ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

আত্মকর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বিতাই হোক বেকারত্ব দূরীকরণের চাবিকাঠি

রাজু আহমেদ

প্রকাশিত: ০০:৪৫, ১২ জুলাই ২০২৫

আত্মকর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বিতাই হোক বেকারত্ব দূরীকরণের চাবিকাঠি

দেশজুড়ে কর্মমুখী শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করে পরনির্ভরশীলতা, চাকরি কিংবা বিদেশে কর্মসংস্থান বিকল্ল হিসেবে কর্মমুখী শিক্ষা, আত্মকর্মসংস্থান- এবং স্বাবলম্বীতাই হতে পারে দেশের বেকারত্ব দূরীকরণের চাবিকাঠি।  

শিক্ষা যখনই হবে জীবনের সাথে সম্পৃক্ত, তখনই  তা একটি জাতিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। সাধারণ শিক্ষার সাথে কর্মমুখী শিক্ষার অগ্রসরতার ফলেই পৃথিবী আজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কর্মই একটি জাতি বা একটি সভ্যতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করায় যুগে যুগে মানুষের কর্মের দ্বারাই সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন সভ্যতার। যে শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষ কোনো বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা লাভ করে জীবিকার্জনের যোগ্যতা অর্জন করে,তাই কর্মমুখী শিক্ষা। কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার অর্থ হচ্ছে একজন ব্যক্তিকে বিশেষ বৃত্তি বা কর্মে প্রশিক্ষিত করে তোলা।
এ শিক্ষাগ্রহণ করলে কাউকে চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। বরং বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও  দারিদ্র বিমোচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। কর্মমুখী শিক্ষাই পারবে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এ দেশের লাখো বেকারদের রুজি-রোজগারের পথ খুলে দিয়ে তাদের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে।

এ শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তিকে বিদেশে পাঠিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কর্মমুখী শিক্ষার উপর যত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে,দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ততটাই সুদৃঢ় হওয়ার পাশাপাশি বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে সক্রিয় সহযোগিতা করবে। 

বর্তমানে বাংলাদেশে বৃত্তিমূলক শিক্ষার যে ব্যবস্থা রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপর্যাপ্ত ও অত্যন্ত নিম্নমানের। বাংলাদেশের সরকারি পর্যায়ে তিন ধরনের কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা হলো ডিগ্রী পর্যায়,ডিপ্লোমা পর্যায় ও সার্টিফিকেট পর্যায়। ডিগ্রী পর্যায়ে প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবীদ তৈরি করা হয়,ডিপ্লোমা পর্যায়ে টেকনিশিয়ান ও সার্টিফিকেট পর্যায়ে দক্ষ কারিগর ও কর্মী তৈরি করা হয়।

ডিগ্রী প্রদানকারী দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশলী ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সহ ঢাকা, খুলনা,রাজশাহী ও চট্টগ্রামে রয়েছে চারটি প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় রয়েছে। রয়েছে ডিপ্লোমা প্রদানকারী ২৩ টি প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া ৫১ টি সার্টিফিকেট প্রদানকারী প্রদানকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। 

পক্ষান্তরে এ সকল প্রতিষ্ঠান থেকে যে সংখ্যক শিক্ষার্থী বের হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)  প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি দেশে মোট বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ ৫০ হাজার। 

২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে এ সংখ্যা অর্ধ লক্ষাধিক বেড়ে  প্রায়,২৬ লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী ২০২৪ সালে বেকারত্বের সংখ্যা,আনুপাতিক হাটে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশে। বিগত ২০২৩ সালে যেই হার ছিল ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।

তবে আশার কথা হচ্ছে,সরকার কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের লক্ষ্যে আরও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকা অত্যন্ত লজ্জাকর,গ্লানিকর এবং অসম্মানজনক। নিজের প্রচেষ্টায় জীবনযাপন করার মধ্যেই মানবজীবনের সার্থকতা ও আত্মনির্ভরতার কোনো বিকল্প নেই। আত্মনির্ভরতাই সবচেয়ে বড় সাহায্য,যার মাঝেই লুকিয়ে আছে দেশের লক্ষ বেকারদের সাফল্যের চাবিকাঠি। তাদেরকে কোনো কাজকে ছোট মনে না করে বরং পরিশ্রম করে নিজের ভাগ্যোন্নয়নে ব্রতী হতে হবে। বেকারত্ব দূর করে জাতিকে স্বাবলম্বী করতে হলে নিজ দেশের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন,বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদ করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি,শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালসহ বিদেশি পণ্য আমদানি ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে চরম সততা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে সুনির্দিষ্ট লক্ষের দিকে।
শিক্ষিত লোকজন স্বাবলম্বিতা সম্পর্কে অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান প্রদানের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মকর্মসংস্থানের দিকে ধাবিত করবে। স্বাবলম্বিতাই হোক উন্নতির চাবিকাঠি। তাই স্বাবলম্বন ও আত্মকর্মসংস্থানের পথ ধরেই এ দেশের লাখো বেকারদেরকে সফলতার শিখরে পৌঁছানোর সাথে সাথে দেশ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তিলাভ করবে।  

লেখক: রাজু আহমেদ, লেখক, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট

মিরপুর,ঢাকা

Mily

×