
ছবি: সংগৃহীত।
মাত্র ৪০ সেকেন্ড। এর মধ্যেই আকাশে ওঠার পর এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭ বিমানের উভয় ইঞ্জিন একযোগে বিকল হয়ে পড়ে। ভারতের আহমেদাবাদে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৪১ জন যাত্রী এবং অন্তত ৫০ জন ভবনের বাসিন্দা। এটি ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে ইতোমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে।
ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্ত ও ব্ল্যাকবক্স বিশ্লেষণে উঠে এসেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা এ দুর্ঘটনাকে ঘিরে ষড়যন্ত্রের সন্দেহও উসকে দিচ্ছে।
বিমানের ব্ল্যাকবক্স থেকে পাওয়া অডিও রেকর্ডিং অনুযায়ী, উড্ডয়নের ৪০ সেকেন্ডের মাথায় জ্বালানি সরবরাহকারী দুটি সুইচ একসাথে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে ইঞ্জিন দুটির শক্তি সরবরাহ একযোগে বন্ধ হয়ে পড়ে। পাইলটদের কথোপকথনে এক পাইলটকে বলতে শোনা যায়, "তুমি ফুয়েল কাট করলা কেন?" অন্যজন উত্তরে বলেন, "আমি কিছু করিনি।" কিন্তু কার কণ্ঠ এটি, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
বোয়িং ৭৮৭ বিমানে ফুয়েল সুইচের ওপর সাধারণত একটি লকিং সিস্টেম ও ধাতব আবরণ থাকে, যাতে একসাথে বা ভুলক্রমে সেগুলো বন্ধ করা না যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক হাতে একসাথে দুটি সুইচ বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। তাই প্রশ্ন উঠছে—তাহলে কীভাবে একসাথে বন্ধ হলো দুটি সুইচ?
সেই সঙ্গে, যান্ত্রিক ত্রুটি, সফটওয়্যার গ্লিচ কিংবা বৈদ্যুতিক গোলযোগের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। বিষয়টি নিয়ে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, বিমানটি উড্ডয়নের সময় ১৮০ নট গতিতে এবং ৬২৫ ফুট উচ্চতায় ছিল। ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয় র্যাট (Ram Air Turbine), যা বোঝায়—দুই ইঞ্জিন সম্পূর্ণভাবে বিকল হয়ে গেছে।
এছাড়া দেখা যায়, ল্যান্ডিং গিয়ার তখনও নামানো ছিল, যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে—গিয়ার তোলার আগেই পাইলটদের হাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গিয়েছিল।
তদন্তে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে এটি পাইলট ত্রুটি, যান্ত্রিক ব্যর্থতা, নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো ঘটনা। তবে ব্ল্যাকবক্সে কথোপকথনের অসামঞ্জস্য, সুইচ বন্ধের অস্বাভাবিকতা এবং বিমানের নিরাপত্তা প্রযুক্তির ব্যর্থতা—সবকিছু মিলিয়ে এটিকে সাধারণ দুর্ঘটনা হিসেবে দেখছে না অনেকে।
ককপিট ভয়েস রেকর্ডার বিশ্লেষণের কাজ চলমান, এবং কার হাত থেকে সুইচ বন্ধ হয়েছিল—এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তদন্তকারীরা।
বিমান দুর্ঘটনার জটিল এই কাহিনি এখনো পুরোপুরি উন্মোচিত হয়নি। তবে যা স্পষ্ট তা হলো—ব্ল্যাকবক্স থেকে পাওয়া তথ্য কেবল প্রযুক্তিগত নয়, মানবিক ব্যর্থতার দিকেও আঙুল তুলছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত সত্য প্রকাশ্যে আসে, ততক্ষণ ভারতের সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনাগুলোর একটি ঘিরে ষড়যন্ত্র ও প্রশ্নের কালো মেঘ কাটছে না।
নুসরাত