
সমাজে "পাতলা হলেই সুন্দর" এই প্রচলিত ধারণা বহু নারীর জীবনে ডায়েট কালচারকে ঘিরে বিষাক্ত অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে। সাময়িক ওজন কমাতে পারলেও, দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপ, আত্মসম্মানহানি এবং শারীরিক জটিলতা—এগুলোই রয়ে গেছে অনেকের স্মৃতিতে। সম্প্রতি ১০ নারী তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন, যেখানে স্পষ্ট হয়েছে—ডায়েট কালচার কেবল ওজন নয়, আত্মমর্যাদাকেও হুমকির মুখে ফেলে।
নিজের শরীরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
২৬ বছর বয়সী পেইজ জানান, কিকবক্সিং প্রতিযোগিতার জন্য কেটো ডায়েট শুরু করেছিলেন। কিছুদিন পর বুঝতে পারেন, এটি কেবল শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও তাঁকে দুর্বল করে তুলছে। “আমি আর নিজেকে এত সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না,” বলেন তিনি।
৪৪ বছর বয়সী গ্রেস বলেন, “ডায়েট ইন্ডাস্ট্রি নারীদের সমস্যা বানিয়ে সেই সমাধানের দায় নারীর ওপরই ফেলে দেয়।” টাইপ ১.৫ ডায়াবেটিস থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের জন্য কার্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করেছেন যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
একই চক্রে ঘুরপাক
৩৪ বছর বয়সী কারেন বলেন, “মা হওয়ার পর শরীরের পরিবর্তন মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। মনে হয়, সারাজীবন ডায়েটে আছি।” অনেকেই জানান, তাঁরা কৈশোরেই ডায়েট শুরু করেছিলেন, তখন থেকেই নিজের শরীরকে ভালোবাসতে না শেখার প্রবণতা তৈরি হয়।
২৩ বছর বয়সী আনা বলেন, “ডায়েট আমার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য একসাথে ভেঙে দিয়েছিল। আমি তখন মনে করতাম পাতলা হলেই সুন্দর, আর সুন্দর হলেই সুখী হবো।” তবে পরে তিনি উপলব্ধি করেন—এই দৃষ্টিভঙ্গি কেবল কষ্টই দেয়।
মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মপ্রেমের গুরুত্ব
অনেকে ডায়েট থেকে শরীর-মন–উভয়েরই বিপর্যস্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। ২৩ বছর বয়সী অ্যালেক্সা জানান, "চিরস্থায়ী ক্যালোরি রেস্ট্রিকশন ও ফাস্টিং-এর ফলে আমার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, এমনকি আমি খাওয়ার ভয়েও ভুগতাম।"
২৮ বছর বয়সী এরিয়েল বলেন, “ইনটুইটিভ ইটিং ও ‘হেলথ অ্যাট এভরি সাইজ’ ধারণাগুলো আমাকে নিজেকে বুঝতে শিখিয়েছে।”
বিশ্বব্যাপী ডায়েট ইন্ডাস্ট্রির বাজার ৭০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ ডায়েট দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয় এবং বিপরীতে ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবান জীবনযাপন মানে কেবল ওজন নিয়ন্ত্রণ নয়—বরং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, মানসিক শান্তি এবং শরীরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনই স্বাস্থ্যকর জীবনের মূলমন্ত্র।
অস্কারজয়ী অভিনেত্রী এমা থম্পসনও একবার বলেছিলেন, “ডায়েট আমার মেটাবলিজম ও মনস্তত্বের ক্ষতি করেছে। ইচ্ছে করি, শুরু করার আগে এসব জানতাম।”
ডায়েট নয়, প্রয়োজন নিজের শরীরকে শ্রদ্ধা করা, খাবারকে ভয় না করে উপভোগ করা এবং আত্মপ্রেম চর্চা করা। সব শরীরই আলাদা, আর সেই ভিন্নতা সুন্দর—এটাই হওয়া উচিত স্বাস্থ্য ভাবনার ভিত্তি।
Jahan