ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

মূত্রথলির ক্যান্সারের ৫টি প্রাথমিক লক্ষণ, যা প্রায়ই নজর এড়িয়ে যায়

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১৩ জুলাই ২০২৫

মূত্রথলির ক্যান্সারের ৫টি প্রাথমিক লক্ষণ, যা প্রায়ই নজর এড়িয়ে যায়

ছবি: সংগৃহীত।

মূত্রথলির ক্যান্সার সাধারণত এমন এক রোগ হিসেবে পরিচিত, যার লক্ষণ অত্যন্ত স্পষ্ট—যেমন প্রস্রাবে রক্ত, প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা আকস্মিক ওজন হ্রাস। কিন্তু বাস্তবে, এই ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো অনেক সময় এতটাই সূক্ষ্ম যে তা দৈনন্দিন জীবনে খুব সহজেই উপেক্ষিত থেকে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সময় এই লক্ষণগুলোকে আমরা সামান্য সংক্রমণ, পানিশূন্যতা বা মানসিক চাপের উপসর্গ ভেবে এড়িয়ে যাই। অথচ শরীরের এই ‘নীরব বার্তাগুলো’ শুনতে পারলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

নিচে এমন ৫টি উপেক্ষিত লক্ষণের কথা জানানো হলো, যেগুলো মূত্রথলির ক্যান্সারের প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে:

১. প্রস্রাবের প্রবাহে পরিবর্তন:
ধীরে ধীরে প্রস্রাবের গতি কমে যাওয়া, মাঝপথে থেমে যাওয়া, অথবা পুরোপুরি মূত্রত্যাগ না হওয়ার অনুভূতি—এই পরিবর্তনগুলো কেবল বয়সজনিত নয়, বরং মূত্রথলির ক্যান্সারের সূচনা পর্যায়ের লক্ষণও হতে পারে।

বিশেষ করে এই লক্ষণ যদি ধীরে ধীরে দেখা দেয় এবং প্রস্রাবের সংক্রমণ বা প্রোস্টেটের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত না হয়, তাহলে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। নারীদের ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিবর্তনগুলো আরও বেশি উপেক্ষিত হয়, যা দেরিতে রোগ শনাক্তের একটি বড় কারণ।

২. পেটে ভারি অনুভব বা কোমরে চাপ:
অনেকেই এটিকে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, খারাপ ভঙ্গিমায় বসা বা নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক সংক্রান্ত সমস্যা বলে ধরে নেন। কিন্তু যদি তলপেটে বা কোমরের নিচে একটি স্থায়ী চাপ বা ভারি অনুভূতি থাকে—বিশেষ করে শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াও—তবে তা মূত্রথলির প্রাচীর বা আশেপাশের লসিকাগ্রন্থিতে টিউমারের চাপের কারণে হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত তীব্র হয় না, বরং এক ধরনের টানা অস্বস্তি দেয়, যা আমরা অনেক সময় ভুল ব্যাখ্যা করি।

৩. ক্যাফেইন বা অ্যালকোহলের প্রতি হঠাৎ অরুচি:
হঠাৎ করে চা-কফি বা অ্যালকোহল পান করার পর অস্বস্তি লাগা, প্রস্রাবের চাপ বা পেট মোচড়ানোর মতো অনুভূতি হলে সেটিকে শুধু সংবেদনশীল মূত্রথলি বা সহ্যক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলাফল হিসেবে না দেখে সতর্ক হওয়া দরকার।

ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল মূত্রথলিকে উত্তেজিত করে। যদি এগুলোর প্রতিক্রিয়া নতুনভাবে এবং নিয়মিত দেখা দিতে শুরু করে, তবে তা মূত্রথলির ভিতরের কোষে অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে। অনেক প্রাথমিক ক্যান্সার রোগী এমন আচমকা সংবেদনশীলতার কথা জানিয়েছেন, যদিও এটি এখনও প্রচলিত চেকলিস্টে উল্লেখ থাকে না।

৪. প্রস্রাবে অস্বাভাবিক গন্ধ:
প্রস্রাবে তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী গন্ধ দেখা দিলে তা সাধারণত খাদ্যাভ্যাস বা পানিশূন্যতার কারণে ভেবে এড়িয়ে যাই। কিন্তু যদি সেই গন্ধটি ধাতব বা রাসায়নিক ধরনের হয় এবং তা জলপান বা খাদ্য পরিবর্তনেও না কমে, তবে তা মূত্রথলিতে কোষের অস্বাভাবিক কার্যকলাপের ইঙ্গিত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু ক্যান্সার-সম্পর্কিত সংক্রমণ মূত্রে অ্যামোনিয়া বা অন্যরকম গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যদি তা নতুন, নিয়মিত ও অপরিচিত হয়, তবে তা অবহেলা করা উচিত নয়।

৫. সংক্রমণ ছাড়া প্রস্রাবের সময় হালকা জ্বালাপোড়া:
যখন কোনো সংক্রমণের প্রমাণ নেই, কিন্তু তবুও প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভূত হয়—তখন সেটিকে শুধু পানিশূন্যতা বা এককালীন সমস্যা ভেবে না দেখে সতর্ক হওয়া উচিত।

অনেক সময় ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ মূত্রথলিতে এমন এক ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের (UTI) মতো মনে হয়। কিন্তু যদি সেই "UTI" অ্যান্টিবায়োটিকে সাড়া না দেয়, তবে সেটি আদতে ক্যান্সারের লক্ষণও হতে পারে।

এই ধরনের লক্ষণগুলো একা বা একাধিক একসাথে দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো রোগ শনাক্ত করা গেলে মূত্রথলির ক্যান্সারের চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।

মিরাজ খান

×