
ছবি: জনকণ্ঠ
১০৮টি সামজিক, মানবাধিকার, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক প্লাটফর্মেও প্রতিনিধিদের নিয়ে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে জুলাই ঐক্যেও প্রতিনিধি সম্মেলন। জুলাই ঐক্যের সংগঠক এবি জুবায়েরের সঞ্চালনায় রোববার দুপুরে ঢাকার কাকরাইলস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে এই প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিনিধি সম্মেলনে জুলাই ঐক্যের সংগঠকেরা বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ গণহত্যার বিচার ও জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবি নিয়ে গত ৬ মে ৩৫টি সামজিক, মানবাধিকার, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক প্লাটফর্মের সমন্বয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে আত্মপ্রকাশ করে জুলাই ঐক্য। ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে প্রায় ১২০টি সংগঠন যুক্ত হয়েছে। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আরও বেশ কিছু সংগঠন যোগাযোগ করেছে। যাচাইবাছাই শেষে আমরা গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ করা সংগঠনগুলোকে আমরা জুলাই ঐক্যর সঙ্গে যুক্ত করব। জুলাইকে বাঁচাতে জুলাইয়ের এই আন্দোলনকে আমরা একটি সামাজিক আন্দোলনের রূপ দিতে চাই। আমরা মনে করি জুলাই বাঁচলে আমরা বাঁচবো। গণ-অভ্যুত্থানকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রত্যেকটি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জাতীয় ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত জুলাই ঐক্য।
জুলাই ঐক্যের সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী বলেন, আমরা সবার আগে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ চাই। কোনো একক দলের পক্ষ থেকে নয় তা দিতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে এবং তা সংবিধানে যুক্ত করতে হবে। আমরা আশা করছি সরকার জুলাই মাসের মধ্যেই জুলাই ঘোষণাপত্র দিবেন যদি তা না হয় তাহলে জুলাই ঐক্যকে সঙ্গে নিয়ে আগামী ৩ আগস্ট সচিবালয় অভিমুখে কফিন করবে ইনকিলাব মঞ্চ।
সম্মেলনে জুলাই ঐক্যের সংগঠক মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, আমরা নতুন বাংলাদেশে কোনো বৈষম্য চাই না। আমরা কোনো চাঁদাবাজি, মানুষ হত্যার মোতো নোংরা রাজনীতি চাই না। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান কোনো একটি দলের নয়। এই গণ-অভ্যুত্থান সকল দল এবং মতের। তাই কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী যদি জুলাইকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে তাহলে ছাত্রজনতাকে সঙ্গে নিয়ে তা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করবে জুলাই ঐক্য।
জুলাই ঐক্যের সংগঠক ইসরাফিল ফরাজী বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সবার প্রথম যেটি সংস্কার কার উচিত ছিল তা হচ্ছে গণমাধ্যম কিন্তু আমরা দেখছি এখানে কোনো সংস্কার হয়নি। বসুন্ধরা গ্রুপের কালের কণ্ঠে বসে আছেন শেখ হাসিনার কাছের লোকজন। যখন হাসনাত গণমাধ্যমের প্রশ্নবিদ্ধ কাজগুলো নিয়ে কথা বলতে শুরু করল তখন বিভিন্ন প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ নিয়ে বিবৃতি দিল। একই সময় প্রেস ক্লাবের ভিতরে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে ১৫ আগস্ট ৩২ নাম্বারে শেখ মুজিবরের মাজারে ফুল দেওয়ার ঘোষণাও আসল। অথচ এসব বিষয় নিয়ে প্রেসক্লাবে নেতাদের মুখে কোনো কথা নেই। অভিলম্বে এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যে সব সাংবাদিকদের নামে মামলা হয়েছে তাদের সঠিক তদন্ত করে বিচার করতে হবে। যদি তারা অপরাধ করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বিচার করতে হবে।
জুলাই ঐক্যের সংগঠক প্লাবন তারিক বলেন, ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধি হয়েছে। সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কাজ করছে। বিচার চলমান রয়েছে। এমতো অবস্থায় আমরা মনে করছি। গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার বাংলাদেশে প্রয়োজন যেগুলো না হলে নতুন করে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে। তাই জুলাই ঐক্যের আরও কিছু দাবি নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক সংস্কার, মিডিয়া সংস্কার, কালচারাল সংস্কার এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার। নতুন বাংলাদেশে পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কার চলতে পারে না। তার এই প্রস্তাবে ঐকমত্য পোষণ করে সম্মেলনে থাকা ১০৮টি সংগঠন।
প্রতিনিধি সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, আপ বাংলাদেশের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ, জুলাই রেভ্যুলেশনারি জার্নালিস্ট অ্যালাইন্সের মুখপাত্র ফান্তাসির, প্রাইভেট ঐক্যেও প্রতিনিধি সাদিক আল আরমান, সাধারণ আলেম সমাজের প্রতিনিধি, বৈষম্যবিরোধী কওমী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সম্মেলন শেষে রাজধানীতে আগামী ১৫ জুলাই প্রতীকী কফিন মিছিলের ঘোষণা দেন জুলাই ঐক্যের সংগঠক এবি জুবায়ের।
আবির