ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

সিরিয়ার সার্বভৌমত্বে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে প্রেসিডেন্টের পাশে তিন দেশ

প্রকাশিত: ১৯:১০, ১৮ জুলাই ২০২৫

সিরিয়ার সার্বভৌমত্বে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে প্রেসিডেন্টের পাশে তিন দেশ

দক্ষিণাঞ্চলে উত্তেজনা বাড়ার প্রেক্ষাপটে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় সংহতির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন তুরস্ক, সৌদি আরব ও কাতারের শীর্ষ নেতারা। বৃহস্পতিবার সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে ফোনালাপে তাঁরা এ অবস্থান জানান।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে জানানো হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আল-শারার ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় সিরিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা নিয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।

আলোচনাকালে তিন দেশীয় নেতা সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেকোনো ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তাঁরা বারবার ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি একটি বিপজ্জনক উসকানি, যা পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং সহিংসতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

নেতারা সিরিয়ার ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা ও জাতীয় ঐক্যের প্রতি তাঁদের অঙ্গীকারের কথা জোর দিয়ে বলেন। তারা উল্লেখ করেন, দেশের প্রতিটি প্রান্তে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি এবং সব সিরিয়ান নাগরিকের কল্যাণের জন্য নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা জরুরি।

আল-শারা এই কঠিন সময়ে তুরস্ক, সৌদি আরব ও কাতারের সহমর্মিতা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সিরিয়ার জনগণের সকল ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষা করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান অস্থিরতা মূলত অস্ত্রের অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার ও বিদেশি হস্তক্ষেপের ফল। রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘনকারী ও কর্তৃত্ব অস্বীকারকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন প্রেসিডেন্ট শারা।

এই আলোচনার একদিন আগেই ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার সুয়েইদা, দারা, দামেস্ক ও দামেস্ক উপকণ্ঠের মোট ১৬০টিরও বেশি স্থানে বিমান হামলা চালায়। এসব হামলায় রাজধানী দামেস্কেই তিনজন নিহত এবং অন্তত ৩৪ জন আহত হন।

গত ১৩ জুন সুয়েইদায় বেদুইন আরব গোত্র ও সশস্ত্র দ্রুজ যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সহিংস রূপ নেয় এবং দ্রুজ যোদ্ধারা সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালায়, যাতে বহু সেনা নিহত হন বলে জানানো হয়।

পরবর্তীতে সরকারপন্থি বাহিনী ও স্থানীয় দ্রুজ গোষ্ঠীর মধ্যে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এরপরই ইসরায়েল সিরিয়ার সামরিক ঘাঁটি ও অবকাঠামোয় আঘাত হানার অভিযান জোরদার করে। ইসরায়েল দাবি করে, তারা সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে দ্রুজ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্যই এসব হামলা চালাচ্ছে।

তবে সিরিয়ায় বসবাসরত বেশিরভাগ দ্রুজ নেতা প্রকাশ্যে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে একটি ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধীন সিরিয়ার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা বাশার আল-আসাদের পতনের পর ইসরায়েল তাদের সামরিক অভিযান আরও জোরদার করে। একইসঙ্গে তারা ১৯৭৪ সালের বিরতীকরণ চুক্তি ও সিরিয়া-ইসরায়েল সীমান্তে গঠিত বাফার জোনকেও বাতিল বলে ঘোষণা করে।

উল্লেখ্য, প্রায় ২৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর বাশার আল-আসাদ ডিসেম্বরে রাশিয়ায় পালিয়ে যান, যার মধ্য দিয়ে ১৯৬৩ সাল থেকে চলা বাথ পার্টির শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বে সিরিয়ায় একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠিত হয়।


সূত্র:https://tinyurl.com/yvf54dhf

আফরোজা

×