ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

সভ্যতার বিকাশে পোশাকের বিবর্তন 

‎জিশান চৌধুরী জিশু, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০১:১৫, ১৩ জুলাই ২০২৫

সভ্যতার বিকাশে পোশাকের বিবর্তন 

‎মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই পোশাক মানুষের জীবনযাপনের একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। শীত, রোদ, বর্ষা বা সামাজিক সম্মান—সবই প্রভাব ফেলেছে পোশাকের গঠনে ও বিবর্তনে। সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচি, প্রয়োজন, প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব পোশাকের ধরন ও শৈলীকেও করে তুলেছে বৈচিত্র্যময়।

প্রাচীন যুগের সূচনা
‎মানুষ প্রথম যখন পোশাক পরা শুরু করে, তখন তার মূল উদ্দেশ্য ছিল নিজেকে প্রকৃতির প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করা। প্রাচীন যুগে মানুষ গাছের ছাল, পশুর চামড়া এবং পাতা দিয়ে তৈরি করতো শরীর ঢাকার সেই প্রাথমিক আবরণ বা পোশাক। এসব পোশাক রূপ বা সৌন্দর্যের চেয়ে ছিল বেশি প্রয়োজনীয়তা।

‎ইতিহাসের ধাপে ধাপে পরিবর্তন

‎মিশরীয় সভ্যতা: ৪০০০ বছর আগে মিশরীয়রা লিনেন কাপড় ব্যবহার করতো। তাদের পোশাক ছিল হালকা ও আরামদায়ক, কারণ আবহাওয়া ছিল উষ্ণ।

‎গ্রিক ও রোমান যুগ: তখন পোশাকে যুক্ত হয় অলংকরণ ও সৌন্দর্যের প্রতি মনোযোগ। ‘টোগা’ ও ‘চিটন’ নামে পরিচিত ছিল তাদের পোশাক।

‎ভারতীয় উপমহাদেশ: ভারতীয় উপমহাদেশের আদি পোশাক ছিল,সেলাই বিহীন এবং প্রাকৃতিক উপকরণে তৈরি কাপড়। যা 'ধুতি বা শাড়ি' হিসেবে পরিচিত ছিল।ধুতি এখনকার তুলনায় অনেক ছোট ছিল।হাঁটুর ওপর পর্যন্ত ছিল প্রস্থ।নারীরা ও প্রায় একইভাবে কাপড় পড়তো। তবে কাপড় ছিল পায়ের কব্জি অব্দি ঝোলানো। অভিজাত ও বনেদী পরিবারের ছেলেরা গাঁয়ে উওরীয় ও মেয়েরা ওড়না  পড়তো। পরে মুসলিম শাসনে শেরওয়ানি ও সালোয়ার-কামিজ এবং মুঘল আমলে জরি-জবাফ কাজযুক্ত পোশাক জনপ্রিয়তা পায়।

‎ঔপনিবেশিক যুগে প্রভাব
‎‎ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের সময় পাশ্চাত্য ধাঁচের পোশাক জনপ্রিয় হতে থাকে। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি প্যান্ট, শার্ট, স্যুট এবং ফ্রক-গাউন পরিধান শুরু করে। পাশ্চাত্যের সাথে তাল মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত থেকে শুরু করে অনেকে কোট স্যুট পড়া শুরু করে। তবে এর পাশাপাশি স্থানীয় পোশাক যেমন শাড়ি, ধুতি বা লুঙ্গিও টিকে ছিল তার নিজস্ব মর্যাদায়।

‎আধুনিক যুগ ও ফ্যাশনের উত্থান
‎‎বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় ফ্যাশন শিল্পের বিস্তার। পোশাক শুধু প্রয়োজন নয়, হয়ে ওঠে আত্মপ্রকাশ ও স্টাইলের মাধ্যম। নতুন নতুন কাপড়, কাটিং স্টাইল, রং ও ডিজাইন বাজারে আসে। মিডিয়া, সিনেমা ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডও মানুষের রুচিতে প্রভাব ফেলে। আদি কাল ও বিভিন্ন সভ্যতার পোশাক মানুষ বছরেরে নির্দিষ্ট দিন যেমন, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব ছাড়া পড়ে না বললেই চলে। বর্তমান সময়ে মানুষ শর্টকাট এবং আরাম দায়ক পোশাক পছন্দ করে এবং পড়ে থাকে। নানা ধরনের নানা ফ্যাশনের পোশাক এই শিল্পে অন্য মাত্র যোগ করেছে।

‎পোশাকের বিবর্তন মানব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি কেবল মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে না, বরং এটি সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং সমাজের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। পোশাকের ইতিহাস এবং বিবর্তন আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির একটি মূল্যবান অংশ।

 

রাজু

×