ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৭ আশ্বিন ১৪৩০

বিদেশ বিভাগের সব খবর

দুর্গাপূজায় ভারতে ৪ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি

দুর্গাপূজায় ভারতে ৪ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি

দুর্গাপূজা উপলক্ষে এবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে তিন হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে রপ্তানির এ অনুমোদন দেওয়া হয়।  প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, মোট ৭৯টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে তিন হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হলো। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, শতাধিক আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে তিন হাজার ৯৫০ টন ইলিশ ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে গত ১ সেপ্টেম্বর কলকাতা ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে আবেদন করে। এতে পাঁচ হাজার টন ইলিশের চাহিদার কথা জানান কলকাতার ব্যবসায়ীরা। পরে ৪ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছায়। গত বছর পূজার সময় দুই হাজার ৯০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ৩০০ টন। আগের বছরগুলোতেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল। অনুমোদনের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম। রপ্তানি শাখার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিবেশী দেশ ভারতে এবারও ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতবার যেসব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকে নির্ধারিত পরিমাণ মাছ রপ্তানি করতে পারেনি। অনেকে একেবারেই রপ্তানি করতে পারেনি। মাছ রপ্তানির বিষয়টি মূলত কী পরিমাণ মাছ ধরা পড়ল সেটির ওপরও অনেকটা নির্ভর করে। তাই আমরা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা দেখে অনুমতি দিয়েছি। ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরা বন্ধ ॥ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বৈশ্বিক সংকট কাটাতে আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন প্রয়োজন

বৈশ্বিক সংকট কাটাতে আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন প্রয়োজন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে বুধবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে স্পেন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল আয়োজিত ‘টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে এই গুরুত্ব আরোপ করেন। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম পর্যালোচনা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এটি বর্তমানে অনেক নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য তহবিলের সুবিধা সীমিত করেছে। তিনি বলেন, আমরা জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে একমত যে বৈশ্বিক ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত। বর্তমান রেটিং সিস্টেম অনেক নি¤œ এবং মধ্যম আয়ের দেশের জন্য তহবিলের সুবিধাকে আরও সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে।  শেখ হাসিনা বলেন, তাদের ভোটাধিকার, কোটা এবং বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবিএস) এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (আইএফআইএস) প্রতিনিধিত্বের সীমা তাদের দর কষাকষির ক্ষমতাকেও ক্ষুণ্ণ করে। তিনি বলেন, আমরা প্রায়শই আন্তর্জাতিক পাবলিক ফাইন্যান্সগুলোকে ব্যয়বহুল এবং নাগালের বাইরে দেখতে পাই। ঋণের ঝামেলা এড়াতে আমরা উচ্চ-সুদের ঋণ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। বাংলাদেশ কখনই এর ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি এবং আমরা সেই রেকর্ড বজায় রাখার আশা করি। আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল-আর্কিটেকচারের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধিত্ব করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার জন্য আমাদের প্রত্যাশার প্রতি সায় দেওয়ার সময় এসেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা স্বীকার করি যে আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল-আর্কিটেকচারের জরুরী সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু সংস্কারের প্রকৃতি ও পরিধির বিষয়ে চুক্তির ক্ষেত্রে এখনো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ। মহাসচিবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেন।  প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, এমডিবি, আইএফআই এবং বেসরকারি ঋণদাতা সংস্থাগুলোকে তাদের অগ্রাধিকারগুলো পুনরায় সাজাতে হবে এবং এসডিজি বাস্তবায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবিলার জন্য অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহ করতে হবে। দ্বিতীয়ত এবং তৃতীয় দফা সম্পর্কে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য স্বল্প ব্যয়ে, রেয়াতি হারে তহবিলের পর্যাপ্ততা প্রয়োজন এবং পছন্দসই উচ্চমানের বিপুল পরিমাণে অনুদান এবং সমস্ত ঋণদানের উপকরণগুলোতে দুর্যোগের ধারা থাকতে হবে যাতে দুর্বল দেশগুলো সংকটকালের ধাক্কা সামলাতে পারে। চতুর্থ দফা সম্পর্কে তিনি বলেন, ঋণদাতাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে ন্যায্য ও কার্যকর ঋণ হিসেবে ত্রাণ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পঞ্চম এবং শেষ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটার পরিবর্তে এসডিআর ঋণের সীমা প্রয়োজন এবং সীমাবদ্ধতার ভিত্তিতে সহজ ঋণ প্রক্রিয়ার  মাধ্যমে হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তার সুষ্ঠু সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য সুনাম কুড়িয়েছে। তিনি বলেন, মহামারির ঠিক আগে আমাদের অর্থনীতি ৮.১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং জলবায়ু সংকট আমাদের অর্থনীতিকে চাপের মধ্যে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ আইএমএফের সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করেছে। তিনি বলেন, আমরা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনে ভারসাম্য এবং আমাদের উন্নয়ন ব্যয় বজায় রাখার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দারিদ্র্যের হার ৪১.৯ শতাংশ থেকে ১৮.৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের মাত্রা ২৫.৫ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।’ এই সভা আহ্বান করায় শেখ হাসিনা স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতিকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিমেটিক অ্যাম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনাকে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির সম্মাননা ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্রাউন ইউনিভার্সিটি বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করেছে। জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল তৈরির জন্য জাতিসংঘ স্বীকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে এই বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ওয়ারেন অ্যালপার্ট মেডিক্যাল স্কুলের মেডিসিন অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের ডিন ডা. মুকেশ কে. জৈন এখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার অবস্থানস্থল দি লোটে নিউইয়র্ক হোটেলে প্রশংসাপত্রটি হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মো. নূরেএলাহি মিনা এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ব্রাউনের ওয়ারেন অ্যালপার্ট মেডিক্যাল স্কুল কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীকে তার স্বীকৃতির জন্য বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রশংসাপত্রে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ কর্তৃক ‘শেখ হাসিনা উদ্যোগ’-এর সাম্প্রতিক স্বীকৃতির জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন। এতে আরও বলা হয়, কমিউনিটি-ভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার একটি সফল মডেল: প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং কমিউনিটি সম্পৃক্ততা উন্নয়নের মাধ্যমে সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিধির জন্য একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়, ড. জৈন জনস্বাস্থ্য ও গবেষণার ক্ষেত্রে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের একটি সম্ভাব্য প্লাটফর্ম হিসেবে বাংলাদেশ-ব্রাউন বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন ইনিশিয়েটিভ সম্পর্কে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং এর প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে চিকিৎসা ও ক্লিনিক্যাল গবেষণার উন্নয়নের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, আমরা সবসময় গবেষণাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে। ব্রাউন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের পরীক্ষা করছে। ড. জৈন আরও বলেন, তারা ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী রোগীদের রেকর্ড রাখার জন্য বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিককে ইলেকট্রনিক ডেটা ম্যানেজমেন্ট চালু করতে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারে। ব্রাউন ইউনিভার্সিটি গবেষণা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অংশীদারিত্ব গড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এ লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।