
বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ভাই-বোনদের মধ্যে প্রতিযোগিতা নতুন কিছু নয়। তবে টেনিসে সেরেনা ও ভেনাস উইলিয়ামস ছাড়া, এমন নজির খুব কমই আছে যেখানে দুজন ভাই একই বিশ্ব শিরোপার জন্য সরাসরি লড়ছেন।
স্পেনের কাতালোনিয়ার ছোট শহর সেরভেরার দুই ভাই মার্ক ও আলেক্স মার্কেজ সেই বিরল উদাহরণ। মটোজিপি’র চলতি মৌসুমে বর্তমানে শীর্ষ দুই অবস্থানে থাকা এই দুই ভাই ২২০ মাইল (৩৫৪ কিমি/ঘণ্টা) গতিতে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মোটরসাইকেল শিরোপার জন্য রেস করছেন।
ইনজুরি থেকে ফিরে আসার গল্প
ছয়বারের প্রিমিয়ার ক্লাস চ্যাম্পিয়ন মার্ক মার্কেজ ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো শিরোপা পুনরুদ্ধারের পথে। রেপসোল হোন্ডা ছাড়ার পর তিনি এখন ফ্যাক্টরি ডুকাটির হয়ে রেস করছেন, যাকে মটোজিপি’র ফারারি বলা হয়। কিন্তু কেউই আশা করেননি তার ছোট ভাই আলেক্স মার্কেজ ঠিক তার পেছনেই থাকবে।
২০১৪ ও ২০১৯ সালে যথাক্রমে মটো৩ ও মটো২ শিরোপা জয়ী আলেক্স এবার স্যাটেলাইট টিম গ্রেসিনি ডুকাটির হয়ে ২০২৪ সালের ফ্যাক্টরি বাইকে রেস করছেন। প্রথম নয়টি রেসে ছয়টি পডিয়াম ও একটি জয় তাকে শিরোপা প্রতিযোগিতার আসনে নিয়ে এসেছে।
আলেক্স বলেন, “এই বাইকটা প্রথম থেকেই আমার স্টাইলের সঙ্গে মানানসই ছিল। আমি নিজেকে খুব বেশি বদলাতে হয়নি। যখন রেসিংয়ে আনন্দ আসে, তখন গতি আপনাআপনি আসে।”
প্রতিদ্বন্দ্বিতা বনাম বন্ধন
তিন বছরের ছোট ভাই হলেও আলেক্স আকারে বড়, স্বভাবে হাসিখুশি ও সদা বিনয়ী। তিনি বলেন, “যখন তুমি জানো তোমার প্রতিপক্ষ তোমার ভাই, তখন প্রতিযোগিতা অন্যরকম। শুরুতে কেউ আমাকে গোনায় ধরেনি, সবাই ভাবছিল মার্ক আর পেকো (বাগনায়া)-র লড়াই হবে। এখন আমি সেখানে আছি।”
মার্ক এখন ফ্যাক্টরি টিমে থাকায় তার ওপর চাপও অনেক বেশি। আলেক্স বলেন, “আমার হারানোর কিছু নেই, কিন্তু তার আছে। ফ্যাক্টরি টিমে থাকলে জিততেই হবে। আমরা পুরনো বাইকে রেস করছি, আমাদের লক্ষ্য পডিয়ামে উঠা—শিরোপা নয়। কিন্তু আমরা সেটা করছি।”
তবে আলেক্স বলেন, হেরে যাওয়াটাই খেলাধুলার বাস্তবতা। “জীবনে সবচেয়ে বড় শিক্ষা আমি পেয়েছি কঠিন দিনগুলো থেকে। এখন প্রতিটি সফল মুহূর্তকে আমি শেষ মুহূর্ত ধরে উপভোগ করি।”
ভাইয়ের বেদনার দিনগুলো
মার্কের জন্য সময়টা ছিল আরও কঠিন। ২০২০ সালে ডান হাত ভেঙে দীর্ঘ চিকিৎসা, চোখে ডাবল দেখার সমস্যা—ডিপ্লোপিয়া—সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারই হুমকির মুখে ছিল। আলেক্স বলেন, “ও তখন অন্য মানুষে পরিণত হয়েছিল, সবাইকে রাগ দেখাতো। আমরা বলেছিলাম, ‘তুমি কেন তোমার পাশে থাকা মানুষদের ওপর রাগ দেখাচ্ছো?’”
শেষমেশ মার্ক অস্ত্রোপচারে ফিরে আসে, শুধুমাত্র রেস নয়, জীবনকে সহজ করতে।
কাছাকাছি থাকা, দূরত্ব নয়
দুই ভাই একই মোটরহোমে থাকেন, একই জিমে ট্রেনিং করেন, একই বাড়িতে থাকেন। আলেক্স বলেন, “আমরা আগের চেয়েও বেশি সময় একসঙ্গে কাটাই। প্রতিদিন জিমে, বাইসাইকেল রাইডে প্রতিযোগিতা চলে—‘তাকে হারাতে চাই।’ এটা ভালো এক ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতা।”
তাদের বাবা জুলিয়া মার্কেজ বলেন, “এই প্রতিযোগিতা তাদের আরও কাছাকাছি এনেছে। এটা আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি।”
শেষ কোণার হিসাব
রেস শেষদিকে গড়ালে কি একজন আরেকজনকে সাহায্য করবেন? জুলিয়া বলেন, “মাঝমৌসুমে না, কেউ কাউকে ছাড় দেবে না। তবে শেষদিকে, পরিস্থিতি ভিন্ন হলে পরিবার হিসেবে সহযোগিতা করতেও পারে।”
ডুকাটি টিম ম্যানেজার দাভিদে টারদোজ্জি বলেন, “শেষ কোণায় গেলে কেউ কাউকে ছাড় দেবে না। দুই ভাইয়ের সম্পর্ক অনন্য, কিন্তু হেলমেট পরার পর তারা শুধু জয়ের কথা ভাববে।”
মার্ক বর্তমানে ৬৮ পয়েন্টে এগিয়ে, কিন্তু ১২টি রেস বাকি। ইতিহাস বলছে—পয়েন্টের বড় ব্যবধানও পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব। আর ভাইয়ের সঙ্গে শিরোপার জন্য লড়াইয়ের এই রোমাঞ্চ সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে।
পিতা জুলিয়া বলেন, “তারা ঝগড়া করলেও পাঁচ মিনিটের বেশি টেকে না। তারপর আবার আগের মতো—হাসিমুখে ফিরে আসে।”
এই দুই ভাইয়ের গল্প শুধু রেসিং নয়, পারিবারিক বন্ধনেরও জয়গাথা।
Jahan