
কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে দ্বিতীয় বারের মতো ৩৬তম মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক মেশিনারি মেলায় অংশগ্রহণ করছে বাংলাদেশ।
মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে ১০-১২ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত চলমান এই মেলায় বাংলাদেশসহ ১০টি দেশের ৪৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান ৭৫৩টি বুথে অংশ নিচ্ছে। অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দেশসমূহ হলো চীন, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, জাপান এবং ইরান। মালয়েশিয়া প্রোমাস ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সোসাইটি এবং ই. এস. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এ মেলা আয়োজন করে। ১১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা উদ্বোধন করেন মালয়েশিয়ার প্লান্টেশন অ্যান্ড কমোডিটিস (Plantation and Commodities) মন্ত্রী ওয়াইবি দাতুক সেরি জোহারি বিন আবদুল গনি (YB Datuk Seri Johari bin Abdul Ghani)।
আজ মেলার শেষদিন শনিবার (১২ জুলাই ২০২৫) মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো: শামীম আহসান আয়োজকদের আমন্ত্রণে বিজনেস ম্যাচিং অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে উপস্থিত ব্যবসায়িক চেম্বারের প্রতিনিধিবৃন্দ ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে গুয়াংডং ফুড অ্যান্ড প্যাকেজিং মেশিনারি ট্রেডস অ্যাসোসিয়েশন (Guangdong Food and Packaging Machinery Trades Association), পেনাং ইমপোর্টার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (Penang Importers & Exporters Association), তেওচিউ মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন পেনাং (Teochew Merchants’ Association Penang), মালয়েশিয়া পেনাং এলিট উইমেনপ্রেনার্স অ্যাসোসিয়েশন (Malaysia Penang Elite Womenpreneurs Association) এবং দেওয়ান পেরনিয়াগান উসাহাওয়ান মালয়েশিয়া (Dewan Perniagaan Usahawan Malaysia) এর সদস্যবৃন্দসহ এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। মেলায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় যা গ্রহণ করেন হাইকমিশনার মো: শামীম আহসান।
পরবর্তীতে অন্যান্য অতিথিবৃন্দসহ হাইকমিশনার মেলার অন্যান্য স্টলসহ বাংলাদেশের ২টি স্টল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ হাইকমিশনের স্টলে আগত ব্যবসায়ী ও দর্শনার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং তাদেরকে বাংলাদেশের বিভিন্ন রপ্তানি পণ্য সম্পর্কে অবহিত করেন। পরিদর্শনের সময় আয়োজক প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়া প্রোমাস ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ও ই. এস. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর দাতো চং চং তিক (Dato Chong Chong Tik), Dewan Perniagaan Usahawan Malaysia এর প্রেসিডেন্ট দাতো সেরি আবু হাসান বিন মো: নূর (Dato Seri Abu Hasan bin Mohd Nor), মো: সেলিম ভূঁইয়া, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ মালয়েশিয়া, টাইলর তাসিন, বিভাগীয় প্রধান (বিপণন), প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রবাসী সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময়, হাইকমিশনার উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য বেশি করে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষাপটে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নতুন পণ্যের বাজার সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা যায়। তিনি প্রাণ-আরএফএল কর্তৃক মেলায় প্রদর্শিত বহুমুখী প্লাস্টিক পণ্যের পাশাপাশি দুরন্ত বাইসাইকেল, ট্রাভেলো লাগেজ, গুডলাক স্টেশনারি এবং উইনার ক্লথিং কে সম্ভাবনাময় হিসেবে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের ২টি স্টলে প্রাণ-আরএফএল এর প্লাস্টিক পণ্য, দুরন্ত বাইসাইকেল, ট্রাভেলো লাগেজ, গুডলাক স্টেশনারি, উইনার ক্লথিং এবং ভিশন ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ছাড়াও হাইকমিশনের পক্ষ থেকে চামড়াজাত পণ্য, পাটপণ্য, হস্তশিল্প এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকাশনা প্রদর্শিত হচ্ছে। এছাড়াও, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, প্যাকেজিং শিল্প, বাংলাদেশে ব্যবসা-বিনিয়োগ সংক্রান্ত নানা ধরনের প্রকাশনা, পর্যটন ও বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা বিষয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। মেলা উদ্বোধনের দিন থেকেই বাংলাদেশি স্টলসমূহে বিদেশি ব্যবসায়ীসহ দর্শনার্থীদের ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং প্রদর্শিত বাংলাদেশি পণ্যসমূহ সম্পর্কে ইতিবাচক আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া, মালয়েশিয়া বাংলাদেশে বিশ্বের নবম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ।
সানজানা