
ছবি: সংগৃহীত
প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে আয়োজিত বিক্ষোভে অন্তত ৭১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। লন্ডন, কার্ডিফ ও ম্যানচেস্টারে এসব গ্রেপ্তার করা হয়।
গত শনিবার থেকে যুক্তরাজ্য সরকার ‘টেররিজম অ্যাক্ট ২০০০’-এর আওতায় প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর ফলে সংগঠনটির সদস্যপদ গ্রহণ বা প্রকাশ্যে সমর্থন জানানো এখন ফৌজদারি অপরাধ।
লন্ডনে মেট্রোপলিটন পুলিশ ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠনকে সমর্থন জানানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে সাধারণ হামলার অভিযোগেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার দুপুর ১টার পর থেকে পার্লামেন্ট স্কয়ারে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে থাকেন। অনেকে প্ল্যাকার্ডে লিখে আনেন: “আমি গণহত্যার বিরোধী, আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন করি।”
প্রতিবাদকারীদের মধ্যে কেউ কেউ একে অপরের উপর শুয়ে পড়েন, এ সময় পুলিশ তাদের ব্যাগ তল্লাশি করে, আইডি কার্ড ও হাতে তৈরি সাইনবোর্ড জব্দ করে।
নেলসন ম্যান্ডেলার মূর্তির সামনে থেকে শেষ বিক্ষোভকারীকে সরিয়ে নেওয়া হয় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের পর।
মেট পুলিশ জানায়, কেউ যদি চ্যান্ট করে, পোশাক পরে বা কোনো চিহ্ন, পতাকা বা লোগো প্রদর্শনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ সংগঠনকে সমর্থন করে, তবে সেটাও অপরাধের আওতায় আসবে।
কার্ডিফে বিবিসি অফিসের সামনে বিক্ষোভ থেকে দক্ষিণ ওয়েলস পুলিশ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা জানায়, শান্তিপূর্ণ ও আইনগতভাবে প্রতিবাদ করা সবার অধিকার হলেও, আইন লঙ্ঘন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ম্যানচেস্টারের সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ১৬ জনকে ‘টেররিজম অ্যাক্ট ২০০০’-এর আওতায় গ্রেপ্তার করেছে গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ।
এই প্রতিবাদগুলোর আয়োজন করেছিল ‘ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস’ নামের একটি সংগঠন।
গত সপ্তাহেও লন্ডনে এক বিক্ষোভে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্যালেস্টাইন অ্যাকশন মূলত অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে হামলার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। গত জুনে তারা আরএএফ ব্রাইস নরটনে ঢুকে দুটি ভয়েজার বিমান রঙ দিয়ে স্প্রে করে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
আরেক নারীকে অপরাধে সহায়তা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। একজন পুরুষকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার পর দেশব্যাপী সামরিক ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তা পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। চলতি জুলাইয়ে সংসদে ভোটের মাধ্যমে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।
হোম সেক্রেটারি ইভেট কুপার বলেন, “এই সংগঠনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে অপরাধমূলক কার্যকলাপের। ২০২৪ সালের পর থেকে এসব কর্মকাণ্ডের তীব্রতা ও ঘনত্ব বেড়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা খাত আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং কেউ যদি তা বিপন্ন করে, তা মেনে নেওয়া হবে না।”
তবে সমালোচকরা সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বৈরাচারী বলে আখ্যা দিয়েছেন।
প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হুদা আমোরির পক্ষে ব্যারিস্টার রাজা হোসেন কেসি আদালতে বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা ক্ষমতার অপব্যবহার এবং কর্তৃত্ববাদী আচরণ।”
সূত্রঃ বিবিসি
নোভা