ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১

বাংলাদেশ

বাংলাদেশ বিভাগের সব খবর

মেঘনায় তুলাতুলির দেড় কিমি রাস্তার বেহাল দশা, ভোগান্তি

মেঘনায় তুলাতুলির দেড় কিমি রাস্তার বেহাল দশা, ভোগান্তি

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার তুলাতুলি তিন রাস্তার মোড় থেকে প্রাইমারি স্কুল মোড় হয়ে বাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তাটি বছরের পর বছর ধরে সংস্কারের অপেক্ষায় রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি এলাকার শত শত মানুষের দৈনন্দিন চলাচলের প্রধান মাধ্যম হলেও এর বেহাল অবস্থার কারণে নিত্যদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে তিন রাস্তার মোড় থেকে ব্রিজ পার হয়ে তুলাতুলী প্রাইমারি স্কুল মোড় পর্যন্ত অংশটি এখনো পাকাকরণ হয়নি। দীর্ঘ কয়েক বছর পূর্বে ইট বিছানো হলেও বর্তমানে তা অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে। এই পরিস্থিতিতে রাস্তায় যানবাহন চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে অটোরিক্সা ও সিএনজিচালিত গাড়ি চালকরা এই পথে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। তুলাতুলী এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, আমাদের প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে বাজারে যেতে হয়। কিন্তু রাস্তাটি এতটাই খারাপ যে কোনো গাড়ি যায় না। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে যেতে হয়, খুবই কষ্টকর। এ ছাড়াও এলাকার বেশিরভাগ মানুষ তুলাতুলী বাজারে যাতায়াত করেন এই রাস্তা দিয়ে। কিন্তু রাস্তার দুরবস্থার কারণে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, জরুরি প্রয়োজনে এই রাস্তায় ডেলিভারি রোগী বা যে কোনো রোগী পরিবহন করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুরবস্থা তাদের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে মেঘনা উপজেলা প্রকৌশলী সাবরীন মাহফুজ জানান, তুলাতুলী তিন রাস্তার মোড় থেকে বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো শীর্ষক প্রকল্পের আসন্ন চতুর্থ পর্যায়ের ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে প্রাক্কলন পাঠিয়ে দ্রুত কাজ বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তাঁতপল্লির সংগ্রামী মানুষের গল্প

তাঁতপল্লির সংগ্রামী মানুষের গল্প

সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়ন। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে যাওয়ার সময় হঠাৎ কানে আসে ঠুনঠুন শব্দ। উৎস খুঁজতে একটি বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখা মেলে আল্লাদী বেগমের সঙ্গে। বয়স ৫৫, অথচ জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সংগ্রামে ভরা। আল্লাদী বেগম জানালেন, গত ২৫ বছর ধরে তিনি শাড়ি তৈরির সূতা প্রস্তুত করছেন। এ কাজ থেকে সাপ্তাহিক আয় হয় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। এ সামান্য আয়ে চলছে তিন সদস্যের পরিবার। তার একটি মাত্র ছেলে, পড়ে কলেজে। তার পড়াশোনার খরচ চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। তিনি আরও জানান, স্থানীয় তাঁতকল মালিক আব্দুল কুদ্দুসের ২০টি তাঁতকলের জন্য প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ পিস শাড়ির সুতা পেঁচিয়ে দেন। এ ছাড়াও সুতা ছিঁড়ে গেলে তা জোড়া দিতে হয়। কঠোর পরিশ্রম করে তিনি জীবনের চাকা চালিয়ে নিচ্ছেন। অন্য একটি বাড়িতে ঢুকতে দেখা মেলে ১০ বছরের শিশু সিফাত হোসেনের। সিফাত আগে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত, কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে এখন সুতা পেঁচানোর কাজে যুক্ত। বাবা-মার কষ্ট কমাতে কাজ করে। যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসারের খরচ কিছুটা মেটে বলেও জানায় সিফাত। এদিকে, নবম শ্রেণির ছাত্র ইমরান আলীও তাঁতকলে কাজ করছে। ইমরান জানায়, স্কুলের পর সুতা তৈরির কাজ করি। এতে সংসারের কিছুটা অভাব মেটে। তাঁতপল্লীর মানুষগুলো কঠোর পরিশ্রম করে জীবনের ঘানি টানছে। শৈশবে শ্রমের বোঝা তাদের হাসিখুশি জীবন কেড়ে নিয়েছে। প্রয়োজন সরকারি সহায়তা ও সামাজিক সচেতনতা, যা এসব সংগ্রামী মানুষের জীবনমান উন্নত করতে পারে। সাটুরিয়ার ইউএনও ইকবাল হোসেন বলেন, শিশুদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করানো আইনত দ-নীয়। আমরা শিশুদের সুরক্ষায় কাজ করছি।

নড়বড়ে সাঁকোই পারাপারের ভরসা

নড়বড়ে সাঁকোই পারাপারের ভরসা

চাটমোহরে নিমাইচড়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করত নদীর বহরমপুর-মির্জাপুর নদী ঘাটে হয়নি ব্রিজ। ব্রিজের অভাবে নদীর পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ের প্রায় চৌদ্দটি গ্রামের মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বছরের পর বছর। বছরের প্রায় আট মাস নৌকায় আর বাকি চার মাস বাঁশের সাঁকোতে অতি কষ্টে নদী পারাপার হতে হচ্ছে। বহরমপুর ও বেলগাছি এ দুটি গ্রামের চারপাশেই নদী থাকায় গ্রাম দুটি উন্নয়ন বঞ্চিতও হচ্ছে। জানা গেছে, নদীর পশ্চিমপাড়ে বিন্যাবাড়ি, গৌড়নগর, করকোলা, বরদানগর, চিনাভাতকুর, বহরমপুরসহ আর বেশকিছু গ্রাম রয়েছে। পূর্বপাড়ের মির্জাপুরে রয়েছে নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদ, মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, নিমাইচড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ব্যাংকসহ এলাকার বিখ্যাত মির্জাপুর হাট। এছাড়া আরও বেশকিছু গ্রামের অবস্থান নদীর পূর্বপাড়ে। বিভিন্ন প্রয়োজনে নদীর পশ্চিমপাড়ের মানুষকে পূর্বপাড়ে এবং পূর্বপাড়ের মানুষকে পশ্চিমপাড়ে যাতায়াত করতে হয়। নদী পারাপারে দশ-বারোটি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে বর্ষাকালে নৌকায় আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকোয় ভরসা রাখতে হচ্ছে। বহরমপুর গ্রামের এহিয়া আলী জানান, বর্ষাকালে এ এলাকার মানুষকে খেয়া নৌকার অপেক্ষায় নদীপাড়ে অপেক্ষা করতে হয়। নদীর পানি কমে গেলে বাঁশের সাঁকো দেওয়া হয়। এ সময় সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয় তাদের। অসুস্থ রোগী, সন্তানসম্ভবা মাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। শিশু, বৃদ্ধরা ও বিড়ম্বনার শিকার হন নদী পারাপারের সময়। গৌড়নগর গ্রামের মজিবর রহমান জানান, বগালালী ও মরা করতোয়া নদীর ওপর বহরমপুর-মির্জাপুর ব্রিজ না হওয়ায় কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষকে প্রতিদিন কষ্ট করতে হচ্ছে।  চাটমোহর উপজেলা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ঊর্ধ্বতন দপ্তরে ৮টি সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো আছে। তার মধ্যে এ সেতুর প্রস্তাবনাও রয়েছে। এখনো সমীক্ষা, যাচাই-বাছাই হয়নি। আশা করছি আগামীতে জনগুরত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সেতু নির্মিত হবে।