
ছবি: সংগৃহীত
তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এখনো থামার নাম নিচ্ছে না। এই দীর্ঘ যুদ্ধের খেসারত দিতে হচ্ছে উভয় পক্ষকেই—সামরিক ব্যয়, মানবিক ক্ষতি এবং অর্থনৈতিক চাপের দিক থেকে। যুদ্ধ বন্ধে পশ্চিমা দেশগুলো একযোগে রাশিয়ার বিপুল পরিমাণ সম্পদ জব্দ করলেও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া নিজেও দেশি-বিদেশি সম্পদ দখল করে তুলেছে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। জব্দ করে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ, ব্যক্তিগত সম্পদ ও রাশিয়ান অলিগার্কদের মালিকানাধীন সম্পত্তি। এরসঙ্গে যুক্ত হয় বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাও। সব মিলিয়ে রাশিয়াকে আর্থিকভাবে চাপে ফেলেই যুদ্ধ থামাতে চেয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব।
তবে যুদ্ধ থামেনি—বরং এখনো চলছে হামলা ও পাল্টা হামলা। প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এর মধ্যেই সম্প্রতি মস্কোভিত্তিক আইন ফার্ম NSP ও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য: রাশিয়া ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ দখল করেছে।
গবেষকরা রাশিয়ার এই কৌশলকে ‘ফোর্ট প্রেস রাশিয়া মডেল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা বলছেন, এই মডেল রাশিয়ার অর্থনীতিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব থেকে বাঁচাতে এবং যুদ্ধকালীন সময়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখার অংশ হিসেবে তৈরি।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর ম্যাকডোনাল্ডস, মার্সিডিজ বেঞ্জসহ হাজারো পশ্চিমা কোম্পানি রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করে। কেউ কেউ আবার তাদের ব্যবসা রুশ ম্যানেজারদের কাছে হস্তান্তর করে যায়, কেউ কোনো বিনিময় ছাড়াই সম্পদ ছেড়ে চলে যায়। এ সুযোগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্বাক্ষর করেন একাধিক ডিক্রি—যার মাধ্যমে এসব সম্পদ দখলের অনুমোদন দেয়া হয়।
এই প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জার্মানির ইউনিপার ও ডেনমার্কের বিখ্যাত ব্র্যান্ড কার্লসবার্গ। শুধু বিদেশি নয়, রাশিয়ার অনেক বড় দেশীয় কোম্পানিও রাষ্ট্রের দখলে চলে গেছে। কখনো দুর্নীতির অভিযোগ, কখনো কৌশলগত সম্পদ রক্ষা কিংবা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা—এই সব অজুহাতে এসব সম্পদ রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়েছে।
এক উদাহরণ রাশিয়ার স্বর্ণ উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান ‘উজুর আল জোলোটে (Uzhur Al Zoloto)’। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বিনিয়োগকারী ধনকুবের কনস্তান্তিন স্ত্রুকব এখন রুশ সরকারের নজরে।
অন্যদিকে, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার প্রায় ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফ্রিজ করে রেখেছে। যার একটি বড় অংশ রয়েছে ইউরোপের ব্রাসেলসভিত্তিক ইউরোক্লিয়ার ক্লিয়ারিং হাউসে। এই তহবিল থেকে ইউরোপীয় কমিশন ইউক্রেনকে ৭ বিলিয়ন ইউরো সহায়তা দিয়েছে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=5k0l4F4Yidk
রাকিব