ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

সকালবেলা নিয়মিত প্রস্রাব দেরি করা কি বিপদজনক?

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ১৩ জুলাই ২০২৫

সকালবেলা নিয়মিত প্রস্রাব দেরি করা কি বিপদজনক?

ছ‌বি: প্রতীকী

মানবদেহে প্রতিটি অঙ্গের নির্দিষ্ট কার্যকারিতা ও নিয়ম রয়েছে, যা মেনে চললে শরীর সুস্থ থাকে এবং নানা জটিলতা এড়ানো যায়। মূত্রত্যাগ, অর্থাৎ প্রস্রাব করা, সেইসব স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কাজগুলোর একটি, যা নিয়মমাফিক না হলে শরীরে তৈরি হতে পারে মারাত্মক সমস্যা। অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে নানা কারণে প্রস্রাব করা এড়িয়ে যান বা দেরি করেন—কেউ হয়তো অলসতাবশত, কেউ বা ব্যস্ততার কারণে। কেউ আবার চা-কফি না খেয়ে, কিছু খাওয়া-দাওয়া না করে বাথরুমে যেতে চান না। আবার কেউ কেউ ফোন, টিভি বা সামাজিক মাধ্যমে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে তারপর প্রস্রাব করতে যান। কিন্তু এমন অভ্যাস যদি নিয়মিত হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তা শরীরের জন্য হতে পারে বিপদজনক।

ঘুমের সময় শরীরের অন্যান্য কার্যকলাপের মতো মূত্র নিঃসরণও ধীরগতিতে হয়, কারণ রাতে কিডনি কম পরিমাণে প্রস্রাব তৈরি করে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্রাব জমে থাকার ফলে সকালে বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হয় বেশি করে অনুভব। এই সময় দেরি না করে প্রস্রাব করে দেওয়াই ভালো। কারণ ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের মূত্রাশয় সাধারণত পূর্ণ থাকে। এটি দেহের একটি স্বাভাবিক সংকেত। এই সংকেত উপেক্ষা করলে কিছু সময়ের জন্য হয়তো অস্বস্তি অনুভব না হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি নানা সমস্যার জন্ম দিতে পারে।

সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হলো ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI)। দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্রাব আটকে রাখলে মূত্রাশয়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। কারণ প্রস্রাব জমে থাকলে তা ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তার উপযোগী একটি পরিবেশ তৈরি করে, যা সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এমন সংক্রমণ প্রথমে মূত্রাশয়ে থাকলেও পরে তা কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা হতে পারে ভয়াবহ।

দ্বিতীয়ত, নিয়মিত দেরিতে প্রস্রাব করলে কিডনির উপর বাড়তি চাপ পড়ে। কিডনি মূত্র তৈরি করে তা মূত্রাশয়ে পাঠায়, কিন্তু সেখানে যদি জায়গা না থাকে বা তা দীর্ঘক্ষণ ধরে আটকে রাখা হয়, তাহলে কিডনিকে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে অসুবিধা হয়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

তৃতীয়ত, মূত্রাশয়ের নিজস্ব পেশিগুলোর ওপরও এর প্রভাব পড়ে। নিয়মিত প্রস্রাব আটকে রাখলে মূত্রাশয়ের পেশিগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ফলে একসময় প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কমে যেতে পারে বা পেশির জোর হারিয়ে ফেলায় ‘ওভারফ্লো ইনকন্টিনেন্স’ দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ তখন আর নিজের ইচ্ছায় মূত্র ধরে রাখা বা পুরোপুরি মূত্র ত্যাগ করা সম্ভব না-ও হতে পারে।

এছাড়া সকালের প্রথম প্রস্রাব দীর্ঘ সময় আটকে রাখলে পেটের নিচে চাপ ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, যার প্রভাবে দিনভর ক্লান্তি, মাথাব্যথা বা মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। অনেকে হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন, দেরিতে প্রস্রাব করলে ঘাড়-কোমরে ব্যথা বা স্নায়ুবিক চাপও সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে যাদের প্রোস্টেটের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এই অভ্যাস আরও বেশি ক্ষতিকর। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এমন সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সকালবেলা শারীরিক পরিচর্যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি হলো মূত্রত্যাগ। এটি শুধু শরীরকে আরাম দেয় না, বরং একধরনের মানসিক স্বস্তিও এনে দেয়। সকালে দেরিতে প্রস্রাব করার অভ্যাসটি অনেক সময় আলস্য, হতাশা বা মানসিক অবসাদেরও প্রতিচ্ছবি হতে পারে। তাই শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সকালে নিয়মিত প্রস্রাব দেরি করার অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে দেহে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। সাময়িক অজুহাত দিয়ে এটি এড়িয়ে যাওয়া নিজের শরীরের প্রতি এক ধরনের অবহেলা। তাই ঘুম থেকে উঠে যত দ্রুত সম্ভব প্রস্রাব করে নেওয়া উচিত, যা আমাদের কিডনি, মূত্রাশয় ও স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়ক। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের একটি ছোট অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মূত্রত্যাগের নিয়ম মেনে চলা— বিশেষ করে দিনের শুরুতে।

এম.কে.

×