১২ বছরের কিশোর। স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হবে। এজন্য পড়ালেখার পাশাপাশি ব্রাদার্স ইউনিয়ন জুনিয়র ক্রিকেট দলেও যোগ দেয় সানোয়ারা বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাহাত খান। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরা থাকল। সহপাঠীদের হাতেই নির্মম মৃত্যুর শিকার হতে হয়েছে এ কিশোরকে। রাহাতের পরিবারের অভিযোগ, সহপাঠীদের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
বুধবার সকালে নগরীর চান্দগাঁও থানার হামিদচর এলাকা থেকে রাহাতের মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাহাত খান নগরের চান্দগাঁওয়ের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব ফরিদার পাড়ার মো. লিয়াকত আলীর ছেলে। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে রাহাত বিদ্যালয়েও গিয়েছিল। কিন্তু ছুটির পর বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে আর বাসায় ফেরেনি। সহপাঠীদের হাতে নির্মম মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। কিশোর বয়সীদের মাঝে কেন এমন প্রতিশোধপরায়ণতা ও ক্রোধের জন্ম নিচ্ছে তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।
বুধবার সকালে কর্ণফুলী নদীর হামিদচরে কিশোর ক্রিকেটারের মরদেহ ভাসতে দেখে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যায়। ফায়ার সার্ভিস কিশোর রাহাতের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মর্গে।
উল্লেখ্য, রাহাতরা তিন ভাই। সে সবার ছোট। পরিবারের সদস্যরা চমেকের মর্গের সামনে সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার সকালে অন্য দিনের মতোই রাহাত বিদ্যালয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আর ফিরে আসেনি। স্কুল ছুটির পর বাসায় না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা খুঁজতে বের হন। এরপর রাহাতের কয়েকজন বন্ধুদের কাছেও খবর নেন। পরে তারা জানতে পারেন রাহাতের সঙ্গে ঝগড়া করা সহপাঠীরাই তাকে নিয়ে হামিদচরে যায়। এরমধ্যে সকালে তার মরদেহ ভেসে ওঠে হামিদচরে।
লিয়াকত আলী ও রোজী আক্তার দম্পতির ছোট ছেলে রাহাত ছিল মেধাবী। বড় হয়ে ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছে ছিল তার। এজন্য একটি ক্লাবেও ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাকে। আকস্মিক ছেলেকে হারিয়ে রাহাতের পরিবারের সকলে শোকে স্তব্ধ।
বুধবার সকালে রাহাতের মা রোজী আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার ছেলের পরীক্ষা ছিল। সকাল ৮টার আগে স্কুলে চলে গিয়েছিল। ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়েছে। এরপর ৩০ মিনিট ছিল টিফিনের ছুটি। আবার দেড়টা পর্যন্ত ক্লাস ছিল। এরপর বন্ধুরা তাকে খেলতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। সে তাদের সঙ্গে গিয়েছে। খেলাপাগল ছেলেটাকে তারই বন্ধুরা মিথ্যা কথা বলে খুন করেছে। দুই মাস আগে তার সঙ্গে সিটে বসা নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল কয়েকজনের। সেই জেরে ছেলেকে খুন করে ফেলল! আমি বিচার চাই, ফাঁসি চাই। আমার ছেলের খুনিদের ফাঁসি চাই।’
মর্গের সামনে রাহাতের এক চাচা সাংবাদিকদের জানান, খেলার কথা বলে হামিদচরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মেরে নদীতে ফেলে দিয়েছে। জানতে পেরেছি রাহাতের সঙ্গে তার বন্ধুদের পাশাপাশি কয়েকজন বাইরের ছেলেও ছিল। সবাই মিলে তাকে খুন করেছে।
এদিকে পুলিশ সূত্র জানায়, কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার ক্লাসের একই সেকশন এবং অন্য সেকশনের কয়েকজন ছাত্রকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তানভীর আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন। সব বিষয় যাচাই করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এলেই জানা যাবে। এ ছাড়া সব অভিযোগ নিয়েই তদন্ত চলছে।