ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

হাঁপানি বা সাইনাস সমস্যা কমানোর ঘরোয়া উপায়

প্রকাশিত: ০৯:২২, ১৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৯:২৪, ১৩ জুলাই ২০২৫

হাঁপানি বা সাইনাস সমস্যা কমানোর ঘরোয়া উপায়

ছ‌বি: প্রতীকী

হাঁপানি ও সাইনাস উভয়ই শ্বাসতন্ত্রের রোগ, যেগুলো অনেক সময় একে অপরের সঙ্গে জড়িত হয়ে দেখা দেয়। হাঁপানিতে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, বুক ধড়ফড় করে, শ্বাসের সময় ঘড়ঘড় শব্দ হয়, আর সাইনাসে হয় নাক বন্ধ, মাথাব্যথা, চোখ ও নাকের চারপাশে চাপ অনুভব, ও নাক দিয়ে সর্দি পড়া। এই সমস্যাগুলোর জন্য ওষুধের পাশাপাশি ঘরোয়া কিছু পদ্ধতিও উপকারী হতে পারে। তবে যেকোনো ঘরোয়া উপায় ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।

প্রথমেই বলি, হাঁপানি ও সাইনাসের সমস্যা অনেকাংশেই পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ধুলাবালি, ঠান্ডা আবহাওয়া, ধোঁয়া, ফুলের পরাগ, অ্যালার্জেন জাতীয় পদার্থ এগুলোর সংস্পর্শে এলে এই সমস্যাগুলোর প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই এসব এড়িয়ে চলাই প্রথম প্রতিরোধ। প্রতিদিন ঘর পরিষ্কার রাখা, বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার নিয়মিত ধোয়া, পশুপাখির লোম থেকে দূরে থাকা, ধূমপান এড়িয়ে চলা এবং ঘরবাড়িতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা বেশ কার্যকর হতে পারে।

গরম পানির ভাপ নেওয়া হাঁপানি ও সাইনাসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী। এক বালতি বা পাত্রে গরম পানি নিয়ে মাথায় তোয়ালে দিয়ে ঢেকে ভাপ নিলে নাকের জমে থাকা শ্লেষ্মা তরল হয়ে বেরিয়ে আসে। এটি সাইনাস খোলায় সাহায্য করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ হয়। ভাপে ইউক্যালিপটাস অয়েল বা পুদিনা পাতার নির্যাস দিলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে কারও যদি ইউক্যালিপটাস বা মেনথল জাতীয় জিনিসে অ্যালার্জি থাকে, তাহলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

আদা ও মধুর মিশ্রণ হাঁপানি ও সাইনাসে বেশ উপকারী। আদা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা শ্বাসনালির ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে হালকা গরম পানিতে আদা কুচি দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে তারপর ছেঁকে তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। এটি গলা পরিষ্কার রাখে, শ্বাসনালিকে শান্ত রাখে এবং সাইনাসের ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে।

লবণ পানি দিয়ে নাক ধোয়া (নাসাল ওয়াশ) সাইনাসে অত্যন্ত কার্যকর। একটি নেটি পট বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করে গরম লবণ পানি দিয়ে প্রতিদিন একবার বা দুবার নাক পরিষ্কার করলে জমে থাকা শ্লেষ্মা বের হয়ে যায় এবং সাইনাসে প্রদাহ কমে। তবে পানি যেন পরিষ্কার ফুটানো ও ঠান্ডা হওয়া জরুরি, নয়তো বিপরীত প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

হাঁপানির জন্য কালোজিরা ও মধুর সংমিশ্রণ বহু আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কালোজিরাতে রয়েছে থাইমোকুইনন নামে একটি উপাদান যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন সকালে এক চামচ কালোজিরা গুঁড়ো ও এক চামচ মধু খালি পেটে খেলে শ্বাসতন্ত্রে আরাম পাওয়া যায়। এছাড়া কালোজিরা তেল দিয়ে বুকে মালিশ করলেও উপকার পাওয়া যায়।

তুলসি পাতা ও মধু দিয়ে তৈরি চা হাঁপানি ও সাইনাস উভয়ের ক্ষেত্রেই ভালো কাজ করে। তুলসি পাতা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে, শ্লেষ্মা কমায় এবং ইমিউনিটি বাড়ায়। দিনে দুইবার তুলসি পাতা ফুটিয়ে, তাতে মধু মিশিয়ে পান করলে উপকার পাওয়া যায়। একইভাবে লেবু ও মধুর উষ্ণ পানীয়ও উপকার দেয়, কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন C যা শ্বাসনালির সুরক্ষায় সহায়ক।

সাইনাসের কারণে মাথা ও মুখে যে চাপ অনুভব হয়, তা হালকা ম্যাসাজের মাধ্যমে অনেকটা কমানো যায়। গরম পানি দিয়ে ভেজা কাপড় মুখের চারপাশে কিছুক্ষণ ধরে রাখলে সাইনাস অঞ্চলের শ্লেষ্মা তরল হয় এবং আরাম পাওয়া যায়। একইসঙ্গে গালের হাড়, নাকের দুই পাশে ও কপালে আলতো ম্যাসাজ রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং চাপ কমায়।

ঘরোয়া পদ্ধতির মধ্যে খাওয়ার দিক থেকেও কিছু সতর্কতা গুরুত্বপূর্ণ। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার অনেক সময় শ্লেষ্মা সৃষ্টি করে বলে মনে করা হয়, বিশেষ করে সাইনাস বা হাঁপানি থাকলে। তাই কিছু ক্ষেত্রে এসব এড়িয়ে চলা ভালো। ভাজা-পোড়া ও ঠান্ডা খাবার পরিহার করা উচিত, কারণ এগুলো শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা বাড়াতে পারে।

যোগব্যায়াম ও প্রাণায়াম শ্বাসনালির জন্য চমৎকার। প্রতিদিন সকালে ভ্রমণ, ধ্যান, অনুলোম-বিলোম, ভস্ত্রিকা প্রভৃতি ব্যায়াম করলে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ে, স্ট্রেস কমে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ হয়। হাঁপানির রোগীদের ক্ষেত্রে প্রাণায়াম বিশেষ উপকারী বলে বহু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।

হাঁপানি ও সাইনাসের জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি দীর্ঘমেয়াদে রোগ প্রতিরোধে কার্যকর হলেও যদি উপসর্গ খুব বেশি হয় বা নিয়মিত হয়, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ঘরোয়া উপায়গুলোর সঠিক প্রয়োগ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যসচেতনতা বজায় রাখলে অনেকাংশে এসব রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব।

এম.কে.

×