ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

পায়ের মাংসপেশিতে টান ধরার পেছনে যে ৫টি গোপন রোগ থাকতে পারে

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৪:৫৩, ১৯ জুলাই ২০২৫

পায়ের মাংসপেশিতে টান ধরার পেছনে যে ৫টি গোপন রোগ থাকতে পারে

ছ‌বি: প্রতীকী

আমরা অনেক সময়ই হঠাৎ করে পায়ের মাংসপেশিতে টান ধরে যাওয়ার সমস্যায় পড়ি। বিশেষ করে রাতে ঘুমের সময় বা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর দাঁড়ালে এই টান অনুভব হয়। অনেকেই এটিকে সাধারণ ক্লান্তি, শারীরিক দুর্বলতা বা পানি স্বল্পতার ফল মনে করেন। কিন্তু জানলে অবাক হবেন—এই সাধারণ মনে হওয়া সমস্যার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে কিছু গোপন রোগ। এই রোগগুলো প্রাথমিকভাবে ধরা না পড়লেও, শরীরে নানাভাবে প্রভাব ফেলতে থাকে। আজ আমরা জানব এমন ৫টি গোপন রোগের কথা, যেগুলো পায়ের মাংসপেশিতে টান ধরার জন্য দায়ী হতে পারে।

প্রথমত, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ। এই রোগে শরীরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব পড়ে। যাকে বলা হয় ‘ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি’। এই নিউরোপ্যাথির কারণে পায়ের স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মাঝে মাঝে পেশিতে টান লাগে বা খিঁচ ধরে। এই লক্ষণটি অনেকেই অবহেলা করে থাকেন, কিন্তু এটি ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। কেউ যদি নিয়মিত পেশির টান অনুভব করেন এবং ক্লান্তি বা হালকা ঝিঁঝি অনুভব করেন, তাহলে অবশ্যই ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করা উচিত।

দ্বিতীয় গোপন রোগটি হলো থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। শরীরে থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে একে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিজম। এই রোগে শরীরের বিপাকক্রিয়া ধীর হয়ে যায় এবং পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে সহজেই পায়ে খিঁচ ধরা বা টান লাগার প্রবণতা দেখা দেয়। অনেক সময় পা ফুলে যায়, ক্লান্তি আসে, এমনকি ওজন বাড়তেও থাকে। কিন্তু মানুষ সেটিকে অনেক সময় বয়স বা ওজনের কারণ ভেবে ভুল করে বসে। নিয়মিত পেশিতে টান পড়লে থাইরয়েড পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

তৃতীয়ত, ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা। শরীরে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সোডিয়ামের মতো উপাদানের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রয়োজন হয়। অতিরিক্ত ঘাম, ডায়রিয়া, পানির স্বল্পতা বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এই উপাদানগুলোর ঘাটতি হলে পেশিতে খিঁচ ধরা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এটি শুধু পায়ের পেশিতে নয়, হাত, পেট বা পিঠের পেশিতেও হতে পারে। অনেক সময় খেলোয়াড়, মজুর বা গরমের দিনে বাইরে কাজ করা মানুষদের এই সমস্যায় বেশি ভোগতে দেখা যায়। তবে যারা কোনো কারণ ছাড়াই নিয়মিত পেশির টান অনুভব করেন, তাদের রক্তে ইলেকট্রোলাইটের মাত্রা পরীক্ষা করা দরকার।

চতুর্থ গোপন রোগ হলো পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ বা PAD। এই রোগে পায়ের রক্তনালিতে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। যার ফলে পায়ের পেশিগুলো ঠিকভাবে অক্সিজেন পায় না এবং টান বা ব্যথা অনুভূত হয়। অনেকে হাঁটতে গেলে বা ব্যায়ামের পর পায়ে জ্বালা, ব্যথা বা টান ধরার অভিযোগ করেন। এটি শুধু পেশির সমস্যা নয়, বরং রক্ত চলাচলের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। বিশেষ করে যাদের বয়স ৫০-এর বেশি, ধূমপান করেন, উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল রয়েছে—তাদের এই ঝুঁকি বেশি থাকে।

শেষে যে রোগটির কথা বলব সেটি হলো স্নায়ুবিক সমস্যা বা নার্ভ কম্প্রেশন। মেরুদণ্ডের সমস্যা, ডিস্ক স্লিপ বা সায়াটিকা রোগে স্নায়ু চেপে গেলে পায়ে ব্যথা বা টান ধরতে পারে। সাধারণত এটি একপাশের পায়ে বেশি হয় এবং কোমর থেকে শুরু হয়ে পায়ের পেছন দিক পর্যন্ত টান লাগে। অনেক সময় পা অবশ হয়ে যায় বা পায়ের আঙ্গুল ঝিনঝিন করে। এই ধরনের টান বারবার হলে তা শুধু পেশির সমস্যা নয়, বরং স্নায়ুর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

সবশেষে বলা যায়, পায়ের মাংসপেশিতে টান ধরা অনেক সময় সাধারণ শারীরিক ক্লান্তি বা পানিশূন্যতার কারণে হলেও, যদি এটি নিয়মিত ঘটে এবং কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া হয়, তবে তা গোপনে থাকা বড় কোনো শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। তাই এসব লক্ষণ অবহেলা না করে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো রোগ নির্ণয় করা গেলে অনেক জটিলতাই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। শরীরের ছোট ছোট সংকেতকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা, সুস্থ জীবনের প্রথম ধাপ।

এম.কে.

×