ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

কটিয়াদীতে বাড়ছে ভুয়া ফেসবুক আইডির দৌরাত্ম্য: বাড়ছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা!

আবু সালেহ মো. হামিদুল্লাহ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৯:৫৫, ৩ জুলাই ২০২৫

কটিয়াদীতে বাড়ছে ভুয়া ফেসবুক আইডির দৌরাত্ম্য: বাড়ছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা!

ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলায় দিন দিন যেন ভুয়া ফেসবুক আইডির দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এসব ভুয়া অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, যা সোশ্যাল মিডিয়ার মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে'র পরিবেশকে ক্রমশ প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। এর ফলে সমাজে একদিকে যেমন ব্যক্তিগত হয়রানি বাড়ছে, তেমনি অন্যদিকে সমাজে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা ব্যপকভাবে দেখা দিয়েছে।
কেন বাড়ছে ভুয়া ফেসবুক আইডির এই দৌরাত্ম্য?

বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হওয়া সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হওয়া সত্ত্বেও, ভুয়া অ্যাকাউন্ট ফেসবুকের জন্য বহুদিন ধরেই বড় সমস্যা।
প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক প্রসারের ফলে যে কেউ চাইলেই সহজে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলতে পারছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই আইডিগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে অপপ্রচার, গুজব ছড়ানো, ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং সাইবার বুলিংয়ের মতো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে। বর্তমানে সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই ভুয়া আইডি তৈরি করে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। যা সামাজিক সম্প্রীতি ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে।

যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভুয়া ফেসবুক আইডির দৌরাত্ম্যে:

ব্যক্তিগত হয়রানি ও সম্মানহানি: ভুয়া ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে অনেকেই অন্যের নামে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বা আপত্তিকর মন্তব্য করছে, যা ব্যক্তিজীবনে ব্যাপক ক্ষতি ডেকে আনছে।

গুজব ও অপপ্রচার: এসব আইডি থেকে ছড়ানো গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে। অনেক সময় এর ফলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতিও ঘটতে দেখা যাচ্ছে।

সাইবার বুলিং: স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষ সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

সামাজিক বিভেদ: ভুয়া ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক সম্প্রীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। এ
থেকে প্রতিকারে প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ
এই ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, স্থানীয় প্রশাসন, এবং সচেতন নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্রিয়তা: সাইবার ক্রাইম দমনে পুলিশ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে। ভুয়া ফেসবুক আইডি শনাক্তকরণ ও এর পেছনের ব্যক্তিদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে হবে।

গণসচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষকে ভুয়া ফেসবুক আইডি সম্পর্কে জনসচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে এবং তাদের সাইবার সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় জ্ঞান সম্পর্কে সঠিক দিতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে তাদের প্ল্যাটফর্মে ভুয়া ফেসবুক আইডির বিস্তার রোধে আরও কঠোর নীতি গ্রহণ করতে হবে এবং দ্রুত রিপোর্টকৃত ফেসবুক আইডিগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা: পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষার্থীদের সাইবার নৈতিকতা সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে এবং তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
ভুয়া আইডির এই লাগামহীন বিস্তার কটিয়াদীসহ সারা দেশেই সামাজিক পরিবেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া সুস্থ ও নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

মেটা'র তথ্যমতে, ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী ফেসবুকে সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩০০ কোটির (৩ বিলিয়ন) গণ্ডি পেরিয়েছে। এর মধ্যে শুধু গত বছরের শেষ প্রান্তিকে বিভিন্ন কারণেই প্রায় ১৪০ কোটি অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

মেটা'র পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ভুয়া অ্যাকাউন্টের মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সেইসব প্রোফাইলে, যেগুলো ক্ষতির উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়, যেমন- স্প্যাম ছড়ানো এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করা অ্যাকাউন্টগুলোর বিষয়ে মেটা পর্যবেক্ষণ করছে।

এই ভুয়া ফেসবুক আইডির মাধ্যমে অপপ্রচার, গুজবসহ সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে এর লাগাম টানতে না পারলে চরম খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেহেতু বন্ধ করা সম্ভব নয়, তাই সরকারের পক্ষ থেকে এর নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে। নিয়ন্ত্রণের জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বর্তমান প্রজন্মকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারলেই এসব অপকর্ম থেকে কিছুটা হলেও সরে আসবে উদীয়মান এই তরুণ সমাজ।

শিহাব

×