেশটাকে পুলিশিরাষ্ট্রে সম্পূর্ণরূপে পরিণত করেছিল। দুর্নীতি একেবারে সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নির্বাচিত যে জনপ্রতিনিধির প্রয়োজন- তা সবাই ভুলতে বসেছে। ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনব্যবস্থা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে করেছে কলঙ্কিত। ভোটের রাজ্যে আকাল পড়েছে। দিনের ভোট রাতে হয়েছে! এগুলোর হিসাব চাইলেই অকাতরে গুম হয়েছে মানুষ। ৩ হাজারের অধিক মানুষের খোঁজ পাওয়া যায়নি- যাদের অধিকাংশ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আয়নাঘরের মতো রহস্যময় দানবের আবির্ভাব হয়েছে। ক্যাসিনোকাণ্ডের অভিযুক্তরা রাজনৈতিক পুনর্বাসন উদ্বেগজনক পরিস্থিতির বার্তা দিয়েছে। তারা পার্শ¦বর্তী ভারতের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের কাছে স্বেচ্ছায় নতি স্বীকার করে। নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার প্রয়াসে ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে এ দেশের উল্লেখযোগ্য আইনে পরিণত করেছে। পররাষ্ট্র নীতির নতি স্বীকারে জাতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আওয়ামী শাসন ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের গহ্বরে প্রবেশ করেছে- যা রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশের ইতিহাসে ইহুদিবাদী ইসরাইল একটি অবৈধ ও অবাঞ্ছিত রাষ্ট্র। অথচ দেশের মানুষের গোপনীয়তাকে হরণ করার জন্য ইসরাইলের কাছ থেকে আড়ি পাতায় যন্ত্রপাতি কিনতে গিয়ে সরকার আরেকবার দেশকে লজ্জিত করেছে। দেশের পাসপোর্ট থেকে এক্সসেপ্ট ইসরাইল শব্দটি বাদ দিয়েছে। ডিবির ডিআইজি হারুন, অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমারদের আচরণ সকল প্রকারের আমলাতন্ত্রকে কলঙ্কিত করেছে। যারা ফ্যাসিস্ট, তারা চূড়ান্ত পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্তকে সেরা মনে করে। এমন ঘাড়ত্যারা স্বৈরশাসকদের বিদায়টা বড়ই করুণ ও নির্মম হয়। ইতিহাস এমনটাই সাক্ষী দেয়। 
একটি রাজনৈতিক দলের সেক্রেটারি হওয়ার পরও ওবায়দুল কাদেরের মুখের ভাষা রাজনৈতিক শিষ্টাচারকে দুষিত করেছে। রাষ্ট্রীয় চেয়ারে বসে শেখ হাসিনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে কটূক্তি করতে দ্বিধাবোধ করেনি। সরকারপ্রধানের এমন কথা থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, এ দেশের রাষ্ট্র কাঠামোর নিয়মতান্ত্রিকতা কতটা ভঙ্গুর হয়েছে। পচন ধরেছে রাষ্ট্রের স্বাধীন স্তম্ভে।
বাংলাদেশে মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্যতার দাবিতে প্রথম রাজপথে নেমে আসে ২০১৮ সালে। এদের অনেককেই পড়াতে গিয়ে পরিবার দরিদ্রতার জাতাকলে পিষ্ট হয়েছে। কিন্তু চাকরি তাদের কাছে সোনার হরিণ। দ্বিতীয় দফা আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের পহেলা জুলাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ছাত্রসমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। তাদের আন্দোলন ছিল শুধুই কোটার বিরুদ্ধে। তারেক রহমান রাজনীতির সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকেই কোটা আন্দোলনকে একদফার আন্দোলনে পরিণত করেন। তারই পরিকল্পিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায় সংক্রান্ত একদফার পরিপত্রকে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন আম-জনতার মাঝে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। 
৩ আগস্ট, শনিবার এক দফা, এক দাবি নিয়ে মাঠে নামে এদেশের আমজনতা-আওয়ামী লীগের পেতাত্মারা বাদে দেশের সকল জনগণ তারেক রহমানের নির্দেশে একাকার হয়ে পড়ে। তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে। তাদের দাবির সঙ্গে পেছন থেকে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন। বিশেষভাবে পুরো দেশে বিএনপির নেতৃত্বে একাকার হয়ে যায় ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের লাখ লাখ যুবক-যুবতী ভাই ও বোনেরা। তারেক রহমানের নির্দেশে সাধারণ আমজনতাসহ ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপির কর্মীবাহিনীর মিশে যাওয়াটাই পুরো আন্দোলনকে ফ্যাসিস্ট সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যায়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়। সবাই তারেক রহমানের চূড়ান্ত নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকে।
অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ৫ আগস্ট, সোমবার মার্চ টু ঢাকা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন- মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তনে বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ ত্বরিত কাজে আসে। ৬ আগস্টের পরিবর্তে ৫ আগস্ট সোমবার এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা আসে- তারিখ পরিবর্তনের এই নির্দেশনা তারেক রহমান সিনিয়র নেতাদের আগেই জানিয়ে রাখেন। এতে সারাদেশ থেকে আন্দোলনকারীদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানানো হয়। এরইমধ্যে নানা জাতীয় পত্রিকায় (এত লাশ কেন) ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের লেখা আসতে থাকে। তারেক রহমানের নির্দেশনায় ঢাকায় অবস্থিত নেতাদের কর্মকৌশলে লাখ লাখ জনতার সমাগম করে বিএনপি। বিএনপির এই যে দীর্ঘসংগ্রাম; তার ওপরই দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতা বিজয় ছিনিয়ে আনে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ ছাড়েন। তাঁর বোন শেখ রেহানার সঙ্গে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে দেশত্যাগ করেন। 
তারেক রহমান আমজনতার ত্যাগকে মূল্যায়নে রেখেই আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চান। তিনি বৈষম্যহীন, চাঁদাবাজমুক্ত এক নব বাংলাদেশ গড়ার কাজে হাত দিতে চান।
লেখক : ভূরাজনীতি গবেষক

প্যানেল/মো.

×