ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

ডিপ্রেশনের জন্য কোন থেরাপি উপযোগী? জানুন কার্যকর চিকিৎসার ধরন ও উপায়

প্রকাশিত: ০০:১২, ১৪ জুলাই ২০২৫

ডিপ্রেশনের জন্য কোন থেরাপি উপযোগী? জানুন কার্যকর চিকিৎসার ধরন ও উপায়

ডিপ্রেশন বা হতাশা একটি জটিল মানসিক অবস্থা, যা শুধু ওষুধের মাধ্যমে নয়, বিভিন্ন ধরণের থেরাপির মাধ্যমেও সাফল্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মানসিক সুস্থতা ফেরাতে এবং নেতিবাচক চিন্তাপ্রবণতা মোকাবিলায় থেরাপি এখন প্রমাণিত ও কার্যকর একটি পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত।

এক সময় মনে করা হতো, ডিপ্রেশন মূলত জৈবিক কারণে হয় এবং ওষুধই এর প্রধান চিকিৎসা। তবে আধুনিক নিউরোসায়েন্স ও গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ওষুধ ও সাইকোথেরাপি উভয়ই মস্তিষ্কের গঠনে পরিবর্তন আনে, এবং উভয়কেই জৈবিক চিকিৎসা হিসেবে ধরা যায়। ফলে, এখন অধিকাংশ গাইডলাইন অনুযায়ী ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে থেরাপি, একা বা ওষুধের পাশাপাশি, একটি গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর উপায়।

চলুন জেনে নিই, ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত থেরাপিগুলো কী কী এবং কোন পদ্ধতিগুলো আপনার মানসিক সুস্থতায় সহায়ক হতে পারে।

১. কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT)
CBT হলো ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় সবচেয়ে পরিচিত ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত একটি থেরাপি। এই পদ্ধতিতে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ও আচরণগুলো শনাক্ত করে সেগুলোর বিকল্প ইতিবাচক ভাবনা গড়ে তোলা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, CBT এবং ওষুধের সমন্বয়ে চিকিৎসা আরও বেশি কার্যকর হয় এবং এটি রিল্যাপ্স বা পুনরায় হতাশায় ভোগার ঝুঁকিও কমায়।

২. ইন্টারপারসোনাল থেরাপি (IPT)
যদি হতাশার মূল উৎস হয় সম্পর্কভিত্তিক সমস্যা, তবে IPT হতে পারে আদর্শ পন্থা। ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহব্যাপী এই স্বল্পমেয়াদি থেরাপিতে আপনি সম্পর্কের জটিলতা বোঝা, যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানো এবং সমর্থনমূলক পরিবেশ গঠনের কৌশল শিখতে পারবেন।

৩. মাইন্ডফুলনেস-ভিত্তিক থেরাপি
এই ধরণের থেরাপি আপনাকে বর্তমান মুহূর্তে থাকা, নিজেকে সহানুভূতির সঙ্গে গ্রহণ করা ও নেতিবাচক অনুভবকে প্রত্যক্ষ করতে শেখায়। মাইন্ডফুলনেস-বেইজড কগনিটিভ থেরাপি (MBCT) বা স্ট্রেস রিডাকশন থেরাপি (MBSR) ডিপ্রেশন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

৪. ডায়ালেকটিকাল বিহেভিয়ার থেরাপি (DBT)
DBT মূলত বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারের চিকিৎসার জন্য তৈরি হলেও এটি ডিপ্রেশন ও অন্যান্য মুড ডিসঅর্ডারেও কার্যকর। এটি ইমোশনাল রেগুলেশন, চাপ সহ্য করার ক্ষমতা ও সম্পর্ক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

৫. সাইকোডাইনামিক থেরাপি
ডিপ্রেশনের অন্তর্নিহিত অচেতন মানসিক দ্বন্দ্ব ও অতীত অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই থেরাপি আত্ম-উপলব্ধি বাড়ায়। এটি দীর্ঘমেয়াদে ডিপ্রেশনের গভীর কারণ খুঁজে পেতে সহায়ক।

ডিপ্রেশন চিকিৎসায় আরও কার্যকর কিছু কৌশল
থেরাপির পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট কৌশল ডিপ্রেশন মোকাবিলায় অতিরিক্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। যেমন:

বিহেভিয়ারাল অ্যাক্টিভেশন: প্রিয় কার্যকলাপে নিজেকে যুক্ত রাখা, যা মন ভালো করতে সাহায্য করে।
প্রবলেম সলভিং স্কিলস: সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলোর কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা।
মুড মনিটরিং: প্রতিদিনের মুড পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ট্রিগার চিহ্নিত করা।
গোল সেটিং: ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করে ধাপে ধাপে সেগুলো পূরণ করা।
কগনিটিভ রিস্ট্রাকচারিং: নেতিবাচক চিন্তা বদলে ইতিবাচক চিন্তা গড়ে তোলা।
মাইন্ডফুলনেস ও মেডিটেশন: মনোসংযোগের মাধ্যমে বর্তমান মুহূর্তে থাকা।
রিলাক্সেশন টেকনিকস: ডিপ ব্রিদিং, মাংসপেশির বিশ্রামসহ চাপ কমানোর পদ্ধতি।
গ্র্যাটিটিউড জার্নালিং: কৃতজ্ঞতাবোধের অভ্যাস গড়ে তোলা।

কখন থেরাপির পাশাপাশি ওষুধ প্রয়োজন?
যদি আপনার ডিপ্রেশনের উপসর্গ খুব তীব্র হয় বা শুধু থেরাপি যথেষ্ট না হয়, তখন ওষুধ বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। থেরাপি ও ওষুধের সমন্বিত চিকিৎসা অনেক সময় সবচেয়ে কার্যকর বলে বিবেচিত হয়।

এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার স্বাস্থ্যসেবাদাতার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা জরুরি।


ডিপ্রেশন আপনাকে দুর্বল করে দিতে পারে, তবে থেরাপি হতে পারে একটি নির্ভরযোগ্য সহায়, যা নেতিবাচক চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আপনাকে নতুনভাবে জীবন গড়তে সাহায্য করে।

সবার জন্য এক ধরনের থেরাপি উপযুক্ত নাও হতে পারে। তাই নিজস্ব চাহিদা ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই থেরাপি খুঁজে নেওয়াই হবে আপনার মানসিক সুস্থতার সেরা পথ।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/72za82n3

আফরোজা

×