
ছবি: সংগৃহীত
প্রকৃতির এক বিরল ও বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায়। ব্রেন ডেড (মস্তিষ্ক-মৃত) মায়ের গর্ভে টানা চার মাস বেড়ে উঠে জন্ম নিয়েছে এক নবজাতক। নাম রাখা হয়েছে ‘চান্স’, যার বাংলা অর্থ, “সম্ভাবনা”।
ঘটনাটি শুরু হয় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। মাথাব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩১ বছর বয়সী অন্তঃসত্ত্বা আদ্রিয়ানা নামের এক নারী। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পরদিন সকালে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, তার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে এবং তা অপসারণের কোনো সুযোগ নেই। তাকে ব্রেন ডেড ঘোষণা করা হয় অল্প সময়ের মধ্যেই।
চিকিৎসা বিজ্ঞান ও আইনের এক জটিল বাস্তবতায় তখন শুরু হয় এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের অধ্যায়। যদিও লাইফ সাপোর্টে থাকা ব্রেন ডেড রোগীর জন্য চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন সাধারণত থাকে না, তবে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আইনে গর্ভের সন্তানের হৃদস্পন্দন থাকলে ইচ্ছাকৃতভাবে মায়ের লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করা বেআইনি।
তাই আদ্রিয়ানার পরিবার চাইলেও তার লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করতে পারেনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনের দোহাই দিয়ে তাকে টানা ছয় মাস ধরে কৃত্রিম উপায়ে জীবিত রেখেছিল।
এই পুরো সময়টিতে মায়ের দেহে কৃত্রিমভাবে চালানো হয় শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন ও রক্ত সঞ্চালন। জরায়ু সচল রাখা হয়, যাতে গর্ভে থাকা ভ্রূণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।
অবশেষে ২০২৪ সালের জুন মাসে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেয় সন্তানটি। শিশুটির ওজন ছিল মাত্র দুই পাউন্ডেরও কম। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ওজন আরও বেশি হওয়ার কথা থাকলেও মৃত মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠায় তা হয়নি।
তবুও চিকিৎসকরা একে ‘অলৌকিক জন্ম’ বলছেন। শিশু চান্স এখন সুস্থ আছে, তবে তার ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা সময়ই বলে দেবে।
চান্সের জন্মের পর মা আদ্রিয়ানার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয় এবং তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনা শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে নয়, মানবিকতা, আইন ও প্রযুক্তির সম্মিলিত প্রয়োগের এক বিরল উদাহরণ হয়ে থাকবে। নতুন জীবনকে পৃথিবীতে আনার জন্য এক মৃতদেহের কৃত্রিম সচলতা ধরে রাখার এমন সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
চান্সের জন্ম যেন এক প্রতীক, মৃত্যুর বুক চিরে সম্ভাবনার আলো দেখা।
ছামিয়া