স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস বলেছেন, এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ছাড়া উপায় নেই। এ ছাড়া আমরা আগেও বলেছি আগামী সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, নির্বাচন করতে হলে সঠিক, নিরাপদ ও তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। জনগণ ভোটাধিকার ফেরত চায়। এই দেশের মানুষ বর্তমান সরকারের অনেক নির্যাতন সহ্য করেছে। আর না। এবার জনগণ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবার তারা গণতন্ত্র মুক্ত করে ঘরে ফিরবে। মঙ্গলবার খুলনায় রোডমার্চের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ৪৮ ঘণ্টার সময় দিয়েছেন আমাদের মহাসচিব। এই সময়ের মধ্যে বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ না পাঠালে ভয়াবহ অবস্থা হবে। আওয়ামী লীগ সরকার পারে শুধু মানুষ হত্যা করতে। কিছু লোককে গ্রেপ্তার করতে। আদালতে শুধু বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা। অন্য কোনো মামলা নেই। সারাবছর বিএনপি নেতাকর্মীদের আদালতে হাজিরা দিতে হয়।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে রোডমার্চ শেষে খুলনায় বিএনপির সমাবেশ শুরু হয় রাত ৮টায়। নগরীর শিববাড়ী মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যোগদান করেন রাত ৯টায়। এদিন দুপুর থেকে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। বিকেল ৩টার দিকে শুরু হয় জাসাসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর পর স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উঠলে শুরু হয় সমাবেশের মূলপর্ব। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু ও নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. ওবায়দুল ইসলাম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সহপ্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, উপ কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ আলম খান বাবু, সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহত্রাণ ও পূনর্বাসন সম্পাদক নেওয়াজ হালিমা আরলী, সহ পরিবার ও কল্যাণ সম্পাদক জাহানারা বেগম। সমাবেশ পরিচালনা করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন এবং জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পি।
এর আগে বেলা ১১টায় ঝিনাইদহ থেকে শুরু হয়ে রোডমার্চটি মাগুরা-যশোর-নওয়াপাড়া-ফুলতলা ঘুরে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে আসে। রোডমার্চ ও সমাবেশকে ঘিরে ব্যপক প্রস্তুতি নেয় খুলনা বিএনপি। তোরণ ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে যায় পুরো শহর। গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়ক দ্বীপগুলোকে সাজানো হয় রঙিন আলোয়। জমায়েতে বিপুল সংখ্যক উপস্থিতি ঘটাতে রাতভর থানা ও ওয়ার্ড চষে বেড়িয়েছেন দলের নেতারা।
সরকারের অবস্থা হীরক রাজার মতোই হবে ॥ এর আগে ঝিনাইদহে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। কোনো রাজা-রানীর রাজত্ব করার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করিনি। দেশে আজ কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা হয়েছে। দেশ আজ হীরক রাজার দেশে পরিণত হয়েছে। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। এখন দড়ি ধরে টান মারার সময় এসেছে। বর্তমান সরকারের অবস্থা হীরক রাজার মতোই হবে।
নিজস্ব সংবাদদাতা ঝিনাইদহ থেকে জানান, মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইদহ শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে খুলনা অভিমুখে রোডমার্চ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে পৌঁছাতে আমাকে আড়াই কিলোমিটার জনসমুদ্র পাড়ি দিতে হয়েছে। দেখে মনে হয়েছে আমরা প্রাক বিজয় উৎসব পালন করছি। সারা দেশের মানুষ আজ আবেগতাড়িত, উদ্বেলিত। অন্যদিকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বেদনাহত। তিনি বলেন, আমি ম্যাডামকে বলে এসেছি সারা দেশের মানুষ আজ আপনার জন্য চিন্তিত। বাংলাদেশের জন্য আপনি যা করেছেন তা মানুষ ভুলবে না। মুহুর্মুহু করতালি ও স্লোগানের মধ্যে মির্জা আব্বাস বলেন, দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে এই সরকারকে বাধ্য করা হবে। একদফার আন্দোলন চূড়ান্ত করেই দেশের মানুষ ঘরে ফিরবে ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির খুলনা অভিমুখে রোডমার্চকে ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতাদের মিলন মেলায় পরিণত হয় ঝিনাইদহ। সর্বত্রই উচ্ছ্বাস আর আড়ম্বর পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে ঝিনাইদহ ছাড়াও কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে মঙ্গলবারের রোডমার্চকে ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে।
নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে মাগুরায় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় রোডমার্চ মাগুরায় পৌঁছায়। এই সময় সড়কের দুপাশে দাঁড়িয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা হাত নেড়ে তাদের স্বাগত জানায়। ঝিনাইদহ হয়ে রোডমার্চ মাগুরায় প্রবেশ করে। রোডমার্চে মোটর সাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাকে করে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।