ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

রাতে মোবাইল না ধরলে কী কী ইতিবাচক প্রভাব পড়ে জীবনে

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ১২ জুলাই ২০২৫

রাতে মোবাইল না ধরলে কী কী ইতিবাচক প্রভাব পড়ে জীবনে

ছ‌বি: প্রতীকী

রাতের ঘুমের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার অভ্যাস গড়ে তুললে আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। বর্তমানে মোবাইল আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও, এটি যদি সীমার বাইরে গিয়ে ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে রাতে, তাহলে তা আমাদের শরীর ও মন দুটোর জন্যই ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু যদি আমরা রাতের সময়টিতে মোবাইল থেকে নিজেকে দূরে রাখি, তাহলে তার সুফলগুলো খুব দ্রুতই চোখে পড়ে।

প্রথমত, ঘুমের মান অনেক বেশি উন্নত হয়। রাতে মোবাইল ব্যবহারের সময় চোখ থেকে যে নীল আলো (blue light) বের হয়, তা মেলাটোনিন নামক হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যা ঘুম আসতে বাধা দেয়। অথচ যখন মোবাইল ব্যবহার না করে নিরবিচারে ঘুমানো হয়, তখন শরীর তার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে এবং ঘুম গভীর ও পরিপূর্ণ হয়। এতে করে সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথা ঝিমঝিম করা, চোখে ব্যথা অনুভব করা বা শরীর ক্লান্ত লাগা— এসব সমস্যাও কমে যায়।

দ্বিতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। মোবাইলে সারারাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘাঁটা বা নানা খবর দেখা মানে মস্তিষ্ককে একটানা উত্তেজিত করে রাখা। এতে করে মনের উপর চাপ পড়ে, উদ্বেগ বাড়ে এবং মনোযোগ কমে যায়। অথচ রাতে যদি মোবাইল থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা যায়, তাহলে মস্তিষ্ক বিশ্রামের সুযোগ পায়। রাতে মস্তিষ্কের কার্যক্রম শান্ত হয়, ফলে উদ্বেগ কমে যায় এবং পরবর্তী দিনে মানসিকভাবে চনমনে অনুভব হয়।

তৃতীয়ত, সকালে কাজের প্রতি মনোযোগ ও উৎপাদনশীলতা অনেক বেড়ে যায়। রাতে মোবাইল ব্যবহারে দেরিতে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম কম হওয়ায় সকালে ঘুম ভাঙলেও শরীর ক্লান্ত থাকে এবং মাথা ধীরগতি অনুভব করে। কিন্তু নিয়মিত সময়মতো ঘুমালে এবং রাতে ফোন না ধরলে সকালে সতেজভাবে ঘুম ভেঙে যায়। এতে করে অফিস, পড়াশোনা বা দৈনন্দিন কাজকর্মে মনোযোগ বেড়ে যায়, ভুল কম হয় এবং কাজের গতি বাড়ে।

চতুর্থত, সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। অনেকেই রাতের বেলা মোবাইল ব্যবহার করতে করতে পাশের মানুষটিকে উপেক্ষা করেন। স্বামী-স্ত্রী বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো দূরে থাক, অনেক সময় তো একে অপরের সঙ্গে কথাও হয় না। অথচ যদি রাতে মোবাইল ফেলে রেখে বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া যায়, তাহলে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।

পঞ্চমত, চোখ ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে চোখ শুকিয়ে যায়, জ্বালা করে এবং মাঝে মাঝে ঝাপসা দেখার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। রাতের অন্ধকারে মোবাইল ব্যবহার করলে এই সমস্যা আরও তীব্র হয়। তাছাড়া অতিরিক্ত আলো ও তথ্যের প্রভাবে মস্তিষ্ক অতিরিক্ত পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু যদি রাতে মোবাইল এড়িয়ে চলা যায়, তাহলে চোখ বিশ্রাম পায় এবং মস্তিষ্কও তার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে।

ষষ্ঠত, আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রাতে মোবাইল ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখা সহজ কাজ নয়, বিশেষ করে যখন এটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। কিন্তু কেউ যদি সজ্ঞানে এটি বন্ধ করতে পারে, তাহলে তার আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাড়ে। এই ক্ষমতা শুধু মোবাইল ব্যবহারে নয়, জীবনের অন্যান্য দিকেও কাজে লাগে— যেমন খাওয়াদাওয়া, সময় ব্যবস্থাপনা, এবং খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকা।

সবশেষে বলা যায়, রাতে মোবাইল না ধরলে এক ধরনের আত্মিক প্রশান্তি আসে। রাতে যখন চারপাশ নিস্তব্ধ হয় এবং নিজেকে প্রযুক্তির শৃঙ্খল থেকে মুক্ত রাখা যায়, তখন জীবনের প্রতি এক নতুন উপলব্ধি জন্ম নেয়। মানসিক প্রশান্তি, শারীরিক বিশ্রাম এবং সম্পর্কের উষ্ণতা— সব মিলিয়ে এটি একটি পরিপূর্ণ জীবনের পথে আমাদের এগিয়ে দেয়। তাই রাতের সময়টাকে নিজের জন্য, পরিবার ও প্রকৃত বিশ্রামের জন্য বরাদ্দ করাই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে।

এম.কে.

×