ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

স্ট্রোক হলে কী করবেন? - স্ট্রোক প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত

প্রকাশিত: ০৩:০৯, ১৩ জুলাই ২০২৫

স্ট্রোক হলে কী করবেন? - স্ট্রোক প্রতিরোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত

স্ট্রোক একটি মস্তিষ্কের রোগ, যা কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজের পর অন্যতম মৃত্যুর কারণ। প্রতিবছর অনেক মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে জীবন হারান বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে এক ধরনের অকর্মণ্য জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য এবং যদি সময়মত চিকিৎসা দেওয়া যায়, তাহলে স্ট্রোক আক্রান্ত ব্যক্তিরা আবার তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারেন।

স্ট্রোকের জন্য মূলত দুটি কারণে ঘটে—রক্তস্বল্পতা বা রক্তক্ষরণ। যখন মস্তিষ্কের রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায় বা ছিঁড়ে যায়, তখন স্ট্রোক ঘটে। স্ট্রোকের লক্ষণগুলো দ্রুত চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর মধ্যে মুখের একপাশে দুর্বলতা, কথা বলতে অসুবিধা, চোখে দেখার সমস্যা এবং ভারসাম্যহীনতা থাকতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত।

স্ট্রোকের ঝুঁকি ও কারণ
স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে বয়স্কদের মধ্যে, তবে এটি তরুণদের মাঝেও দেখা যায়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্ট্রোল, ওজন বৃদ্ধি, ধূমপান ও অনিয়মিত হৃদস্পন্দন—এগুলো সব স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ (FAST)
স্ট্রোকের লক্ষণ দ্রুত চিনতে হলে 'FAST' পদ্ধতি অনুসরণ করুন:

  • F: মুখের একপাশ বেঁকে যাওয়া

  • A: কথা বলতে অসুবিধা

  • S: একটি হাত দুর্বল হয়ে যাওয়া

  • T: তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নিন

স্ট্রোক হলে দ্রুত কী করবেন?
স্ট্রোকের চিকিৎসায় সময়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা যাবে, ততই রোগীর সুস্থতা দ্রুত হবে। স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীকে জরুরি বিভাগে বা স্ট্রোক ইউনিটে নিয়ে যাওয়া উচিত। স্ট্রোকের জন্য থ্রম্বোলাইসিস (ক্লট-ব্রেকিং থেরাপি) কিংবা এম্বোলেকটমি (রক্তনালী পরিষ্কার করা) ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এটি সঠিক সময়ে করা জরুরি।

স্ট্রোকের চিকিৎসা:
স্ট্রোকের চিকিৎসা দ্রুত শুরু হলে রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব। ৪.৫ ঘণ্টার মধ্যে থ্রম্বোলাইসিস ওষুধ দেওয়া গেলে রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। তবে, যদি থ্রম্বোলাইসিস না করা যায়, তখন এম্বোলেকটমি করতে হতে পারে।

স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসন:
স্ট্রোকের পর পুনর্বাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে রোগীকে ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি ও অকুপেশনাল থেরাপির মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসতে সাহায্য করা হয়।

স্ট্রোক প্রতিরোধ:
স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে।

  • নিয়মিত ব্যায়াম করা

  • সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা

  • উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্ট্রল নিয়ন্ত্রণে রাখা

  • ধূমপান ও অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ত্যাগ করা

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ:
স্ট্রোক ইউনিট তৈরির জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন। ঢাকার মতো বড় শহরের বাইরে স্ট্রোক চিকিৎসা পৌঁছানো জরুরি। সঠিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্ট্রোকের দ্রুত চিকিৎসা সম্ভব হতে পারে।

স্ট্রোক হলো একটি মারাত্মক রোগ, তবে এটি প্রতিরোধ করা যায়। প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করলে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে একজন রোগী আবার আগের মতো জীবনযাপন করতে পারেন। আপনার জীবনধারা সুষম ও সক্রিয় রাখলেই আপনি স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারবেন।

রাজু

×