
ছবি: সংগৃহীত।
ফ্যাটি লিভার এমন এক রোগ, যা ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধে। এতে না থাকে তীব্র কোনো ব্যথা, না থাকে চোখে পড়ার মতো বড় কোনো লক্ষণ—শুধু কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন, যেগুলো আমরা স্ট্রেস, হরমোনজনিত পরিবর্তন বা বয়সের ফল ভেবে অবহেলা করে ফেলি। আর এখানেই বিপদের সূচনা।
অনেকে মনে করেন, লিভারের সমস্যা শুধু মাত্র অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান বা পুরুষদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। অথচ, অ্যালকোহলবিহীন ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) এখন নারীদের মধ্যেও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। হরমোনের ওঠানামা, জীবনযাপন ও ওষুধের প্রভাব—সব মিলিয়ে নারীদের ঝুঁকি বেড়েছে বহুগুণ। সমস্যা হলো, এসব উপসর্গ অনেক সময় এতটাই নীরব যে অনেক নারীর ক্ষেত্রেই তা ধরা পড়ে না।
চলুন জেনে নিই এমন ৭টি নীরব উপসর্গ, যা নারীদের ফ্যাটি লিভারের পূর্বাভাস দিতে পারে:
১. স্থায়ী ক্লান্তি:
সারাদিন বিশ্রাম নেওয়ার পরও ক্লান্তি কাটছে না? ফ্যাটি লিভারের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ হলো এমন এক ধরনের ক্লান্তি, যেটা ঘুম, বিশ্রাম বা ছুটি কাটিয়েও দূর হয় না। কারণ লিভার ঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরের শক্তি চক্রে ব্যাঘাত ঘটে।
২. পেটের ডানদিকে ভারী বা ফুলে থাকা অনুভব:
নারীদের মধ্যে হরমোন বা খাদ্যাভ্যাসজনিত কারণে মাঝে মাঝে পেট ফোলাভাব স্বাভাবিক হলেও, যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং পেটের ডানদিকে চাপ অনুভূত হয়, তবে তা লিভার সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
৩. ওজন বৃদ্ধি বা ওজন কমাতে অসুবিধা:
ডায়েট, এক্সারসাইজ—সব ঠিকভাবে করেও যদি ওজন না কমে বা বরং বাড়ে, তাহলে লিভার চর্বি সংবরণে অক্ষম হয়ে পড়েছে কি না তা দেখা জরুরি। বিশেষত পেটের চারপাশে মেদ জমা হলে সতর্ক হওয়া উচিত।
৪. হালকা বমিভাব বা হজমে সমস্যা:
প্রতিবার তেলে ভাজা বা ভারী কিছু খাওয়ার পর যদি অস্বস্তি বা হালকা বমি ভাব হয়, তবে সেটা হজমের সমস্যা নাও হতে পারে। এটি লিভারের বাইল উৎপাদনে ঘাটতির ইঙ্গিতও হতে পারে।
৫. ঘাড় বা বগলের আশেপাশে গাঢ় দাগ:
"অ্যাকানথোসিস নিগ্রিকান্স" নামক এই চর্মরোগটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের একটি লক্ষণ, যা নারীদের ফ্যাটি লিভারের অন্যতম কারণ। এটি অনেক সময় ডায়াবেটিস বা পিসিওএস রোগীদের মধ্যেও দেখা যায়।
৬. মস্তিষ্কে ঝিমভাব বা মনোযোগে ঘাটতি:
ব্লার্ড চিন্তা, ভুলে যাওয়া, কাজে মন বসাতে না পারা—এসব মানসিক উপসর্গও ফ্যাটি লিভারের ইঙ্গিত হতে পারে। কারণ লিভার ঠিকভাবে ডিটক্স করতে না পারলে শরীরে টক্সিন জমে মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে।
৭. অনিয়মিত পিরিয়ড বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা:
লিভার শুধু খাবার হজমে নয়, হরমোন নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়া, PMS বেড়ে যাওয়া বা সন্তান ধারণে সমস্যা—এসবই লিভারজনিত কারণেও হতে পারে।
অনেক নারীরই ক্ষেত্রে এই উপসর্গগুলো দৈনন্দিন ক্লান্তি, স্ট্রেস বা হরমোনাল পরিবর্তনের সঙ্গে মিশে গিয়ে ধরা পড়ে না। বিশেষ করে মেনোপজ-পরবর্তী নারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকলেও তারা সমস্যাটি তেমনভাবে বুঝতে পারেন না।
ফ্যাটি লিভার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে তা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। তবে তার আগে নিজেকে বোঝা এবং লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
অতিরিক্ত চিনি, রিফাইন্ড কার্ব, ফাস্ট ফুড ও ট্রান্স ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার লিভারের ওপর মারাত্মক চাপ ফেলে। সফট ড্রিংকস, পেস্ট্রি, প্যাকেটজাত খাবার এবং অ্যালকোহল—সবই লিভারে চর্বি জমতে সাহায্য করে। তাই লিভার সুরক্ষায় ফাইবার ও পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি।
মিরাজ খান