
বর্তমান যুগে ক্যানসার একটি আতঙ্কের নাম হলেও, সময়মতো সনাক্ত করতে পারলে অনেকক্ষেত্রেই এটি প্রতিরোধযোগ্য এবং চিকিৎসাযোগ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোলন ক্যানসার ধীরে ধীরে শরীরে বিস্তার লাভ করে এবং এর পূর্বাভাস হিসেবে কিছু লক্ষণ ১৫ দিন বা তারও আগে থেকেই শরীরে দেখা দিতে পারে। সময়মতো সচেতন না হলে তা মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
নিচে তুলে ধরা হলো কোলন ক্যানসারের সেই অগ্রিম সতর্কতামূলক লক্ষণগুলো—
১. মলত্যাগের অভ্যাসে হঠাৎ পরিবর্তন
হঠাৎ করে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে এবং তা কয়েকদিন ধরে চললে তা সাধারণ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা না-ও হতে পারে। মলের আকৃতি সরু হয়ে যাওয়া বা অসম্পূর্ণ মলত্যাগের অনুভূতিও হতে পারে বিপদের ইঙ্গিত।
২. মলে রক্ত থাকা
উজ্জ্বল লাল বা গাঢ় রক্ত মলের সঙ্গে দেখা গেলে অনেকেই তা পাইলস বলে মনে করেন। কিন্তু নিয়মিত রক্ত দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৩. পেটে ক্র্যাম্প, ব্যথা বা গ্যাসজনিত অস্বস্তি
নাভির নিচের দিকে চাপের মতো অনুভূতি, ফুলে থাকা বা ব্যথা—এসব যদি নিয়মিত হয় তবে তা উপেক্ষা করা ঠিক নয়।
৪. অকারণে ওজন কমে যাওয়া
কোনো ডায়েট বা পরিশ্রম ছাড়াই হঠাৎ ওজন কমতে থাকলে তা হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ।
৫. সবসময় ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করা
রাতে ভালো ঘুমের পরও সারাদিন ধরে ক্লান্তিভাব থাকলে এবং তা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে তা শরীরে কিছু অসাধারণ ঘটনার ইঙ্গিত হতে পারে।
৬. মলের রঙ কালচে হয়ে যাওয়া
রক্ত মিশে গেলে মলের রং হয়ে যেতে পারে গাঢ় বাদামি বা কালো। এটি অন্ত্রের রক্তপাতের সংকেত হতে পারে।
৭. ক্ষুধামন্দা ও বমি ভাব
খাবারে আগ্রহ কমে যাওয়া, খাওয়ার পর অস্বস্তি বা বমিভাব থাকাও একটি লক্ষণ।
৮. অ্যানিমিয়া বা হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া
অন্তর্দৃষ্টিতে রক্তপাতের কারণে ধীরে ধীরে শরীরে রক্তের ঘাটতি তৈরি হয়, ফলে রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে।
৯. পেটে গাঁট বা অস্বাভাবিক কিছুর উপস্থিতি অনুভব করা
পেটের মধ্যে অস্বাভাবিক কোনো গাঁট অনুভব করলে দ্রুত পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
উপরের যেকোনো লক্ষণ যদি ১–২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তবে দেরি না করে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট বা অনকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ৪৫ বছর বয়সের পর থেকে রুটিন কোলনোস্কোপি স্ক্রিনিং বিশেষভাবে জরুরি, বিশেষত যাদের পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস রয়েছে।
প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় চিকিৎসা
ফাইবারযুক্ত খাবার, পর্যাপ্ত পানি, শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া এবং ধূমপান–অ্যালকোহল পরিহার করাই কোলন ক্যানসার প্রতিরোধের অন্যতম উপায়।
"কোনো লক্ষণকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। সময়মতো শনাক্ত করলে কোলন ক্যানসার নিরাময়যোগ্য,"— ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।