ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

ইসরায়েলিদের হাতে নিহত মার্কিন নাগরিক, তদন্ত দাবি পরিবারের

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ১৩ জুলাই ২০২৫

ইসরায়েলিদের হাতে নিহত মার্কিন নাগরিক, তদন্ত দাবি পরিবারের

ছ‌বি: সংগৃহীত

ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে পশ্চিম তীরে নিহত ২০ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক সাইফুল্লাহ মুসাল্লাতের পরিবার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে একটি স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে। নিহত সাইফ, যিনি ফ্লোরিডার বাসিন্দা ছিলেন, ছুটিতে পরিবার পরিদর্শনে গিয়ে এই নির্মম হত্যার শিকার হন।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার তিন ঘণ্টা ধরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা তাকে ঘিরে রাখে এবং সহিংসভাবে মারধর করে। চিকিৎসাকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়।

পরিবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সাইফ একজন ভদ্র, পরিশ্রমী ও শ্রদ্ধেয় যুবক ছিলেন। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছিলেন। এটা আমাদের জন্য এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন ও অন্যায় যা কোনো পরিবারেরই মুখোমুখি হওয়া উচিত নয়।”

তারা আরও বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের কাছে জোরালোভাবে দাবি জানাচ্ছি, তারা যেন অবিলম্বে তদন্ত শুরু করে এবং এই হত্যার জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।”

যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার এর আগেও এমন ঘটনার তদন্তে গড়িমসি করেছে, এবং প্রায়শই বলেছে যে ইসরায়েল নিজেই তার কর্মকাণ্ড তদন্তে সক্ষম, কিন্তু বাস্তবে বসতি স্থাপনকারী বা সেনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রায়ই শাস্তির পর্যায়ে পৌঁছায় না।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র শুক্রবার জানান, “বিদেশে থাকা মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।” তবে তারা নিহত ব্যক্তির পরিবারের গোপনীয়তার কথা বলে বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

২০২২ সাল থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ৯ জন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডগুলোর একটিতেও এখনো পর্যন্ত কোনো অপরাধীর বিচার হয়নি।

আমেরিকান-আরব অ্যাণ্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটি (ADC) বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই স্পষ্ট করে বলতে হবে, ফিলিস্তিনি-মার্কিন নাগরিকদের জীবনও মূল্যবান। সাইফুল্লাহকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, অথচ মার্কিন কর্তৃপক্ষ নীরব।”

অন্যদিকে আমেরিকান মুসলিমস ফর প্যালেস্টাইন (AMP) প্রশ্ন তোলে, “একজন ফিলিস্তিনি-মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুতে কি যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ রক্ষা করবে, নাকি আবারও ইসরায়েলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেখাবে?”

তবে AMP বলেছে, “ন্যায়বিচারের জন্য মার্কিন পাসপোর্ট থাকা জরুরি নয়। সাইফুল্লাহ ছাড়াও ওই হামলায় আরও একজন ফিলিস্তিনি নিহত হন। ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থার প্রতিটি হত্যা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত এবং যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত।”

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে ইসরায়েলকে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রস্তাবগুলোর বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগ করে।

Council on American-Islamic Relations (CAIR) সাধারণ জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাতে বলেন। CAIR বলেছে, “এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার একটি ধারাবাহিকতা।”

মানবাধিকার সংগঠন DAWN-এর প্রধান সারা লিয়া উইটসন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরকার চাইলে এই ঘটনায় অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে পারে। কিন্তু ইচ্ছার অভাবই প্রকৃত সমস্যা।”

তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের ঘটনায় নীরবতা শুধু হত্যাকারীদের উৎসাহিত করে না, বরং ফিলিস্তিনি-মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধেও সহিংসতা চালানোর পথ প্রশস্ত করে।”

সূত্র: আল জাজিরা

এম.কে.

×