ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

এবার খোদ মার্কিন নাগরিককেই পিটিয়ে হত্যা করেছে ইজরায়েলিরা!

প্রকাশিত: ১৯:৪৯, ১২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:৫৭, ১২ জুলাই ২০২৫

এবার খোদ মার্কিন নাগরিককেই পিটিয়ে হত্যা করেছে ইজরায়েলিরা!

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলিরা যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিককে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে জানাচ্ছে ভুক্তভোগীর পরিবার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রামাল্লার উত্তরের শহর সিনজিল-এ সাইফ আল-দিন মুসলাত নামের এই যুবককে বেধড়ক মারধর করে হত্যা করে ইসরায়েলি বসতিদের একটি দল। নিহত মুসলাতের বয়স কুড়ির কোটায় ছিল।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে নিহতের পরিবার জানিয়েছে, মুসলাত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের টাম্পা শহরের বাসিন্দা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে ফিলিস্তিনে এসেছিলেন তিনি।

ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “পশ্চিম তীরে এক মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর সংবাদ আমরা জেনেছি।” তবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কারণে আর কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

এই হামলায় আরেক ফিলিস্তিনি, মোহাম্মদ শালাবি, গুলিতে নিহত হয়েছেন বলেও জানায় ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাকেও ইসরায়েলি বসতির বাসিন্দারাই গুলি করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতির বাসিন্দারা প্রায়ই ফিলিস্তিনি গ্রাম ও মহল্লায় হামলা চালিয়ে বাড়িঘর, গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এসব হামলা কখনও কখনও ‘পোগ্রোম’ বা জাতিগত নিধনের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

এসব হামলার সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলাকারীদের সুরক্ষা দেয় এবং ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধ করলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।

জাতিসংঘসহ বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ মানবাধিকার সংস্থা পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। তাদের মতে, এসব বসতি ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ ও জমি দখলের কৌশলেরই অংশ।

সাইফ মুসলাত হত্যার ঘটনায় Council on American-Islamic Relations (CAIR) হোয়াইট হাউসের কাছে জবাবদিহি দাবি করেছে।

সংস্থাটির উপপরিচালক এডওয়ার্ড আহমেদ মিচেল বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের হত্যা বারবার বিনা জবাবদিহিতে পার পেয়ে যাওয়ার কারণেই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ নির্লজ্জভাবে মার্কিন-ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে।”

তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্প বারবার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কথা বললেও, ইসরায়েলি সহিংসতার মুখে আমেরিকানদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এ ধরনের পদক্ষেপে বোঝা যায়, এই প্রশাসন আসলে ‘ইসরায়েল ফার্স্ট’ নীতিতে চলছে।”

মধ্যপ্রাচ্য গবেষণা সংস্থা IMEU এক বিবৃতিতে বলেছে, “ইসরায়েলি সেনা ও সরকারের প্রশ্রয়ে বসতিগুলোর বাসিন্দারা ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যামূলক হামলা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় মার্কিন সরকার চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা এক ধরনের অপরাধে অংশগ্রহণ।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব আছে ইসরায়েলের বর্ণবাদী সহিংসতা বন্ধ করার। কিন্তু এর বদলে তারা এখনও ইসরায়েলকে সমর্থন ও অর্থ জোগান দিয়ে চলেছে।”

উল্লেখ্য, অক্টোবর ২০২৩ সালে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই পশ্চিম তীরজুড়ে ইসরায়েলি সহিংসতা আরও বেড়েছে। ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া কিছু সহিংস বসতি স্থাপনকারীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও ২০২৫ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর বাইডেন প্রশাসনের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।

গত তিন বছরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কমপক্ষে ৯ জন মার্কিন নাগরিককে হত্যা করেছে, যার মধ্যে আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ অন্যতম। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো ঘটনায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা বিচার হয়নি।

ফারুক

×