ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা পেলেন সাবেক আইজিপি মামুন

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ১২ জুলাই ২০২৫

শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা পেলেন সাবেক আইজিপি মামুন

ছবি: জনকণ্ঠ

জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনের সময় সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ায় শর্তসাপেক্ষে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন-কে ক্ষমা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অভিযুক্ত নিজেই তার এবং তার সঙ্গীদের অপরাধ আদালতে প্রকাশ করার শর্তে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শনিবার ট্রাইব্যুনালের দেওয়া লিখিত আদেশের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়, যদিও আদেশটি দেওয়া হয়েছিল গত ১০ জুলাই। আদেশে বলা হয়, অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন নিজেকে দোষী বলে স্বীকার করেছেন এবং তিনি আদালতকে সহযোগিতা করতে চান। একইসঙ্গে তিনি তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন, “জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য। আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি এবং রাজসাক্ষী হয়ে এসব অপরাধের বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই।”

 

 

আদালত জানিয়েছে, অভিযুক্ত মামুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ৩(২)(ক), ৩(২)(ছ), ৩(২)(জ), ৪(১), ৪(২), ৪(৩) অনুযায়ী অভিযুক্ত হন। মামলায় তার সঙ্গে *প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা* এবং *স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল*-এর নামও রয়েছে; যদিও তারা দুজনই বর্তমানে পলাতক হিসেবে বিবেচিত।

আদালতের আদেশ অনুযায়ী, অভিযুক্ত মামুন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন এবং অভিযোগ গঠনের পর তার কাছে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি দোষ স্বীকার করবেন কি না। উত্তরে তিনি শুধু দোষ স্বীকারই করেননি, বরং অপরাধে জড়িত সব ব্যক্তি—প্রধান হোক বা সহায়তাকারী—তাদের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ও সত্য তথ্য আদালতে দিতে রাজি হয়েছেন।

তার আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ এ বিষয়ে আদালতে একটি আবেদন দাখিল করেন, যাতে তার মক্কেলকে ক্ষমা করার অনুরোধ জানানো হয়। ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর এতে সম্মতি দেন, তবে শর্ত জুড়ে দেন যে মামুনকে অবশ্যই তার জ্ঞাত সমস্ত তথ্য প্রকাশ করতে হবে, যা বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে।

 

 

পরিস্থিতি বিবেচনায় ট্রাইব্যুনাল মনে করে, রাজসাক্ষীর এই ভূমিকা মামলার বিচারকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই তাকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা করা হয় এবং বলা হয়, *উপযুক্ত সময়ে সাক্ষী হিসেবে আদালতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দেয়, মামুনকে যেন অন্যান্য বন্দিদের সঙ্গে না রাখা হয় এবং আলাদাভাবে আটকে রাখা হয়।

সাবেক আইজিপির এই স্বীকারোক্তি ও রাজসাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্ত জুলাই গণহত্যা মামলার বিচারের ক্ষেত্রে একটি বড় মোড় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আদালত আশা করছে, চৌধুরী মামুন তার বক্তব্যে সব দায়ী ব্যক্তিদের সম্পর্কে স্পষ্টভাবে আলোকপাত করবেন এবং গণহত্যার পেছনের রহস্য উন্মোচনে সহায়তা করবেন।

 

ছামিয়া

×